রোমান্টিক প্রেমের ছোটগল্প – Premer Golpo

Bongconnection Original Published
10 Min Read


 রোমান্টিক প্রেমের ছোটগল্প – Premer Golpo

Romantic%2BPremer%2BGolpo 1100
Loading...



Loading...

রোমান্টিক প্রেমের গল্প 

           
    ইনবক্স  ও প্রেমের গান 
                 
 সহেলী সেন চৌধুরী 
সেই প্রত্যাশিত শনিবার অবশেষে এলো |  
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত শপিং মলে মধুজা এই প্রথমবার এসেছে | স্বাভাবিকভাবেই
উৎকণ্ঠার, জড়তার শেষ নেই | তাই হয়তো সময়ের খানিকটা আগেই চলে এসেছে সে | বাইরে
দাঁড়িয়ে থাকাটা খুব বিরক্তিকর, ভেতরে এসেও কি করবে কোথায় যাবে ঠাওর করতে
পারছেনা | এমন সময় ফোনে বেজে ওঠে “এই কথাটি মনে রেখো…. “,

স্ক্রিনেরদিকে না তাকিয়েই আনমনে কল রিসিভ করে মধুজা হ্যালো বলে | “ হ্যালো
কিরে? আমি বলছি | কোথায় তুই? কখন থেকে ফোন করে পাচ্ছিনা? “ ওপারের কণ্ঠস্বরের
প্রত্যুত্তরে মধুজা জানায় সে নির্ধারিত স্থানে, সময়ের আগেই পৌঁছে গেছে  |
“তাড়াতাড়ি উপরে উঠে আয়, ফুড কোর্টে “ মধুজা কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে যায় |
এস্কালেটরের কাছে গিয়ে থমকেও সে লিফ্টের দিকে ফিরে আসে | ওঠার সময় কেমন একটা
অস্থিরতা অনুভব করে ভেতরে, যা একটু আগে অব্দিও ছিলনা | দরজা খুলতেই তাঁর সামনে
ব্লু জিন্স, ব্ল্যাক t-শার্ট এ অভি | 
“কি ম্যাডাম? অবাক করে দিলাম তো? 
জানতাম তুই সিঁড়ি কিংবা লিফ্টেই আসবি | ভীতুর ডিম কোথাকার ! “
মধুজার মনে পড়ে গেল সেবারের বইমেলা যাওয়ার ঘটনাটা | অভি সেবার পেছনথেকে না ধরলে
মেট্রো স্টেশনে নির্ঘাত চিৎপটাং হত মেয়েটা | অভির দিক থেকে মুগ্ধতার দৃষ্টি
সরানোর আগেই সে বলে বসল “খুব ক্ষিদে পেয়েছে মধু, কি খাওয়াবি বল? এদিকে আয়,
টেবিল বুক করা আছে  |” মধুজা অভির পদাঙ্ক অনুসরণ করে ওদের জন্য থাকা
টেবিলে এসে বসল| 
রেস্তোরাঁর ভেতর থেকে দেখা যাচ্ছে তিলোত্তমা কলকাতা | মধুজার দৃষ্টি সেদিকে
পড়তেই অভি বলে ওঠে “এতটা আসতে কষ্ট হয়নিতো? তারউপর কি বুদ্ধি মহাশয়ার? শাড়ি পরে
এসেছেন !” এবার সত্যি খুব অপ্রস্তুত লাগে মধুজার | চারদিকে তাকিয়ে দেখে তাঁর
বয়সী সব মেয়েই আধুনিক পোশাক পরিহিতা, মাথা নিচু করে সে | 
“থাক হয়েছে, আর নাক ফোলাতে হবে না | ওমনি রাগ হয়েগেলো | ভীড় ট্রেনে যাতায়াতের
অসুবিধা, সেকারণেই বলা “ | চেয়ারটা মধুর কাছে টেনে আনতে আনতে বলছিল অভি কথাগুলো
ততক্ষনে বেয়ারা হাজির, অর্ডার নিতে | 1টা মটন কবিরাজি আর 1প্লেট মিক্সড নুডল
অর্ডার করে মধু জানতে চাইলো অভির আর কিছু লাগবে কিনা| “বাহ্ ! এখনো অনেক কিছু
ভুলিসনি দেখছি ” বলে অভি মকটেল অ্যাড করে | 

