Bangla Bhuter Golpo 2023 বাংলা ভূতের গল্প – Horror Story In Bengali

Bongconnection Original Published
9 Min Read


 Bangla Bhuter Golpo 2023 বাংলা ভূতের গল্প – Horror Story In Bengali

Bangla Bhuter Golpo 2023 বাংলা ভূতের গল্প - Horror Story In Bengali
Loading...

Bangla Bhuter Golpo New

ভুতুড়ে চতুর্দশী
————
ভূত চতুর্দশী। হিন্দু শাস্ত্র মেনে অনেকেই এই দিনটিতে বাড়িতে চোদ্দ প্রদীপ
জ্বালান এবং চোদ্দরকমের শাক খেয়ে থাকেন। কিন্তু অনেকের কাছেই হয়তো এই রীতির
কারণ অজানা। আমার কাজই হলো বিভিন্ন ব্যাপারে খোঁজ তল্লাশি করা মানে এককথায়
রিসার্চ করা, তবু ঠিক কোন বিশ্বাসে ভর করে এই নিয়ম পালিত হয় ঘরে ঘরে তা এখনো
পুরোপুরি জানা হয় নি। 


হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয় যে এদিন মৃতরা মর্ত্যে আসেন৷ তাঁদের খুশি করতে এবং
অতৃপ্ত আত্মাদের অভিশাপ থেকে বাঁচতেই কিছু প্রথা মানা হয়। সেই প্রথারই অংশ
চোদ্দ শাক খাওয়া ও চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানো। হিন্দুদের বিশ্বাস, মৃত্যুর পর দেহ
পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যায়। অর্থাৎ আকাশ, মাটি, জল, হাওয়া, অগ্নি- প্রকৃতির এই
পাঁচ উপাদানের মধ্যেই মিশে থাকেন তেনারা। 

ভয়ংকর ভুতের গল্প

Loading...
এইসব খোঁজ করতে করতেই রাত এগারোটার মত বাজল। অফিস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা
দিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে ভাবলাম একটু চা খেয়ে বাড়ি যাই। বাড়ির সামনে গলির মুখে
থাকা চায়ের দোকানটায় গিয়ে চা চাইলাম। 


দোকানদার দাদা কেটলির শেষ চা আমার হাতে দিয়ে দোকান বন্ধ করার জন্য গোছাতে
লাগলেন। শীতের শুরুয়াত, ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে, কালকেই কালীপুজো, এই সময় লোকজন কম
তাই, অন্যান্য দিনে অনেক রাত পর্যন্ত দোকান খোলা থাকলেও আজকে একটু তাড়াতাড়ি
দোকান বন্ধ করে দিচ্ছেন তিনি। 
চায়ে চুমুক দিতেই দেখলাম এক লোক দৌড়ে এসে হাপাতে হাপাতে জল চাইলো দোকানদারের
কাছে। কেমন পাগল পাগল লাগছে লোকটাকে। গায়ে ছেড়া কোট আর পরনে ছেড়া একটা প্যান্ট
যাতে আবার দড়ি দিয়ে বাঁধা কোমরের সাথে! 
লোকটা দোকান থেকে জল নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে মাথায় ঢাললো। মানবিকতার কারণে
জিজ্ঞেস করলাম, 
-আপনার কি শরীর খারাপ? কি হয়েছে দাদা? 
লোকটা মাথা উঠিয়ে বলল, 
-ভাই আমার নিজেকে পাগল পাগল লাগছে, মাথা ঘুরাচ্ছে। এই বলে, লোকটা চোখে মুখে
ভালো করে জল দিলো। দিয়ে দোকানের সামনে রাখা বেঞ্চে বসলে দোকানদার দাদা
বলল, 
-এখন আর বসা যাবে না, দোকান বন্ধ করবো। 
আমার চা ও শেষ, দাদাকে কাপটা ফেরত দিতে দিতে লোকটাকে বললাম, 
আপনার বাড়ি কোথায়? নিজে বাড়ি যেতে পারবেন? 
লোকটা বলল, -ভাই, ওই যে দূরে নারকেল গাছটা দেখছেন, ওইটা আমার বাসা! 
আমিও ভাবলাম নারকেল গাছের আসে-পাশে থাকা বাড়িতেই ওনার বাড়ি। 
বললাম, -চলুন আপনাকে বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিই! শরীর কি বেশি খারাপ করছে? ডাক্তার
দেখাবেন? 
লোকটা আমার সাথে হাটা শুরু করে বলল, 
-ভাই আমার শরীর খারাপ না, মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আর কী কারণে খারাপ হয়েছে তা
শোনার আগে একটা কথা বলি শোনেন, আমি মানুষ না, ভূত! দোকানে এসে মাথায়, মুখে জল
ঢালার জন্য মানুষের রূপ নিয়েছি। 

