Valobashar Golpo 2023 ( ভালোবাসার সেরা গল্প) Bengali Love Story

Bongconnection Original Published
9 Min Read


 Valobashar Golpo 2023 ( ভালোবাসার সেরা গল্প) Bengali Love Story

Valobashar Golpo 2023 ( ভালোবাসার সেরা গল্প) Bengali Love Story
Loading...

ভালোবাসার সেরা গল্প

ভালোবাসার রঙ
(ছোট গল্প)
— “কি রে বোন, তুই এতো বোকা? কি করে তুই ঐ কালো ভুতটার প্রেমে পরলি বলত?
দ‍্যাখ্ মোহের বসে প্রেমে অনেকেই পরে কিন্তু বিয়েটা তো সারা জীবনের ব‍্যপার
বল্! পারবি তো বিয়ের পর বন্ধুদের কাছে ওকে নিজের হাজবেন্ড হিসেবে পরিচয় দিতে?
পারবি তো রাস্তায় পাশাপাশি দুজনে হেঁটে যেতে? সারাজীবন প্রেমটা পারবি তো জিইয়ে
রাখতে?”
দিদির চোখে চোখ রেখে সেদিন মিতা উত্তর দিয়েছিল… 
— “পারবো দিদি, তোরা নিশ্চিন্তে থাক। আমরা সারাজীবন একসাথেই পথে হাঁটবো। ওকে
ভালোবেসেছি, ওকেই ভালোবাসবো। প্রেম একই রকম থাকবে সারাজীবন। তুই দেখেনিস। আসলে
কি বলতো? আমি তোদের মত করে ভাবিনা, তাই আমার ওকে নিজের হাজবেন্ড হিসেবে পরিচয়
দিতে কোনদিনই বাঁধবে না। কারণ আমর কাছে ভালোবাসার কোন রঙ হয়না রে দিদি।”


মিতা যখন সৌমকেই বিয়ে করবে বলে জেদ ধরে বসে আছে ওদের মা সুনেত্রা দেবী তখনো
পরিচিত ঘটককে আরো দু চারটে যোগ্য পাত্রের সন্ধান দেওয়ার জন্য ফোনে অনুরোধ করে
যাচ্ছেন। ওদের বাবা অমিয় বাবু যদিও মেয়ের ইচ্ছেকে সন্মান জানিয়ে মেয়ের পাশেই
আছেন তবে একরোখা, একগুঁয়ে স্ত্রী-র সামনে ওনার প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়কে তুলে ধরার
সাহস করে উঠতে পারছেন না মোটেই। তিনি পরেছেন মহা বিপাকে। একদিকে মেয়ের জেদ তো
অন্য দিকে স্ত্রী-র। বড় মেয়ের বেলায় বরং এত ঝঞ্ঝাট পোহাতে হয়নি তাঁকে। রীতাও তো
নিজেই পছন্দ করেছিল অর্ককে। একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সিভিল ইন্জিনিয়ার
অর্কপ্রভর পরিবারও বেশ শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত। অর্ক নিজেও যথেষ্ট সভ‍্য, ভদ্র,
মার্জিত, সর্বোপরি ভীষণ সুদর্শন পুরুষ। দেখলেই ভালো লেগে যায়। প্রায় ছয় ফুট
লম্বা, দোহারা চেহারা, সবেদার মত গায়ের রঙ। এমন সুযোগ‍্য পাত্র পেলে কোন বাবা
মায়ের আপত্তি থাকে বলুন তো? বড় জামাই এর পাশে তো সৌমকান্তিকে কোলফিল্ডের শ্রমিক
ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না! ছোট মেয়ের পছন্দ যে এত নিম্নমানের হবে তা স্বপনেও
কখনো কল্পনা করেননি সুনেত্রা দেবী। ছেলেটি নামেই শুধু সৌমকান্তি। চেহারার সৌম
শোভার বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই। বরং ঠিক তার উল্টোটা। পোড়া কাঠ কয়লার মত গায়ের
রঙ, মাথায় কালো আর সোনালীর মিশেলে এক ঝাঁকড়া চুল। হাইটে সারে পাঁচ ফুট হবে কিনা
সন্দেহ। চাকরি করে কোথায়? না এক প্রাইমারি স্কুলে! মাস গেলে মেরে কেটে হাজার
পঁচিশ রোজগার আছে কিনা সন্দেহ। মন্দের ভালো বলতে যেটি তা হল অঞ্চলে সৌমকান্তির
বেশ নাম ডাক আছে। আট থেকে আশি, সকলেরই নাকি পছন্দের মানুষ। পরোপকারী, সমাজ সেবী
হিসেবে বেশ পরিচিতি আছে। তা সেটিও তো বাপু ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর সমান। তা
এরূপ পাত্রকে কোন মেয়ের বাপ মা পছন্দ করবে বলুন তো? মেয়েটা যে কী ! দিদিকে
দেখেও শিখলো না! নিজে পছন্দ করেছিস ভালো কথা কিন্তু একটু দেখেশুনে তো করবি?
বরাবর বা নিজেদের থেকে উচ্চ পরিবার দেখে তো করবি! কি দেখে যে ঐ কলির কেষ্টকে
মিতার মনে ধরেছে তা দিদি রিতার মত বুঝে উঠতে পারেনা ওদের মা সুনেত্রা দেবীও।
তাছাড়া ওই হার হাভাতে ঘরে গিয়ে পরলে তার মেয়ের স্বপ্ন গুলোর যে কি হবে এই
আশঙ্কায় দিনে রাতে গুনে গুনে অম্ল ঢেঁকুর তোলেন সুনেত্রা দেবী।

