Romantic Love Story In Bengali – রোমান্টিক লাভ স্টোরি – তুমি এলে তাই

Bongconnection Original Published
17 Min Read


Romantic Love Story In Bengali – রোমান্টিক লাভ স্টোরি – তুমি এলে তাই

Romantic Love Story In Bengali - রোমান্টিক লাভ স্টোরি - তুমি এলে তাই
Loading...

Romantic Love Story In Bengali

Loading...
তুমি এলে তাই
       – তুলিকা রায়
।।১।।
হাতের গাছকৌটো, শাড়ির আঁচল আর মনের অনেকটা দ্বন্দ্ব  সামলে যখন
কনের  সাজে বসলাম, তখন সন্ধ্যে নামছে। নতুন শাড়ী, গয়না, কত উপহার, কত
লোকজন,  হইহই, সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু আমি, এটা দেখে মনে মনে যে আনন্দ
হচ্ছিল না,  সেটা বলা ভুল। কিন্তু অনেক আনন্দের মাঝেও একটা ভীষণ রকম
অন্তর্দ্বন্দ্ব কাজ  করছিল। কারন একটাই, যে মানুষটার সাথে সারাজীবন কাটাতে
যাচ্ছি, তাকে তো  সেভাবে চিনিই না।
**************
আমি রুমেলা, রুমি, ভবানীপুরের গাঙ্গুলী বাড়ির সবথেকে ছোট সদস্য। বাড়ির 
পরম্পরা মেনে দাদুর সামনে নিজের পছন্দকে আর দাঁড় করানোর সাহস জোটাতে 
পারিনি। তাই, প্রেম, ভালোবাসা, এসব কী তা কিছুই বুঝিনি। গ্র্যাজুয়েশন
পাশ  করতে না করতেই বিয়ের সম্বন্ধ দেখা শুরু। নাহ, বাড়ির কাউকে বলতে
পারিনি,  আমি এখন বিয়ে করতে চাই না, আমার জীবনটাকে আমি আমার মতো করে
বাঁচতে চাই,  পারিনি বলতে।

আর বিয়ের পর আমার জীবন যে আমার নয়, সেই শিক্ষা অনেক ছোট বয়স থেকেই মা
কাকীমার থেকে পেয়েছি।


**************

True Love Story In Bengali Language

প্রথম যেদিন দেখা করতে গেছিলাম, একটা কফিশপে, বাবার পছন্দ করা এই পাত্রটি আমার
যাওয়ার খানিক আগে থেকেই সেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায়।
যাদের কাছে সময়ের দাম নেই, তাদেরকে এতটুকুও ভালো লাগে না, যাক, সময়ের
মূল্যবোধটা আছে তাহলে।
চোখে সানগ্লাস, টিশার্ট, হাতে ঘড়ি, ব্যাকব্রাশ চুলে, হ্যাঁ, মানছি ভাল 
লাগছিল, কিন্তু এভাবে কারো সাথে দেখা করে – কী যে বলবো, এটা ভেবেই আমার 
মাথা খারাপ হচ্ছিল।
তা সেই পাত্রের বাড়ির লোকজনগুলো ভারী ভালো মানুষ, শুধু যার সাথে আজীবন 
কাটানোর কথা সেটাই বোঝা দরকার, কিন্তু ২ঘন্টার সাক্ষাতে, আর ঠান্ডা ঘরের 
কফিতে একটা মানুষ মুখোশ পরে নাকি নয়, তা বুঝবে কার সাধ্যি? তায় চোখ
দুটোও  না দেখতে পাওয়ায় আমি সেই অকূল পাথারেই।
হ্যাঁ, ছেলেটি ভদ্র এটা বলতে হবে, চেয়ারটা এগিয়ে দেওয়া, বা রাস্তায় 
আমায় ভিতর দিকে রেখে হাঁটা, বা ক্যাবে ওঠার সময় দরজা খুলে দেয়া, এই 
ভদ্রতা বোধগুলো তার চরিত্রে বিদ্যমান দেখে ভাল লাগল।
আমায় সেভাবে কোন প্রশ্নই করল না, আমার কিছু পছন্দ অপছন্দ ছাড়া। একী  রে?
আমিও জানাতে চাইতে পারিনি কিছু। আপাত দৃষ্টিতে ভদ্র এই ধারণাটুকু  নিয়েই
বাড়ি ফিরেছিলাম সেদিন।
জীবনটা নিয়ে যে জুয়া খেলতেই যাচ্ছি, এটা ধরেই নেওয়া যায়।
বাড়ির সকলের পছন্দের শাড়ী, গয়না, সাজ-সরঞ্জাম, ক্যাটারিং, পাত্র, সব মিলিয়ে
ভাগ্য নির্ধারণ আমার হয়েই গেছল।
ভবানীপুরের গাঙ্গুলী বাড়ি থেকে শোভাবাজারের চ্যাটার্জী বাড়ি, দক্ষিণ 
কলকাতার চওড়া রাস্তা থেকে উত্তর কলকাতার অলিগলি, আধুনিকতা থেকে
বনেদিয়ানা,  আমার রাস্তাটা এই পরিধিটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেল।
পাশের মানুষটা  কেমন হবে সেটার উপর সুতোয় বাঁধা আমার ভাগ্য, জীবনটা
যন্ত্রের মতো হবে না  মানুষের মত।
এসব এলোমেলো ভাবনার মাঝেই বিয়ের লগ্ন এসে উপস্থিত।
**************

