Durga Puja Story In Bengali 2022 (দুর্গাপূজার গল্প) Read Online Free

Bongconnection Original Published
5 Min Read


 Durga Puja Story In Bengali 2022 (দুর্গাপূজার গল্প) Read Online
Free

Durga Puja Story In Bengali 2022 (দুর্গাপূজার গল্প) Read Online Free
Loading...

Durga Puja Story 2022

পুজো মানেই বাপের বাড়ি 
– ঝুমা হাজরা সরকার 
“কি হয়েছে বলোত মা? দাদার ঘর থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে না? বৌদি তো এর আগে
কোনদিন এত চিৎকার করে কারো সঙ্গে কথা বলেনি?”
“কি জানি বাপু‌। পুজো পার্বনের দিন কেউ গলা ছেড়ে এই ভাবে ঝগড়া করে? ডাক দেখি
তোর দাদাকে। ব‍্যাপারটা জানতে হবে। আমার বাড়িতে গলা উঁচিয়ে কেউ কথা কইবে সেটি
চলবে নে।”
ঘরের বৌয়ের হাতে বানানো গরম গরম লুচি আলুর দম সহযোগে প্রাতরাশ সারতে সারতে মা
মেয়ে দুজনেই কৌতূহলী হয়ে উঠল। 
“বিয়ের পর দু দুটো বছর মেনে নিয়েছি শুভ্র। কিন্তু না এই বছর আমি আমার মায়ের
বাড়ি যাবোই। তুমি বা তোমরা কেউ আমায় আটকাতে পারবে না।”

দুর্গাপূজা স্পেশাল গল্প 

Loading...
“কিন্তু তুমি চলে গেলে এদিকটা কে সামলাবে মিনু? আর মা কিছুতেই রাজি হবে না।”
বোস বাড়ির ছেলে শুভ্রনীল ওর স্ত্রী মৃন্ময়ীকে বোঝানোর ব‍্যর্থ চেষ্টা করতে
লাগল।
“গত দুই বছরেও রাতের বিছানায় একই কথা বলেছো শুভ্র। ভালো বৌ হয়ে ওঠার লোভে তখন
প্রতিবাদ করিনি। এক বুক কষ্ট নিয়ে সব মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু আর নয়। এই বাড়ির
মেয়ে জামাই আসবে বলে পুজোতে বৌমাকে গৃহবন্দী থাকতে হবে তোমার মায়ের এই অন‍্যায়
আবদার আমি আর মেনে নেবনা।”
মৃন্ময়ীর ভিতরের চাপা আগুনটা আজ হটাৎ দপ করে জ্বলে উঠেছে বুঝতে পেরে শুভ্র
তোতলাতে শুরু করল।
“আমি কিছু জানিনা মিইইইনু। তুউউমি মাআআয়ের কাছে অনুমতি নাউ।”
“আমার কারো অনুমতির দরকার নেই। আমার ব‍্যাগ গোছানো কমপ্লিট। আমাকে শুধু এই টুকু
বলো যে তুমি গাড়িতে আমায় ছেড়ে আসবে নাকি আমি একাই যাবো?”
শুভ্র আর বাক‍্য ব‍্যয় না করে চুপচাপ ল‍্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ নিয়ে বসে গেল।

টুকিটাকি জিনিস হ‍্যান্ড ব‍্যাগটায় গুছিয়ে রাখতে রাখতে মৃন্ময়ীর মনে পরে যায় গত
বছর পুজোতে ওর অনেক অনুনয় কর্নপাত করেননি শাশুড়ি মা। শাশুড়ি মায়ের বলা কথা গুলি
আজও কানের পর্দায় ধাক্কা দেয় বারে বার।

“শোন বাপু, পুজো আচ্চার দিনে আমার ছেলের ওই গরীব কুটুম বাড়িতে পাত পেড়ে কচু
সেদ্ধ খেতে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। এখানে থেকেই ভালো মন্দ খাবে। আর তাছাড়া এ
বাড়ির একমাত্র মেয়ে জামাই শুধুমাত্র পুজোতেই মুম্বাই থেকে এসে কটা দিন থাকে
এখানে। সে সময় ঘরের বৌ না থাকলে ওদের যত্ন আত্তি কে ক‍রবে শুনি?”
সেদিনকার সেই চরম অপমানের বারুদ সেময়ের জন্য বুকে জমতে দিয়েছিল মৃন্ময়ী। কিন্তু
আজ মৃন্ময়ীর চিন্ময়ী রূপের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। বোস বাড়িতে কেউ থাকলে সামাল দিয়ে
দেখাও।
মৃন্ময়ী গরীব ঘরের সুন্দরী শিক্ষিতা মেয়ে। ভালো পাত্র দেখে সমন্ধ করে ওর বিধবা
মা সামর্থ্যের বাইরে গিয়েই বিয়ে দিয়েছিলেন কমপিউটার ইঞ্জিনিয়ার শুভ্রনীল বোসের
সঙ্গে।


এখন মৃন্ময়ী বোঝে কেন ওরা জেনেশুনে ওর মত এক দরীদ্র ঘরের মেয়েকে বাড়ির বৌ করে
এনেছিলেন। আসলে গরীব ঘরের মেয়েদের খুব সহজেই ডোমিনেট করে রাখা যায়। সহজেই বাড়ির
কেয়ার টেকার বানানো যায়। আবার আত্মীয় বন্ধুদের কাছে বৌমার শিক্ষা ও রূপটাও
ম‍্যাটার করে।
“একি বৌমা কটা বাজে খেয়াল আছে? বলি দুপুরের রান্নাটা কখন বসাবে শুনি?”
“ব্রেকফাস্টে লুচি আলুর দম তো বানিয়ে দিলাম মা। এবার দুপুর রাতে আপনি আপনার
মেয়ে জামাইকে যা যা খাওয়াতে চান সব আপনি নিজেই রান্না করে নেবেন, কেমন?”
মৃন্ময়ী এতদিন যতটা নরম ছিল শাশুড়ির প্রশ্নে আজ ঠিক ততটাই গরম হয়ে জবাব দিল।
“একি একি তুমি ব‍্যাগ গুছিয়েছো কেন?”
“কেন মা আপনার ছেলে কিছু জানাইনি? কাল রাতেই তো ওকে বলেছি। দুর্গা মা এই চারদিন
তার বাপের ঘরে আসে। আপনার মেয়েও আসে। শুধু আমার বেলায় অন্য নিয়ম কেন হবে মা?
আমি চললাম, আমারো একটা বাপের বাড়ি আছে। চিন্তা করবেন না। বিসর্জন হয়ে গেলেই
ফিরে আসবো। আর হ‍্যাঁ, আপনার ছেলেকে বলে দেবেন যদি শ্বশুর বাড়ির কচু সেদ্ধ তার
মুখে রোচে তবেই যেন আমার পিছু নেয়, নইলে নয়।”
শুভ্র চুপচাপ আলমারির উপরে রাখা
ওর ছোট লাগেজ ব‍্যাগটা
নামিয়ে আনল।।  

Share This Article