রোমাঞ্চকর গল্প – রহস্য রোমাঞ্চ গল্প – Bengali Suspense Thriller Story

Bongconnection Original Published
24 Min Read

রোমাঞ্চকর গল্প – রহস্য রোমাঞ্চ গল্প – Bengali Suspense Thriller
Story
 

রোমাঞ্চকর গল্প - রহস্য রোমাঞ্চ গল্প - Bengali Suspense Thriller Story
Loading...


রোমাঞ্চকর গল্প

রহস্য রোমাঞ্চ ভৌতিক গল্প 
           
               – বং কানেকশন
এক্সক্লুসিভ 
রবিবারের দুপুর। পটল ভাজা,কচি পাঁঠার ঝোল, ঝোলের মধ্যে নরম তুলতুলে আলু, আর শেষ
পাতে কাঁচা আমের টমিষ্টি চাটনি দিয়ে পেট পুরে চেটেপুটে ভাত খেয়ে ঘরে এসে ভাতঘুম
দিয়েছিলাম। ফোনটা বেজে ওঠে। গালাগালি দিয়ে ফোনটা ধরি। 
“গোপাল ? গোপাল তালুকদার বলছেন ? “
“বলছি। “
“আপনার দাদুর শরীরের অবস্থা খুব খারাপ। তাড়াতাড়ি চলে আসুন। “
ভয়ে কেঁপে উঠি আমি। দাদুর অবস্থা…খারাপ ? সারা পৃথিবীটা দুলে ওঠে আমার সামনে।
দুপুরের ভাতঘুমের আমেজটা চলে গেল নিমেষে। 

তাড়াতাড়ি বলি,”আআআ…আমি আসছি। “
“কিন্তু উনি বারবার বলছেন…বলছেন, আপনি যেন কাল আসেন। রাতে আপনাকে আসতে
বারণ…”
“আমি ঠিক চলে আসব। ” 
ফোন রেখে দিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিই আমি। স্টোরের  ম্যানেজারকে জানিয়ে দিই
কয়েকদিন আসতে পারব না। বেরিয়ে আসি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাত দেখাই – একটা হলুদ
ট্যাক্সি এসে দাঁড়ায় সামনে। উঠে বলি, “এসপ্ল্যানেড; যেখান থেকে দূরপাল্লার
বাসগুলো ছাড়ে, সেখানে যাব।” জানালার কাঁচ নিচে নামিয়ে দিয়ে দেখি রবিবারের আলস্য
জড়িত ধীর গতিতে এগিয়ে চলা শহরটাকে।   