Heart Touching Love Story In Bengali

বিয়ের আগে খুব একটা কথাবার্তা, দেখা সাক্ষাৎ কিছুই হয়নি, সামনে সামনি 
দেখা একবার, ফোনে কথাও হাতে গোনা কয়েকবার। তাই, মানুষটাকে চেনা অসম্ভব।
পানপাতা সরিয়ে যখন ঐ চোখদুটোর দিকে তাকালাম, নাহ, আমার পেটের ভিতর কোনো
প্রজাপতি ওড়েনি, বুকের ধুকপুকানি যেন অনেকটা ধীর হয়ে গেল।
কেমন যেন একটা ভরসার আভাস সেই চাহনিতে। মনের ভিতরের দ্বন্দ্বও যেন 
খানিকটা প্রশমিত হল। জানি না কী আছে সেই চাহনিতে, কিন্তু আমার মনটা এক 
অজানা কারণেই শান্ত হলো।
**************
হোমের আগুনে খই পোড়ানোর সময়, বা ঘটে রাখা হাতদুটো, প্রথেম সেই  মানুষটার
ছোঁয়ায় উদ্বেলিত হচ্ছিল মনটা। সেই স্পর্শেও অন্যরকম একটা  অনুভূতি
পাচ্ছিলাম, সত্যিই আশা করিনি সেটা।
প্রতিটা মেয়েরই সিঁদুর দানের পরের অনুভুতিটা আলাদা রকমেরই সুন্দর, 
হ্যাঁ, আমারও হচ্ছিল। চারপাশের আলোর রোশনাই আর সানাইয়ের মাঝে একটা দিনের 
জন্য এই বিশেষ ‘আমি’কে নিয়ে বিভোর হয়ে যাচ্ছিলাম, তারপরই ফটোগ্রাফারের 
চাহিদা অনুযায়ী পোজ দিতে গিয়ে সেই মানুষটা যখন তার হাত দিয়ে ধরল
আমায়,  বারবার তার দিকে তাকিয়ে, তার ছোঁয়ায় একটা কথাই মনে হচ্ছিল, খুব
একটা  খারাপও না।
।।২।।

গাড়িটা যখন শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে এগোল, পিছনে সমস্ত প্রিজন, আমার মা 
বাবা, সবাইকে ছেড়ে আমি চললাম এক, চোখটা একবারও ঝাপসা থেকে স্বচ্ছ হচ্ছিল 
না। হঠাৎই আমার হাতের উপর আর একটা হাত,”কষ্ট হচ্ছে জানি, কিন্তু এতো
কাঁদলে  তো শরীরটা খারাপ হবে, বুঝলে?” বলেই জড়িয়ে ধরল আমার হাতটা,
আদিত্য।

