বেকারত্ব – Bangla Sad Golpo – মন ছুঁয়ে যাওয়া

Bongconnection Original Published
6 Min Read


 বেকারত্ব – Bangla Sad Golpo – মন ছুঁয়ে যাওয়া

বেকারত্ব - Bangla Sad Golpo - মন ছুঁয়ে যাওয়া
Loading...

বেকারত্ব 🍁
✍️ সৌম্য
আজ অনেক বছর পর মিনু কে দেখলাম রেল স্টেশনে , সাড়ে দশটার ভীড় লোকাল টা থেকে
যখন নামল , প্রথম টা নিজের চোখ কে বিশ্বাস করাতে পারিনি !! তারপর অবশ্য বাস্তব
টা দেখেছিলাম। মিনু কে আজ বেশ বয়স্ক লাগছে, কপালে মোটা করে সিঁথি ভরানো
সিঁদুর, কপালে মাঝারি আকারের একটা লাল টিপ। গলায় একটা চেন আর হাতে কয়েক গাছা
বালা, সোনার ই হবে নিশ্চই। সত্যিই আজ মিনু গিন্নি হয়ে গেছে তবে!! হঠাৎ ওর পাশে
এসে দাড়ালো এক সুদর্শন চেহারার ভদ্র লোক । তাঁর এক হাতে একটা ব্যাগ আর কোলে
বছর দুয়েকের একটা ছোট্ট বাচ্চা। মায়ের কাছে শুনেছিলাম মিনুর নাকি ছেলে
হয়েছে। আমার ছোট্ট স্টলটার সামনে দিয়ে স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে গেল ওরা। আমি
মিনুর দিকে তাকিয়ে রইলাম!! পেছন থেকে ওর খালি পিঠ টা র দিকে চোখ চলে গেল আমার,
ঐতো সেই কালচে দাগ টা। মিনুর ফর্সা পিঠের ওপর যেন সৌন্দর্য বাড়াতেই ওই দাগ টা
আজও বর্তমান। 

    
 আমার মনে আছে, সেবার দুর্গাপূজার অঞ্জলির সময় মিনু আর তার বন্ধুরা
মায়ের মূর্তির দিকে মুখ করে মাকে অঞ্জলী দিচ্ছিল । আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে
বাজী পোড়াচ্ছিলাম, আচমকাই একটা বাজী না ফেটে ফুলজুরীর মতো”হুস” করে লাফিয়ে
গিয়ে পড়ল মিনুর পিঠে আর সঙ্গে সঙ্গে মিনু চিৎকার করে উঠল। সেই দাগ সেদিন আমার
অনেক শাস্তির কারন হলেও, পরে সেই দাগই আমাকে মিনুর কাছাকাছি এনেছিল। তারপরের
বৃত্তান্ত আর নাই বা বললাম, সেই তো একই বস্তা পচা প্রেমের কাহিনী!! তাই সেসব
থাক।

Bangla Sad Valobashar Golpo

Loading...
  তবে মিনু আমার কাছে একটা আকাশের মতো ছিল, যার তলায় বসলে শীতের রোদ আর
বর্ষার বৃষ্টি দুই যেন পরিপূরক হয়ে প্রশান্তিতে ভরিয়ে দিত আমায়। ওর খোলা
চুলের আবেশে আমি দিকভ্রান্ত পথিকের ন্যায় হাঁ করে বসে থাকতাম। ওর ডাগর চোখের
গভীরতা আমাকে স্বপ্নে বিভোর করতো না এমন মুহূর্ত খুব কমই গেছে । কিন্তু আজ!!
আমি এবং আমার ভাগ্য দুই যেন ঘোলা জলের ডোবা!! রবি ঠাকুর বলেছিলেন ওনার ঘোলা
জলের ডোবায় বড়ো কোনো ইতিহাস ধরে না । কিন্তু আমার ঘোলা জলের ডোবায় যে,সমস্ত
ইতিহাস তলিয়ে ভুত হয়ে গেছে। আমার সব স্বপ্ন যেন অতলান্ত ভূগর্ভে প্রোথিত
হয়েছে। আমাদের স্কুল ঘর জানে, গ্রামের মেঠো আল গুলো জানে, বকুল তলার বড়ো
পুকুর পাড় জানে, মিনু আর আমার ইতিহাস!! 

