Scarlett Johansson Birthday Party Post, Biography – Happy Birthday Scarlett Johansson – স্কারলেট জনসন

Bongconnection Original Published
79 Min Read


Scarlett Johansson Birthday Party Post, Biography – Happy Birthday Scarlett
Johansson – স্কারলেট জনসন

Scarlett Johansson Birthday Party Post, Biography - Happy Birthday Scarlett Johansson - স্কারলেট জনসন
Loading...

Scarlett Johansson Birthday, Biography, Age

Loading...
পর্ব ১
আজ স্কারলেটের জন্মদিন। আমাদের এই প্রজন্মের কাছে তিনি যেন মেরিলিন মনরো। মনরো
ধরাছোঁয়ার বাইরে, কিন্তু স্কারলেট নিজেকে যেভাবে অতি সাধারণ থেকে অসাধারণ সব
চরিত্রে ভাঙছেন, রীতিমতো বিস্মিত হচ্ছি আমরা। 

আমার এক স্কারলেট জোহানসন  পাগল বন্ধু আছে। ‘ আন্ডার দ্য স্কিন’ এ তাঁকে
দেখে সেই বন্ধু এতটাই পাগল হয়ে গেছিল যে সোজা কুমোরটুলি গিয়ে বলেছিল সেই ছবির
আদলে স্কারলেটের একটা মূর্তি বানিয়ে দিতে। বেজায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছিলেন
নাকি কুমোর মশাই। 

স্কারলেটের সঙ্গে একটা বিষয়ে আমি অপর্ণা সেনের তুলনা করি – অতি ছোটবেলা থেকে
এঁদের সাংঘাতিক ম্যাচিয়োরিটি ছিল।অভিনয় তো ছেড়েই দিলাম, পনেরো বছরেও পরিণত
কথাবার্তা আর হাবভাবে বয়স মনে হত পঁয়ত্রিশ। 

Scarlett Johansson Age

সময়টা সেই ১৯৮৪ র ২২শে নভেম্বর।  কার্স্টেন জোহানসন আর মেলানী স্লোনের ঘরে
তাঁদের আরও দুই সন্তানের পরে জন্মাল এক কন্যাসন্তান – স্কারলেট । বাবার পদবী
‘জোহানসন’ই সে ব্যবহার করে। কার্স্টেনের বাবা ছিলেন স্ক্রিন রাইটার আর
ডিরেক্টর। কে বলতে পারে স্কারলেটের রক্তেই হয়তো রূপোলী পর্দা মিশে ছিল !
 মা মেলানি ছিলেন ইহুদি-পোলিশ। ব্রংক্স শহরেই তিনি ছোটবেলা কাটান। তাঁর
নামকরণের  পেছনে একটা মজার গল্প শোনা যায়। বিখ্যাত ‘ গন উইথ দ্য উইন্ড’
সিনেমায় অলিভিয়া দ্য হ্যাভিল্যান্ড অভিনীত মেলানী হ্যামিল্টনের নামেই নাকি তাঁর
বাবা-মা তাঁর নাম রেখেছিলেন। অতএব মেলানীও তাঁর মেয়ের নাম রাখলেন ওই ছবিরই আরেক
চরিত্র স্কারলেটের নামে। স্কারলেটের নাম শুনেই তাই লোকজন তাকে ক্ষ্যাপাত –
তোমার ভাইয়ের নাম তবে কি রেট ? কিন্তু ঘটনাচক্রে ভাইয়ের নাম রাখা হ’ল হান্টার।
বাবা-মা’র চার সন্তানের মধ্যে স্কারলেটই সবচাইতে ছোট। কার্স্টেন আর মেলানীর
প্রথম দুই সন্তানের নাম আদ্রিয়ান আর ভ্যানেসা।স্কারলেট আর হান্টারের জন্ম
একসঙ্গে- তারা যমজ। তাঁদের বয়সের ফারাক তিন মিনিট মাত্র। স্কারলেট ব্যাপারটাকে
নিয়ে বলে- ‘ মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট থ্রি মিনিটস অফ মাই লাইফ’। যমজ হ’লেও দুই
ভাইবোনের মধ্যে এতটাই অমিল যে অনেকে বুঝতেই পারে না যে তারা একই পরিবারের।
স্কারলেটের হাইট পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি কিন্তু হান্টারের ছ’ফুট তিন। হান্টারের চুল
কালো আর চোখের মণি বাদামি।  দু’জনে একসঙ্গে বেরোলে লোকে ভাবত তারা বুঝি
ডেট করছে।এতে অসম্ভব বিরক্ত হত দু’জনেই।
 দু’ ভাইবোনের মধ্যে মিল বলতে দু’জনেরই আর্নল্ড সোয়ার্ৎজেনেগার আর ড্যানি
ডেভিটোকে পছন্দ- এটুকুই। 
১৩ সংখ্যাটা বাস্তবিকই অপয়া। স্কারলেট যখন ১৩ তে পা দিল,  বাবা-মা আলাদা
হয়ে গেলেন। 
বাবা কার্স্টেনের মোটামুটি আয়ে সংসার চলত। যথেষ্ট অভাবের মধ্যেই চার ভাই-বোন
বেড়ে ওঠে। কিন্তু ঐ চরম সময়েই এমন কিছু জিনিস ছিল না,যা স্কারলেট চেয়েও
পায়নি।বাবা-মা তার কোনো অভাবই রাখেননি। এখন স্কারলেটের কোনোকিছুরই অভাব নেই।
তার মা বারবার বলেন সামর্থ্য যদি থাকে তবে যা চাও সেটাই উপভোগ কর। কিন্তু