হ্যাঁ, বলাই হয়নি নামটা এতক্ষণ, আদিত্য, আদিত্য চ্যাটার্জী।
না, সেই ছোঁয়ায় কোনো কামনার স্পর্শ আমি পাইনি, তাই স্বামীরুপী অজানা 
পুরুষের ছোঁয়ায় কোন অস্বস্তি আমার হচ্ছিল না। বরং, গাড়ি যখন ছুটছিল
তখন  মনে হচ্ছিল, না, একা নই।
**************

New Romantic Love Story In Bengali

অজস্র আচার নিয়ম, বৌভাতের অনুষ্ঠানের পর ক্লান্ত হয়ে বসেছিলাম একটু। 
বাইরের ঘরে হৈহট্টগোল তখনও, টুং করে ফোনে এসএমএস টা ঢুকল, “একটু রেস্ট
করে  নাও, কায়দা করে সকলকে তোমার ঘর থেকে সরালাম, বাই।”
নাহ, নতুন বাড়ি, নতুন মানুষজন, ফুলের গন্ধ, ক্যাটারিং-এর সুবাস, লাল নীল আলো
এসবের ভিড়ে নিজেকে সত্যিই আর একটুও একা লাগছিল না।
**************
ফুলশয্যার রাত্রে যখন আমার অস্বস্তিটা বুঝে পুরুষের পৈশাচিক রূপটা দেখাল 
না আদিত্য, সত্যিই শান্তি পেলাম। না, সিনেমার মত, অন্য খাটে পাশ ফিরে 
শুয়ে পড়েনি ও, বা এরকমটাও বলেনি, ‘আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি, এই বিয়ে 
শুধু বোঝাপড়ার’। নাহ, ওসব রিল-লাইফ-এর নাটকের বিন্দুবিসর্গও ছিল না।
বরং,  অনেকটা বন্ধু পাতানোর গল্প ছিল, একে অপরকে চেনা, একটু একটু করে
আবিষ্কার  করার গল্প ছিল। আদিত্যর প্রথম ক্রাশ-এর গল্প, আমার প্রথম
প্রেমপত্র  !!!!!!!!!!!!!!!!!!!
ক্লাস কেটে, সিনেমা দেখতে যাওয়ার গল্প – এভাবেই কাটল রাতটা। বিছানায় 
সাজানো ফুল, বা ঘরের নিভু নিভু আলোটা অবাক হয়ে তাকিয়েছিল মানুষ দুটোর 
দিকে, আকাশে পূর্ণিমার চাঁদটাও আজ খুশী। কোথাও যেন এরেঞ্জড ম্যারেজের
প্রথম  রাতের শরীর সর্বস্ব মেকী ভালবাসার খেলাটা হার মানছিল একটা
সুন্দর  বন্ধুত্বের সূচনার কাছে।
।।৩।।
গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছিল আমাদের সংসারটা। আমি খুব যত্নে, আস্তে আস্তে 
চিনছিলাম আমার পাশের মানুষটাকে। ভাল লাগছিল, কোনো দমকা হাওয়া এসে
এলোমেলো  করে দিয়ে যায়নি আমায়, আমি চাইও নি এলোমেলো হতে, বরং একটু একটু
করে তার  পাশটাতে গোছাচ্ছিলাম নিজেকে। আমি ওকে নাম ধরে ডাকি না। 
শুনতে অদ্ভুত  লাগলেও এটাই সত্যি। বরং ‘ও’ বলে সম্বোধন করতেই বেশী মিষ্টি
লাগে আমার, আগের  দিনের মানুষগুলোর মতো, এতে আমি যদি ব্যাকডেটেড, তবে তাই।
রান্নাবান্না যে খুব ভাল করি, তা কোনো কালেই না, কিন্তু কাল যখন আমার 
বানানো ওর পছন্দের আলু পোস্তটা ও তৃপ্তি করে খেয়ে প্রশংসা করলো সবার 
সামনে, আনন্দ তো কিছু কম হয়নি।
আমাদের ঘরের লাগোয়া বারান্দাটায় একটা ছোট্ট দোলনা আছে। রোজ খাওয়ার পর 
কিছুক্ষন হলেও আমরা আকাশের তারাগুলোর সাথে আড্ডা জমাই। আদিত্য যখন আমার 
হাতের উপর আজ হাতটা রেখে বলল, “এইটুকু ছোট্ট হাতে এত সুন্দর রান্না করে 
মেয়েটা, সত্যি” বলে ওর স্বভাবসিদ্ধ হাসিটা হাসল, একটা শিহরণ ছড়িয়ে 
পড়ছিল আমার মধ্যে। রাতের আকাশের মিটমিটে তারাগুলো সাক্ষী ছিল সেই 
মুহূর্তের, খুবই সাধারণ সেই মুহূর্ত, কিন্তু আমার জন্য সাধারণ ছিল না। 
এভাবে কখনো কোনো কথা কেউ বলেনি আমায়।
“তোমার ভাল লেগেছে?”

