হ্যাপি নিউ ইয়ার গল্প 2022 – New Year Bengali Story – নতুন বছরের গল্প

Bongconnection Original Published
6 Min Read


হ্যাপি নিউ ইয়ার গল্প 2022 – New Year Bengali Story –  নতুন বছরের
গল্প 

হ্যাপি নিউ ইয়ার গল্প 2022 - New Year Bengali Story -  নতুন বছরের গল্প
Loading...

“হেব্বি নিউ ইয়ার”- ফ্রম পটলা
     ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল তো অনেক দূরের কথা, সরকারি অবৈতনিক
স্কুলে পটলা লেখাপড়া করেছিল চার ক্লাস পর্যন্ত।
ক্লাস ফোরে পৌঁছতে না পৌঁছতেই পড়াশোনার থেকে অনেক বেশি আকর্ষণীয় ব্যাপারস্যাপার
সহপাঠীদের কাছ থেকে শিখে নিয়েছিল পটলকুমার।
   তারপরে দশ বছর বয়সের মধ্যেই বাপ মা দুজনেই মরে হেজে গেল। পটলার
স্কুলজীবনের সেখানেই ইতি। পাড়াতুতো রতনদার দয়াদাক্ষিণ্যে গাড়ির মেকানিকের কাজ
শিখে বর্তমানে ও বেঁচেবর্তে আছে।
      তবে যাই বলো আর তাই বলো, পটল কুমার কিন্তু “ইয়েস”, “নো”,
“ভেরি গুড” বা “থ্যাঙ্ক ইউ” এর বাইরেও বেশ কয়েকটা ইংরেজি শব্দের মানে বোঝে এবং
মাঝেমধ্যে কথার মাঝখানে ব্যবহারও করে ফেলে।
 এই যেমন আজকাল পটলা “সেল্ফ মেড ম্যান” কথাটার মানে বুঝতে শিখেছে, ব্যবহার
করছে এবং নিজেকে এস.এম.এম. ভেবে মনেমনে বেশ আত্মতৃপ্তি অনুভব করছে।
     কথাটা খাঁটি বটে। দশ বছর বয়স থেকে পটলা খেটে খায়। গাড়ির
চাকায় হাওয়া ভরা দিয়ে শুরু হয়েছিল। আর এখন তো ইঞ্জিনফিঞ্জিন খুলে মেশিন সারাতে
পটলা ওস্তাদ।

Happy New Year Story In Bengali 

Loading...
   
    তা যে কথাটা হচ্ছিল, ওই “সেল্ফ মেড ম্যান”য়ের কথাটা। ব্যাপারটার
গুরুত্ব পটলা বুঝতে শুরু করল হাতে স্মার্ট ফোনটা পাওয়ার পর থেকে।
   রতনদার বউ আর বকুলতলার পিন্টুদা সেবার দুদিনের জন্য দীঘা গিয়েছিল,
ওই একটু ফুর্তিফার্তা করতে। রতনদা সেই সময়ে কলকাতায় ছিল না, দেশের বাড়ি গিয়েছিল
চাষের কাজ দেখাশোনা করতে।

দীঘা যাওয়ার আগের রাতে বৌদির মনে পটলার জন্য দয়া উথলে উঠল। বৌদি পটলাকে নিজের
পুরোনো মোবাইল ফোনটা উপহার দিয়েছিল “বোবা” হয়ে থাকার জন্য। ওদিকে পিন্টুদা
বৌদিকে গিফ্ট করল দামি নতুন ফোন।

 
সে যাক গে, স্মার্টফোন হাতে পেয়ে পটলার এলেবেলে জীবনটাই কেমন স্মার্ট হয়ে
গেল…
Also read,
    হাতে ধরে স্মার্টফোনের ব্যবহারটা শেখাল
ছেলেবেলার বন্ধু নিতাই। বস্তির একেবারে শেষ মাথায় ওর সেলুন। শেখানোর আগে নিজের
সেলুনে পটলার একটা গ্রুমিং সেশনও করিয়েছিল নিতাই। একদম “ফ্রী”তে, পয়সাকড়ি কিছুই
নেয়নি। বচপনের দোস্ত বলে কথা।
   পটলার মাথার চুলটা স্পাইক স্টাইলে কেটে দিয়ে, তাতে জেল লাগাতে
লাগাতে নেতাই বলেছিল- বুঝলি তো ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে “প্রোফাইল পিকটা”
কিন্তু হেভি ইম্পরট্যান্ট। সত্যি বলতে গেলে ওটাই আসল। ওই “লুক”টাই লোকজনকে কাছে
টানবে। ফেসবুকে বন্ধু উপচে পড়বে।
  চুল ফুল সেট করে দিয়ে নিজের ফোনেই পটলের ছবি তুলে নেতাইটাই পটলাকে
ফেসবুকে এন্ট্রি করিয়ে দিলো। ছবির সঙ্গে স্ট্যাটাস “পটল কুমার, দ্য সেল্ফ মেড
ম্যান।”
ব্যস খুলে গেল ওয়াটসঅ্যাপের দরজাও।
     খুব বেশি দিন সময় লাগেনি। মাস কয়েক যেতে না যেতেই পটলা
বুঝতে শুরু করল- ওরে বাবা এ যে এক আজব জাদুর দুনিয়া।
  শুরুর দিকটাতে নেতাইয়ের সাহায্য নিয়ে পটল ফরওয়ার্ডেড মেসেজফেসেজ পোস্টাত
আর এদিক ওদিক নম্বরে পাঠিয়ে দিত। আর তাতেই পেয়ে যেত লাইক কমেন্টের বন্যা।
তারপরে কায়দাটায়দা সব নিজেই শিখে গেল। ক্রমশ পটলার মনের ভেতরে পুরো হিরো ফিলিং।
     
