Bangla Bhuter Golpo – জমিদার বাড়ির রহস্য – Horror Story In Bengali

Bongconnection Original Published
8 Min Read

Bangla Bhuter Golpo – জমিদার বাড়ির রহস্য – Horror Story In Bengali

Bangla Bhuter Golpo - জমিদার বাড়ির রহস্য - Horror Story In Bengali
Loading...

Bangla Bhuter Golpo 

জমিদার বাড়ির রহস্য
    – পারমিতা মন্ডল
সে অনেক দিন আগের কথা। তখন যোগাযোগ ব‍্যবস্থা এখনকার মত এতোটা ভালো ছিল না।
বিশেষ করে গ্রামের দিকে। সরকারি ডাক বিভাগে আমার কাজ ছিল। মানে বাড়িতে বাড়িতে
চিঠি পৌঁছে দেওয়া। এখনকার পিয়ন। তখন রানার বলতো। ভোররাতে চিঠির বোঝা কাঁধে নিয়ে
বেরিয়ে পড়তে হতো। হাতে লন্ঠন, পিঠে চিঠি আর টাকার বোঝা নিয়ে। এই যেমন কবিতায়
তোমরা পড়েছো।


সেদিন একটি গ্রামে চিঠি দিতে গিয়ে আর ফিরতে পারলাম না। প্রচণ্ড ঝড় জল শুরু হয়ে
গেল। ভাঙা জমিদার বাড়ির পাশ দিয়ে আসছিলাম। এটি জমিদার রাজ নারায়ন রায় চৌধুরীর
বাড়ি। এক সময় খুব জাঁকজমকপূর্ণ ছিল। বাইজী নাচতো, মদের ফোয়ারা বসতো।গ্রামের
লোকের কাছেই শুনেছি।  কিন্তু এখন আর সে সব নেই।তাছাড়া এদের বংশধরেরা এখন
সবাই কলকাতায় চলে গেছে। এখানে তেমন কেউ থাকে না। রামুকাকাই সব দেখাশোনা
করে। 
সেদিন এতো বৃষ্টির মধ্যে রামুকাকা আমাকে ডেকে বলল, আজ রাতটা এখানে থেকে যাও
রানার বাবু। কাল ভোর বেলায় চলে যেও। এর আগে কখনও রামুকাকা আমার সাথে ডেকে কথা
বলেনি। আজ যেন কতটা আন্তরিক।আসলে ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে তো তাই হয়তো। কিন্তু
রামুকাকাকে কেমন যেন লাগছে। চোখমুখ লাল ফোলা ফোলা। কি জানি বৃষ্টির মধ্যে আবার
ঐ সব খেয়েছে নাকি ?অথবা বৃষ্টিতে অসময় ঘুমিয়ে পড়েছিল মনে হয়।

এরা সবাই আমাকে রানার বাবু বলেই ডাকে।  খুব ভালোও বাসে। সবাই তো অপেক্ষা
করে থাকে আমার আসার। আমি যে ওদের প্রিয়জনের খবর নিয়ে আসি। তাই রামুকাকার কথায়
থেকে গেলাম। অবশ্য না থেকে কিছু করার ও ছিল না। যা বৃষ্টি , কিছুতেই ফেরা
যেতনা।অল্পকিছু  চিঠি দেওয়া বাকী। কাল দিয়েই বেরিয়ে যাবো।

Bhayankar Bhuter Golpo

Loading...
বিশাল বড় জমিদার বাড়ির অন্দরমহলে আজ প্রথম পা দিলাম । পুরনো দিনের  ঐতিহ্য
বহন করে আজও সে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও আগের মত জৌলুস নেই। এর আগে কখনোই এই বাড়ির
আন্দরে ঢোকার সৌভাগ্য হয়নি। আজ যখন ঢুকেছি তখন  ভালো করেই দেখবো। রামুকাকা
খাওয়া- দাওয়ার পর এই ঘরটা খুলে দিয়েছে। বৃষ্টিতে এতো খাবারের আয়োজন করলো কিভাবে
কে জানে ? বেশ ভালোই পদ করেছে। বলছিল একা মানুষ। সকালে রান্না করে রেখেছে। তাই
কেমন একটা উদ্ভট গন্ধ আসছিল। মাছগুলো মনে হয় ভালো করে ভাজেনি। কাঁচা কাঁচা ছিল।
খাওয়ার সময় গা গুলোচ্ছিল। তাও কিছু বলিনি। রামুকাকা যত্ন করে দিয়েছে। 
আরো পড়ুন, 