ছোটবেলার কঠিন অবস্থা দেখেছে বলেই আজও মনপসন্দ যদি না হয় তবে খামোখা পাঁচশো
ডলার খরচা করে জুতো কিনতে তার বেশ গায়েই লাগে।
বাবা-মা অভাবের মধ্যেও ছোট্ট মেয়েকে সবসময় সাপোর্ট করেই এসেছেন। এমনকি মেয়ে
অভিনেত্রী হতে চায় শুনেও তাঁরা উৎসাহ দিয়েছেন। ছোট্ট স্কারলেট গুনগুন করে গাইত,
ঘর জুড়ে ট্যাপ ডান্স করে বেড়াত।শখ ছিল গানের জগতেই ঢুকে যাবে । স্কারলেটের
ছোটবেলাটা পুরোটাই ‘সব পেয়েছির দেশ’। 
বাবা,মা,ভাই-বোনেরা ছাড়াও আরেকজন ছিলেন,তিনি দিদিমা । তাঁর নাম ডরোথি ।
বেশিরভাগ সময়টাই স্কারলেট তাঁর কাছে পড়ে থাকত । ছোটবেলায় ডরোথি নিজেও স্কুলের
নাটকে বেশ কয়েকবার অভিনয় করেছেন।চুটিয়ে গাইতেনও তাতে। পারিবারিক অনুষ্ঠান এলেই
ডরোথি গার্সউইনের ‘সামারটাইম ‘ গাইতেন। স্কারলেটকে যখন কেউ জিগ্যেস করত তোমার
বেস্টফ্রেন্ড কে? সঙ্গে সঙ্গে উত্তর আসত দিদিমা।
একটা চ্যারিটিতে অর্থ সাহায্যের জন্য হলিউড স্টারদের সঙ্গে পরবর্তীতে স্কারলেট
গেয়েছিল ‘সামারটাইম’। বিস্মিত ডরোথি ভাবতেও পারেননি যে তাঁর নাতনিও গাইতে পারে।
কিয়ারা নাইটলের সঙ্গে স্কারলেটের তুলনা টানা হয়। বলা হয় সেও ছোটবেলা থেকেই এক
অবিশ্বাস্য সিনেম্যাটিক ট্যালেন্ট। তিন বছর বয়স থেকেই সে অভিনেত্রী হওয়ার
স্বপ্ন দেখত।আর পাঁচ বছরের মধ্যেই স্বপ্নপূরণ ঘটে যায়। মা ছিলেন সিনেমার পোকা
বলতে যা বোঝায় তাই। সন্তানদের সবরকমের সিনেমাই তিনি দেখাতেন। ‘ মিট মি ইন সেন্ট
লুইস’ দেখে স্কারলেট জুডি গারল্যান্ড হতে চাইত, ‘আন্টি মেম’ দেখে রোজালিন্ড
রাসেল হতে চাইত। নাওয়াখাওয়া ভুলে যেত এক্কেবারে। 
ইচ্ছেপূরণ হওয়ার জন্য যে সুযোগই আসত ,স্কারলেট একেবারে উঠেপড়ে লেগে যেত। বারবার
সে বলত আমাকে ‘ অ্যানি’ র জন্য অডিশন দিতে দাও। আমি রজার্স অ্যান্ড
হ্যামারস্টেইন মিউজিক্যালের সব লিরিক জানি। 
২০০৪ সাল নাগাদ কেলভিন ক্লেইনের নতুন মুখ হিসেবে স্কারলেট যখন সাইন করে,তার
ছোটবেলার কথা মনে পড়ত। প্রায়ই সে আয়নার সামনে গিয়ে ফিসফিস করত। লোকে শুনে ভাবত
মেয়েটার মাথাটাই বোধহয় খারাপ হয়ে গেছে। 
খেলার সময়ও অভিনয় করত স্কারলেট। সেই অভিনয়েও ছিল হম্বিতম্বি। খেলতে গিয়ে দাবি
করত সেই হবে রাজকন্যা। কদাকার সৎ মা কে হবে তা নিয়ে মাথাব্যথাই নেই । 
বরাবরই স্কারলেট জানত সে কী চায়। মেয়ের ব্যাপারস্যাপার দেখে মা মেলানী ঠিক
করলেন মেয়ে যা চায় তা হতে গেলে টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন দিয়ে শুরু করাই ভালো ।
কিন্তু শুরুতেই হোঁচট – কেউ পাত্তাই দিল না। কাজটা সহজও ছিল না। অনেকে আবার এসে
উপদেশ দিত তোমাদের পরিবারটাই এত মিষ্টি- অমুক এজেন্সিতে যোগাযোগ করো । কোমর
বেঁধে যেখানে যেখানে সম্ভব যাওয়া হ’ল কিন্তু  সেসব জায়গায় যাকে একমাত্র
সবার মনে ধরল সে স্কারলেটের বড় দাদা আদ্রিয়ান। কিন্তু তাঁর মধ্যে লেশমাত্রও
উৎসাহ দেখা গেল না। ছোট্ট স্কারলেট এতে একেবারেই ভেঙে পড়ল। একটা বাচ্চাকে
বোঝানোও তখন কঠিন। 
স্কারলেটের তখন একমাত্র ইচ্ছা,একটাই স্বপ্ন সে পারফর্ম করবে । সবার মনোযোগের
কেন্দ্রে সেই থাকবে । সেসব দেখে সবচেয়ে কষ্ট হত মা মেলানীর । দিনের পর দিন
একেকটা এজেন্সি অফিস থেকে ব্যর্থ হয়ে চোখের কোণায় জল নিয়ে বেরিয়ে আসতেন
বিধ্বস্ত মেলানী। স্কারলেটের নিজেকে গর্ভজাত একটা নিষ্কর্মা হ্যাম ছাড়া কিচ্ছু
মনে হত না। তবুও সে জোর গলায় বারবার বলত -‘ আমি পারফর্ম করব’ । মেয়েকে নিয়ে
একের পর এক অডিশনে যেতেন মেলানী।
এরপর গোল বাধা শুরু হ’ল স্কারলেটের কন্ঠস্বর নিয়ে। যে কন্ঠস্বর এখন তার
ট্রেডমার্ক সেই ভয়েস নিয়ে একেক জায়গায় রীতিমতো নাকানিচোবানি খেতে হ’ল তাকে। তার
নিজের মতে তার কন্ঠস্বর কিছুটা কাঁপা কাঁপা , হাস্কি কিন্তু স্মোকারদের মতো