Valobasar Golpo Bangla Lekha

Loading...
     দেখতে দেখতে দশ বছর পেরিয়ে গেল। আজ মিতার ভীষণ আনন্দের
দিন। স্বপ্ন পূরণের দিনও বটে। তাই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে ভক্তি ভরে
পূজো দিয়েছে। তারপর শাশুড়ি মাকে প্রনাম করার পর বহু দিন পর সৌমকান্তিকেও
টুক্কুস করে একটা প্রনাম সেরে নিয়েছে। এই প্রনাম সৌমকান্তির সত্যিই প্রাপ্য।
ছোটবেলা থেকেই মিতা নাচ করতে খুব ভালোবাসে। ছোট্ট বয়সেই গানের তালে তালে শরীর
দুলিয়ে নেচে বেড়াত সারাক্ষণ। অপর দিকে রিতার পছন্দ ছিল গান। তাই সুনেত্রা দেবী
বড় মেয়েকে গান আর ছোট মেয়েকে নাচের স্কুলে ভর্তি করে দেন। পড়াশুনার সাথে সাথে
দুই বোনের নাচ ও গানের তালিম চলতে থাকে সমান তালে। পাড়ার ফাংশন, স্কুলের
আ্যনুয়াল প্রোগ্রাম কি কোন ঘরোয়া অনুষ্ঠান, দুজনের অংশগ্রহণ করা চাই-ই-চাই। বড়
হয়ে নামী সঙ্গীত শিল্পী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকত রিতা। বিয়ের আগে অর্কর
সঙ্গে প্রেম পর্বের দিনগুলোতে অর্ক রিতাকে উৎসাহ যোগাতে কোন কার্পণ্য করেনি।
রিতার সুমধুর কন্ঠের যাতুতেই যে অর্ক ওর প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছে সে কথাও বলেছে
বহু বার। 

     সৌমকান্তি মিতার নৃত্যশিক্ষা নিয়ে বিয়ের আগে কোনও বাড়তি
আগ্রহ প্রকাশ করেনি কোনদিনই। তবে বিয়ের পর মিতার অর্ধ সমাপ্ত মাষ্টার্স ডিগ্রী
দূর শিক্ষায় কমপ্লিট করানো হোক কি আর্থিক সাচ্ছন্দের অভাবে মিতার সামান্য
আপত্তি স্বত্ত্বেও বিএড কলেজে ভর্তি করানো বা পরীক্ষার আগে রাত জেগে মিতাকে
সঙ্গ দেওয়া সবটাই করেছে হাসি মুখে প্রবল উৎসাহে। স্ত্রীর প্রতি তাঁর নিগুড়
ভালোবাসা ও সন্মান কোনদিনই একমুহূর্তের জন্যেও চাপা পরে যায়নি সংসারের গোলক
ধাঁধায়। আজ মিতা হাইস্কুলে ভূগোলের সহ শিক্ষিকা। ও বলতে ভুলে গেছি! সৌমকান্তি
আরো একটি কাজ করেছিল। প্রথম দিকে সংসারে প্রবল আর্থিক অনটন থাকা স্বত্ত্বেও
ব‍্যক্তিগত প্রচেষ্টায় মিতাকে শহরের এক নামি নৃত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি
করে দিয়েছিল। বিশিষ্ট নৃত্য শিল্পী অভয়া শংকরের অধীনে মিতার নাচের তালিম
অব‍্যাহত রেখেছিল সৌম। 
আজ শহরের সবথেকে নামী মঞ্চে বিশিষ্ট অতিথি মহোদয়ের সামনে মিতার সোলো
পার্ফর্ম‍্যান্স। সন্ধ্যা ছয়টায় প্রোগ্রাম শুরু। গত সপ্তাহেই মিতা ও সৌম্য
একসঙ্গে গিয়ে দিদি জামাইবাবুকে অনেক গুলি ইনভিটেশন কার্ড দিয়ে সপরিবারে
অনুষ্ঠান দেখতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছে। বাবা মাকে ফোনে বলে দিয়েছে।
ওদিকে মিতার আড়াই বছরের ছেলে বাবুসোনার সমস্ত ঘরোয়া দায়িত্ব মিতার শাশুড়ি মা
নির্মলা দেবী অনেক আগেই নিজের কাধে তুলে নিয়েছেন যাতে ওর বৌমার নাচের তালিম
কোনভাবে বাঁধাপ্রাপ্ত না হয়। বৌমার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদী ভঙ্গিমায় তিনি
বললেন.. “তুমি বাবুসোনাকে নিয়ে একদম চিন্তা কোরোনা বৌমা। আমি তো আছি! তুমি খুব
মন দিয়ে নাচবে। এক্কেবারে স্টেজ কাঁপিয়ে নাচবে, কেমন?”