রোমাঞ্চকর ছোট গল্প

Loading...
শহরে আছি প্রায় বছর সাতেক। দাদু পাঠিয়ে দিয়েছিল আমাকে গ্রাম থেকে। আমার তিনকুলে
কেউ নেই। না আছে বাবা মা, না আছে ভাই বোন। বিয়েও একটা হয়েছিল। সেটাও, ওই গ্রামে
থাকতে। কিন্তু তারপর…বৌ’টা হঠাৎ করে জলে ডুবে মরে গেল। গ্রামে ও অনেকদিন
যাওয়া হয় নি। গ্রামে গেলেও থাকি না। ওখানে সকালের দিকে যাই, আর বিকেলে বেরিয়ে
চলে আসি। আসলে, ওখানে থাকতে ভাল লাগে না। 
আর, দাদু ও আমাকে থাকতে দেয় না ওখানে। বিশেষ করে রাতে। সত্যি…ই তো, ওই অজ
পাড়াগাঁয়ে কিছুই তো নেই। 
আমরা জমিদার ছিলাম। সেই ইংরেজদের আমলে। সেই সম্পত্তির প্রাচুর্য দেখিনি যদিও।
তবে গ্রামে সবাই দাদুকে মান্যগণ্য করত। বিশাল বড় বাড়ি ছিল আমাদের। রাজপ্রাসাদের
মত। বাড়িটার বেশিরভাগ অংশ ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু দাদু সেগুলোকে আর সারানোর
ব্যবস্থা করে নি। প্রচুর টাকা পয়সার ধাক্কা। আর কার জন্যই বা করবে ? এক এক করে
তো সবাই মারা গেল। এখন পুরো বংশে শুধু আমি আর দাদু। এই যুগে ও দাদু আমাকে চিঠি
পাঠায়। পুরনো দিনের মানুষ তো ! সপ্তাহে একবার করে দাদুর সাথে ফোনে কথা হয়।
প্রতি রবিবার, রাতে। অনেক বছর দাদু’ই গ্রামের মাথা ছিল। এখন বয়স হয়ে গেছে।
সেখানে অন্য একজন এসেছে। তবুও, যে কোনও রকম সমস্যাতে লোকজন দাদুর কাছেই
প্র্রথমে আসে। 
বছরখানেক আগেই দাদু বলছিল, “বুঝলি গোপাল, গ্রামে থেকে কোনও লাভ নেই। শহরে টাকা
ওড়ে। ওই টাকা পয়সা ধরতে হবে তোকে। অনেক বড় হতে হবে। আমাদের কাপড়ের ব্যবসাটা আর
ও বড় করতে হবে। ”
গোপাল – আমার নাম। গ্রামে অন্য অনেক কিছুর সাথে কাপড়ের ব্যবসাটাও আছে। তবে
গ্রামের থেকে শহরে লাভ অনেক বেশি। পাশের কয়েকটা গ্রাম থেকে আড়াইশো বা তিনশোতে
শাড়ি কিনে, সেই সব শাড়ি দাদু পাঠিয়ে দেয় এখানে। সেটাকেই শহরে প্রায় আড়াই বা
তিনহাজারে বিক্রি করি আমি। আমাদের দোকানের খুব নাম আছে শহরের বোকা মানুষগুলোর
মধ্যে। ওদেরকে কথায় ভুলিয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে যাতে শাড়িগুলো প্রায় দশ থেকে
কুড়িগুন দামে বিক্রি করা যায়, তার জন্য চৌখস ছেলে মেয়েদের রেখেছি আমি। আর সেই
সব মেয়েদের বেশিরভাগ’ই আমাকে সঙ্গ দেয়। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার। 
এখন মনে হয়, পরে আর বিয়ে না করে ভালোই হয়েছে। তাহলে এই সুখ তো আর পাওয়া যেত না
!
হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি দিয়ে গাড়িটা থেমে গেল। ড্রাইভার বলে, “চলে এসেছি সাহাব। ”
ড্রাইভারের গলার স্বরে তাকাই আমি। পুরনো নানান কথার ভিড়ে আমি ভুলেই গেছিলাম যে
আমাকে গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে। আজ যদি না যেতাম, তাহলে রাতে সুনন্দার সাথে সময়
কাটাতাম। ধুর ! দাদুর এই অবস্থা আর ও কয়েকদিন পরে হতে পারত। রবিবারের
দিনেই…রবিবার ? রবিবার ? আজ রবিবার ? আর এটা জ্যৈষ্ঠ মাস ? আজ বাংলা মাসের কত
তারিখ ? কত তারিখ আজ? 

আমি ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করি। “আজ বাংলা মাসের কত তারিখ ? “
“বাংলা ? ইংরিজির তারিখ’ই মনে নেই। দেখতে হবে মোবাইল খুলে। আর আপনি বাংলা মাসের
তারিখ জিজ্ঞেস করছেন ? ভাড়াটা মিটিয়ে নামুন তো ! এই গরমে বেশি বকাবেন না।
” 
আমি নিজেকে বোঝালাম, না না। এ’সব কিছুই ভুল ধারণা। দাদুর শরীরটা খারাপ। আমাকে
তো যেতেই হবে। আমি ছাড়া আর কেউ নেই দাদুর জীবনে। দাদু চলে গেলে আমি যে সম্পূর্ণ
অনাথ হয়ে যাব। যেতেই হবে।   
সাদা চোঙের মত লম্বা শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে বাসে উঠে বসি আমি। বাসে প্রায়
ঘন্টা দেড়েক। তারপর মহাকাল গ্রামে নেমে নদী পেরতে সময় লাগবে মিনিট পনেরো। নদী
পেরিয়ে পাঁচকুয়া গ্রাম। ওখান থেকে আর ও চার কিলোমিটার ভেতরে যেতে হবে । পৌঁছে
যাব আমাদের গ্রামে। সুবর্ণচাঁপায়। গ্রামের নামটা সুন্দর হলেও, এখনও ওখানে
সেভাবে এসে পৌঁছয়নি বাইরের চাকচিক্য। রাতের বেলায় লোকজন হাতে হ্যারিকেন বা
লণ্ঠন ঝুলিয়ে যাওয়া আসা করে। বা হাতে টর্চ। বাইসাইকেলে করে গেলে তার সামনের
লাইট জ্বালা থাকে। রাস্তা পাকা হয় নি ওখানে। মাটির রাস্তাই ভরসা ওখানে। দিনের
বেলাতে যদিও বা পায়ে টানা ভ্যান পাওয়া যায়, রাত হয়ে গেলে ওই ‘পা-গাড়ি’ ভরসা।
গ্রামের মধ্যে গেলে মনে হয় যেন সময়টা পিছিয়ে গেছে প্রায় তিরিশ চল্লিশ বছর।
ফোনের সিগন্যাল আছে , কিন্তু বেশিরভাগ সময় ফোনটাকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে হাত উঁচু
করে আকাশের দিকে বাড়িয়ে সিগন্যাল ধরতে হয়। আর ঝড় বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই !
মাটির রাস্তাতে এমনভাবে কাদা জমে যায় যে গাড়ি ,বাইসাইকেল কাদার মধ্যে আটকে
যায়। 

