স্বাধীনতা দিবসের গল্প – Independence Day Story In Bengali 2023

Bongconnection Original Published
9 Min Read

 স্বাধীনতা দিবসের গল্প – Independence Day Story In Bengali 2023

স্বাধীনতা দিবসের গল্প - Independence Day Story In Bengali 2023
Loading...

স্বাধীনতা দিবসের গল্প

স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার 


সেবার ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসে নীলু আমাকে নিয়ে গেলো ওর রাঙামাসির
বাড়িতে।  রাঙামাসির ছেলে রজত আমাদের কলেজে পড়তো। আমার সিনিয়র রজত 
ইঞ্জিনিয়ারিং পাস্ করে মুম্বাইতে চাকরি পেয়েছে।  রজত আমার কলেজের ছাত্র
হিসাবে আমাকে চিনতো।  রাঙামাসি রজতের চাকরি পাবার খবর দিয়ে আমাদের দুজনকে
দুপুরে খেতে ডেকেছিলেন। সেদিন নীলু খব সাজগোজ করে শাড়ি পরে আমার সঙ্গে
বেরিয়েছে।  ওকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম ,” তুই আজ তোর রোজকার জিন্স আর টপ
ছেড়ে শাড়ি পরলি  যে “? নীলু একগাল হাসি দিয়ে বলেছিলো ,” স্বাধীনতা
দিবসে একটু দেশি সাজ পোশাক না পরলে আমার কনজারভেটিভ রাঙামাসি হয়তো রাগ
করবে।  তাই নিজের এই পরিবর্তনের স্বাধীনতা নিলাম”।  

স্বাধীনতার ছোট গল্প

Loading...
রাঙামাসির বাড়িতে পৌঁছে দেখি রাঙামাসির মুখ থমথমে।  রজত একটু আগেই বাজারে
বেরিয়ে গেছে মাংস আনতে।  আমাদেরকে বসার ঘরে বসিয়ে দিয়ে রাঙামাসি তার
দুঃখের কথা শুরু করে দিলেন।  রজত রাঙামাসির একমাত্র সন্তান।  সে
কলকাতা ছেড়ে সুদূর মুম্বাই চলে যাবে তাই রাঙামাসির মন খারাপ। রাঙামাসি নীলুকে
জিজ্ঞেস করলেন ,” আচ্ছা  নীলু ইঞ্জিনিয়ারিং পাস্ করে কি কলকাতায় কোনো
চাকরি পাওয়া যায়না যে ওই সুদূর মুম্বাইতে গিয়ে চাকরি করতে হবে “? নীলু বলে
,” ও মাসি মুম্বাই দূর কোথায়।  প্লেনে মোটে  দু ঘন্টা লাগে। 
এই প্লেনে উঠে ঘুম লাগাবে , ঘুম ভাঙলেই দেখবে মুম্বাই পৌঁছে গেছো”। রাঙামাসি
অমনি নীলুকে থামিয়ে দিয়ে বললেন ,” কোথায় বাড়ির ছেলে দুটো মাছ ভাত খেয়ে
অফিস করতে যাবে , তা না দূর বিদেশ বিভুঁইতে গিয়ে  ছেলে আমার কি ভাবে
নিজেকে ম্যানেজ করবে তা আমি ভেবে পাচ্ছি না”। নীলু তখন মাসিকে বলে ,” তড়িঘড়ি
রজতদার বিয়ে দিয়ে দাও , তা হলে ওই বিদেশ বিভুঁইতে রজতদার খাওয়া দেওয়ার কোনো
সমস্যা থাকবে না’। রাঙামাসি তখন উত্তর দিলেন ,” দেখ নীলু বিয়ের পর ছেলেদের উপর
সব দখলদারি বৌর হাতে চলে যায়।  মা হয়ে এতো তাড়াতাড়ি আমি আমার ছেলেকে
হারাতে চাইনা।  তার চাইতে ছেলে আমার ওখানে চাকরি করতে করতে কলকাতায় একটা
চাকরি খুঁজে পেতে নিক।  তারপর কলকাতায় এসে স্থিতু হলে না হয় ছেলের বিয়ে
দেবার কথা ভাবা যাবে”। নীলু তখন বলে ,” মাসি তুমি রজতদাকে নিয়ে এতো ভাবছো কেন
? রজতদা পাঁচ বছর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে হোস্টেলে থেকে পড়লো , কাজেই ও ভালোভাবে
জানে কি ভাবে নিজের সব কাজ ম্যানেজ করা যায়।  তুমি এই নিয়ে বেশি ভেবো
না”। রাঙামাসি অমনি ঝাঁঝিয়ে উঠে বললেন ,” ভাববো না মানে ? যাদবপুরে হোস্টেলে
থাকার সময়ে প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় বাড়ি চলে আসতো আর সোমবার সকালে ফিরে
যেত।  তাই ওর বাড়ি থেকে দূরে থাকাটা টের পাইনি। কিন্তু এখন মুম্বাই চলে
গেলে হয়তো ন মাসে ছ মাসে একবার বাড়ি আসবে।  ততদিন আমি একলা কি ভাবে
কাটাই বল দেখি”। 