ভাঙা নয়, গভীর কিন্তু ভারি নয় , ফিসফিসে কিন্তু হাঁপানির মতো নয় । এ ভয়েস
থিয়েটারে মানুষকে টেনে নিয়ে আসার মতোও নয়। কিন্তু হাজার হাজার দর্শক এই ভয়েসেই
মোহিত হয়ে গেলেও ছোটবেলায় এই ভয়েস ছিল স্কারলেটের কাছে এক যন্ত্রণা ।
বিজ্ঞাপনের অভিশনে গিয়ে তাকে শুনতে হত- ‘ বাবু জেলো খাও । দারুণ খেতে কিন্তু’
কেউ বলত-‘ তোমার কি ঠান্ডা লেগে সর্দি হয়েছে সোনা’? স্কারলেট বলত-‘আমি সবসময়
এভাবেই কথা বলি’। 
কেউ আবার বলত মেয়েটাকে দেখতে মিষ্টি কিন্তু গলাটা সেই আন্দাজে যুতসই না। 
মেলানী অন্যান্য মায়েদের মতো ছিলেন না। বাড়ি ফিরে যাবতীয় হতাশা , ক্ষোভ সাত
বছরের স্কারলেট তাঁর উপরেই ঝেড়ে দিত। বলত আমি আর এসব সহ্য করতে পারছি না।
উত্তরে মেলানী কিছুই বলতেন না। একবার সাত বছরের হতাশ মেয়েকে দেখে তিনি কপট
বিস্ময়ে বলেছিলেন আমি জানতামই না তুমি  এত ইন্টারেস্টেড। মেয়ে বলেছিল
তুমিও কি আমায় ধর্তব্যের মধ্যে রাখো না?
একের পর এক অডিশনে ব্যর্থ হয়ে মেলানী ঠেকে শিখলেন। ভাবলেন লাইন বদলাবেন। এত
সহজে মা’কে হার মানতে দেখে স্কারলেট বললো-‘ সে তুমি যাইই করো,এখান থেকে আমাকে
টলাতে পারবে না’। মা উত্তর দিলেন-‘ সে ঠিক আছে, কিন্তু আমি আর ঐসব বিজ্ঞাপনের
চক্করে নেই’। 
কিন্তু মেলানী দমলেন না। তিনি নিজে সিনেমার পোকা। মেয়েকে সেইসব অভিনেত্রীদের
উদাহরণ দেওয়া শুরু করলেন যাঁরা অল্পবয়স থেকে কেরিয়ার শুরু করে ইন্ডাস্ট্রির
চূড়ায় পৌঁছে গেছেন। স্কারলেটের চেয়ে ২২ বছরের বড় জোডি ফস্টারকে তাঁর দারুণ
উদাহরণ মনে হ’ল। সিনেমার আগে ফস্টারও একের পর এক বিজ্ঞাপণে মুখ দেখিয়েছেন। ১৯৯১
এ ফস্টার ‘ সায়লেন্স অফ দ্য ল্যাম্বস’ এ এক এফবিআই এজেন্ট এর ভূমিকায় অভিনয়
করলেন,যে এক সিরিয়াল কিলারকে ধরার ধান্দায় আছে। সারা বিশ্বে এই সিনেমা সাড়া
ফেলে দিল। ঠিক এই ছবিটাই মেয়েকে দেখানোর জন্য বাছলেন মেলানী। কিন্তু একটা সাত
বছরের বাচ্চা এরকম একটা নৃশংস থ্রিলার দেখায় মনে বিরূপ প্রভাব পড়তেই পারত
কিন্তু বাস্তবে ঘটলো উল্টোটা। স্কারলেটের এই সিনেমা তো বটেই ,জোডি ফস্টারের
কাজও বেশ পছন্দ হয়ে গেল। ফস্টারকেই সে অনুসরণ করবে বলে ঠিক করে ফেললো।
কাছাকাছি সময়ের আরও দুটো সিনেমা স্কারলেটের বেশ পছন্দ ছিল – চার্লি অ্যান্ড দ্য
চকোলেট ফ্যাক্টরি আর ডার্টি ডান্সিং। তবে এই দুই সিনেমা ছিল শিশুতোষ ।
একের পর এক বাধাবিপত্তির পর টিভির বিজ্ঞাপনের অডিশনে মেলানী যবনিকা টেনে দিলেন।
স্কারলেটের লম্বা ব্লন্ড চুল ছিল বলেই যে ওরা তাকে নিয়ে নেবে এটা ভাবাই ভুল ছিল
, তাদের চাহিদা ছিল এছাড়াও আরও ‘বাড়তি’ কিছু।
স্কারলেট শেষ অবধি জনসমক্ষে নিজেকে জাহির করতে পারল আট বছর বয়সে এসে। প্লেরাইটস
হরাইজনস থিয়েটারে  একটা প্রযোজনায় নাটকে  ছোট্ট একটা রোলে দু’লাইন
সংলাপ বলা। ইথান হক ও ছিলেন অভিনয়ে।
আর পেছনে তাকাতে হয়নি স্কারলেটকে। অভিনয়ের কেরিয়ারেই সে জমে গেল ।
নাটকে অভিনয়ের পরের বছরেই ‘ নর্থ ‘ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ এসে গেল। স্কারলেট
বুঝলো এতদিন ধরে সে মনেপ্রাণে ঠিক জগৎটাকেই চেয়ে এসেছে। সে ধীরে ধীরে বুঝতে
পারল-‘ এই জগৎটার প্রতিই আমার খাঁটি ভালোবাসা।অভিনয় অভিব্যক্তি প্রকাশের এক
অসাধারণ রূপ যেখানে কেউ নিজের চেতন আর অবচেতন নিয়ে খেলতে পারে।নিজের অভিনীত
চরিত্রের জন্য তৈরি করা ছোট্ট জগতে ইচ্ছেমতো ঢুকতে কিংবা যখন খুশি বেরিয়ে আসতে
পারে। ঠিক যেন ড্রাগের মতো’। 
১৯৯৩ তে টিভিতে লেট নাইট উইথ কন্যান ও’ব্রায়েনের প্রথম এপিসোডের একটায়
স্কারলেটকে দেখা গেল। এই টক শো  মার্কিন শ্রোতাদের কাছে প্রবল জনপ্রিয়