রোমাঞ্চকর ভূতের গল্প

সাড়ে তিনটে বাজে। রোদটা বেশ চড়া। গরম কাল। সূর্য ডুবতে ডুবতে সন্ধে সাতটা সাড়ে
সাতটা। দিনের আলো নেভার আগেই বাড়িতে পৌঁছে যাব। বাসে উঠে টিকিটের নম্বর মিলিয়ে
বসে যাই। ফোন করলাম দেশের বাড়িতে। কোনও আওয়াজ নেই। নির্ঘাত নেটওয়ার্ক চলে গেছে।
কে জানে, দাদু কেমন আছে ! 
হঠাৎ মনে পড়ে গেল শেষবারে ফোনে দাদুর বলা কথাগুলো।  ফোনটা রাখার আগে
ফিসফিস করে বলেছিল দাদু, “গোপাল, মনে আছে তো ? জ্যৈষ্ঠ মাস চলে এসেছে। আবার সেই
পঁচিশে জ্যৈষ্ঠ , আবার একটা রবিবার। ”
“ধুর দাদু। তোমার যত্ত সব কুসংস্কার। “
“না রে , মনটা কু গাইছে। এই দিনেই তো…” তারপর ফোন কেটে গিয়েছিল হঠাৎ করেই।
চলন্ত বাসে বসে সেই কথাগুলো মনে চলে এল। ভয়ের একটা চোরা স্রোত বয়ে গেল শিরদাঁড়া
দিয়ে। সারা শরীর শিউরে ওঠে আমার। “আজ তো রবিবার। আর জৈষ্ঠ্য মাস। কিন্তু তারিখ
? আজ ও কি পঁচিশে জ্যৈষ্ঠ ? ” 
সামনে এক ভদ্রমহিলা বসেছিলেন। ওনার মাথার চুল কোনও ভাবে খুলে গিয়েছিল আর
হাওয়াতে খোলা জানালা দিয়ে ভেসে এসে সেই চুলগুলো আমার মুখের ওপরে পড়ে। আমি ভীষণ
রেগে মুখের ওপর থেকে সেই চুলের গোছা সরিয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিলাম জোরে , “নিজের
জিনিস নিজের কাছে সামলে রাখুন।” 
নাক সুড়সুড় করে ওঠে আমার। হেঁচে উঠি। একটা ভীষণ চেনা গন্ধ ধাক্কা মারে আমার
নাকে। এ তো, সেই গন্ধ। সেই অনেকদিন আগের এক দুপুরে…মাথার চুল থেকে…” তখন’ই
সামনের ভদ্রমহিলা উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে নিজের মাথার চুলটাকে খোঁপা
করে বেঁধে  রহস্যজনক ভাবে হেসে ফিসফিস করে বলে ওঠেন, “আজ পঁচিশে জ্যৈষ্ঠ।
আজ রবিবার। ” বসে পড়লেন ভদ্রমহিলা। 
অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে তাকালাম সামনের দিকে। জিজ্ঞেস করলাম, “ককক…কী বললেন আপনি ?
” পাশে বসা ভদ্রলোক আমার দিকে রেগে তাকিয়ে বলেন, “আপনি তো আচ্ছা লোক মশায় !
আমার স্ত্রী বোবা। কথাই বলতে পারে না। ”
“ককক কিন্তু , উনি যে” 
“কন্ডাক্টর কে ডাকব ? বাস থেকে নামিয়ে দেব ? ” 
বসে পড়লাম আমি চুপ করে। এ…এসব কী হচ্ছে ? তাহলে, তাহলে কি আমার যাওয়াটা ঠিক
হচ্ছে না ? তখন’ই পকেটে রাখা মোবাইলটা ঝনঝন করে বেজে ওঠে। ফোনটা কানে লাগাতেই,
“কতদূরে আপনি ? আপনার দাদুর কিন্তু খুব খারাপ অবস্থা। ” 
“আআ, আমি বাসে আছি। দাদু কে আপনি যেমন করে হোক…” যাহ ! কথা শেষ হওয়ার আগেই
ফোন কেটে গেল। আর কোনও দিকে না তাকিয়ে আমি দু চোখ বন্ধ করলাম। আর ও মিনিট
চল্লিশেক বাকি আমার নামতে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে পাঁচ বছর আগের ঘটনা। 
সেটাও ছিল রবিবার, আর সেটাও ছিল পঁচিশে জ্যৈষ্ঠ। 
আমার মাস চারেকের প্রেগনেন্ট বৌটা দেশের বাড়িতে ছিল সেই সময়। শহরে আমি ওর
দেখাশোনা করতে পারব না। ওকে নিয়ে মা বাবা চলে গিয়েছিল গ্রামের বাড়িতে। আমাদের
বাড়ির পেছনেই দুটো বিশাল বড় পুকুর ছিল। একটি পুকুরের জলে নেমে স্নান করা যেত।
জল ছিল একদম পরিষ্কার, আর ছিল ভীষণ ঠান্ডা জল। গরমে ওই পুকুরে কত দাপাদাপি করে
বেড়াতাম একটা সময়। আর একটা পুকুরে পদ্মফুল ফুটত। সুন্দর গোলাপী রঙের পদ্মফুল।
পদ্মগাছের গোড়ায় গোখরো সাপ থাকত, তাই ওখানে কেউ নামত না। বর্ষার সময়ে পুকুরদুটো
জলে উপছে পড়ত। উপছে পড়া জল দেখে খুব ভয় করত, আবার একটা অদ্ভুত ভাললাগাতে ভরে
উঠত মন। ভেসে আসত মাটির সোঁদা গন্ধ। 

