বিজনের প্রেম – Bangla Romantic Comedy Story – Romantic Comedy Bangla Premer Golpo

Bongconnection Original Published
9 Min Read

বিজনের প্রেম - Bangla Romantic Comedy Story - Romantic Comedy Bangla Premer Golpo
Loading...

********************************************





বুক ভরা আশা নিয়ে শেষমেশ বিজন’দা,লঙ্কাবাবার ডেরায় উপস্থিত হলো ।
এছাড়া তার কাছে আর কোনো পথ খোলা ছিলোনা..
অনুরাধা’কে এ’জীবনে না পেলে,এই ধরণীতলে জন্ম নেওয়াই বুঝি তার বৃথা..

ডাগর ডোগর অনু যখন পাড়ার কলে জল নিতে আসতো,,তখন বাড়ির ছাদে বসা বিজন’দার মন উথাল পাথাল করতো..

বড়ো’পুকুরের গা ঘেঁষে পাকা রাস্তা ধরে,বিকালে যখন অনুরাধা নিজেকে পরিপাটি করে কোচিং ক্লাসে যেতো,, তখন অদূরে বিজন’দার সাইকেলে আপনা থেকেই চেন পড়ে যেতো…

বিজনের প্রেম - Bangla Romantic Comedy Story - Romantic Comedy Bangla Premer Golpo

সেটিকে আগের জায়গায় ঠিক ঠাক প্রতিস্থাপন করার অজুহাতে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতো সে পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া অনুরাধার দিকে..

অনু’র দুলে ওঠা কোমরের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতো বিজন’দা,,আসক্তি ও উত্তেজনার স্বাভাবিক আকর্ষণে দ্রুত দৌড় লাগাতো তার হৃদস্পন্দন ।
——————————————————————————

বহুবার চেষ্টা করেছে সে মেয়েটির সাথে কথা বলার, কিন্তু আসল সময় তার কখন’ও গলা শুকিয়ে যেতো,আবার কখনো বড়-বাইরে পেয়ে যেতো…

ফলস্বরূপ এভাবেই উপোষ করে দিন অতিবাহিত হচ্ছিলো আমাদের অসহায় বিজন’দার ..
——————————————————————————

রাত্রে একান্তে, অনুরাধা কে নিয়ে কল্পনার স্বপ্নাদেশে সে পাড়ি দিতো এক অচীনপুরে.. সেখানে সে তার মনের মানুষ’কে জড়িয়ে নিজের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতো..
ঘুম ভেঙে যখন সে দেখতো,তার শয্যায় বিধ্বস্ত কোলবালিশ ছাড়া আর কেউ নেই, তখন অবুঝ শিশুর মতো হাউ হাউ করে সে কেঁদে ফেলতো  । 

এবার ফেরা যাক আগের পটভূমিতে…

চমৎকারী তন্ত্রসিদ্ধ লঙ্কাবাবার উপর বিজনদার অগাধ আস্থা, শুনেছে তার অসীম শক্তি..
 তার দেওয়া চিমশে যাওয়া মন্ত্রপূতঃ শুকনো লঙ্কার বিরাট ক্ষমতা..
শুধু,সামান্য দান-দক্ষিনা দিয়ে বাবাজী কে খুশি করলেই কেল্লাফতে ।

যেমন ভাবা তেমন কাজ !
বাবার ডেরায় পৌঁছে দৌড়ে গিয়ে বিজন’দা সটান শুয়ে পড়লো বাবাজীর পাদদেশে..



——————————————————————————

 ভারী গলার ধীরস্থীর কণ্ঠস্বর শোনা গেলো —
–” ওঠ খোকা ওঠ ! “
মাথা তুলে বিজন’দা দেখলো, একমাথা জট পাকানো চাপ চাপ লালচে-কালো চুলে,গোল গোল চোখ পাকিয়ে, লোমশ খোলা বুকে এক শিম্পাঞ্জি তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে..