এই ঘরে ঢুকে আসবাবপত্র, দেওয়ালে ঝুলানো ছবি সবকিছু দেখে নিজেকে বেশ জমিদার
জমিদার মনে হচ্ছে। হঠাৎ মনে হলো আমি যেন একা নয়। এই ঘরে আরো কেউ আছে। বহুদিন
ব‍্যবহার না করে ঘরের লাইটগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। টিমটিম করে একটি লাইট জ্বলছে।
তাও কতক্ষণ থাকবে কে জানে ? বাইরে প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি । আবার বিদ‍্যুত চমকাচ্ছে।
কারেন্ট না চলে যায় ?
দূরে কোথায় যেন অনেক মানুষের হাসি তামাসার আওয়াজ  ভেসে আসছে। ঘুঙুরের শব্দ
,গানের সুর কানে ভেসে এলো। ঐ আবার হাসি। কিন্তু এতো রাতে এই বৃষ্টির মধ্যে পোড়ো
রাজবাড়িতে কোথা থেকে আওয়াজ আসবে ,? ভুল শুনছি নাতো আমি ? ধুর, আমার মাথাটা
একেবারে গেছে। একটু ঘুমিয়ে নিতে হবে। হঠাৎ জোরে হাসির রোলে চমকে উঠি। না, না, ঐ
তো আবার হলো।এসব কি হচ্ছে আমার সাথে ? না, এবার ঘুমিয়ে পড়তে হবে। শরীর খুব
ক্লান্ত। তাই হয়তো ভুলভাল হচ্ছে কিছু।


চলে এলাম নিজের ঘরে। বিছানায় শুতে যাবো, আবার সেই হাসি। এবার সামনে দেখতে
পেলাম, নূপুর পায়ে বাইজীর সাজে এক অপরূপ সুন্দরী মেয়ে এগিয়ে আসছে আমার দিকে।
মিটিমিটি করে হাসছে আর ইশারা করে আমাকে ডাকছে। আমি কি স্বপ্ন দেখছি ? না ঐ তো
সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ডাকছে আমাকে। এই সুন্দর রাতে এমন সুন্দরী বাইজী দেখে, নিজেকে
বেশ জমিদার রাজনারায়ন রায় চৌধুরী বলে মনে হচ্ছে। আচ্ছা দেখি কি বলে 
মেয়েটি ?
 পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। কি অপরূপ দাঁড়ানোর ভঙ্গি। যেন পটে আঁকা ছবি।এতো
রাতে এই পোড়ো বাড়িতে এই অপরুপ সুন্দরী মেয়ে এলো কোথা থেকে ? একে কি আমি আগে
কোথাও দেখেছি ? খুব চেনা লাগছে। হঠাৎ বিকট আওয়াজ করে মেঘ গর্জন করে উঠলো।
বিদ্যুতের আলো এসে পড়লো সেই রূপবতীর শরীরে ।মনে যেন ঝিলিক দিয়ে উঠলো। মনে হলো
একে তো আমি চিনি। কত দিনের পরিচিত। কিন্তু কোথায় দেখেছি মনে করতে পারলাম না। আর
এই বাড়িতে তো রামুকাকা একাই থাকে। তবে এই মেয়েটি কোথা থেকে এলো ?

Bhuter Golpo Bangla

সেই অপরূপ সুন্দরীর ইশারায় মন্ত্রমুগ্ধের মত তার পিছু পিছু চলেছি আমি। সে
আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছে। আমিও বিনা বাক‍্যে তার পিছনে পিছনে চলেছি। কিছু
বলার শক্তি নেই। যেন আমি কাঠের পুতুল। সমস্ত শরীরে কোন শক্তি নেই। আমি কি
স্বপ্ন দেখছি ? না, না ঐ তো সামনে মেয়েটি। হাতের ইশারায় আমাকে কাছে ডাকছি।
কিন্তু এখানে যতদূর জানি কেউ থাকে না। তবে এই মেয়েটি কোথা থেকে এলো ?