Bhuter Golpo In Bengali

এইবার হাটা থামিয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলাম এই লোকটা শিওর পাগল!
কনফার্ম পাগল। এর সাথে কোন দুঃখে যে মানবিকতা দেখাতে গেলাম! এই লোকটাই এখন না
আমার মাথায় একটা বাড়ি মেরে বসে! 
আরো পড়ুন,
-কি পাগল ভাবছেন আমাকে? পাগল ভাববেন না প্লিজ, প্রমাণ দেখাচ্ছি আমি যে ভূত! তবে
ঘাড় ঘুরিয়ে না! আপনারা জানেন যে ভূত তার ঘাড় চারদিকে ঘোরাতে পারে, এটা একটা
মিথ্যা কথা! ঠাকুমার ঝুলির ওই ফাউল বুড়ি মহিলা এই সব ছড়াচ্ছে আমাদের ভূতদের
নামে। এই মহিলাকে নিয়ে কয়েকবার আমাদের ভূত সমাজে বৈঠক মানে মিটিং বসেছে। মিথ্যা
বানোয়াট কথা বলে এই মহিলা আমাদের মান সম্মান কমিয়ে দিচ্ছে! আমরা নাকি, নাঁকি
সুরে কথা বলি! কাঁচা মাছ আর মাংস খাই! কেমন মিথ্যুক ফাউল বদ মহিলা! এই যে আমি
কথা বলছি আপনার সাথে তা কি নাঁকি সুরে বলছি? বলুন আপনি? যাইহোক এই দেখুন, আমি
মাটি থেকে দুই হাত উপরে উঠলাম! বলে সাই করে মাটি থেকে উড়ে গেল।
আরো বলে যে, -আমরা উড়তে পারি এটা সত্যি, আর আমাকে উড়তে দেখে আপনি চিৎকার করতে
গিয়েও পারেন নি কারণ, আমি আপনার ভয় উড়িয়ে দিয়েছি জাদু করে! এইজন্য আপনি আমাকে
আর ভয় পাচ্ছেন না। 

