ভুতের গল্প – Bangla Bhuter Golpo – Vuter Golpo Online

Bongconnection Original Published
9 Min Read


 ভুতের গল্প – Bangla Bhuter Golpo – Vuter Golpo Online 

ভুতের গল্প - Bangla Bhuter Golpo - Vuter Golpo Online
Loading...

ভুতের ঋণশোধ
     – কমলাকান্ত সেন
“টিং টং টিং টং” শব্দে কলিং বেলটা বেজে ওঠে জানিয়ে দিল বাইরে দোরগোড়ায়
দণ্ডায়মান কোন অতিথির আগমন বার্তা। মনে মনে খানিকটা বিরক্ত হয়ে উঠে গেলাম।

ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প

Loading...


বড়দের একটা পত্রিকায় পুজো সংখ্যার জন্য একটা গল্প দেবার কথা , তাই পত্রিকার
সম্পাদক মহাশয় আগামীকাল সকালে লোক পাঠাবেন সেটি নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু
ঘন্টা কয়েক চিন্তা করেও গল্পের কাহিনী টাকে মনের মত করে ঠিক গুছিয়ে নিতে
পারছি না । কাজেই বিরক্ত হওয়ার মধ্যে কোন দোষ নেই । যাইহোক দরজা খুলে যতখানি
বিরক্ত হয়েছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দিত হলাম তিনকড়ি দাকে দেখে__তিনকড়ি
চট্টরাজ।ছোটদের জন্য মজার মজার গল্প বিশেষ করে ভূতের গল্প লেখায় তিনকড়ি দার
জুড়ি মেলা ভার।আর সাহিত্য জগতে তিনি যথেষ্ট নাম ও করেছেন । তাঁর লেখা গল্প
এখনো যে কোন কাগজে দেখলেই আমি সেটিকে গোগ্রাসে গিলি অন্যান্য পাঠকদের মত।তিন
কড়িদা তার পান চিবানো খয়রা দাঁতগুলো বের করে স্বভাবসিদ্ধ হাসি হেসে বললেন
__”বল কেমন আছো?”
__”ভালোই আছি ! আসুন, ভেতরে আসুন ।তারপর অনেকদিন পরে দেখা হল ,কেমন আছেন ?”আমি
শুধাই।
তিনি কোন উত্তর না দিয়ে চেয়ারে বসে বললেন__” গল্প লেখা চলছিল বুঝি?”
__”হ্যা এই বৃষ্টি বাদলে কোথায় আর যাবো ! তাই লেখার জন্য পেন খাতা নিয়ে
পড়েছিলাম । “বৃষ্টি বাদলের ” কথা মনে হতে হঠাৎ ই তিন কড়ি দা র দিকে চোখ পড়ল
। বাইরে ঝমঝম করে বেশ কিছুক্ষণ ধরে বৃষ্টি হয়ে চলেছে । অথচ ভদ্রলোক সেই পদ্ম
পুকুর থেকে এই দেশপ্রিয় পার্ক পর্যন্ত কি করে এলেন একটুও না ভিজে । তাই আবার
সঙ্গে ছাতাটাতাও নেই । “ট্যাক্সি করে “কথাটা মনে হতেই তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম
__”ট্যাক্সিতে এলেন?”


__”না ভাই অত পয়সা কোথায় ! কিন্তু কেন বলতো?”
_”না , মানে এই বৃষ্টিতে আপনি একটুও ভেজেন নি কিনা তাই।
__”ও তাই বল ! আমি অনেকক্ষণ আগেই এসেছি।”
__”অনেকক্ষণ আগে ?”আমি  জিজ্ঞেস করি।
__”হ্যাঁ, তুমি লিখছো দেখে ডিস্টার্ব করতে মন চাইছিলো না, বাইরে দাঁড়িয়ে
ছিলাম । সে যাক ,তুমি আমার একটা উপকার করতে পারবে?”