–“মাগোওওওওওও ! বাঁচাও ! “
 চিৎকার করে উঠলো বিজন’দা…

পাশে দাঁড়ানো বাবার তিনজন দর্শনার্থী,বিজন’দা কে জড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো —
–“করছেন’টা কি মশাই? এনি’ই হলেন দিব্যপুরুষ লঙ্কাবাবা..”

জীভ কেটে হাত জোর করে নতজানু হয়ে,বিনম্র সহকারে বিজনদা ক্ষমা চেয়ে নিলো ..
ততক্ষণে লঙ্কাবাবার মেজাজ উঠেছে সপ্তমে…
 গলা থেকে ঝোলানো নাভী পর্যন্ত শুকনো লঙ্কার মালা থেকে,চারটে লঙ্কা ছিড়ে কষ-কষ করে চিবিয়ে পাকস্থলীতে চালান করলেন বাবাজী ।

শোনা যায়, লঙ্কাবাবা রেগে গেলে নাকি এইরূপ আচরণ  করেন ..
ঠক-ঠক করে কাঁপতে লাগলো বিজন’দা ..
তারপর অনেক অনুনয় বিনয় করে লঙ্কাবাবা’কে শান্ত করে, তার মনের অভিপ্রায় প্রকাশ করেছিলো সে ।

—————————————————————————–


দীর্ঘ কথোপকথনের পর, বাবাজীর নির্দেশে ওনার দেওয়া একটি লাল কাগজে, অনুরাধার সম্পূর্ণ নাম,গোত্র ও পিতা মাতার নাম লিখে সেটিকে একটি টিনের ছোট্ট কৌটোয় আবদ্ধ করে কম্পমান হাতে ধরে রইলো বিজন’দা ..

তারপর শুরু হলো বাবাজীর আসল কর্মকান্ড ।

গলার মালা থেকে একটি শুকনো লঙ্কা ছিঁড়ে সেটিকে বিজন’দার কপালে ঠেকিয়ে, বেশ কিছু সময় ধরে বিড়বিড় করে মন্ত্রপাঠ করলেন,,
তারপর সেটিকে ওই তামার কৌটোয় চালান করে দিলেন.. 
বিজন অগাধ শ্রদ্ধা নিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে সবটা গিলছিল যেনো..

ভারী গলায় লঙ্কাবাবা বললেন—
“যা ব্যাটা ! এটা নিয়ে গিয়ে,নিশুতি রাতে মেয়েটার
 বাড়ির সামনে মাটি খুঁড়ে পুঁতে দিয়ে আসবি..তোর কাজ হবে ! হবেই হবে !..বোম কালিইইই ! “

–“আজ থেকে ঠিক দশদিন পর,ওই মেয়েটি তোর বাড়িতে বৌ হয়ে আসবে,,,বোম কালিইইইই ! “

বিজনদার আনন্দ আর দেখে কে! দন্ত ‘বিকশিত করে ভরসার সাথে হেসে উঠলো সে..

—“কিন্তু সাবধান !” সতর্ক করলো বাবাজী ।

বিজন’দার উল্লাসে কিছুটা খামতি পড়লো সহসা..

—” পাত্র’টি পুঁতে দেওয়ার সময় যেনো তোকে আর কোনো মানুষ না দেখতে পায়,খেয়াল রাখবি, নাতো কার্যসিদ্ধ হবেনা !. “

ভক্তি সহকারে হাত জোর করে বিজন তার মস্তিষ্কে যত্ন করে বন্দি করলো লঙ্কাবাবার সতর্কবার্তা ..

এবার দক্ষিনা পর্ব মেটানোর পালা…
লঙ্কাবাবার একজন তৎপর সহকারী চটপট বিজনদার কানে কানে গুজগুজ করে কি সব বলে,তাকে  চমকে দিলো এককথায়….

