Aparajito Bengali Movie Review
অবিশ্বাস্য! পৃথিবীর ৪ সবথেকে বড় ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এর একটি,
Toronto International Film Festival থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছে জানতাম, তাই
খুবই উচ্চ প্রত্যাশা নিয়ে দেখতে গেছিলাম। সমস্ত প্রত্যাশা কে ছাপিয়ে গেলো এই
সিনেমা! কিভাবে এই অসম্ভব বাস্তবায়িত হলো, আসুন বলছি,
Cast:
Jeetu Kamal, Saayoni Ghosh, Debashis Roy, Mahul Brahma, Anusha
Viswanathan, Anusha Majumdar
& other's.
Director -
Anik Dutta
যা যা ভালো লেগেছে:
মেক আপ ও কস্টিউম: সোমনাথ কুন্ডু অভাবনীয় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। বেশিরভাগ
জায়গায় আপনারা শুধু জিতু বাবুর গেট আপ সম্বন্ধেই পড়বেন বা শুনবেন। সেটাতো
আছেই, কিন্তু Anusha Viswanathan কে দুর্গা হিসেবে যেভাবে প্রেজেন্ট
করেছেন বা চুনিবালা দেবী র চরিত্রে যাকে নেওয়া হয়েছে, করুণা ব্যানার্জীর
ভূমিকায় অঞ্জনা বসু যেভাবে স্ক্রীনে এসেছেন তাতে দর্শক অনায়াসে পথের পাঁচালীর
জগতে হারিয়ে যাবেন। সুচিস্মিতা দাশগুপ্ত কস্টিউম ডিজাইন এ ১০০ এ ২০০ পাবেন।
তবে এই অভিনেত্রী দেরও ক্রেডিট প্রাপ্য। দুর্গার বৃষ্টি ভেজা, পিসির মৃত্যু,
সর্বজয়ার কান্না এই দৃশ্য গুলো দুর্দান্ত হয়েছে।
Rating - 9/10
Jeetu Kamal: উনি সত্যি কামাল করে দিয়েছেন(pun intended)! মেক আপ,
কস্টিউম কোনো কিছুই মূল্য পেতোনা যদি এই মানুষটা ফুল conviction এর
সঙ্গে বোঝাতে না পারতেন যে তার অপরাজিত রায় আসলেই প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব
সত্যজিৎ রায়। কথাবার্তা, হাঁটাচলা দেখে আজ ওনাকেই বাংলার Mr Perfectionist
বলতে দ্বিধা নেই।
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: পরিচালক অনীক দত্ত, শ্রীপর্ণা মিত্র এবং উৎসব মুখার্জী
এই চিত্রনাট্য লিখেছেন আর চিত্রনাট্য এই সিনেমার সবথেকে শক্তিশালী পয়েন্ট।
রেডিও ইন্টারভিউ থেকে বিবরণের মাধ্যমে পুরো সিনেমার মেকিং, বাধা বিপত্তি,
অবশেষে সাফল্য, পুরোটা দুর্দান্ত ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। আইকনিক সেই দৃশ্য গুলো
বড় পর্দায় দেখে মন ভরে গেল। নিজের ফিল্ম এডিটিং এর ত্রুটি বোঝানো, শুটিং
চলাকালীন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে improvise করা বিশেষত একটি শিশুশিল্পী
কে নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা দারুণভাবে স্ক্রীনে উঠে এসেছে সংলাপ ও দৃশ্যায়নের
মাধ্যমে। সংলাপ খুব ভালো। অনীক দত্ত তার রসবোধ এর জন্য সুপরিচিত। প্রাক্তন
মুখ্যমন্ত্রী "বিমান রায়" মহাশয়ের সঙ্গে অপরাজিত রায়ের একটি মিটিং এর দৃশ্য
আছে, সেটা তে হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার জোগাড়! অপরাজিত রায় হোক বা তার স্ত্রী