ভুতের গল্প PDF Download

__”কি উপকার বলুন?”
__”আমি ভাই ছোটদের একটা পত্রিকার সম্পাদকের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়েছিলাম একটা
ভূতের গল্প লিখে দেবো বলে । কিন্তু আমি লিখে দিতে পারছিনা । তুমি যদি সেটা একটু
আমার হয়ে লিখে দাও, তবে আমি ঋণ মুক্ত হই।” কথাটা শুনে অত্যন্ত বিস্মিত হলাম !
কেননা ভৌতিক গল্পের কাহিনীকার হিসেবে তিন কড়িদার বেশ সুনাম আছে । আর যার
অধিকাংশ গল্পের বিষয়বস্তুই ভূত । তিনি কিনা ভূতের গল্প লিখে দিতে পারছেন না ।
আর তা আমি লিখে দেব এবং উনি তাতে ঋণ মুক্ত হবেন । ব্যাপারটায় বেশ কৌতুহল হল ।
মনে মনে ভাবলাম তিন কড়িদা কি লেখার এন্তার ফরমায়েশ নিয়ে সময় মত সবাইকে লিখে
দিতে পারছেন না । তাই আমাকে দিয়ে লেখাতে চাইছেন । আর সে লেখা কি তিন কড়িদার
নামে বেরোবে । এইসব চিন্তার ফাঁকে আর একটা কথা আমার মনে পড়লো যে সাহিত্য জগতে
আমার আত্মপ্রকাশ বা রচনা প্রকাশ তথা প্রতিষ্ঠার মুলে তিন কড়িদার  অবদান
আছে অনেক খানি । তাই তাঁর কোন উপকারে লাগতে পারাটা আমার কাছে সৌভাগ্যজনক ।
কিন্তু মুশকিল হচ্ছে যে আমি তো আবার ভূতের গল্প লিখি না । অন্তত আজ অব্দি
লিখিনি । কারন ওই অজাগতিক তথাকথিত জিবটা সত্যিই আছে কিনা তা দেখার বা অনুভব
করার সৌভাগ্য আমার আজও হয়নি । তাই তিনকড়িদাকে বললাম__”কিন্তু দাদা আমি তো
ভূতের গল্প লিখি না, মানে আমার ঠিক চিন্তায় আসে না।”
__”আরে ভাই একটু চেষ্টা করলেই পারবে!”
__”কিন্তু দাদা, কিছু মনে করবেন না , আপনি তো ভূতের গল্প লেখেন। তবে আমাকে
দিয়ে লেখাতে চাইছেন কেন ?”আমি ইতস্তত করেও কথাটা বলেই ফেললাম ! তিনি বললেন
__”আমি লিখতে পারছি না বলেই তো এই অনুরোধটুকু করছি!”
__”কিন্তু কেন ,আপনি কি লেখা টেকা ছেড়ে দিলেন নাকি?”
__”দিতে হলো!”
__”কারণ?”
__”সে পরে জানতে পারবে, এখন তুমি লিখে দিতে পারবে কিনা বল । আমার আর সময় নেই
এক্ষুনি ফিরে যেতে হবে !” বললাম __”দেবো।  তবে গল্পের প্লট টা কি আপনি বলে
দেবেন!”
__”প্লট তুমি পেয়ে যাবে ! যদি না পাও আমাকে বাড়িতে ফোন করে জেনে নিও । আচ্ছা
উঠি।”  বলেই আমাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দরজা দিয়ে হন হন করে
বেরিয়ে গেলেন?