Mysterious Story In Bangla

পদ্মভর্তি পুকুরে পাওয়া গিয়েছিল আমার বৌটাকে। রাতে ও বাইরে বেরিয়েছিল। প্রকৃতির
ডাকে। একা একাই বেরিয়ে গিয়েছিল ও। পরের দিন সকালে পাওয়া গিয়েছিল ওকে; পদ্মগাছ
জড়িয়ে গিয়েছিল ওর পায়ে। চোখদুটো ঠিকরে বেরিয়ে এসেছিল। সবাই বলেছিল যে গোখরোর
বিষে ও মরেছে। কিন্তু আমি দেখেছিলাম। ওর পায়ে ছিল হাতের আঙুলের দাগ। দাদু ও
দেখেছিল। দুজনেই দুজনের দিকে হাঁ করে তাকিয়েছিলাম তখন। ওই সময় যে কটা দিন আমি
ওখানে ছিলাম, তখন প্রতিদিন রাতে আমার বৌ, কালো কুচকুচে জলে ভর্তি গভীর পুকুর,
পুকুরের মধ্যে থেকে উঠে আসা হাত – ওরা হানা দিত আমাকে, আমার স্বপ্নে। বা
দুঃস্বপ্নে। 
কেউ আমরা কখনও বুঝতে পারি নি আমার বৌ সেদিন কেন বা কীভাবে গিয়েছিল ওই পুকুরে।
ওই পুকুরে তো নামা বারণ ছিল সবার। 
ওই ঘটনার দুবছর পরে , আবার, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। একই সাথে চলে যায় মা আর
বাবা। দেশের বাড়িতে উনুনে রান্না হত। মাটির তৈরি উনুন, তার মধ্যে ঘুঁটে,
গাছপালার শুকনো ডালপালা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রান্না করত মা। গ্রামের ঘোড়ই পাড়া
থেকে এক বৌদি এসে মাকে সাহায্য করত। দিনেরবেলাতেই মা রান্না সেরে রাখত
দু’বেলার। দিনেরবেলার খাবার নিচে রেখে দিয়ে, রাতের খাবার শিকেতে ঝুলিয়ে রেখে
দিত। সেই রবিবার, ওই পঁচিশে জ্যৈষ্ঠে ওই বৌদি আসে নি। মা দু’বেলার রান্না
একসাথে করতে পারে নি। রাতে রান্নাঘরে রান্না করছিল মা। দিনের বেলায় ভেজে রাখা
মাছের টুকরোগুলো শিকেতে একটা বাটিতে ঝুলিয়ে রাখা ছিল। মা সেটাকে নামাতে না পেরে
বাবাকে ডেকেছিল। হঠাৎ কোনও ভাবে আগুন লেগে যায় মায়ের শাড়িতে। উনুন থেকে কোনও
শুকনো জ্বলন্ত ডাল হয়ত এসে পড়েছিল মায়ের শাড়ির ওপরে। বাবা, মা’কে বাঁচাতে ছুটে
যায় । দুজনেই আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে যায়। 
আমি এসেছিলাম, পরের দিন ভোরেই। ওদের গলে পুড়ে যাওয়া দেহ বাইরে রাখা ছিল।
শরীরদুটো ঝলসে গিয়েছিল আগুনে। মা, বাবার দুজনের মাথাটাই অদ্ভুত ভাবে বেঁকে
গিয়েছিল – যেন জোর করে কেউ ওদের ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করতে চেয়েছিল, কিন্তু পারে
নি। আমি স্পষ্ট দেখেছিলাম , ওদের দুজনের গলার ওপরে কয়েকটা আঙুলের দাগ। কেউ যেন
জোর করে ওদের গলা টিপে ধরে ঘাড় মটকে দিয়েছিল দুজনের। দাদু বিড়বিড় করে বলেছিল
আমার সামনে এসে, “পাপের শাস্তি রে গোপাল। পাপের শাস্তি। থাকিস না এখানে। কাজ
শেষ করে, চলে যা তাড়াতাড়ি। ” 
তার পরের বছর চলে গেল আমার প্রাণের বন্ধু হারু। ও আমার সাথে শহরেই থাকত। সেই