Bhayankar Bhuter Golpo 2023

আসলেইতো, এই লোকটা আকাশে উড়ছে দেখেও আমি ভয় পাচ্ছি না! কি অদ্ভুত! বরং তার সাথে
আমার কথা বলতে মজাই লাগছে! কেমন নিরীহ লাগছে লোকটাকে, থুড়ি, ভূতটাকে! 
-বুঝলেন, আমরা জাদু জানি। তবে ক্ষতি করি না কারো। যে ভূত মানুষের ক্ষতি করে
আমরা সেই ভূতকে ভূতদের সমাজে থাকা জেলে বন্দি করে রাখি। এখন আমার মাথা কেন
ঘুরোচ্ছিল তা বলি, বুঝলেন, ওই যে নারকেল গাছটা দেখছেন? ওইটা আমার বাসা। কি
ভাবছেন ভূতরা তো শেওড়াগাছে থাকে, আমি কেন নারকেল গাছে? ওই ঠাকুমার ঝুলির ওই বদ
মহিলার কারণে এইসব জানেন! আসলে আমরা গাছে থাকি তবে যেকোনো ভালো মানের গাছ হলেই
হলো। শুধুই শেওড়াগাছে থাকি, এটা ডাহা মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। ওই বদ মহিলা,
মানুষের বাচ্চাদের কাছে আমাদের নামে আজেবাজে কথা ছড়াচ্ছে এই বিষয়ে নিন্দা করা
ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নাই। 
-এখন শুনুন কী হয়েছে, আমি থাকতাম শহরের বাইরে ধাপার কাছে আমার পরিবার সহ! আপনার
বৌদি আর দুই বাচ্চা সহ ট্যাংরা থানার তেরো নাম্বার ওয়ার্ডের এক আম গাছে ছিলো
আমাদের সুখের সংসার। কিন্তু ঐ ধাপার মাঠের শহরের যত্ত আবর্জনা পুড়িয়ে রিসাইকেল
করার ভয়ানক প্রকল্প আসার পর থেকে ঐখানকার অবস্থা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে! আমার
বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে, ধুলোবালিতে ভরে উঠছে বাসা! আপনার বৌদি বলল, যে
করেই হোক ট্যাংরা ছেড়ে থাকার মতো এট্টা বাসা খুঁজতে! বাচ্চা দুটোকেও বড়ো করতে
হবে, শিক্ষা দিতে হবে, ভূতের মত ভূত বানাতে হবে তাই কলকাতার বাইরে কোনো একটা
স্কুলের পাশে বাসা ঠিক করতে বলেছে সে। 
-অনেক খুঁজে আপনাদের এই এলাকায় স্কুলের পাশে এই নারকেল গাছটা দেখে এখানে বাসা
ঠিক করবো বলে গত দুইদিন ধরে এখানে থেকে দেখছিলাম আমার পরিবার নিয়ে থাকার উপযোগী
কিনা ঐ গাছটা। যদিও বা বাসাটা ছোট হয়ে গিয়েছে কিন্তু গ্রেটার কলকাতায় গাছ আর কই
পাবো বলুন? অনেক কষ্টে খুঁজে এই গাছটা ঠিক করেছি। দুইদিন থেকে মন্দ লাগছে না এই
গাছটা, তাই আগামীকাল ট্যাংরায় ফেরত গিয়ে আপনার বৌদি আর ভাইপো দুটো কে নিয়ে আসবো
চিন্তা করে খুব আনন্দে ছিলাম আমি! 
-কিন্তু ঝামেলা বাধিয়েছে ওই যে গাছটা পাশে পাঁচতালা বাড়িটা দেখছেন? ওই বাড়ির
চারতলার একটি মেয়ে! গাছের পাশেই তার বারান্দা। গত দু-দিন মেয়েটার দেখা নেই।
আজকে সকাল ঘুম ভাঙ্গে মেয়েটার ফোনে কথা শুনে। বারান্দায় এসে মোবাইলে কথা শুরু
করে মেয়েটা, কথা ধরণ থেকে বুঝলাম সে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে। 
আরো পড়ুন,
-তা হয়েছে কী জানেন? সকাল থেকেই মেয়েটা একের পর এক মিথ্যা কথা তার বয়ফ্রেন্ডকে
বলে যাচ্ছে! আমরা ভূতরা সব সহ্য করতে পারি, মিথ্যা কথা সহ্য করতে পারি না। তবুও
মেয়েটার সকালের কথা গুলো সহ্য করে নিচ্ছিলাম কারণ মানুষের আশেপাশে থাকতে গেলে
তার সাথে অভ্যস্ত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু মেয়েটার রাতের মিথ্যা কথা আমি
সহ্য করতে পারলাম নাহ, আমি ঘুমের প্রস্তুতি নিতেই দেখলাম মেয়েটা ফোন হাতে
বারান্দায় চলে এসে কথা বলা শুরু করেছে, আর তখন ওপাশ থেকে তার বয়ফ্রেন্ড জিজ্ঞেস
করলো, -বাবু তুমি খেয়েছো? মেয়েটা বলল, আমার বাবু না খেলে আমি কি খেতে পারি? না
বাবু, খাই নি! তুমি না খাওয়া পর্যন্ত আমি কিচ্ছু খাবো না বাবু! অথচ মেয়েটার এক
হাতে ফোন আরেক হাতে কে.এফ.সির আধা খাওয়া বার্গার! মেয়ের কথা শুনে আমি ধড়াস করে
গাছ থেকে নিচে পরে যাই, মাথায় ব্যথা পাই! কোমর ভেঙ্গে যায় আমার। এক ঘন্টা ইট
দিয়ে বাড়ি মেরে মেরে কোমর টাকে ঠিক করে মাথায় জল ঢালতে গিয়েই আপনার সাথে দেখা
হয়। এখনো মাথা ঘুরছে আমার! এই হচ্ছে ঘটনা। আপনার অনেক সময় নষ্ট করেছি! যান আপনি
বাড়িতে যান, আমিও নতুন কোনো বাসস্থান খুঁজি। এই মেয়ের পাশে বাসা নিলে আমার
বাচ্চা দুটোও বড়ো হলে তাদের ভূত প্রেমিকার সাথে মিথ্যা বলা শুরু করবে! 
বাড়িতে ঢুকে ঝিম মেরে কিছুক্ষণ বসে ছিলাম। তারপর পিঙ্কিকে ফোন করে জিজ্ঞেস
করলাম, কে.এফ.সি.র বার্গার কেমন ছিলো? পিঙ্কি ওপাশ থেকে থতমত খেয়ে বলল,
-ওমা কে বলল, আমি বার্গার খেয়েছি? বলো না, কিভাবে জানলে? 
এখন কী করে তাকে বলি, তোমার বাড়ির পাশে নারকেল গাছটায় থাকা ভূতটা বলেছে! তোমার
মিথ্যা শুনে বেচারা ভূতেরও মাথা ঘুরাচ্ছে… 

Share This Article