উত্তর কী হবে সেটা জেনেই নিতান্তই বোকার মত প্রশ্নটা করেছিলাম। 
বাচ্চাদের মত আদিত্য আমার গালটা টিপে বলল, “হ্যাঁ রে পাগলী”। ওর
ব্যাকব্রাশ  করা চুলে, ওর চোখে, ওর গালের হালকা দাড়ি, ওর হাসি, ওর
কঠিন হাতের  স্পর্শটা – না, কোনোদিন এভাবে মুগধ হয়ে তাকাইনি আমি। আজ
তাকাতে ইচ্ছে  করছিল, চেয়েছিলাম ওর দিকে। ও কথা বলে যাচ্ছিল, আর
চাঁদের আভা যখন মুখের  উপর পড়ছিল, সেই মায়াবী আলোয় কোথাও যেন মনে
হচ্ছিল, এই তো সেই।

রোমানটিক love story

-“আচ্ছা, তুমি আমায় ফটো দেখে প্রথমেই পছন্দ করে ফেলেছিলে?”
-“হুম, বলতে পারো, তোমার ফটো দেখে এটাই মনে হয়েছিল, তোমায় জানতে হবে, তোমার?”
-“আমি সত্যি কনফিউজ ছিলাম, একটা ফটো দেখে সত্যি বুঝিনি কিছু, কিন্তু 
হ্যান্ডসাম।।। হুম, ভাল তো লেগেছিল। তুমি আমায় পছন্দ করবে আমি স্বপ্নেও 
ভাবিনি।”
-“কেন তুমি সুন্দরী নও?”
আদিত্যর এই প্রশ্নের টানে, আর চোখের চাহনিতে কী যেন একটা নেশা ছিল, বললাম,”জানি
না, কেউ কোনদিন সেভাবে বলেনি।”
আমার মুখের উপর পড়া চুলটা সরিয়ে ও বলল, “তুমি নিজে জানোই না তুমি কতটা
সুন্দর”।
ওর এই কথা, আর আমার মুখে, ঠোঁটে লেগে থাকা ওর হাতের স্পর্শ – পাগল 
হচ্ছিলাম আমি। আমার শরীরে শিরা উপশিরায়, যেন জমাট বেঁধে যাচ্ছিল রক্ত,
ওর  ছোঁয়ায়। হয়তো আমার চোখ, আমার অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছিল আমি ওকে কতটা
চাই  এখন। ওর জন্য, শুধু ওর জন্য অপেক্ষা করতেও এখন আমার ভাল লাগতে শুরু
করেছে।  ফোনের ভাইব্রেশনে তাল কাটল। ও ব্যস্ত হয়ে গেল ওর অনেকদিন পর ফোন
করা  পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে গল্পে আর আমি অনেকটা ভালোলাগা নিয়ে চোখ বুজলাম।
হ্যাঁ, সত্যি বোধ হয় একেই প্রেম বলে। বড্ড মিষ্টি এই অনুভূতি, আগে 
কোনদিন এমন তো হয়নি। কখন রাতের ঘুমপরী চোখের পাতায় পালক বোলাল, আর
বুঝতে  পারিনি।
।।৪।।
আরো পড়ুন, 