রোমান্টিক ভালোবাসার ছোট গল্প

দুই বন্ধু নিজেদের মধ্যে কিছু পুরনো দিনের কথা বলে | কিছুটা সময় কাটে
নিস্তব্ধতায়,
অনেক না বলা কথাও  হয়তো শোনা হয়ে যায় | “আমাদের শেষ কবে দেখা হয়েছিল তোর
মনে আছে অভি?”  অভি কিছু বলতে পারলোনা কথার উত্তরে, ততক্ষনে টেবিলে খাবার
এসে পৌঁছেছে | নিজেদের সামলে ওরা সুস্বাদু খাবার উপভোগ করে| বিল মেটানো নিয়ে
অনেক বাদ অনুবাদের পর অবশেষে হার মানে অভি | যুক্তিবাদী মধু ততক্ষনে প্রমান
করতে সক্ষম হয়েছে যে অভির ইচ্ছাতেই এখানে ওর ট্রিট দিতে আসা |
     মফস্বলে বেড়ে ওঠা অভিরূপ ও মধুজা খুব ছোটবেলার বন্ধু | HS
এর পর মধু লোকাল কলেজে নিউট্রিশন অনার্সে ভর্তি হয় | অভির বাবা উত্তরবঙ্গে
ট্রান্সফার হওয়ার সাথে অভি বায়োটেকনোলজি পড়তে ব্যাঙ্গালোর চলে যায় | মাঝখানে
কেটে গেছে প্রায় গোটা এক দশক | কেউ কারো কোনো খোঁজ পায়নি | খুব যে আগ্রহী ছিল
ওরা একে অপরকে খুঁজে পেতে তাও নয়, তবু যেদিন সুভাষের ফ্রেন্ড লিস্টে মধুকে
প্রথমবার অভি ফেসবুকে খুঁজে পেল, অসম্ভব খুশি হয়েছিল সে | এক মুহূর্ত দেরি
করেনি রিকোয়েস্ট পাঠাতে | কিন্তু মাস খানেকের উপর যখন সে প্রস্তাব গৃহীত হয়নি,
খুব অভিমান হয়েছিল তাঁর, ইনবক্স  করেছিল 1টা গান | সেদিন সন্ধ্যা থেকেই
ওরা সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বীকৃত বন্ধু |

তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিন কাজের  শত ব্যস্ততার মধ্যেও  2জনই যোগাযোগ
রেখে চলেছে | এবার নিতান্ত কাজের প্রয়োজনেই অভির কলকাতা আসা, তাও মাত্র
2-3দিনের জন্য | সেমিনার সেরে ফ্রাইডে রাত কিংবা শনিবার ভোরেই ফিরে যেতে পারতো
সে, কিন্তু পারেনি, হয়তো বা চায়নি | কলকাতায় আসার খবরটা প্রথম যেদিন অভি মধুকে
জানায়,সে জানতে চেয়েছিলো ফেরার ফ্লাইট কবে? কিছু জানায়নি অভি সেদিন | বরাবরের
আত্মাভিমানী মেয়েটিও আর কিছু জানতে চাইনি অভির কাছে | কলকাতা আসার দিন
এয়ারপোর্টে বসে আপডেট দিতে যাবে, এমন সময় যাত্রা শুভ হওয়ার বার্তা আসে তাঁর
মুঠো ফোনে, ব্যাস !