সময় গ্রামে ওদের বাড়ির জমিজমা নিয়ে কিছু ঝামেলা চলছিল। সেটা মেটাতে ও এসেছিল
কয়েকদিনের জন্য। সেবারে ও পঁচিশে জৈষ্ঠ্য পড়েছিল ওই রবিবারে। ওকে পইপই করে বলে
দিয়েছিলাম, “পঁচিশ তারিখের আগে চলে আসিস। ” আসতে পারে নি ও। ওর মৃতদেহ পেয়েছিল
সবাই – গাছের ডালে , ঝুলতে থাকা অবস্থায়। বন্ধুদের সাথে যাত্রা দেখতে গিয়েছিল,
পঁচিশের রাতে। যাত্রা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে, ফেরার সময় ওকে কেউ খুঁজে পায় নি।
সবাই ভেবেছিল ও হয়ত আগেই চলে গেছে। 
পরের দিন সকালে ওকে পাওয়া যায়। একটা বিশাল বড় আর উঁচু গাছের ডাল থেকে ঝুলছিল ওর
দেহটা। গাছের শেকড়বাকড় ওর গলার ওপরে চেপে বসেছিল। চোখদুটো বেরিয়ে এসেছিল কোটর
থেকে। ঝুলছিল মুখের ওপরে। নাক থেকে গড়িয়ে বেরিয়ে এসেছিল চাপ চাপ রক্ত। বুকের
সামনে দিয়ে ঢুকে গিয়েছিল মোটা একটা শেকড়, বেরিয়েছিল পিঠের মাঝখান দিয়ে। নৃশংস
এই হত্যাকান্ড যে কে করেছিল, কেন করেছিল কিছুই বোঝা যায় নি। দাদু বলেছিল আমার
কানে কানে, “সে এসেছে। সব শেষ করে দেবে। তুই কেন এসেছিস ? আসিস না আর এই
গ্রামে। ”
“তুমি? “
“আমি ? তোর সাথে ? এই এত বড় সম্পত্তি ছেড়ে ? চলে যাব বাড়ি ছেড়ে ? না। আমার কিছু
হবে না। কিন্তু তুই আর আসিস না।এলে ও, ওই জৈষ্ঠ্য মাসে একদম না। একদম না। ”
অথচ আজ আমাকে সেই জৈষ্ঠ্য মাসেই যেতে হচ্ছে। আর সেটাও আবার রবিবারে ! তারিখটাও
পঁচিশ। 
শব্দ করে বাসটা থেমে যায়। আমি চোখ খুলে তাকাই। আমার নামার জায়গা চলে এসেছে।
নেমে এলাম বাস থেকে। বুকের মধ্যে চাপা একটা ভয়ে তখন আমি কাঁপছি। হাত পা ঠান্ডা
হয়ে যাচ্ছে। কপালে জমেছে ঘাম। খুব তেষ্টা পাচ্ছিল আমার। একটা চপ মুড়ির দোকানে
গিয়ে জলের জগটা টেনে নিয়ে ঢকঢক করে অনেকটা জল খেলাম। চোখ মুখ নিশ্চয়ই ফ্যাকাশে
হয়ে গিয়েছিল ভয়ে। দোকানদার আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ছিল। 
আমি ঘাটের দিকে এগোই। সূর্য ডোবার আগে যেতেই হবে। যে করেই হোক। দাদুর অবস্থা
বেশ খারাপ। নৌকোতে উঠি আমি। মাঝ নদীতে নৌকোটা ভীষণ জোরে জোরে দুলে ওঠে। মাঝি
চারজন চেঁচিয়ে ওঠে, “সামাল দে। ঝড় আসছে। সবাই ধরে বোসো গো। ” 
ঝড় ? কোথায় ঝড় ? সামনে আকাশ’তো ঝকঝকে একদম। পেছনে ঘুরে তাকালাম। পেছনের আকাশ ঘন
কালো মেঘে ঢেকে গেছে। কালো মেঘ তার সর্বগ্রাসী রূপ নিয়ে এগিয়ে আসছে আমাদের
নৌকোর দিকে। মেঘের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি মুহূর্মুহু বিদ্যুত চমক। নিজের মনে বলি,
এ আবার কি আপদ এল ! পৌঁছতে পারব তো ? বড় বড় ঢেউ ওঠে জলে। ভেসে আসে ঠান্ডা