আদিত্যর জন্মদিনটা এসেই গেল, কোনদিন আমাদের বাড়ি সেভাবে ঘটা করে কারওরই 
জন্মদিন পালন হয় না। বিয়ের পর প্রথম জন্মদিন ওর, তাই স্বাভাবিক ভাবেই 
আমি এক্সসাইটেড।
ও আমার ভীষণ ভাল বন্ধু এখন, যা সাথে মনের কথাগুলো নির্দ্বিধায় বলা  যায়।
আজ ওকে নিজের মনের কথাটা বলবো ঠিক করেছি। ওর ব্যক্তিত্ব, ওর রুচি,  শিক্ষা
এসবকিছুর জন্য ওকে ভাল না বেসে, শ্রদ্ধা না করে থাকতে পারিনি।প্রেম  আমার
জীবনে কোনদিনই আসেনি সেভাবে, তাই জীবনের প্রথম এই প্রেমটা আমায়  ভাসিয়ে
নিয়ে যাচ্ছিল দূর দিগন্তের নীল সীমানায়।
বাড়ির বাগানের এদিকটায় তেমন আসাই হয় না। আজ দিনটাও এত সুন্দর, মেঘলা, 
খুব ইচ্ছে হলো আসে। এদিকটায় অনেক কটা ফুল গাছ আছে, আপন মনে সুবাস ছড়ায় 
তারা, আজ বড়ো ইচ্ছে হলো ফুল দিয়ে ঘরটা ভরিয়ে তোলার।
**************
রজনী গন্ধা, জুঁই, গোলাপ আর তার সাথে আকাশের কালো মেঘের ঘনঘটায় সেজেছে 
আজ আমার ঘরটা। বাধা দিল শাশুড়ি মা, আদিত্য নিজের জন্মদিন পালন করে না, 
কিন্তু শুনতে পারিনি। আমার এই অবাধ্যতার একটাই কারন – আজ এই সুন্দর
পরিবেশে  নিজের মনের কথাটা নির্দ্বিধায় নিজের মনের মানুষটাকে জানানো।
লাল রং আমার খুব যে ভাল লাগত, তা নয়, তবে ইদানিং, গাঢ় লাল রংটাই আমার 
ভীষণ প্রিয়। তাই ঘরের বেডসীট, জানলার পর্দা, টেবিলে সাজানো অ্যারোমা 
ক্যান্ডেল, বা ফুলদানীর গোলাপটা, সবটাই আজ লাল। জানলার কাঁচে টুপটাপ 
জলবিন্দু ভিড় জমাচ্ছে। বাইরের আকাশে ঘন কালো মেঘ, আর সঙ্গে ঝোড়ো
হাওয়ায়  দুলছে সামনের বেলফুলের গাছটা, আর অপেক্ষায় আমি। এখনো আসছে না
কেন, ফোনটাও  লাগছে না। কোথায় তুমি? এখনো কেন ফিরছো না? আর অপেক্ষা করতে
পারছে না এই  মন, কেমন পাগলামো করছি দ্যাখো।
যেন, আমি কোনদিনই ভাবিনি, আমি প্রেম করবো, বা প্রেমে এভাবে পাগল হবো।
হ্যাঁ, এটা প্রেম ছাড়া কী? প্রেম কী শুধু বিয়ের আগেই করা যায়? বিয়ের 
পর দুজন অজানা মানুষ যখন একে অপরকে একটু একটু করে চেনে, বোঝে, জানে, তাতে 
এক অন্যই নেশা থাকে। প্রথম তোমার ছবি দেখে তোমায় ভাল লেগেছিল, কিন্তু 
তোমার কথা বলা, তোমার তাকানো, তোমার হাসি, ঘুমন্ত অবস্থায় তোমার মুখটা, 
হ্যাঁ, খুব খুব ভাল লাগে। তোমার বুকের কাছের তিলটা, তোমার বুকে কী আমার 
মাথা রাখার জায়গা হবে? জানি না, একটা মেয়ে হয়ে কীভাবে লজ্জার মাথা
খেয়ে  এসব বলি বলতো। জানো, তুমি যখন ঘুমাও, তোমার হাতের আঙুলে নিজের
হাতটা  জড়িয়ে রাখি, ভাগ্যিস তখন তুমি ঘুমাতে। কিন্তু, আজ সবটা তোমায়
বলতে চাই।  তোমার শরীরের উষ্নতা, তোমার দেহের সুবাস, তোমার ঠোঁটের স্পর্শ।
নাহ, আর  আমার কোন দ্বিধা নেই, কোন আপত্তি নেই। তোমার কাছে মাথা নত করতে
রাজী আমি।  কই তুমি তো স্বামী অধিকার ফলাতে একবারও একজন নারীর অসম্মান
করোনি, হোক না  সে নারী তোমার স্ত্রী, এই জন্যই তোমায় শ্রদ্ধা করি।
কিন্তু, কোথায় তুমি?  এতটা রাত হয়ে গেল, এত রাত তো কর না তুমি।