মিনুকে যেদিন দেখতে এল, মিনু সেদিন বিকেলে হাউ হাউ করে কেঁদে বলল, সে নাকি
আমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবে না। সে নাকি আমি ছাড়া আর কাউকে ভালো
বাসতে পারবে না। আমার তখন হাতে কাজ নেই, বেকার বলে বাবার কাছে উঠতে বসতে কথা
শুনছি। ছুটে গেলাম মিনুর বাবার কাছে … হাত জোড় করে বললাম আমাদের কথা। ঘাড়
ধরে বের করে দিলেন। বললেন “বেকার দের কে কেউ নাকি মেয়ে দেয় না। মিনুর যেখানে
বিয়ে হচ্ছে তারা নাকি সম্ভ্রান্ত পরিবার। নিজের ব্যবসা আছে, মিনুর নাকি কোনো
অভাব ই হবে না ” । আমি ফিরে আসতে আসতে দেখেছিলাম ওদের বারান্দা থেকে মিনুর সেই
গভীর চোখদুটো.. জল টলটলে, ভেজা। কঠিন  কাতরতায় ঠোঁট দুটো ফুলে ফুলে উঠছে,
কিন্তু কোনো কথা বেরোচ্ছে না। ওটাই ছিল আমাদের শেষ দেখা। তারপর শুনেছি মিনুর
বিয়ে হয়ে গেছে ধুমধাম করে। আমি একটা কাজের আশায় ছুটে বেড়িয়েছি এদিক থেকে
সেদিক। দোকানে মাল দিয়েছি, বস্তা মাথায় করে ছুটে গেছি শহরের পূব থেকে
পশ্চিমে। আবার গ্রামে গিয়ে লোকের ফসল তুলেছি। তবুও মিনুর সামনে যাইনি। আচ্ছা
এতে দায়ী কে?? আমি ?? নাকি মিনু?? নাকি মিনুর বাবা?? নাহ্: কেউ না, আমার তো
মনে হয় দায়ী একজনই !! “বেকারত্ব”। আজ আমি নিজের জমানো টাকায় স্টেশনে ছোট্ট
একটা টি স্টল করেছি, আজ আর আমি বেকার নই। আজ আমারও একটা ব্যবসা আছে, হলোই বা
ছোটো । আজ পৃথিবীর দুই প্রান্তে আমরা দুজন!! দুজনেই দুজনের মতো করে ভালো আছি!!
আসলে দুজনেই ভালো থাকতে শিখে গেছি। 


Heart Touching Sad Love Story In Bangla

আমাদের মতো মানুষদের ভালো থাকার পরিধীটা ছোটো হতে পারে । কিন্তু সেখানে সুখ
আছে। আনন্দ আছে, শান্তির পরশ আছে। তবে একটা সত্যি আজ আমি বিশ্বাস করি
বেকারত্বের সত্যিই কোনো জায়গা নেই আমাদের সমাজে। পরিস্থিতি এবং রাজনীতি যে
বেকারত্ব এর জাল আমাদের একান্ত সারা সমাজে বিছিয়ে দিয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসা
নেহাতই সহজসাধ্য নয়। আজও আমি মিনু কে স্বপ্নে দেখি। ওর গভীর চোখ, খোলা চুল আর
পিঠের ওই কালো দাগটা আমাকে আজও নীল মদিরার পাত্রে মতো মগ্ন করে তোলে। তবে তফাৎ
শুধু একটাই আজ এই অনুভূতি, এই স্বপ্ন একান্ত আমার, শুধুই আমার। ভালো থেকো
মৃন্ময়ী, ভালো থেকো আমার “মিনু”। 
জনৈক ট্রেন যাত্রী:- আরে ও দাদা কখন থেকে ডাকছি!! কি ভাবছেন? একটা চা দিন আদা
দিয়ে!! সোয়া এগারোটার ট্রেন টা তো ঢুকে পড়বে।
আমি সম্বিত ফিরে পেয়ে সামনে তাকালাম, দু চারজন কাস্টমার জমে গিয়েছে। আমি
ব্যাস্ত হাতে চায়ের কাপ এগিয়ে দিলাম। স্টেশনের ঘড়িতে তখন ঢং ঢং করে এগারোটা
বাজল। 😊😊

Share This Article