মধ্যরাতের যাত্রী – গা ছমছমে ভুতের গল্প – Bhuter Golpo – Bengali Horror Story

Bongconnection Original Published
4 Min Read
মধ্যরাতের যাত্রী - গা ছমছমে ভুতের গল্প - Bhuter Golpo - Bengali Horror Story
Loading...

————————
গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে পথ চলতে লাগল অরিত্রী। রাতের ভীতিকর অবস্থা মোকাবেলায় এর চেয়ে উত্তম আর কিছুই হয়না। তাতেও মনের ভয় সম্পূর্ণ কাটেনি অরিত্রীর। একে তো রাতের ঘন অন্ধকার, তার উপর জনমানবহীন নির্জন নিস্তব্ধ পরিবেশ। সাহসের শেষ সীমানা অতিক্রম করা মানুষেরও একটু হলেও গা ছমছম করবে। আর অরিত্রী তো সাধারণ এক যুবতী। দেশের অবস্থা ভালো না। রাতদুপুরে একাকী মেয়ের কার ড্রাইভ করে বাড়ি ফেরা ঠিক শোভা পায় না। কিন্তু অনাথ অরিত্রীকে সেটা কে বোঝাবে? থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে বন্ধুদের সাথে পার্টি করল। তারপর কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ করেই পার্টি ছেড়ে একা একা বাড়ির পথে রওনা দিল।
বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে ছিল অরিত্রী। বাবার মৃত্যুর পর এখন বসে বসে টাকা ওড়ানো ছাড়া আর কোনো কাজ নেই তার। যা চাই সবই করতে পারে। একেবারে বিনোদনপূর্ণ জীবন যাকে বলে!
.
হঠাৎ অরিত্রী দেখল একটা হাত বৃদ্ধা আঙুল উঁচু করে শূন্যে ভাসতে লাগল। অর্থাৎ, কেউ লিফট চাইছে। গাড়ির হেডলাইটের আলোয় অরিত্রী স্পষ্ট দেখতে পেল তারই সমবয়সী এক মেয়ে সাহায্য চাইছে। ভালোই হলো। রাতদুপুরে একজন সঙ্গী তো পাওয়া গেল। ব্রেক কষল অরিত্রী। গাড়ির বামপাশের জানালাটা খুলে দিল।
“আমি বড় বিপদে পড়েছি। গাড়ির জন্য বাড়িও যেতে পারছি না। একটু সাহায্য করবেন?” (এক অদ্ভুত কন্ঠে মেয়েটা বলল)
এটাই আশা করছিল অরিত্রী।
“আচ্ছা আসুন।” (এই বলে অরিত্রী মেয়েটাকে তার পাশের সিটে বসার ইশারা করল)
কিন্তু মেয়েটা সেদিকে না বসে পেছনের সিটে বসতে চাইল। অরিত্রী আর মানা করল না।
মেয়েটা ভেতরে ঢুকে বসতেই অরিত্রী জিজ্ঞেস করল, “কই যাবেন আপনি?”
“শান্তিনগরে।” (মেয়েটার তৎক্ষনাৎ উত্তর)
“ ভালোই হলো। আমার বাসাও ওখানে।” (এই বলে অরিত্রী গাড়ি স্টার্ট দিল)
.
রাতের নিস্তব্ধ আঁধার ভেদ করে এগিয়ে চলেছে অরিত্রীর গাড়ি। এরমাঝে নিরবতা ভাঙতে অরিত্রী মেয়েটাকে বেশ কয়েকটা প্রশ্নও করে। তবে মেয়েটা কথা বেশি বলে না। যতটুকু জানতে চাওয়া হয় ঠিক ততটুকুই। এর বাইরে একটা শব্দও বেশি বলেনি সে। যাই হোক, মেয়েটার নাম জানা গেল, ‘ঐশিকা’
.
বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেল অরিত্রী আর ঐশিকার মাঝে কোনো কথা হয়নি। অরিত্রী বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছিল না তাই ও নিজের মতোই ড্রাইভ করছে। পেছনে ঐশিকা কি করছে সেটা আর খেয়াল করেনি। গাড়ির ফ্রন্ট গ্লাসটাও নেই যে পেছনে দেখবে ঐশিকা কি করছে।
পেছনে একজন থাকা সত্ত্বেও নীরব গা ছমছমে পরিবেশে বাক্যহীন যাত্রা মোটেই পছন্দ হচ্ছে না অরিত্রীর। কথা বলার জন্য পেছনে ঘুরতেই চমকে উঠল সে। গাড়ির পেছনে যে বসে আছে সে ঐশিকা নয়। বিভৎস মুখের বেশধারী এক যুবতী! ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত মুখ নিয়ে হাসছে সে। বরফের মতো জমে গেল অরিত্রীর শরীর। কাটা হাত এগিয়ে আসছে তার দিকে!!!
.


.
.
পরিশিষ্ট
———–
রাতের তীব্র আঁধারে এগিয়ে চলেছে এক গাড়ি। ভেতরে বসে আছে এক যুবক আর তার পাশে কার ড্রাইভ করছে এক যুবতী। আরিফ সাহেব রীতিমতো অবাক। এত রাতে গাড়ি পেয়ে যাবেন তাতো ভাবেনইনি, আবার এক যুবতী তার উপর বিশ্বাস রেখে মধ্যরাতে তাকে গাড়িতে তুলে নিবে এটা তো ভাবনারও বাইরে। বেশ কিছুক্ষণ হলো আরিফ সাহেব গাড়িতে উঠেছেন। কিন্তু গাড়িতে ওঠার সময় যা কথা হয়েছিল তারপরে তাদের মাঝে আর একটা কথাও হয়নি।
“ আপনার নামটা কি যেন বললেন?” (শুরুটা করলেন আরিফসাহেব)
“অরিত্রী” (যুবতীর উত্তর)
“খুব৷ সুন্দর!” (আরিফসাহেব)
এদিক ওদিক তাকাতেই আরিফসাহেবের চোখ পড়ল গাড়ির ফ্রন্ট গ্লাসটায়। দেখেই চমকে উঠলেন তিনি। আয়নায় অরিত্রীর কোনো প্রতিবিম্বই নেই! অথচ ওটা ওর দিকেই তাক করা!!
———


Share This Article