জলীয়  হাওয়া। নৌকোটা ওর মধ্যেই তরতর করে এগিয়ে চলে। মিনিট পাঁচেক পরেই
নেমে আসি আমি নৌকো থেকে। পাঁচকুয়া গ্রামে। 
কোনও এক সময়ে এখানে বিশাল বড় বড় পাঁচটা কুয়ো ছিল। ব্রিটিশরা সব ভেঙে দিয়েছে। ওই
কুয়োর মধ্যে বিপ্লবীরা লুকিয়ে থাকত। 
তাড়াতাড়ি পা চালাই। একটাও কোনও পায়ে টানা ভ্যান বা রিক্সা নেই। কারোর জন্য
অপেক্ষা করতে হবে না। চার কিলোমিটার। পায়ে হেঁটেই ঠিক মেরে দেব। বৃষ্টি আসার
আগেই পৌঁছে যাব। আর যা হাওয়া দিচ্ছে, মেঘ উড়িয়ে নিয়ে চলে যাবে। জোরে পা চালাই।
গ্রামের ছেলে, গ্রামেই বড় হয়েছি। এইরকম কাঁচা রাস্তায় হনহন করে হাঁটার অভ্যেস
আছে আমার। 
প্রায় মিনিট দশেক হয়ে গেছে। দেশের নানান প্রান্ত স্মার্ট সিটিতে পরিণত হলেও,
এখনও এই গন্ডগ্রামে সেইসব সুবিধে এসে পৌঁছয় নি। আধুনিকীকরণ হতে হয়ত আরও বছর
দশেক লেগে যাবে। মেঘটা যেন আমাকে তাড়া করে আসছে। আমার মাথার ওপরে এখন ঘন
অন্ধকার। ঘড়িতে দেখলাম, সবে পাঁচটা চল্লিশ হয়েছে। দিনের আলো মরে গেছে।  ঘন
কালো আকাশের মাঝে ম্লান বিষাদপূর্ণ আলো ছড়িয়ে পড়েছে চরাচর জুড়ে। 
মেঠো পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছি আমি। রাস্তায় লোকজন কেউ নেই। এমনিতে গ্রামের দিকে
এইরকম সময়ে সবাই বাড়ি ফিরে যায়। আজ আবার আকাশ এ’রকম অন্ধকার করে আছে। সবাই অনেক
আগেই বাড়িতে ফিরে গেছে। গ্রামে বাড়িগুলোও বেশ দূরে দূরে। দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি
কিছু কিছু বাড়িতে বাড়িতে লণ্ঠন বা হ্যারিকেনের আলো জ্বলে উঠেছে। কোথাও শাঁখ
বেজে উঠেছে,কোথাও বা ঘন্টাধ্বনি। গরুদের হাম্বা হাম্বা রব আসে ভেসে। গাছের ওপরে
বসা পাখিগুলো হঠাৎ চিৎকার করে কোনও কিছুতে ভয় পেয়ে চিৎকার করে ডানা ঝাপটে
বেরিয়ে পড়েছে বাইরে। আর তার সাথে সাথে শুরু হয়ে যায় শনশন করে হাওয়া। মাটির ওপরে
থাকা ধুলোতে ঢেকে যায় আমার চারপাশ। গায়ে এসে পড়ে বড় বড় ফোঁটা। ধুলোর ঝড়ের মধ্যে
কেউ আমার কানের কাছে এই ফিসফিস করে বলে, “খিদে, বড্ড খিদে পেয়েছে।
খিইইইইদে…” 
ভীষণভাবে ভয় পেয়ে তাকাই আশেপাশে। কেউ…কেউ তো কোথাও নেই। তাহলে, তাহলে কে আমার
কানের কাছে এসে… 
স্থাণুবৎ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি আমি। হৃদ্স্পন্দন বাড়তে থাকে আমার। এত জোরে যে নিজেই
সেটা শুনতে পাচ্ছিলাম তখন। হঠাৎ করেই সারা প্রকৃতি একেবারে শান্ত, স্তব্ধ হয়ে
গেল। কোথাও কোনও শব্দ নেই। নিজের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের আওয়াজটাও ভীষণ জোরে জোরে
কানে এসে লাগে। এত নিস্তব্ধতা আমি কোনও দিন অনুভব করি নি। সারা পৃথিবীতে যেন
কেউ কোথাও নেই। শুধুই…আমি…একা। 