***************

নিউ লাভ স্টোরি

ফোনে বারবার ট্রাই করেও লাভ হলো না, আনরিচেবল।  বাইরে ঝড় জলে
প্রকৃতি  বীভৎস রূপে তখন, মনটা বড্ড খচখচ করছিল। চিন্তা হচ্ছিল, কিছু হলো
না তো?  ভাবতেই ভাবতেই কলিং বেলটা বাজলো। হৃদ্স্পন্দনটা একলহমায় যেন
অনেকটা বেড়ে  গেল। সিঁড়ি পেরিয়ে দৌড় লাগলাম।
**************
“এত দেরী কেন আজ? তোমায় তো ফোনেও পাচ্ছিলাম না”, না বিয়ে হওয়া ইস্তক 
কোনদিন এভাবে কথা বলিনি, কিন্তু অজান্তেই আজ অধিকার বোধটা কথায় প্রকট 
হচ্ছিল। আদিত্যও সেটা বুঝতে পারছিল। ওর দৃষ্টিতেই সেটা স্পষ্ট।
-“কিন্তু এসব কী মা তোমায় বলেনি কিছু?”
-“বলেছেন, তুমি তোমার জন্মদিন পালন করো না, কেন, তা জানি না অবশ্য।”
আদিত্য আমার দিকে সরাসরি কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে চোখটা সরিয়ে নিল।
-“আমার প্রথম প্রেম এই দিনেই আমায় ছেড়ে চলে গেছল, তাই-” হুট করেই বলে দিল ও
কথাটা।
-“মা-কে বলেছিলাম, জানো ওর নামও রুমেলাই ছিল। তাই যখনই তোমার নামটা 
শুনেছিলাম।।।।। থাকে গে, তোমার আর ওর মধ্যে কিন্তু কোন মিল নেই জানো,
নামটা  ছাড়া, বয়সেও ছোট তুমি।”
আদিত্যর কথাগুলো আমার মনে জাস্ট তীরের মত বিঁধেছিল। এটাই তাহলে আদিত্যর 
দেরীর কারণ? কিন্তু, কই, ওর চোখেও তো আমি আমার জন্য।।।। তাহলে? ও আজও ঐ 
মেয়েটার কথাই।।।।। কই এতদিনে এত বড় কথাটা বলেনি তো, এত কথা বলল, আর 
এটা।।।।।
আমার মনের কথাটা ধরে নিয়েই আদিত্য বলল,”তখন আমার কিছু ছিল না, আর ওর 
আমার জন্য সময় ছিল না, আর সত্যি আমার তখন দেওয়ার মত কিছুই নেই, বেকার 
ছেলে একটা, কী বা করতাম। ছবিটা তোমায় দেখলে হতো।।। কিন্তু।।।।
-“কিন্তু কী?” মুখ দিয়ে ফস করে কথাটা বেরিয়েই গেল।
-“কিন্তু, ছবিটা ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে এলাম আজ, আমার মনের আর কোথাও ওর কোন 
জায়গা নেই, এটা যখন বুঝলাম, তখন ফটোটা রেখেই বা কী লাভ? আর যখন”