আমি রাঙামাসির কথা শুনছি আর ভাবছি এই সমস্যা তো সব মায়েদের চিরকালীন
সমস্যা।  কেউ তার সন্তানকে নিজের কাছছাড়া করতে চায়না। তখন শুনি নীলু
বলছে ,” মাসি অত সেন্টিমেন্টাল হলে আজকালকার দিনে তুমি টিকতে পারবেনা। 
সন্তান তো একদিন বাপমায়েদের কাছছাড়া হবেই সে কি তুমি আটকাতে পারবে।  কত
কারণে সন্তান দূরে সরে যায়।  সে চাকরির সূত্রে হোক বা বিয়ে করার পর
আলাদা সংসার পাতার কারণে হোক।  সেটাই তো দুনিয়ার নিয়ম। সংসারের চাবিকাঠি
রীলে রেসের মতন সময়ে সময়ে হাতবদল হয়”। তখন রাঙামাসি বলছেন ,” রজত নিজের
পেটের  সন্তান হয়ে দূরে চাকরি নিয়ে চলে যাচ্ছে স্রেফ নিজের দায়
দায়িত্ব এড়ানোর জন্য।  এখন তোর মেসো রিটায়ার করেছেন।  সংসারের
রোজকার খরচ একলা টানতে পারছেনা।  সেই সংসারের খরচের দায়িত্ব থেকে পালিয়ে
যেতে চায় আমার পেটের  সন্তান।  বল সেটা কি কোনো মায়ের ভালো লাগে “?
নীলু বললো ,” মাসি তুমি ভুল বুঝছো।  হয়তো নিজের ক্যারিয়ারের ভালোর জন্য
দাদা ওখানে চাকরি নিয়েছে। ও যদি নিজের ভালো না বোঝে তবে কে ওর হয়ে ভালো
বুঝবে”। 

স্বাধীনতার গল্প রচনা

কিছুক্ষণ পরে রজতদা বাজার থেকে ফিরলো। নীলু রজতকে নতুন চাকরি পাবার জন্য
কনগ্রাচুলেশন জানালে , রজত বললো ,” দূর কলকাতা ছেড়ে যেতে মোটেই ইচ্ছে
নেই।  নেহাত পেটের  তাগিদে মুম্বাই যেতে হবে।  দেখি সুযোগ পেলে
কলকাতায় চাকরি নিয়ে ফিরে আসব”। এরপর রজত হিসাব দিতে বসলো কলকাতায় কি আছে যা
অন্য শহরে নেই। কলকাতার সংস্কৃতিক আবহাওয়া অন্য শহরে নেই , কলকাতায় সাধারণ
মানুষের মানবিক মুখ অন্য শহরে নেই , কলকাতার মতন সস্তা অন্য কোন শহর নয় ,
কলকাতার মতন ইন্টেলেকচুয়াল আলোচনা আর কোন শহরের লোক করেনা এই সব একে একে
আমাদের বোঝাতে লাগলো।  এক সময়ে নীলু রজতকে থামিয়ে দিয়ে বললো ,” দাদা
তুমি মনে হয় বড় সেন্টিমেন্টাল হয়ে পড়ছো। সেন্টিমেন্ট থাকা ভালো কিন্তু তাকে
আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকলে হবে?  বাস্তব যে অন্য কথা বলে। “। রজত নীলুর সঙ্গে
তর্ক শুরু করে দেয়।  রজতের বক্তব্য মানুষের সবচাইতে বড় সম্পদ তার
অনুভূতি প্রবন মন।  সেন্টিমেন্ট না থাকলে মনের বিভিন্ন রঙের সদ্ব্যবহার
করা যায়না। এই সব বড় বড় কথা বলে   রজত নীলুকে চেপে বসিয়ে
দিলো।  সব শেষে নীলু খালি বললো ” এই সেন্টিমেন্ট থাকা ভালো।  কিন্তু
সেন্টিমেন্টের বন্ধনে ধরা পড়লে কিন্তু আখেরে নিজের ক্ষতি হবে। কত ছেলে মেয়ে
বাইরে পড়তে যায়না বাপ্ মায়ের সেন্টিমেন্টের চাপে।  কত লোক নিজেদের
ক্যারিয়ারের ক্ষতি করে স্রেফ কলকাতায় থাকবে বলে চাকরি ছেড়ে বা ট্রান্সফার
নিয়ে কলকাতায় চলে আসে। এতে তাদের আখেরে  কোন লাভ হয়না।  

