ছোট গল্প – সুইসাইড – Bangla Choto Golpo – Short Story Bengali

Bongconnection Original Published
4 Min Read

 ছোট গল্প – সুইসাইড – Bangla Choto Golpo – Short Story Bengali

ছোট গল্প - সুইসাইড - Bangla Choto Golpo - Short Story Bengali
Loading...

শিক্ষনীয় ছোট গল্প

সুইসাইড
        – দিব্যেন্দু
ওদিক থেকে ঝাঁপ দিলে তুমি মরবে না; নীচে বালি রাখা আছে । ওই ডানদিকটায় যাও
ওখান থেকে তুমি যদি ঝাঁপ দাও তাহলে নিশ্চিতভাবে মরবে। নীচ দিকে তাকিয়ে দেখো,
ওখানে অনেকগুলো ভাঙা ইঁটও পড়ে আছে, তুমি তাড়াতাড়ি মরতে পারবে! – কথাগুলো
মৌলিমার পেছন থেকে কেউ যেন বলে উঠলো। @Dibyendu Das

আজ পাঁচ বছরের সম্পর্ককে ছিন্ন করে দিয়ে মৌলিমার বয়ফ্রেন্ড অন্য কারোর হাত
ধরেছে! তাই সে সুইসাইড করতে এই নতুন তৈরি হওয়া বিল্ডিং এ এসেছে। 

মৌলিমা দেখলো একজন মাঝবয়সী ভদ্রলোক এক হাতে মদের গ্লাস আর অপর হাতে দাবার গুটি
নিয়ে বসে আছেন।
মৌলিমা একটু রেগেই বিল্ডিং এর রেলিং থেকে নেমে ভদ্রলোকের কাছে এসে বললো, ” কি
ভেবেছেন কি! একটু শান্তিতে মরতেও দেবেন না? একজন তো আমার জীবনটা জ্বালিয়ে
দিয়ে চলে গেল। আর এখানে এসেও শান্তি নেই!” 


_” তুমি কি মিষ্টি দেখতে একটা মেয়ে! তোমার আবার কিসের দুঃখ! কেনই বা মরতে
চাইছো?”
_”কি! আমি মিষ্টি দেখতে! হাসালেন! মিষ্টি দেখতে হলে কেউ পাঁচ বছরের সম্পর্ককে
এক নিমেষে শেষ করতে পারে!”
কিছুক্ষণ সব চুপ। মৌলিমা আবার বললো,” আপনি বুঝবেন না আমি কি সিচুয়েশনের মধ্যে
দিয়ে যাচ্ছি। @Dibyendu Dasআপনি কি কখনো কাউকে ভালোবেসেছেন? আপনাদের সময়ে
বাবা-মা দেখেশুনে যাকে পারতো গলায় ঝুলিয়ে দিত! আর আপনারাও তার সাথে সারা জীবন
কাটিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু আমাদের সময় একটু আলাদা। আপনি কখনো ভালোবাসার
মানুষকে হারিয়েছেন?”

ভালোবাসার ছোট গল্প

Loading...
মাঝবয়সী সেই ভদ্রলোক একটু মুচকি হেসে বললেন,” ঠিকই বলেছো তোমাদের থেকে আমাদের
সময়টা অনেক আলাদা ছিল। তোমার মতো আমিও আমার কলেজ জীবনে একটি মেয়েকে ভীষণ
ভালবাসতাম। চার বছরের সম্পর্ক হঠাতই ছেদ পড়লো! জানতে পারলাম তার বিয়ে ঠিক
হয়ে গেছে! আমাদের সময়ে তো আর তোমাদের মতো পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার সুযোগ ছিল
না। তাই বাবা মায়ের সম্মানের কথা চিন্তা করে আমরা আমাদের ভালোবাসার বিসর্জন
দিলাম! কিন্তু হঠাৎ এসব সহ্য করতে না পেরে তোমার মতো সুইসাইড করতে বাড়ি থেকে
পালিয়ে গিয়েছিলাম। দু-তিনদিন আমি এভাবেই বাড়ির বাইরে ! Dibyendu Das
বাবা-মা-বোন তিনজনেই আমার বন্ধুদের কাছে সমস্ত ঘটনা জানার পর আমার খোঁজ করতে
থাকে। কিন্তু আমাকে খুঁজে না পেয়ে তারা ভেবে নেয় আমি মারা গেছি! সেই দুঃখে
তারা তিন জনেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে; তিনদিন পর আমি যখন না মরতে পেরে বাড়ি
ফিরে আসি তখন আমার পায়ের তলার মাটি সরে পড়ে! সেদিন থেকে আমি আজ পর্যন্ত
নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনি। সেদিন যদি আমি সুইসাইড করার জন্য বাইরে না যেতাম
তাহলে আজ হয়তো আমার মা-বাবা-বোন সুস্থ থাকতো। এবার তুমি বলো তুমি যার জন্য
সুইসাইড করতে যাচ্ছিলে সেকি তোমার অক্সিজেন, তাকে ছাড়া তুমি কি শ্বাস-প্রশ্বাস
নিতে অক্ষম? আজ তুমি সুইসাইড করতে যাচ্ছো। যখন তোমার বাড়ির লোক তোমার নিথর দেহ
দেখার পর তারাও সুইসাইড করবে তখন তুমি ওপর থেকে সেটা দেখে সহ্য করতে পারবেতো?
পারবে তো নিজের অপরাধের বোঝা মাথায় রেখে শান্তিতে চলে যেতে? যদি পারো তাহলে,
সামনেই মৃত্যু তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। যাও ওই রেলিংয়ের ওপর থেকে ঝাঁপিয়ে
পড়ো। আর যদি নিজের বাবা-মাকে কষ্ট দিতে না চাও তাহলে আমার পাশে এখানে বসতেই
পারো। 
মৌলিমা নিজের চোখ মুছে ওই ভদ্রলোকের পাশে গিয়ে বসলো আর মুখে সামান্য হাসি রেখে
বললো,” আমাকে আপনার সাথে খেলায় নেবেন?” 
_”তুমি দাবা খেলতে পারো?”
_”হ্যাঁ পারি । আমি স্কুলে দাবা খেলায় চ্যাম্পিয়ন ছিলাম।”
_”বাহ্! জমে যাবে । আমিও কিন্তু কাঁচা খেলোয়াড় নই। এসো তবে একদান হয়ে যাক।
আর হ্যাঁ, সুইসাইড ক্যানসেল তো?”
_”হ্যাঁ ক্যানসেল…!”

Share This Article