প্রত্যুত্তরে অভির নির্দেশে আজকের সাক্ষাৎ পর্ব |
আরো পড়ুন,  মন তুই আমার হবি
“অভি, এবার উঠতে হবেরে | এরপর ট্রেনে ওঠা চাপের হয়ে-যাবে, তাও আবার শাড়ি পড়ে
“|


কথার শ্লেষ সেই অষ্টাদশীর মতোই আছে, বুঝতে অসুবিধা হলনা অভির | হাসি আজও
নিষ্পাপ, যুক্তি অকাট্য আগের মতোই, অভিমান এক চুলও কমেনি, চেহারায়
দীপ্তি,লাবণ্য সংযোজিত হয়েছে শুধু | 
“উঠব তো বটেই| তবে অন্য কোথাও যাব ম্যাডাম, এখন তোমায় ছাড়ছিনা “| বলেই হাতধরে
টেনে নিয়ে আসে অভি এস্কালেটরে | বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ক্যাব এ ওরা উঠে বসতেই
ক্যাব চলতে শুরু করে |
গোটা ব্যাপারটায় অপ্রস্তুত মধু তাঁদের গন্তব্যের কথা জিজ্ঞেস করলে অভি বলে
জাহান্নমে নিয়ে যাচ্ছে সে মধুকে | উৎকণ্ঠা নিয়ে মধু গাড়িতে বসে থাকে গম্ভীর
হয়ে, লুকিং গ্লাসের মধ্যে দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে নিজের মনেই হাসতে থাকে অভি |
ময়দানের সামনে ওদের নামিয়ে গাড়ি চলে যাওয়ার পর খ্যাঁক খ্যাঁক করে অট্টহাসি
হাসতে থাকে অভি, নানাভাবে সে লেগপুল করতে থাকে মধুর | প্রথমে মধু কিঞ্চিৎ লজ্জা
পেলেও পরে সামলে নেয় নিজেকে | তাঁর নিজের মধ্যে কোথাও একটা খারাপ লাগাও কাজ
করে, পারিপার্শিক পরিবেশের দুর্ঘটনার প্রভাবে নিজের বাল্যবন্ধুকে সন্দেহের
দৃষ্টিতে দেখার জন্য | ময়দানের আকাশ বাতাস ওদের হাসি আর খুনসুটির যুগলবন্দিতে
যখন মুখরিত, ওঁরা অনুভব করে দুজন দুজনের এতটাই কাছে, যে উভয়ের নিঃশ্বাস
সম্মিলিত হয়েছে | তৎক্ষণাৎ খানিক দূরে গিয়ে বসে মধু, পরিবেশ হালকা করতে অভি একথা সেকথা
জিজ্ঞেস করতে থাকে | 