স্বাধীনতা গল্প 2023

সেদিন আমি চুপচাপ বসে নীলু আর রজতের তর্ক শুনতে থাকি।  শেষে ফিরে আসার
সময়ে রজত খালি বললো ,” আমি যতই সেন্টিমেন্টাল হই  না কেন , নিজের ক্ষতি
যাতে না হয় সে বিষয়ে আমি খুব সজাগ।  তাই মায়ের হাজার ব্যারন করা সত্বেও
আমি মুম্বাই যাবো নিজের ভাগ্যের অন্বেষণ করতে”।  সেদিন এসপ্ল্যানেড
বাসস্ট্যান্ডে দুজনে চা খাচ্ছি তখন একটা বাচ্চা ছেলে তিরঙ্গা ফ্ল্যাগ
বিক্রি  করতে এসেছিলো।  ছোট ছোট ফ্ল্যাগ হাতে নিয়ে কিনতে অনুরোধ
করছিলো।  বাচ্চাটাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে মন চাইছিলনা।  তাই আমি
একটা টাকা দিয়ে ফ্ল্যাগ কিনে নিজের হাতে ধরে রাখলাম। আমার ফ্ল্যাগ কেনা দেখে
নীলু জিজ্ঞেস করলো, ” এই স্বাধীনতা দিবসে তোমার অঙ্গীকার কি “? নীলুর করা এমন
প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই।  আমি জানি স্বাধীনতা দিবস মানে স্কুলে ,
পাড়ায় , ক্লাবে  ফ্ল্যাগ তোলা , জাতীয় সংগীত গাওয়া , স্কুলে বা
পাড়ায়  বাচ্চাদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ , পাড়ার ক্লাবে মাইকে তারস্বরে
দেশপ্রেমের গান বাজানো আর চারিদিকে ছুটির আবহাওয়াতে নিজেকে হারিয়ে ফেলা , আর
দুপুরে বাড়িতে মাংস ভাত খেয়ে ঘুম দেওয়া।  তার মধ্যে কোনোদিন কোন
অঙ্গীকার করার কোনো প্রস্তাব তো কেউ দে নি।  তবু নীলুর প্রশ্নের উত্তর
দিতে বলি ,” স্বাধীনতা মানে মুক্তি।  তাই আমি সবার সব রকমের বন্ধন থেকে
মুক্তি চাইবার অঙ্গীকার করবো”। নীলু তখন বললো ,” মানুষের সবচাইতে আগে মুক্তি
পাওয়া প্রয়োজন তার সেন্টিমেন্টের বন্ধন থেকে।  ওই বন্ধন আছে বলেই আমরা
আমাদের যা ন্যায্য দাবি , যা করলে ভালো হয় তা করতে পারি না।  কাজেই সকলকে
প্রকৃত স্বাধীন হতে হলে  হলে তাদের কেবল সেন্টিমেন্টের নাম করা প্রত্যাশা
ত্যাগ করার মানসিকতা থেকে মুক্তি  পেতে হবে। সেন্টিমেন্ট নামক বিশ্বাসী
হাতিয়ার ত্যাগ না করলে প্রকৃত মুক্তি পাওয়া যাবে না। তাই তো রুদ্রর ভাষায়
তোমাকে বলি 
“যারা কোনোদিন আকাশ চায়নি নীলিমা চেয়েছে শুধু,
করতলে তারা ধরে আছে আজ বিশ্বাসী হাতিয়ার
পরাজয় এসে কণ্ঠ ছুঁয়েছে লেলিহান শিখা,
চিতার চাবুক মর্মে হেনেছো মোহন ঘাতক
তবুও তো পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে মুখর হৃদয়,
পুষ্পের প্রতি প্রসারিত এই তীব্র শোভন বাহু।
বৈশাখী মেঘ ঢেকেছে আকাশ
পালকের পাখি নীড়ে ফিরে যায়–
ভাষাহীন এই নির্বাক চোখ চোখ আর কতোদিন?
নীল অভিমানে পুড়ে একা আর কতোটা জীবন?
কতোটা জীবন?’
‘কিছুটা তো চাই– হোক ভুল হোক মিথ্যে প্রবোধ,
অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাক, জ্যোৎস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই
কিছুটা তো চাই, কিছুটা তো চাই… “
আরো পড়ুন,

Share This Article