ছিল। তারপর থেকে স্কারলেট অনেকবার সেই শো তে হাজির হয়েছে ,এমনকি শৈশব নিয়েও
আলোচনা করেছিল। 
অভিনয় নিয়ে স্কারলেটের আগ্রহ দেখে তার বাবা-মা বিখ্যাত লী স্ট্র্যাসবার্গ 
ফিল্ম ইন্সটিটিউট এ ভর্তি করে দিলেন। উইকেন্ড ক্লাসের জন্য সেই ইন্সটিটিউশনের
বেশ নামডাক ছিল।
এরপরেই শিকে ছেঁড়ে ‘ নর্থ’ ছবিতে অভিনয় করার। ছবিটা একটা ছেলের,সে চায় তার
বাবা-মা’কে ছেঁড়ে এমন জায়গায় যেতে যেখানে কোনো ক্রিয়ার তার উপরে চাপিয়ে দেওয়া
হবে না।স্কারলেট লরা নেলসন বলে একটা ছোট চরিত্রে ছিল।ছবির সেটে গিয়ে স্কারলেটের
কোনোরকম আড়ষ্টতা দেখানো দূরে থাক,তাকে কী করতে হবে সেসব ভালোভাবেই বুঝলো।তাই
অভিনয়ও গেল ভালোমতো উতরে ।

কিন্তু ঘটনাচক্রে সেই ছবি বক্স অফিসে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়লো। পরিচালকন রব
রেইনারের ব্যর্থতা নিয়ে ফিল্ম ক্রিটিকরা একেবারে ধুয়ে দিলেন। কেউ লিখলেন ‘ এখনো
অবধি তৈরি হওয়া সবচাইতে ওঁচা ছবি’ ।  

কিন্তু এই ছবির ছবির ব্যর্থতা স্কারলেটের কাছে হয়ে গেল শাপে বর! এখানে যদি সে
বড় রোলে কাজ করত তবে কেরিয়ারে সেই প্রভাব পড়ত সাংঘাতিক।
Scarlett Johansson Birthday Party Post, Biography - Happy Birthday Scarlett Johansson - স্কারলেট জনসন
১৯৯৫ এর পরবর্তী ছবি ‘ জাস্ট কজ’ নিয়ে অতটা খারাপ অভিজ্ঞতাও হ’ল না। ছবিতে
ছিলেন জেমস বন্ড খ্যাত শন কন্যারি। তাঁর চরিত্র ছিল হার্ভার্ডের একজন আইনের
অধ্যাপকের। মারধোর খেয়ে বাধ্য হয়ে  করা এক ব্যক্তির স্বীকারোক্তির উপর
ভিত্তি করে তার মৃত্যুদন্ড হয়। তাকে বাঁচানোর জন্য তলব করা হয় অধ্যাপককে।
এই ছবিতেও কিন্তু স্কারলেটের প্রতিভা আলাদা করে চোখে পড়ার মতো ছিল না।
স্কারলেট যখন ১১, লী স্ট্র্যাসবার্গ ইন্সটিটিউট এর শিক্ষকরা তার দক্ষতায়
একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। একটা হাফ সিমেস্টারের পরে তাকে একেবারে উঁচু ক্লাসে
তুলে দেওয়া হ’ল।সেই ক্লাসে এসে স্কারলেট স্ট্যানিস্লাভস্কি পদ্ধতি শেখা শুরু
করল ।এই জটিল পদ্ধতিতে প্রতিটা চরিত্রের মোটিভেশন গুলো পরীক্ষা করা হয়। চরিত্রে
ডুবে গিয়ে সেটাকে বিশ্লেষণ করে তার একটা বিশ্বাসযোগ্য চিত্রণও করতে
হয়।ব্যক্তিগত অনুভূতির সঙ্গে তুলনা করতে হয় সেই চরিত্রের অনুভূতিরও। এই পদ্ধতিই
স্কারলেটের প্রতিভার বিকাশকে আরও কয়েকটা ধাপ এগিয়ে দিল।
ঠিকঠাক ‘ব্রেক’ বলতে যা বোঝায়, ১১ বছরের স্কারলেট সেটা পেয়ে গেল ‘ ম্যানি
অ্যান্ড লো’ তে আমান্ডা চরিত্রে অভিনয় করে। একটা মেয়ে এখানে তার দিদিকে নিয়ে
পালিয়ে যায়। স্কারলেটের প্রতিভা এমনকি সেই ‘বাতিল’ কন্ঠস্বরকে এখানে যথাযথভাবে
কাজে লাগানো হ’ল। এমনকি গল্পের ন্যারেশনও দেওয়ানো হ’ল। এবার সমালোচকেরা প্রশংসা
করলেন।
কেউ লিখলেন স্কারলেটের সাবলীল অভিনয়ে শিশুর সারল্যের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার মিশেল
ঘটেছে, কারুর স্কারলেটের ভয়েসওভার শুনে মনে পড়ে গেল ‘ ডেজ অফ হেভেন’ এর লিন্ডা
ম্যানজ এর  ধারাভাষ্যের কথা- একইসঙ্গে মজার আর দুঃখের। 
‘ ম্যানি অ্যান্ড লো’ তে স্কারলেটের অভিনয় তার জীবনে প্রথম নমিনেশন এনে দিল- ‘
ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্পিরিট অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ফিমেল লীড’। 
১৯৯৬ সালে সানডেন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছবিটা চলার সময় অন্যান্য ক্রিটিকদের
পাশাপাশি সেই ফেস্টিভ্যালের প্রতিষ্ঠাতা আর চেয়ারম্যান রবার্ট রেডফোর্ডের চোখে
পড়ে গেল স্কারলেটের অভিনয়।  রেডফোর্ডের এতটাই ভালো লেগে গেল যে তাঁর ‘ দ্য
হর্স হুইস্পারার’ ছবিতে গ্রেস ম্যাকলীনের চরিত্রে স্কারলেটকে নিলেন। 
