Bhuter Golpo – Vuter Golpo – ভুতের গল্প Read Online

Bongconnection Original Published
6 Min Read


Bhuter Golpo – Vuter Golpo – ভুতের গল্প Read Online 

 

Bhuter Golpo - Vuter Golpo - ভুতের গল্প Read Online
Loading...

sotti vuter golpo

Loading...
ব্রহ্মদৈত্য
             ✍️স্নিগ্ধা চক্রবর্তী
শৈলেন মুখার্জি  চাকরী থেকে অবসর নেওয়ার পর চাকদায় চারকাঠা জমির উপর তৈরি
একটি পুরোনো বাড়ি কিনে
সেই বাড়িটি সংস্কার করে নিয়ে সেখানে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করতে শুরু
করলেন।বাড়িটির ভুতেরবাড়ি বলে
বেশ বদনাম ছিল,মুখার্জিবাবু এইসব একেবারেই বিশ্বাস করতেন না,একতলা বাড়িকিনে
উনিসেটা ভালোকরে সারিয়ে
ওপরে দোতলাও করে নিলেন।
বাড়িটির গায়েই ছিল একটি বেলগাছ,
সেই গাছের কয়েকটা ডাল বাড়ির ওপর
এসে পড়ছিলো তাই বাড়ি করার সময় উনি সেই ডালগুলো কেটে দিয়েছিলেন,
বাড়ির কাজ কমপ্লিট হয়ে যাওয়ার পর
মুখার্জিবাবু,ওনার স্ত্রী আর দুই ছেলেকে
নিয়ে ওই বাড়িতে থাকতে শুরু করলেন,
ওই বাড়িতে গৃহপ্রবেশের দিন রাতে উনি
স্বপ্নে একজন ন্যাড়া মাথা মানুষকে দেখ লেন,সেই মানুষটা কিছু বলতে চাইছে কিন্তু
উনি কিছুই বুঝতে পারছেন না, ঘুমের মধ্যে বোবায় ধরার মতো করে গোঙাতে লাগলেন
উনি,ওনার মুখথেকে


ঐরকম গোঙানির আওয়াজ শুনে ধাক্কা
দিয়ে ওনাকে জাগিয়ে দিলেন ওনার স্ত্রী,
ঘুম ভেঙে উনি অবশ হয়ে শুয়ে রইলেন
কিছুক্ষন,তারপর নিজের স্ত্রীকে বললেন
জানো তো সুরমা,অদ্ভূত একটাস্বপ্ন দেখ
লাম,একজন ন্যাড়া মাথা লোক কিযেন
বলছিলো আমায়,আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না,ঠিক তখনই তুমি আমায় জাগিয়ে দিলে।

ভয়ংকর ভুতের গল্প

এরপর একদিন সিঁড়ি থেকে পা পিছলে পড়ে ওনার পা ভেঙে গেল,বিছানায় শয্যাশায়ি
হয়েগেলেন উনি,সেই রাতেই
ওনার স্ত্রী সুরমা দেবী স্বপ্নে সেই ন্যাড়া মাথা,পৈতেধারী লোককে দেখতে
পেলেন,টকটকে ফর্সা গায়ের রং,গলায়
মোটা পৈতে,সাদা ধবধবে ধুতি পরনে, খালি গা,পায়ে খড়ম,সৌম্যকান্তি চেহারা
একজন পুরুষ তাঁকে বলছেন,”এই বেল গাছে আমি বাসকরি বহুবছর ধরে,তোর
স্বামী হঠাৎ করে গাছের ডালগুলো কেন
কেটে ফেললো?আমি খুব রুষ্ট হয়েছি,ও
যেন ওই গাছের তলায় একটা ছোট মন্দির বানিয়ে দেয় আর রোজ ওইখানে
ধূপ,প্রদীপ জ্বালিয়ে যেন পুজো দেয় তা
হলে আমি খুশি হবো”।সকালে ঘুমথেকে
উঠে সুরমাদেবী সেই কথা তার স্বামীকে বললেন,সব শুনে উনি হেঁসেই উড়িয়ে
দিলেন,বললেন যত্তসব আজগুবি কথা,
আমি এইসব মানিনা,সুরমাদেবী অনেক
বোঝালেন কিন্তু উনি মানতেই রাজি নন
তাই সুরমাদেবী বেকার চেষ্টা করলেন না
উনি স্নানকরে নিজে ওই বেলগাছতলায় গিয়ে ওই গাছের নিচটা ভালোকরে পরিষ্কার
করলেন,তারপর গোবর আর মাটি দিয়ে লেপে,ধূপধুনো জ্বালিয়ে দিলেন,কটা ফুলও
দিলেন।তারপর অন্য