কথাটা শেষ না করেই আচমকা একটা টান দিল আমার হাত ধরে। পড়লাম ওর বুকে। এক 
মুহূর্তের জন্য কিংকর্তব্য বিমূঢ় আমি। এত কাছে কখনও এভাবে।।।। আমার
ধমনী,  শিরা-উপশিরায় রক্ত চলাচল তখন দ্রুত হারে।
-“তুমি আমার জীবনে এসে গেছে, তখন আর কেউ তো থাকবে না। ওর সাথে  ছাড়াছাড়ি
হওয়ার পর প্রথম এই জন্মদিনটায় আমার এতটুকু মন খারাপ হয়নি,  কারনটা তুমি
জানো, আর দেরীটার কারণ হলো এইগুলো।”
বলেই কিছু কাগজপত্র বের করল। দেখলাম টিকিট, হোটেল বুকিংস-এর কিছু ডকুমেন্টস।
-“তোমার পারমিশন না নিয়েই টিকিটটা কেটে ফেলেছি মুন্নারের, আমি জানি তুমি আর না
বলবে না।”
দেখলাম বুকিংটা হানিমুন প্যাকেজের। নাহ, বিয়ের পর কয়েকমাস কেটে গেছে, 
হানিমুন নিয়ে সত্যি আমাদের মধ্যে কোন কথা হয়নি। মনেও হয়নি কিছু। 
লজ্জায়, আনন্দে কী যে হচ্ছিল আমার মধ্যে, তা অবর্ণনীয়। বৃষ্টি তখন 
মুষলধারে, জানলার কাঁচটা হাওয়ায় খুলে বৃষ্টির ছাঁট আদ্র করছিল আমার
মুখ।  বুঝলাম ওর হাত জড়িয়ে রয়েছে শক্ত করে আমায়। নতি স্বীকার ছাড়া আর
কোন  উপায়ও নেই, আর আমিও তো ওর কাছে হারতেই চাই। মোম-এর নরম আলোয় আর
সুবাসে  মাতাল সেই রাত।
এই রাত, এই মুহূর্ত থমকে থাকে না। এর শেষ যেন না হয়, মনে মনে চাইছিলাম। 
ওর হাত আমার ভেজা ঠোঁটের উপর পড়া আমার অবাধ্য চুলটা সরাচ্ছিল, তখনই আকাশ 
কাঁপিয়ে বাজটা পড়ল। ভাগ্যিস পড়ল, সেই সুযোগে ওর বুকে নিজের মুখটা
লুকোতে  পারলাম, লজ্জায় ওর চোখের দিকে তাকানোর আর ক্ষমতা নেই আমার, আর
ঠিক তখনই  ওর ঠোঁট নিমেষে এঁকে দিয়েছিল আমার জীবনের ভালবাসার মানুষটার
প্রথম চুম্বন,  আমার গালে। বিয়ের পরও প্রেম করা যায় তাহলে। আমাদের
প্রেমের সাক্ষী রইল,  ফুলদানির গোলাপ, মোমের শিখা, রাতভর বৃষ্টি আর ।।।।
আর তোমার আমার চোখে আঁকা  অজস্র স্বপ্নগুলো।
কানের কাছে চুপি চুপি বলল ও, “ভালবাসি”। বাইরের অঝোর ধারার বৃষ্টির সাথে 
পাল্লা দিয়ে একাত্ম হয়েছিল দুটি ঠোঁট, দুটি মন, দুটো শরীর ।।।


Share This Article