‘৯৬ তেই স্কারলেট অভিনীত আরেকটা ছবি মুক্তি পেয়েছিল। তার নাম- ‘দ্য ফল’।
এই সময়েই তার বাবা- মা’র বিচ্ছেদ ঘটে। 
কিন্তু তার জীবনে এই ঘটনা যতটা ঝড় তুলে দিতে পারত,ততটাও ঘটেনি। কারণ ছোটবেলা
থেকেই স্কারলেট যথেষ্ট স্বাধীনচেতা ছিল। ভীরু বা গোবেচারা ধরনের সে নয়।
পরিস্থিতি তাকে শক্ত করে তোলে। স্কারলেটের মতে ডিভোর্স কঠিন নয়, কিন্তু তার
সঙ্গে আনুষঙ্গিক আরও যা যা আসে,সেসবই কঠিন-‘ এই জিনিসগুলোই আমাকে আরও বেশি করে
আমি হয়ে উঠতে উসকে দেয়। ছোটবেলা থেকেই নিজের পথ তৈরির জন্য আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ
ছিলাম। তার মনে হয়েছিল  বিচ্ছেদ সবার পক্ষে ভালো ছিল-‘ আমাদের পরিবারে যদি
বেস্ট কিছু হয়ে থাকে, তা হ’ল সেই ডিভোর্স ‘। 
 ‘ দ্য হর্স হুইস্পার’ মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল। তবে প্রশংসায় ভরিয়ে
দেওয়া হ’ল স্কারলেটকে। জেমস বেরার্ডিনেল্লি লিখলেন – ‘ দ্য হর্স হুইস্পারের
পারফরম্যান্স অস্কারের যোগ্য। কিন্তু সেই পারফরম্যান্স রবার্ট রেডফোর্ড, স্কট
টমাস কিংবা নিল এর নয়, এই পারফরম্যান্স স্কারলেট জোহানসন নাম্নী তরুণীর। তিনি
ইতিমধ্যেই ম্যানি অ্যান্ড লো তে তাঁর প্রতিভা দেখিয়ে ফেলেছেন। ‘
জীবনটাই বদলে গেল স্কারলেটের। তার মনে হ’ল স্বপ্নের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে।
অভিনয়কে তার মনে হ’ল নিজের যাবতীয় আবেগকে প্রকাশ করার মাধ্যম। এখানে সবকিছু
প্ল্যানমাফিক না ও হতে পারে। বরং সুযোগ বুঝে ফল্গুধারার মতো আবেগকে বইয়ে দিতে
হয়। ব্যাপারটাকে আয়ত্ত করা যথেষ্ট শক্ত কাজ। 
এতদিনে স্কারলেট আর তার পরিবার বুঝলো অভিনয়কে কেরিয়ার করলে তার মধ্যে যথেষ্ট
সম্ভাবনা আছে। ব্যাপারটাকে আরও সিরিয়াসলি নিতে হবে। 
মা মেলানী বুঝলেন মেয়ের একজন ম্যানেজার দরকার। এটাও বুঝলেন যে সেই কাজের জন্য
সেই মুহূর্তে  তিনিই সেরা। 
দু’জনের যাত্রা শুরু হ’ল। স্কারলেট বলেছিল – ‘ পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে কাজ
করলে সেটার পরিণাম ভালো না ও হতে পারে। কিন্তু মা আমাকে বুঝতেন ‘। 
ঠিক এই সময়েই স্কারলেটের জীবনে তার প্রথম প্রেমিক জুটলো। সে ছিল একই স্কুলের এক
ক্লাসিক্যাল বেহালাবাদক। নারী স্বাধীনতা, সিঙ্গল মাদার এসব বিষয়ে যে
স্কারলেট  এখন এত স্পষ্টবাদী,  কিশোরী স্কারলেট বরং  সে বয়সে
ছিল অনেকটাই রক্ষণশীল। তার ধারণা বয়ঃসন্ধির সময়টা এতটাই খারাপ যে সেই সময় সবার
মনে হয়  পৃথিবীর কেউই তাকে ঠিকমতো বোঝে না। সেইসময় নানান মানুষের 
সঙ্গে যোগাযোগ হ’লে এমন এমন সব জিনিস আবিষ্কার করা যায় যা আগে কখনো হয়নি।
জীবনের প্রথম প্রেম নিয়ে স্কারলেটের বক্তব্য – “১৪ বছর বয়সে বয়ফ্রেন্ড থাকলে
নিজেকে  স্বনির্ভর মনে হয় – ‘ তোমাকে বিয়ে করে তোমার সন্তানের জন্ম দেবো
প্রিয়।’ সম্পর্কটা সত্যিই ভীষণ সুন্দর ছিল। আমরা এখনো বন্ধু। তবে সেই ধরনের
স্বনির্ভরতা আর আমি চাই না।আমরা তখন ভেবেই নিয়েছিলাম আমরা সারাজীবনের জন্য
একসঙ্গে  থাকতে চলেছি।” 
সম্পর্কটা আড়াই বছর টিকেছিল। প্রেমিক প্রবর ভালো বিলিয়ার্ডও খেলত। তার সেই গুণ
এখনো স্কারলেটের পছন্দ। 
২০০২ সালে হাইস্কুলের ফাইনাল ইয়ারে এসে স্কারলেট  ‘স্টীল ট্রেন’ ব্যান্ডের
গায়ক আর গিটারিস্ট জ্যাক অ্যান্টোনফকে ডেট করা শুরু করে। সে ও এখন বিখ্যাত নাম।
মায়ের সঙ্গে স্কারলেটের সম্পর্ক ছিল একেবারে বন্ধুর মতো। মায়ের গোড়ার দিককার
সম্পর্ক নিয়ে কিছু বিবরণ স্কারলেটের বিশ্বাস হত না। মা কথায় কথায়  মেয়েকে
বলতেন – ‘ তোমাদের জেনারেশনের জন্য খারাপ লাগে। আমরা যখন সবে বড় হচ্ছি সেইসময়