চোখ কপালে উঠলো বিজনদার:
 —-“কি ক্কিই ??? ছ'”হাজার !!
এতক্ষন পর মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠলো লঙ্কা’বাবাজীর আলকাতরা ঠোঁটে..

বাবাজী বললেন  :
–” ছয় হাজার নয়’রে খোকা ! ছয়’হাজার এক..এটাই যে দক্ষিনা..
তোর জীবন তোকে পাইয়ে দেবো ..জীবনের বিনিময়ে এটুকু তো কিছুই নয় রে !..
–“তাছাড়া হোম যোগ্য করতে হবে,দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী লাগবে,,বুঝলি  পাগল ! “

সদ্য পাওয়া মাইনের টাকাটা পকেটেই ছিল বিজনদার, থুতু দিয়ে আস্তে আস্তে গুনে, ধরে দিলো সহকারীটির হাতে..
চকচক করে উঠলো বাবাজীর চোখ ।

তারপর .. আরও একবার সাষ্টাঙ্গে প্রণাম সেরে বিদায় নিলো বিজন’দা..
——————————————————————————

পরবর্তী দিনের গভীর রাতেই নিজের কাজটি সম্পন্ন করেছিল বিজন চুপিসারে..
তার বিনিময়ে বেপাড়ার লেড়ি কুত্তার তাড়া খেয়ে, উঠেছিল তার বাম পায়ের বুড়ো আঙুলের নখ..
ফোলা আঙুলের যন্ত্রনা নিয়েও হাসিমুখে ধৈর্য ধরে,দিন গুনছিল বিজন’দা..

——————————————————————————

ঠিক একসপ্তাহ পর…..

বিজন’দাদার চোখে পড়লো অবিশ্বাস্য ফল..
সকাল বেলা কাজে বেরোনোর সময় সে জানালা দিয়ে দেখলো..তার স্বপ্নসুন্দরী অনুরাধা তার বাড়ির ধার দিয়ে পথে হেঁটে যাওয়ার সময়, ঘাড় ঘুরিয়ে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে …

নিজের চোখ’কে বিশ্বাস করতে পারছিলোনা সে….
মনে মনে বলে উঠলো :-
” লঙ্কাবাবার জয় !”
তারপর কোনোরকমে পোশাক পাল্টিয়ে সদর দরজা থেকে বেড়িয়ে এসে,রাস্তার বুকে দাঁড়ালো..

দেখলো পথ ধরে অনেকটা এগিয়ে আসছে অনু..
বত্রিশ’পাটি বের করে নিজেকে মেলে ধরলো বিজন’দা …
মুখ টিপে হাসলো অনু..
মুখিয়ে ছিল বিজন’দা কিছু বলার জন্য..
উত্তেজনায় তার বুকের ভেতর’টা ঢিপ ঢিপ করে উঠলো..

সবে কিছু বলতে যাবে,,এমন সময়..
দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো, বিজন’দার বৃদ্ধা মা..

–“বিজু তুই এখানে? তোকে কখন থেকে খুঁজে যাচ্ছি ,,ঘরেও দেখলাম তুই নেই..আমার বাতের ওষুধ’টা ফুড়িয়ে গিয়েছে, নিয়ে আসিস বাবা..তোর ভাই কে তো বলে বলে, হয়রান হয়ে গেলাম..”

ছন্দপতন ঘটলো যেনো..
একরাশ বিরক্তি নিয়ে বিজন’দা বলে উঠলো —
–“আনবো গো আনবো,এখন দয়া করে বেরোতে তো দাও ..”
 ঘাড় ঘুরিয়ে সে দেখলো,দ্রুত পায়ে অনেকটা দূর চলে গিয়েছে অনুরাধা..
সাইকেলে চেপে পিছু নিলো বিজন’দা..
-‘তাজ্জব! অনু গেলো কোথায়?’ ..
অগত্যা ছোট মুখ করে কাজে বেরিয়ে পড়লো বিজন…