Bengali Suspense Story

পা চালাই আর ও জোরে। আবার গায়ের ওপরে এসে পড়ে বড় বড় ফোঁটা। তারপরেই সশব্দে
হুড়মুড় করে আকাশ ভেঙে নেমে আসে বৃষ্টি। চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। আমি জোরে জোরে
দৌড়তে শুরু করি। অন্ধকার, আমার চারদিকে অন্ধকার নেমে আসছে। একটা হাত এগিয়ে আসছে
আমার দিকে। জলের ভেতর থেকে এগিয়ে আসা সেই হাত আমাকে ধরতে চাইছে। 
“কে ? ককক…কে ? ” চেঁচিয়ে উঠি আমি। গলা থেকে দুর্বল স্বর বেরিয়ে আসে। 
কোনও কিছু না ভেবে সবকিছু ভুলে প্রাণপনে দৌড়তে থাকি বাড়ির দিকে। ভীষণ ভয়ে কেঁপে
উঠি ভেতর থেকে। সারা শরীর অবসন্ন হয়ে পড়েছে, কিন্তু তবুও আমি এগিয়ে যাই। বাড়ি,
বাড়ির ভেতরে নিরাপদ আশ্রয় পাব আমি। আমি জানি। দৌড়তে দৌড়তে অবশেষে দেখতে পাই
আমাদের বাড়িটাকে। প্রচন্ড বৃষ্টিতে বাড়ির পেছনদিকের অংশ ভেঙে পড়ে। চোখের সামনে
দেখতে পাই আমি। সারা বাড়িতে কোনও আলো নেই। এত অন্ধকার কেন ? আর ডাক্তার ? সে’ই
বা কোথায় ? 
দৌড়তে দৌড়তে আমি বাড়ির ভেতরে ঢুকি। হাঁপাতে থাকি। কেউ একজন আমার কাঁধের ওপরে
হাত দেয়। আমি চেঁচিয়ে উঠি। ঘুরে তাকিয়ে কে কে বলে পিছিয়ে যাই। আমার সামনেই
দাঁড়িয়ে আছে দাদু। সুস্থ সবল। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি, “দাদু ? তুমি ভাল আছ ? ”
“তোর মনে আছে গোপাল ? মনে পড়ে ? “
“আআ…আমি কিছু জানি না। আমি কিছু জানি না দাদু। “
“সেদিন পাশের বাড়িটায় কেউ ছিল না। বাড়ির ছেলেরা চাষের কাজে মাঠে চলে গিয়েছিল।
ঘরে ছিল সুবলের নতুন বিয়ে করে আনা বৌ। কুসুম। মাস সাতেক হয়েছিল ওদের বিয়ের। তুই
আর হারু দুজনেই চিলেকোঠার ছাদ থেকে ওকে দেখছিলিস। তোর মা বাবা ও সেদিন বাজারে
গিয়েছিল ওইসময়টাতে। তোর বৌ বাপের বাড়িতে ছিল। নির্জন দুপুরে কুসুম পুকুরে একা
স্নান করছিল। আঁটোসাঁটো চেহারা, ভেজা শরীর, সদ্য যৌবনা সেই মেয়েটাকে দেখে আর
তোরা নিজেদের সামলাতে পারিস নি। হারু ওর বাড়ির ভেতরে গিয়ে লুকোয়। তুই ডুবসাঁতার
দিয়ে কুসুমের পা টেনে ধরলি , জলের ভেতর থেকে। ও ভয় পেয়ে তাড়াতড়ি করে ঘরে চলে
যায়। হারু  ভীত সন্ত্রস্ত মেয়েটাকে ভেজা শাড়িতে ঘরের ভেতরে আসতে দেখেই ওকে
চেপে ধরে। তারপর তোরা দুজনে মিলে এক এক করে ওকে…ওর ওপরে চড়াও হয়েছিলিস। হারু
ওর মুখ বেঁধে দিয়েছিল যাতে চিৎকার বাইরে আসতে না পারে। অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল
তোদের অত্যাচারে। কুসুম মরে গেছে ভেবে তোরা ভয়ে ওকে ছেড়ে চলে এসেছিলিস। আমাকে
বলেছিলি এসে। আমি তোদেরকে প্রচুর বকাবকি করেছিলাম। তোদেরকে বলেছিলাম শহরে চলে
যেতে। আর ওখানে গিয়ে মাসখানেক থাকতে। ঘন্টাখানেকের মধ্যে তোরা চলে যাওয়ার