একটা যৌন স্বাধীনতা ছিল, সেটা আর নেই ‘।
কিন্তু মেয়ের যৌন স্বাধীনতার ব্যাপার যখন এলো, বিষয়টা খানিক বদলে গেল।
স্কারলেটের নিজের কথায় – ‘ আমি যখন এই ব্যাপারে মা’কে ফাইনালি জানালাম,তিনি
আঁতকে উঠলেন। বললেন ও গড! আশা করি তুমি নিশ্চয়ই প্রোটেকশন নিয়েছিলে। 
কারুর এইডস হ’লে তার পুরনো  যৌন জীবন নিয়ে আমরা ভাবতে বাধ্য হই। কিন্তু
মানুষটার সঙ্গে এক বিছানায় যাওয়ার সময় সেই বিষয়টা ভাবনাতেও আসে না’।
অন্যান্য তরুণ তারকার মতো অল্পবয়সেই এত শিরোনামে থেকে  স্কারলেটের কৈশোর
অনেক আগেই খতম হয়ে যেতে পারত। মিডিয়ার ফোলানো ফাঁপানো খবর আর কৌতূহল তো ছিলই।
সে ডুবে যেতে পার‍ত নেশা আর অ্যালকোহলে। পরিস্থিতি তাকে বহু পুরুষের
শয্যাসঙ্গিনী করে তুলতে পারত। যেমনটা সচরাচর হয়েই থাকে।   আর ফল হত
হাতেনাতে – কেরিয়ার শেষ হয়ে। তবে পরিস্থিতি স্কারলেটকে অল্প বয়সেই পরিণত করে
তুলেছিল। রবার্ট রেডফোর্ড তো বলেইছিলেন স্কারলেট যেন ১৩ তেই ৩০।
কথাটা তিনি একেবারেই ভুল বলেননি। সাধে কি লী স্ট্র‍্যাসবার্গ ইনস্টিটিউট এ
সিনিয়রদের সঙ্গে তাকে তোলা হয়েছিল! স্কারলেটের ধারণা আলতুফালতু জিনিস নিয়ে সে
চলতে পারে না, সেই ব্যাপারটাই তাকে এত পরিণত করে তুলেছে। তার মতে মানুষের
ম্যাচিয়োরিটি নির্ভর করে অভিজ্ঞতার উপরে। ১৩ তেও যেমন কাউকে ম্যাচিয়োর বলা যায়,
তেমনি ৭৫ বছর বয়সী কাউকেও ইম্যাচিয়োর বলা যেতে পারে।
যখন কারুর সঙ্গে তার পরিচয় হত, সেই অল্প পরিচয়েই যদি তার সঙ্গে কানেক্ট করা যেত
কিংবা মনে হত সে যেন কতদিনের পুরনো আলাপী তাহলেই তার সঙ্গে স্কারলেটের জমে যেত।
রবার্ট রেডফোর্ডের সঙ্গে ঠিক এটাই হয়েছিল। 
রবার্ট রেডফোর্ড আর মা – এই দু’জনকে মন থেকে সে সবসময়  শ্রদ্ধা করে। 
‘ হর্স হুইস্পারার’ এর পর যেটা হ’ল, একের পর এক অফার স্কারলেটের কাছে আসা শুরু
করল। কিন্তু বেশিরভাগ স্ক্রিপ্ট ই একঘেয়ে আর ছক বাঁধা। সেই ধর্ষনের শিকার, ভেঙে
খান খান হয়ে যাওয়া চরিত্র কিংবা সেই অশ্বারোহিনীর চরিত্রই বারেবার তাকে অফার
করা শুরু হ’ল। সেই একই ধরনের   সিন্ডারেলা মার্কা গল্প কিংবা দুঃখের
সুর। 
কেরিয়ারের এরকম স্টেজে বেশিরভাগ অভিনেতা অভিনেত্রীরা পরপর যা কাজ আসে
খুশিমনে  নিয়ে নেন। 
কিন্তু স্কারলেট খুবই খুঁতখুঁতে। 
শুধু টাকা কামানো কিংবা নিজেকে বিক্রি করাই তার ধান্দা নয়। টাইপকাস্ট হতে সে
চাইলো না।  শুধু মন যোগানো কাজ করে গেলে আখেরে নিজের কেরিয়ারেরই ক্ষতি।
বক্স অফিসটাই সব নয়। পরিবারের সঙ্গেও মতবিরোধ হত সেজন্য। 
তখন সিনেমাগুলোর ধাঁচ ছিল এরকম – বয়ে যাওয়া কিংবা কোনো সমস্যা আছে এরকম 
কিশোরীরা কাহিনির অলিগলি পেরিয়ে  শেষে সেই এক স্বপ্নের রাজকুমারের গলাতেই
বরমাল্য দেবে।
এরকম সিনেমার অংশ হতে স্কারলেটের মন সায় দিত না।
সেই সময় ‘ স্নাফ’ জঁরের সিনেমার চল হয়েছিল। এই জঁরে প্রাধান্য পেত হোমিসাইড।
বাচ্চারা একে অন্যকে মেরে ফেলছে এরকম প্লটও  তাতে ফাঁদা হত।
সেসব স্কারলেটের  একেবারেই  অপছন্দ ছিল। তখন সে হাইস্কুলে পড়ে। সে
বুঝলো তার সাপোর্ট দরকার নেই, বরং ভালো কিছুর জন্য অপেক্ষা করাটাই বুদ্ধিমানের
কাজ। একদম অন্যরকমের কিছুর জন্য। 
স্কারলেট তাই অভিনয় করলো ‘ মাই ব্রাদার দ্য পিগ ‘ ছবিতে। কিছুটা অদ্ভুত ধরনের
ছবি। ছবিটা একটা মেয়েকে নিয়ে। ভুডুর জন্য তার হাড়বজ্জাত ভাই একটা শুয়োর হয়ে
যায়। 
বলাই বাহুল্য যে শিল্পের বিচারে এ ছবি একেবারেই উৎকৃষ্ট মানের নয়। এখনো
স্কারলেটের গোটা কেরিয়ারের খারাপ কাজগুলোর মধ্যে এই ছবিকে  ধরা হয়। 
প্রায় দু’বছরের অপেক্ষা। শুধু  একটা যুতসই রোলের জন্য । একজন অল্পবয়সী
প্রতিভাবান  অভিনেত্রীর কাছে এ এক মহা যন্ত্রণা! 