তবে অনেকটা আশার আলো আজ দেখতে পাচ্ছিলো সে.. মনের সুপ্ত বাসনা’টি টোকা দিচ্ছিলো প্রতিনিয়ত ।

হাতে আর মাত্র তিন’দিন. ..
যেভাবেই হোক, অনুর সাথে তাকে দেখা করতেই হবে কাল পরশু..
নির্ভয়ে ভালোবাসার কথা নিজের মুখে বলতে চায় সে মেয়েটিকে..
সাথে আছে লঙ্কা’বাবার আশীর্বাদ! ‘তার আর চিন্তা কিসের?’
——————————————————————————

সন্ধ্যে বেলা কাজ থেকে ফিরে বিজনদা দেখলো, বাড়ির সামনে জটলা..
পাড়া প্রতিবেশীদের বেশ কয়েকজন বাড়ির সামনে ভিড় করে আছে..কেউ কেউ হাসি ঠাট্টা করছে প্রানখুলে ।
পাড়াতুতো বৌদিরা উলুধ্বনি দিচ্ছে মহানন্দে..
নেচে উঠলো তার দেহমন..
মনে মনে ভাবলো —
“ময়না পাখি নিজে বোধয় ধরা দিতে এসেছে তার মন খাঁচায়…আহা ! অনু আমার ,শুধুই আমার”..
টান টান হয়ে গেলো দাদার শিরা উপশিরা ।
 ——————————————————————————

ভিড় ঠেলে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই,,আকাশ ভেঙে পড়লো বিজন’দার মাথায় !
কপাল ভর্তি  সিঁদুর নিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে তার পরান পাখি অনুরাধা,
পাশে নুতন পাঞ্জাবি পড়ে মিটিমিটি হাসছে তার ছোট ভাই অর্পণ..
পাশে অর্পনের দুতিন’টে বন্ধু তাল মেলাচ্ছে হৈহুল্লোরে…
সমস্ত চুল খাড়া হয়ে গেলো বিজনের..
কানে এলো.. . লুকিয়ে লুকিয়ে আজ’ই মন্দিরে বিয়ে করেছে তারা..
তাকে দেখা মাত্রই, ছোট ভাই অর্পণ কনুই দিয়ে মৃদু গুঁতো দিলো অনুরাধার উঁকি দেওয়া নরম কাঁখে..

ইশারা করে বললো —
‘দাদা কে প্রণাম করো”..
উৎসাহের সাথে এগিয়ে এলো অনুরাধা..
সবাই কে অবাক করে দিয়ে,আকাশ কাঁপিয়ে গলা ফাটানো চিৎকার করলো বিজন’দা ..
তা শুনে, পাশে দাঁড়ানো পাড়ার এক বয়ষ্ক ঠাকুমা ভীমড়ি খেলো..
কোনোদিকে না তাকিয়ে একছুটে ঠাকুরঘরে  ঢুকলো বিজন..
মাকালীর হাত থেকে খড়্গ তুলে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো :
-” বরাহ’নন্দন লঙ্কা ! আজ’ই তোর বলি দেবো !”

—————————————————————————-

খড়্গ হাতে বিজন ছুট লাগালো বাবাজীর ডেরার উদ্দেশ্যে..
পেছন পেছন অবাক হয়ে ছুট লাগালো দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিবেশীরা..
হাঁ করে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিল অর্পণ..
তারপর অনুরাধা কে তার মায়ের পাশে বসিয়ে রেখে,সেও ছুট লাগালো পেছনে ।

ডেরায় পৌছিয়ে, রাগে গজ গজ করতে করতে গাল পাড়তে লাগলো বিজন’…
তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কারুর টিকি’টি খুঁজে পেলোনা সে ..
বুঝলো তার সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে !
শুধু দেখলো, বেশ কয়েক’টা শুকনো লঙ্কা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে মাটিতে..

*******************************************************************

Share This Article