কাজ শুরু করলেন।
ওনার স্বামী আস্তেআস্তে সুস্থ হয়ে উঠতে
লাগলেন,সুরমা দেবী ও দুই বেলাই ওই বেলগাছের নিচে পুজো দিতে থাকলেন।
সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল,একদিন মুখার্জিবাবু বললেন ওই বেলগাছটা কেটে ঐখানে জমিতে
গ্যারেজ বানিয়ে ভাড়া দেবো।স্বামীর কথা শুনে শিউরে উঠলেন সুরমাদেবী।সঙ্গে সঙ্গে
তীব্রস্বরে বাধা দিলেন উনি,কিন্তু মুখার্জিবাবু খুবই
গোঁয়ার গোবিন্দ লোক কারোর কোনো
কথাই উনি শোনেননা,তাই সুরমাদেবী খুব ভয় পেয়ে গেলেন।সেইদিনই দুপুরে
স্নান করার সময় হঠাৎ করে বাথরুমে ই
অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান মুখার্জিবাবু।ধপ
করে একটা আওয়াজ শুনে ওনার স্ত্রী
জোরে জোরে বাথরুমের দরজায় ধাক্কা
মেরে তাঁর স্বামীকে ডাকতে থাকেন কিন্তু
ভেতর থেকে কোনো আওয়াজ না পেয়ে
ছেলেদের ডেকে দরজার লক ভেঙে তাঁকে উদ্ধার করা হলো।

Bhuter Golpo In Bengali Pdf

সেদিন রাতেও সুরমাদেবী স্বপ্নে সেই পৈতেধারী লোককে দেখতেপেলেন,উনি
বললেন,”মা তোমার পূজায় আমি খুবই
তুষ্ট কিন্তু তোমার স্বামী কেন এই গাছটা
কেটে আমায় উৎখাত করতে চাইছে?ও
যতবার এই গাছ কাটতে চাইবে ততবার
আমি ওকে কষ্ট দেবো।তুমি ওকে বারণ
করো নাহলে আমি ওকে মেরে ফেলতে বাধ্য হবো।”
সেইদিন খুব ভোরবেলাই ঘুম ভেঙেগেল সুরমাদেবীর,ঘুমথেকে উঠে চটপট স্নান
সেরে নিয়ে,এক বালতি গঙ্গাজল নিয়ে গিয়ে ওই বেল গাছের তলাটা পরিষ্কার
করে ধুয়ে দিয়ে,ওখানে সুগন্ধী ধূপকাঠি
জ্বালিয়ে,প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজো দিলেন
উনি,তারপর আসন করে বসে দুইহাত জোর করে একমনে সেই দিব্য পুরুষের
ধ্যান করতে লাগলেন সুরমাদেবী,হঠাৎ
শুনতে পেলেন খট খট করে একটা শব্দ
ওনার দিকে এগিয়ে আসছে,চোখ বন্ধ করে বসে থাকলেন উনি,শব্দটা ওনার দিকে এগিয়ে
এলো,গুরু গম্ভীর গলায় কে যেন ডাকলো “মা চোখ খোলো মা”
উনি চোখখুলে দেখলেন সামনে সেই দিব্য পুরুষ দাঁড়িয়ে,টকটকে ফর্সা গায়ে
শুধু এক গাছা পৈতে,আর খাটো করে পড়া সাদা ধবধবে ধুতি পরনে,হাতে ধরা
একটা কমণ্ডল তারমধ্যে গঙ্গাজল,আর পায়ে কাঠের খড়ম।উনি বললেন শোনো
মা আমি এইবাড়ির একজন পূর্ব পুরুষ,
আমার পৈতের পর দন্ডী ভাসানোর আগেই ওই ব্রহ্মচর্য্য অবস্থায় আমার মৃত্যু
হয়,সেইথেকেই আমি এইবেলগাছে
থাকি,সূর্য ওঠার আগেই আমি গঙ্গাস্নানে
যাই, তারপর এসে আবার এই গাছেই থাকি।কাউকে কখনো বিরক্ত করিনা কিন্তু এই গাছতলা
নোংরা করলে আর এই গাছের ডাল কাটলে আমি খুব রেগে
যাই,যে করে তার ক্ষতি করি,তোমার ভক্তি আর পূজায় আমি খুবই সন্তুষ্ট শুধু
তোমার স্বামীকে বোঝাও ও যেন এই বেলগাছটা না কাটে,আমার আশীর্বাদে তোমাদের অনেক
উন্নতি হবে।এই বলে
উনি সোজা বেলগাছে উঠে গেলেন।
সুরমাদেবী ওনাকে প্রণাম করে ঘরেএসে
তার স্বামীকে সব খুলে বললো,এইবার
অসুস্থ হয়ে উনিও বেশ ভয় পেয়েছিলেন
স্ত্রীর কথা মেনে নিয়ে ওই গাছের তলায়
একটা ছোট্ট মন্দির বানিয়ে দিলেন উনি
এরপর মুখার্জিবাবুর সংসারে কোনদিন
টাকা পয়সার অভাব হয়নি,ওনার দুজন
ছেলেই ভালো চাকরী পেয়েগেল,তাঁদের
বিয়েও হলো ভালোভাবে,যতদিন কর্তা-
গিন্নি বেঁচে ছিলেন ওনাদের কোনোরকম
অসুখ বিসুখ হয়নি,বৌমারাও ওই ছোট্ট
মন্দিরে নিয়ম করে পুজো দিতো, আর সেই ব্রহ্মদৈত্যের আশীর্বাদে তারা খুবই
সুখে সেই বাড়িতে বসবাস করতে থাকল।

Share This Article