কারণ ঐ সময়ে ইন্ড্রাস্টির তাকে ভুলে  যাওয়া কয়েক ন্যানোসেকেন্ডের
ব্যাপার। 
‘ নতুন কোনো উদীয়মান তারকা’কে ওরা খুঁজে নেবে।
২০০১ এর কাছাকাছি স্কারলেট অভিনীত তিনটে ছবি এলো। কিন্তু এই তালিকার একটা ছবি
অন্য দুটোর থেকে বেশ কয়েক কদম আলাদা। সেই ছবির নাম ‘ দ্য ম্যান হু ওয়াজন’ট
দেয়ার ‘। পরিচালক ছিলেন কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয়। ছবিটা নুয়া কিংবা ডার্ক ঘরানায়
তৈরি। 
এই ছবিতে স্কারলেট বিলি বব থর্নটনের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিল। 
বিলির চরিত্রের নাম ছিল এড ক্রেন। এক ঠান্ডা মাথার  চেইনস্মোকার নাপিত। এক
বিশেষ পরিস্থিতিতে  সে তার স্ত্রীর প্রেমিককে ব্ল্যাকমেল করার দিকে এগোয়।
মিথ্যে  আর মিথ্যের জালে এড শেষে নিজেই বিচ্ছিরিভাবে জড়িয়ে গিয়ে পরিস্থিতি
একসময় হাতের বাইরে চলে যায়। 
স্কারলেটের চরিত্র ছিল এক সরল পিয়ানো বাজানো কিশোরীর। তার নাম ছিল বার্ডি
অ্যাবুন্দ্যাস। এডের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়ে যায়। বার্ডিকে নিয়ে এডের আসল
ধান্দা দর্শক প্রথমে বুঝতে পারে না। 
স্কারলেটের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল নিজেকে ধরা দেওয়ার আগে একইসঙ্গে কিশোরীর সারল্য
আর যৌনতা নিয়ে অস্পষ্টতা ফুটিয়ে তোলা। 
১৫ বছরের স্কারলেট সবাইকে একেবারে চমকে দিয়ে দুর্দান্ত অভিনয় করলো৷ সেই
রেডফোর্ডের সঙ্গে যেরকম নিখুঁত টাইমিং করেছিল,সেরকমই। 
ছবির কলাকুশলীরা তার ভাবভঙ্গি আর আত্মবিশ্বাস দেখে একেবারে ভড়কে গেলেন। খোদ
থর্নটন একটা ইন্টারভিউতে বলেছিলেন -‘ বয়সের তুলনায় ওর ইন্টেলিজেন্স আর
এক্সপ্রেশন দেখে আমি রীতিমতো শকড হয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল একজন মহিলার সঙ্গে কাজ
করছি, বাচ্চার সঙ্গে নয়। আমি আর কোয়েন ভাইরা তো এত কম বয়সে ওকে এত তৈরি দেখে ভয়
পাচ্ছিলাম । বেশিরভাগ মানুষের কাজের মধ্যেই নিজের প্রতি একটা সন্দেহ, আড়ষ্টতা
ফুটে ওঠে। ওর মধ্য ওসব লেশ মাত্র ছিল না’। 
জোয়েল কোয়েনও স্বীকার করেছেন স্কারলেট সবাইকেই অল্পবিস্তর ভয় পাইয়ে
দিয়েছিল। 
একটা দৃশ্যের শ্যুটিং চলাকালীন জোয়েল স্কারলেটকে বলেন তার সূর্যমুখীর বীজ খাওয়া
উচিত। 
স্কারলেট বলেছিল ‘ আমি সূর্যমুখীর বীজ খাবো কেন? ‘
এমন ভঙ্গিতে স্কারলেট দাঁড়িয়েছিল যেন সে বলতে চাইছে – ‘ ইউ ইডিয়ট! হোয়াট আর ইউ
টকিং অ্যাবাউট? ‘

জোয়েল একরকম পালিয়েই যান। ‘ ফেলাশিও’ র দ্রশ্যে ক্ষুদে স্কারলেট যা অভিনয়
করেছিল, এখনো স্তম্ভিত হতে হয়।
এই সময় স্কারলেটের আরেকটা ছবি ‘ অ্যান আমেরিকান র‍্যাপসডি’র শ্যুটিং হাঙ্গেরিতে
হয়েছিল। 
এই ছবিটা পরিচালিকা ইভা গার্ডোসের নিজের জীবন নিয়ে। হাঙ্গেরিতে বেড়ে ওঠার সময়
তাঁর বাবা-মা’র বিচ্ছেদ হয়েছিল।
ছবিতে স্কারলেটের নাম হয় সুজান। তার কৈশোরের মধ্যে একটা বিদ্রোহী ভাব রয়েছে। সে
হঠাৎ অজানা পরিবেশ,  সংস্কৃতি, অপরিচিত এক বাবা-মা’র মধ্যে নিজেকে
আবিষ্কার করে। 
বন্ধু আর বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে আলাদা থাকা শুরু করে স্কারলেট এই চরিত্রের মধ্যে
ঢোকার অভ্যেস শুরু করে। তার মা সঙ্গে থাকলেও ঐ সময় স্কারলেটের নিজেকে খুব একা
মনে হত। দু’জনের মধ্যেই খানিকটা  মনখারাপ জাগত। 
এতে মনে হয় সুবিধাই হয়েছিল। অনেকদিন পর আবার হাঙ্গেরিতে ফিরে যাওয়া সুজানের
নস্টালজিয়ার সঙ্গে নিজেতে মেলানো খানিকটা সহজ হয়ে গেল। 