একটা বিশাল হল ঘরের সামনে এসে মেয়েটি দাঁড়িয়ে পড়লো। এটা মনে হয় জমিদারদের নাচ
ঘর ছিল। এখানে বাইজি নাচ আর মদের ফোয়ারা বসত।ঐ তো পেয়ারী বাই নাচছে। জমিদার
রাজনারায়ন বসে আছেন তাকিয়ায় হেলান দিয়ে। আচ্ছা ঐ তাকিয়ায় কি আমি বসে আছি? আমি
যেন সব দেখতে পাচ্ছি। এই তো পিয়ারী আমার হাতে তুলে দিচ্ছে সুরার গ্লাস। মদের
ফোয়ারার মতো টাকা উড়ছে। হঠাৎ নাচতে নাচতে পিয়ারী ছুরি বসিয়ে দেয় জমিদারের বুকে।
ছটফট করতে থাকে জমিদার। আর সবাই চারিদিক দিয়ে ঘিরে ধরে পিয়ারীকে। ধরে ফেলে।
“খুন খুন “বলে আওয়াজ ওঠে চারিদিকে। মূহুর্তে সব বন্ধ হয়ে যায়। পেয়ারীকে ওরা ধরে
নিয়ে যায়। 
এসব আমি কি ভাবছি ? আমি কেন রাজনারায়ন হবো ? আচ্ছা দেখি তো মেয়েটা কে ?এতোরাতে
এই বাড়িতে এলো কিভাবে ? মেয়েটি সামনে যাচ্ছে আর আমি ওর পিছনে। মন্রমুগ্ধের মত
আমি ওর পিছন পিছন যাচ্ছি। এ কোথায় নিয়ে এলো ? এটা তো মনে হচ্ছে লুকনো কোন ঘর।
আচ্ছা এটা কি গুমঘর ? পেয়ারীকে মেরে কি এই ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল ? ধুর এসব আমি
কি ভাবছি ? কে পেয়ারী ? আমি তাকে কিভাবে চিনবো ?

আসল ভূতের গল্প

হঠাৎ সুন্দরী মেয়েটি একটি রাক্ষসীতে  পরিনত হয়। বড় বড় দাঁত, নখ বেরিয়ে
আসে । এক বিভৎস চেহারার রুপ নেয়।আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। মুখ দিয়ে যেন রক্ত
ঝরছে। আমার দিকে ঘুরে বলে–”  কি জমিদার রাজনারায়ন চৌধুরী। মনে পড়ে
আমাকে ? চিনতে পারছো ?  আমি শিউলি । যাকে জোর করে তুলে এনে এই প্রাসাদে
বন্দী করে রেখেছিলে। নাম দিয়েছিলে পেয়ারী বাই।  বাইজী বানিয়ে নাচতে
বাধ্য করেছিলে। আমার শত অনুনয় বিনয় কিছুই তোমার কানে যায়নি সেদিন। আমার
বাবাকেও বন্দী করে রেখেছিলে এই গুমঘরে। আমাকে খুন করেছিল তোমার অনুচরেরা ।
কারণ আমি ছুরি বসিয়ে ছিলাম তোমার বুকে। কিন্তু তোমাকে মারতে পারিনি। তোমার
আদেশে ওরা আমাকে খুন করে দিলো। আমি অন্য একজনকে ভালোবাসতাম।অনেক মিনতি
করেছিলাম তোমার কাছে। কিন্তু তুমি শোননি। সেই থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য
অপেক্ষা করে আছি। আমি আর আমার বাবা। উনি তোমাদের রামু কাকা নয়। আমার বাবা।
বলে এক পৈসাচিক হাসি হাসতে থাকে। আজ তোমাকে শেষ করে মনের জ্বালা মেটাবো। আমার
আত্মার মুক্তি হবে আজ।
আমি সেই জমিদার ? কিন্তু আমার তো কিছুই মনে পড়ছে না। পালাতে হবে এখান
থেকে।নাহলে আমাকে মেরে ফেলবে।  ভেবেই দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে জোরে দৌড়ে
পালাই। আর কিছু মনে নেই।
সকালে পুকুর পাড়ে অচৈতন্য অবস্থায় রামুকাকা আমাকে দেখতে পায়। রামুকাকা মেয়ের
বাড়িতে গিয়েছিল। প্রচণ্ড ঝড় জলে রাতে আর ফিরতে পারেনি।

Share This Article