হোক বা বেশ অনেক গুলি ছোট ছোট চরিত্র হোক, সেগুলি খুব যত্ন সহকারে নির্মিত।
সত্যজিৎ রায়ের বিভিন্ন ফটো আমরা দেখেছি, তার মধ্যে কিছু আইকনিক পোজ আছে,
সেগুলোও সিনেমার সঙ্গে সঙ্গে recreate করা হয়েছে। আমাদের বর্তমান সময় যেমন
অনেককে দেখা যায়, কোনো মুভি নিজের ভালো না লাগলেও সেটা পপুলার হলে জোয়ারে গা
ভাসিয়ে ফেক স্তুতি দেওয়া হয়, কিম্বা উন্নাসিকতা দেখিয়ে ভালো কাজকে ছোট করার
যে প্রবণতা, সেগুলোও তুলে ধরা হয়েছে।
Aparajito Movie Review 2022
অন্যান্য পারফরম্যান্স: সায়নী ঘোষ বেশ ভালো কাজ করেছেন। চিত্রগ্রাহক সুব্রত
মিত্রের ভূমিকায় দেবাশীষ রায়, তিনিও খুব ভালো। বিমান রায়ের চরিত্রে পরান
বন্দ্যোপাধ্যায় ক্যামিও করলেন আর সেটা জাস্ট সেরা! অপু (এখানে মানিক) র
ভূমিকায় থাকা শিশুশিল্পী টিও যথেষ্ট ভালো।
টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্ট: Cinematography তে সুপ্রতিম ভোল এবং দেবজ্যোতি
মিশ্রের মিউজিক যথার্থ। খুব আলাদা কিছু করার ছিলনা অবশ্য, যা ছিল টা নিপুণ ভাবে
হয়েছে। অর্ঘ্যকমল মিত্রের সম্পাদনা বেশ ভালো। লেংথ, সিনেমার পেসিং খুব ভালো।
একটা পিরিয়ড পিসে আর্ট ডিরেক্টরের অবদান অনস্বীকার্য। আর তাই প্রোডাকশন
ডিজাইনে আনন্দ আঢ্য র জন্য কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।
অপরাজিত মুভি রিভিউ ২০২২
যা যা ভালো লাগেনি(খুবই তুচ্ছ দুটো কথা):
নামকরণ: এখানে সবার নাম, কিছু সিনেমার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। সেই হিসেবে
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম দেওয়া হয়েছে বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়।
মুশকিল হলো, এই নামেও একজন প্রখ্যাত সাহিত্যিক আছেন! এই নামটা অন্য কিছু ভাবা
যেত হয়তো।
বিরতি: ভারতীয় সিনেমায় বিরতি একটা পার্ট। এখানে বিরতি দৃশ্য টা খুব abrupt।
ঝপ করে বিরতি হয়, মানে মাঝামাঝি কাটা, কিন্তু বিরতি হিসেবে ডিজাইন করা হয়নি।
হলিউড কিন্তু Interval তুলে দিয়েছে পুরোপুরি, কিন্তু এখানে যখন সেটা আছে,
ওখানে একটু ঠিক ভাবে ব্রেক নিলে ভালো হতো।
সব মিলিয়ে এই সিনেমাটি একটি অতি আবশ্যক এক্সপেরিয়েন্স। বাকরুদ্ধ হয়ে পরেছি।
দুদিন আগে হল না পাওয়া নিয়ে রাগে দুঃখে একটা পোস্ট করেছিলাম। সিনেমাটা এত
ভালো হয়েছে দেখে সেই অনুভূতি আরো দশগুণ বেড়ে গেলো। তবে সুসংবাদ এই যে
শুক্রবার BMS খুললে শেষ অব্দি ২৬ টা শো দেখা গেছিলো, শনিবার সেটা ৩০ হয়ে গেছে।
আশা করা যায়, শো বাড়ার এই ট্রেন্ড শনি থেকে রবি, উইকএন্ড থেকে weekdays,
প্রথম সপ্তাহ থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহে বজায় থাকবে। এই সিনেমা নিজের সুনাম বজায়
রেখে সব বাধা কাটিয়ে হয়ে উঠবে "অপরাজিত"।