পরেরবার পটলার থেকে টাকা নিয়ে ওর ঘাড় ম্যাসাজ করতে করতে নেতাই বলে- কি বস
বলেছিলাম কিনা- তুমি নিজেকে দুনিয়ার সামনে যেমন ভাবে প্রেজেন্ট করতে চাও,
ফেসবুক তোমাকে তাই বানিয়ে দেবে। এ হল আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ। নিজের মনের মতো
দুনিয়া নিজে বানিয়ে নাও।
ইংরেজি জানা লোকজনরা এটাকেই বলে “মেক বিলিফ ওয়ার্ল্ড।”
 
আত্মবিশ্বাসী পটলার মুখে তখন বিজ্ঞের হাসি- মাত্র ছ’মাসেই ফ্রেন্ডলিস্ট পুরো
হিট গুরুদেব। বন্ধুর সংখ্যা সাড়ে চারশো ছাড়িয়ে গিয়েছে। তারমধ্যে আবার আড়াইশো
গার্লফ্রেন্ড। বললে হবে…পটল কুমার হ’ল গিয়ে “সেল্ফ মেড ম্যান”।
     যাই হোক বাস্তব জীবনে অবশ্য পটলার আজও কোনো বান্ধবী
জোটেনি। কেউ দ্বিতীয়বার ফিরেও তাকায় না।
তবে ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড ফাটাফাটি।
সারাদিনের কাজ সেরে রাতে ঘুমোনোর আগে পটলার দুতিন ঘন্টা সময় “ফেসবুকে” স্বপ্নের
মতো তরতরিয়ে কেটে যায়।

New Year Story In Bengali

    ওই দেখ, কথায় কথা বেড়ে যায়। হচ্ছিল সেল্ফ মেড ম্যানের কথা।
“পটলা…দ্য সেল্ফ মেড ম্যান”, অনেকটা সেই “আগ… দ্য ফায়ার” ছবির  নামের
মতো। হ্যাঁ, পটলা বুঝেছে ওর এই আগুনের মতো ইমেজটা ফেসবুকে ভালোই মার্কেট তৈরি
করেছে।
এমনকি ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বিয়ের বাজারেও পটল কুমারের দর এখন উর্ধমুখী।
  না না, পটলা ভুল বলছে না। তা নাহলে এই বছরের “বড়দিনে” মানে ক্রিসমাসে
পটলের কাছে এত অসংখ্য বিয়ের প্রস্তাব আসতে পারে কখনও?
   হ্যাঁ, চার ক্লাস পাশ হলে কি হবে, টুকটাক ইংরেজি শব্দ পটলা ঠিকই
বোঝে।
    বলতে একটু লজ্জা লজ্জা করছে, কিন্তু আসল ঘটনাটা হ’ল- এইবারের
বড়দিনে প্রায় দুশো তিয়াত্তর জন সুন্দরী মেয়ে পটলাকে মেসেজ পাঠিয়েছে থুড়ি
প্রস্তাব পাঠিয়েছে “ম্যারি ক্রিসমাস।” 
সকলেই একেবারে বিশুদ্ধ ইংরেজি বানানে লিখেছে “Marry Christmas.” অর্থাৎ তারা
নিশ্চয় পটল কুমারকে বিয়ে করতে চাইছে। সঙ্গে কত ফুল, বেলুন, ঝলমলে তারা…
   
   এইসব দেখেটেখে পটলকুমার খুশিতে একেবারে ডগোমগো। শুধু খুশি নয়, ওর
আত্মবিশ্বাসও হেব্বি বেড়ে গিয়েছে।
তাই এক মুহূর্ত দেরি না করে পটলাও সকলকে জানিয়ে দিচ্ছে- “হেব্বি নিউ ইয়ার”-
ফ্রম পটলকুমার ওরফে পটলা…দ্য সেল্ফ মেড ম্যান।”
*************
Also read,

Share This Article