রিতা ও অর্কর সাত বছরের মেয়ে তানিশা সকাল থেকে কেঁদে ভাসাচ্ছে। ওর প্রিয়
মাসিমুনির নাচ দেখতে যে ওর ভারী মন চাইছে কিন্তু বাবা দাদু ঠাম্মী কেউ-ই যে
রাজী হচ্ছে না! বাবা স্ট্রিকলী জানিয়ে দিয়েছে এই নিয়ে বাড়িতে যেন আর কোন কথা
বার্তা না হয়। রিতা এরপরও মেয়ের কথা ভেবে একবার শ্বশুর মশায়ের কাছে গিয়েছিল,
যদি তাঁর অনুমতি মেলে কিন্তু তিনি আরো একধাপ উপরে গিয়ে রিতাকে কথা শুনিয়ে
ছেড়েছেন। …”ভদ্র ঘরের কোন্ মেয়ে রাত বিরেতে এক ঘর লোকের সামনে ধেই ধেই করে
নাচে বৌমা?”  রিতা আর কথা বাড়াইনি। ভিতরে গিয়ে মেয়েকে শান্ত করার চেষ্টা
করেছে। তারপর নিজের চোখের জল আড়ালে রেখেই রান্না ঘরে ঢুকে গেছে অভ‍্যাস মত।
রিতা বিয়ের এক বছরের মধ্যেই বুঝেছিল ওর জীবনে কী সর্বনাশ ও নিজেই করে ফেলেছে!
নিজের স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে, সাধারণ গৃহবধূ হয়ে সংসারের সব দায়িত্ব নিষ্ঠার
সঙ্গে পালন করে গেছে। সবকিছু ছেড়ে নিজের নিয়মে বেঁচে থাকার মনের জোর ও কোনদিনই
আহরণ করতে পারেনি। কিন্তু আজ নিজের প্রতি যে খুব ঘৃণা হচ্ছে ওর! অন্তত আজকের
দিনটিকে আপন বোনের স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মুহূর্তে যে ও পাশে থাকতে পারল না! একবার
পিঠ চাপরে বলতে পারল না.. “সাবাস বোন, তুই পেরেছিস। তোর নির্বাচনটাই যে একশো
ভাগ ঠিক ছিল রে। আমি আজ খুব খুশি।”

Valobashar Romantic Golpo

সুনেত্রা দেবী বারংবার তাঁর বড় মেয়েকে ফোন করে উত্তর না পেয়ে একাই স্বামীর
সঙ্গে গাড়িতে গিয়ে বসলেন। ড্রাইভারকে রবীন্দ্র ভবন যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে স্বামীর
পানে চাইলেন।.. 
“তোমার মোবাইল ফোনটি ভুলে আসোনি তো?” পাঞ্জাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে অমিয় বাবু
জবাব দিলেন  ..”আরে না না, এই তো ফোন।”
 দর্শক ভর্তি হলে সুনেত্রা দেবী স্বামীকে বললেন..  “ভালো করে নাচের
ছবিগুলো তোলো দেখিনি। আমাদের মেয়ে বলে কথা!!”
প্রিয় গল্প পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে। 
ভালো থাকুন, ভালোবাসায় থাকুন। ..
Thank You, Visit Again…

Share This Article