পরে…তারপরের ঘটনা তোরা আর জানিস না। আমি ওই মেয়েটার বাড়িতে গিয়ে আমিও আধমরা
মেয়েটার সাথে…তারপর মেয়েটাকে তুলে নিয়ে চলে এসেছিলাম বাড়িতে। পদ্ম পুকুরে
ডুবিয়ে দিয়েছিলাম। তবুও মেয়েটা মরে নি। ছটফট করছিল। ওর গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে
দিয়েছিলাম ওই বড় গাছের সাথে। সেই সময় তোর বাবা মা চলে এসেছিল। আমাকে দেখে
নিয়েছিল। ওদের মুখ বন্ধ রাখতে বলেছিলাম আমি। না হলে ওদেরকে আমি বাড়ি থেকে বের
করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলাম সেদিন। আর বলেছিলাম যে ওদের ওপরে সব দোষ চাপিয়ে
দেব। গ্রামে সবাই আমাকে মানত। তাই, ওরা ও চুপ করে গিয়েছিল। মেয়েটাকে গাছের ডালে
ঝুলিয়ে দেওয়ার পরেও ও মরছিল না। ওকে নামিয়ে আগুনে পুড়িয়েছিলাম শেষে।
সপ্তাহখানেকের মধ্যে ওই বাড়ির সবাইকে আমি লেঠেল লাগিয়ে শেষ করেছিলাম। ওই
সুবল…সুবল আসলে বুঝতে পেরে গিয়েছিল সেদিন ওর বৌ’এর সাথে কি হয়েছিল। ওই
বিছানাতে তোর হাতের বালাটা পড়েছিল যে ! আর বিছানাতে লেগেছিল রক্তের দাগ। তুই
আমি, আমরা কেউ বুঝতে পারি নি। মেয়েটা তখন চার মাসের অন্তঃস্বত্তা ছিল। মেয়েটার
সাথে ওর পেটের বাচ্চাটাকেও আমরা…”
আমি উঠে দাড়াঁই।  দাদুকে জিজ্ঞেস করি, “কিন্তু তুমি, তুমি আজ এইসব
কথা…আর তোমার কী হয়েছে ? ওই ডাক্তার যে আমাকে…”
হাহাহাহা। দাদুর চেহারাটা হঠাৎ পরিবর্তিত হয়ে যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে…কুসুম।
আমি আর হারু ওকে আধমরা রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে এসেছিলাম, সেই, সেভাবেই ও দাঁড়িয়ে
আছে আমার সামনে। শাড়ি ছেঁড়া, ছেঁড়া আঁচলের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা স্তন, তার ওপরে
রক্তাক্ত দাঁতের দাগ, ওর গালে, গলায় আমার আর হারুর আঙুলের ছাপ। ঊরু দিয়ে গড়িয়ে
নামছে রক্ত। আমি পালাতে চাইছি, কিন্তু পারছি না। কেউ যেন আমার হাত পা কোনও
কিছুর সাথে আটকে রেখে দিয়েছে। 
হিসহিস করে বলে ওঠে ও, “দাদু ? ওই বুড়ো ? ওই দেখ !” আমি দেখতে পেলাম দাদুকে,
দাদুর নিথর শরীরটাকে। মেঝেতে পড়ে আছে। আর দাদুর কোমরের নিচ থেকে পুরো অংশটা
ভেসে যাচ্ছে রক্তে। খিলখিল করে হেসে ওঠে কুসুম।
এগিয়ে আসছে কুসুম আমার দিকে। 
দূর থেকে ভেসে আসছে ঘন্টাধ্বনি। নাকে এসে লাগছে তীব্র কটু গন্ধ , আর তার মাঝে
শুনতে পাচ্ছি আমি সন্ধারতির মন্ত্র। কুসুম মুহূর্তের মধ্যে আমার কানের পাশে এসে
ফিসফিস করে বলে ওঠে, “খিদে…খিইইইইইদে…”
দু চোখ বন্ধ করি আমি। সেদিন আমি কুসুমের ওপরে উঠে ওর ওপর অত্যাচার করতে করতে
হাসতে হাসতে বলছিলাম, “খিদে। খিদে পেয়েছে আমার। খুব খিদে…”
…….সমাপ্ত……

Share This Article