রোমান্টিক লাভ স্টোরি গল্প

এতক্ষন অবধি সব ঠিক ছিল, কিন্তু কোথা থেকে যেন শ্রাবনের ঘন কালো মেঘ ঘিরে ফেললো
ওদের  আকাশটাকে | অভি প্রথম জানতে চাইল মধু কেন একমাস ধরে তাঁর ফ্রেন্ড
রিকোয়েস্ট  পেন্ডিং রেখেছিল? 
উত্তর এলো : 1) যাকে তাকে বন্ধু বানাতে মধুর ভালো লাগেনা, 
2) প্রোফাইলে নিজের ছবি না থাকা লোকেরা fake হয় – 
কথা টি শুনে অভির মাথা চাই করে গরম হয়েগেলো |
তাঁর পুরুষালি ইগো প্রশ্ন করে বসল “অভিরূপ বাগচী নামটা যথেষ্ট ছিলনা নাকি? “
সপাটে জবাব এলো ঐ নামে পৃথিবীতে নাজানি কত… 
“থাক থাক অনেক হয়েছে, 10বছরে দেমাক একটুও কমেনি দেখছি? “বলে মধুর দিকে তাকায়
অভি |
“এটা দেমাক নয় অভি, আত্মসম্মান ” ছলছল চোখে বলতে থাকে মধু “সেদিন ও সরে গেছিলাম
তোর অগ্রগতি চেয়ে আর তুই ও তোর প্রিয়তমার মাঝে অন্তরায় হবনা বলে | সিমকার্ড
নষ্ট করে ফেলেছিলাম সেদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে, যাতে ভুলেও আমি তোর সাথে বা তুই
আমার সাথে যোগাযোগ করতে না পারিস “|
“বেশ করেছিলি | কিন্তু কি লাভ হল তাতে? না টিকলো আমার সে প্রেম, না থাকলাম..”
কথা শেষ করতে পারলোনা অভি, বিষম লাগলো আচমকা | ব্যাগ থেকে জলের বোতল বার করে
পরম স্নেহে অভির দিকে এগিয়ে দিল মধু মাথায়, পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে | “এই touch
টাই মিসিং ছিল জানিস? এতো মেয়ের সাথে প্রেম করেছি এতো দিন, কিন্তু… “|
কথার মাঝপথে  “সব ছেলেরাই একইরকম বিরক্তিকর “ বলে উঠতে যায় মধু,
ওমনি  অভি হ্যাচকা টান দেয়| অভির বুকের উপর আছড়ে পড়ে মধু | 
গোধুলির সূর্যাস্তের রং যেন অভিকেও তাঁর তেজ মাখিয়ে দিয়েছে |
“কি হচ্ছে কি? ভালো হবেনা কিন্তু, ছাড় আমায় ” বলে ওঠার বৃথা চেষ্টা করে মধু |
“আমি কি তোর ছাত্র যে ভয় দেখাচ্ছিস? 
ছাড়বো বলে কলকাতা শহরে একাকী 2দিন ধরে পড়ে আছি না? 5-6মাস ধরে দেখা করার
জন্য  ছটফট করছি, তার কোনো দাম নেই? ”

নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে মধু জানায় 10বছর 7মাস 23দিন কোনো মেয়ে
কারো জন্য অপেক্ষা করে থাকতে পারেনা, তাঁর জীবনে নতুন কেউ চলে আশা অস্বাভাবিক
নয় | নিজে না চাইলেও অনেক সময় পরিবেশ, পরিস্থিতি মধ্যবিত্ত পরিবারের আঠাশ
উত্তীর্ণ, চাকুরীরতা মেয়েকে বাধ্য করে সুপাত্র নির্বাচন করতে | সেদিকটা বোধহয়
আজ অবধি ভেবে দেখতে পারেনি অভি |
এতক্ষনে সে সম্বিৎ ফিরে পায় | মধুকে তাঁর বাহুডোরে আরো দৃঢ়ভাবে বেঁধে ফেলে বলে
“দুর্ভাগ্যবশত এমন কোনো সম্ভাবনা তৈরী হয়ে থাকলে আমার মধু সব কিছু ফেলে আমার
কাছে আসতোনা | ”
“এই বয়সে এসে, নতুন করে প্রেমে পড়তে বড্ডো  ভয় করে জানিস? ” অভির কানে
কানে বলে মধু |
“চিন্তা করিসনা, রাত নামার আগেই তোর হিটলার বাপের কাছে পৌঁছে দেবো তোকে আর চেয়ে
নেবো আমার জন্য |”

অভিকে থামিয়ে কিছু একটা বলার উপক্রম করতে  যায় মধু, তখনি ওর ঠোঁট দুটি
বাইরে থেকে প্রযুক্ত বল দ্বারা অবস্থার পরিবর্তনে বাধ্য ও বাধিত হয় |

অভির ফোনে মৃদুস্বরে বেজে ওঠে সেদিনের ইনবক্সের সেই  গান….
প্রিয় গল্প পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে। 
ভালো থাকুন, ভালোবাসায় থাকুন। ..
Thank You, Visit Again…

Share This Article