Bhuter Golpo Bengali

তখনই চড়চড় চড়াৎ করে বাইরে বাজ পড়ার শব্দে খেয়াল হলো মুষলধারা বৃষ্টির কথা।
“তিনকড়ি দা  এই বৃষ্টিতে কি করে যাবেন “কথাটা মনে হতেই তাড়াতাড়ি বাইরে
বেরিয়ে গেলাম তাঁকে আর কিছুক্ষণ বসে যাওয়ার কথা বলব বলে । কিন্তু বাইরে
বেরিয়ে কোথাও আর তাঁকে দেখতে পেলাম না । ঐটুকু সময়ের মধ্যে তিনি কি করে যে
রাস্তা পার হয়ে দূরে মিলিয়ে গেলেন তাও ভেবে পেলাম না । যাইহোক লেখার টেবিলে
ফিরে এসে আবার লেখায় মন দিলাম।
রোজ সকালে উঠে চা খেতে খেতে আমার কাগজ পড়ার অভ্যাস । তাই পরদিন যথারীতি সকালে
চা নিয়ে কাগজ পড়ছি, প্রথম পাতাটা উল্টে দ্বিতীয় পাতায় সবে হেডিং গুলো চোখ
বুলাচ্ছি— হঠাৎ একটা লেখা নজরে পড়তেই আমি চমকে উঠলাম। আমার চোখ দুটোকে
বিশ্বাস হচ্ছিল না । তাই ভালো করে চোখ কচলে লেখাটায় আবার নজর দিলাম । না ভুল
হয় নি । লেখা আছে লেখক তিন কড়ি চট্টরাজ প্রয়াত । হেডিং এর লেখা 3 বার
পড়লাম। তখন আমার বুকের হৃদপিন্ডে ঢাকের আওয়াজ । পুরো সংবাদটা এই রকম
ছিল__”নিজস্ব সংবাদদাতা 14 ই জুলাই:  স্বনামধন্য লেখক তিন কড়ি চট্টরাজ আজ
সকালে 7 টা 15 মিনিটে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর নিজস্ব বাসভবন পদ্মপুকুরে শেষ
নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর স্ত্রী ও দুই পুত্র বর্তমান । তাঁর বহু পুস্তক
প্রকাশিত হয়েছে ।যেগুলোর মধ্যে “স্বর্গের আদালতে ” “জাগো মানুষ ” 
“চাঁদের হাটে কেনাবেচা ” “বাঁদরের রাজধানী ” প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।তাঁর
প্রয়াণে ছোটদের সাহিত্য জগতের অপরিসীম ক্ষতি হলো!”
লেখাটা পড়ে আমি দরদর করে ঘেমে উঠেছিলাম। স্বপ্ন দেখছি কিনা ভেবে আমি আলতো করে
গায়ে চিমটি কাটলাম ।না, বেশ লাগল । মনে মনে ভাবলাম কাল সকালে মারা গেল যে লোক
সে সন্ধ্যেবেলায় এসে আমার সাথে কতগুলো কথা বলল কি করে । তাহলে কি কাগজের
লোকেরা সন্ধে 7:15 এর বদলে সকাল 7:15 করে দিয়েছে। এই ভেবে তড়াক করে উঠে পড়ে
ফোনের কাছে ছুটলাম। এক চান্সে  তিন কড়িদার ফোন পেয়ে গেলাম ।বড় ছেলে
অরিন্দম ধরেছিল __”হ্যালো আমি অরিন্দম বলছি__”
__”হ্যালো ,অরিন্দম আমি কমলকাকু বলছি, খবরের কাগজে দেখলাম——-“
__”হ্যাঁ কাকু, কাল সকালে মার চিতকারে ঘুম ভাঙলো ,বাবা কোন সময় দিলেন না
,ডাক্তার ওষুধ কিছুরই আর——”
__”কিন্তু কাল সন্ধেবেলায় তিনকড়ি দা—-“বলেই আমি থেমে গেলাম । দিয়ে বললাম
“হ্যালো অরিন্দম আমি যাচ্ছি ! আমি তো জানতামই না। কাগজে এক্ষুনি পড়লাম।”@kk
__”হ্যাঁ ,আসলে আপনার ফোন নাম্বার পাওয়া যায়নি তাই—-“
__”ঠিক আছে ।” বলেই রিসিভার নামিয়ে রাখলাম। মনে মনে ভাবলাম কি অদ্ভুত যে লোকটা
সকালে মারা গেল সে সন্ধ্যায় আমার সাথে এসে কথা বলে গেছে বললে সবাই আমাকে পাগল
ভাববে।তাই কাউকে আর কিছু বললাম না । ছোটদের সেই ম্যাগাজিনের সম্পাদকের কাছে তিন
কড়িদার নাম দিয়ে একটা ভূতের গল্প আমি লিখে দিয়ে এসেছিলাম।
তবে আজও সেদিনের সেই সন্ধ্যায় তিন কড়িদার সাথে কথা বলেছি ভাবলেই আমার গায়ের
লোম খাড়া হয়ে ওঠে ,সারা শরীর দু একবার কেঁপে ওঠে ভয়ে।
                     
   ***সমাপ্ত***

Share This Article