২০০১ এই রিলিজ করা ‘ ঘোস্ট আইল্যান্ড’ এর সেটে আবার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা
হ’ল। এই ছবির গল্প অনুযায়ী দুই ছন্নছাড়া কিশোরী বাস্তব জগতের টানে বেরিয়ে পড়ে।
অন্য কিশোরীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন আমেরিকান বিউটির থোরা বার্চ। 
স্কারলেটের তৎকালীন বয়ফ্রেন্ড নিউ ইয়র্কে থাকত বলে একে অন্যকে সময় দিতে বেশ বেগ
পেতে হত। 
তবুও টানাহ্যাঁচড়া করে দু’বছরের মতো সম্পর্কটা টিকেছিল। হলিউডে যেমনটা হয়ে
থাকে। অনেক কল্পনা থাকলেও স্কারলেটের ধারণা তার পক্ষে কোনো সম্পর্ক
পাকাপাকিভাবে টিকিয়ে রাখাটা যেমন কঠিন ছিল, তেমনি বিষয়টা তাকে খুব কষ্টও দিত।
অস্কার বিজয়ী অভিনেতা জ্যারেড লেটোর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া প্রসঙ্গে
স্কারলেট বলেছিল – ‘ আমি একজন স্বাধীন মহিলা, তাও আমাকে প্রায়ই এসব মেনে নিতে
হয়’।
‘ ঘোস্ট ওয়ার্ল্ড ‘ এর শ্যুটিং দারুণ হইহই করে কেটেছিল। থোরা বার্চের সঙ্গে বেশ
জমে গেছিল স্কারলেটের। দিব্যি অলসভাবে সময় কেটে যেত। 
লস অ্যাঞ্জেলসে শ্যুটিং চলার সময়ে মেয়েরা ফাঁক পেলেই কাছাকাছির কোনো পার্কে চলে
যেত। এক রাতে কিছু করার মতো না পেয়ে স্কারলেট আর থোরা হোটেলের ঘরেই বন্দী ছিল।
তারপর প্ল্যান করে  দুজনেই বেরিয়ে পড়লো  ইউনিভার্সাল সিটিওয়াকে।
তারপর সেখানকার ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি রাইড। দু’জনেই আনন্দে অধীর। পৃথিবীতে এর
চেয়ে ভালো বোধহয় আর কিছুই হয় না। 
স্কারলেট সেখানে রোজই যেত। ড্র‍্যাগ রেসিং ও ট্রাই করত। তবে থোরা সবসময় যেত না,
তখন সঙ্গে যেত স্কারলেটের ভাই। 
‘ ঘোস্ট ওয়ার্ল্ড ‘ ছিল একটা কমিক বুক থেকে নেওয়া। সচরাচর কমিকসকে যখনই পর্দায়
রূপান্তরিত করা হত, অবধারিতভাবে সেটা খারাপ হত। 
তবে হাতেগোনা ছাড়া  স্কারলেটের যাবতীয়  প্রজেক্টই সফল হয়ে এসেছে।
সাদামাটা প্রজেক্টও অবিশ্বাস্য ফল করেছে।
এই ছবিটা স্কারলেটের করেছিল তথাকথিত মূল ধারার বাইরে কিছু করার জন্য। সেই
স্কুলে পড়ার সময় থেকেই সে চ্যালেঞ্জ নিতে চাইত, অন্য ধরনের ছবি করতে
চাইত। 
সত্যি বলতে এই ছবিটাও বেশ অন্যধরনেরই ছিল। ফালতু কোনোভাবেই বলা যাবে না। 
শেষটাও ছিল বেশ হৃদয়ের কাছাকাছি।
২০০২ এর সেপ্টেম্বরে গ্র‍্যাজুয়েশনের তিন মাস পর স্কারলেটের সামনে তার তখনও
অবধি পাওয়া সবচেয়ে বড়ো প্রোজেক্টের দরজা খুলে গেল। 
তখন সে মাত্র ১৭। ঠিক তখনই  তার কাজের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির কিছু বড়ো নাম
জুড়ে গেল।
 ‘গডফাদার’ কিংবদন্তির পরিচালক ফ্রান্সিস ফোর্ড কপ্পোলার মেয়ে সোফিয়া
কপ্পোলা তাকে সুযোগ দিলেন।  ছবির নাম ‘লস্ট ইন ট্রান্সলেশন ‘। সোফিয়া
নিজেই ছিলেন রাইটার, প্রোডিউসার আর ডিরেক্টর। সদ্য গ্র‍্যাজুয়েট হওয়ার পর টোকিও
গিয়ে তাঁর যেরকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল, ছবির  কাহিনি তার উপরেই ভিত্তি 
করে। ছবিতে অন্যতম প্রধান চরিত্রে ছিলেন বিল মুরে। তাঁর চরিত্রটা ছিল একজন পড়তি
ফিল্মস্টারের। লোকে বাইরের দেশে গেলে কীভাবে খাপ খাইয়ে নেয় মুরে নিজেও বেশ
আগ্রহী ছিলেন। টোকিওতে পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিঃসঙ্গতায় ভুগত বব।
প্রতিবেশী তরুণী শার্লটও তার বিবাহিত জীবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান ছিল।
পরিস্থিতিই মিলিয়ে দেয় এই দুই অসমবয়স্ক মানুষকে। একটা মিষ্টি মধুর সম্পর্ক
দু’জনের মধ্যে তৈরি হয়।
‘ লস্ট ইন ট্রান্সলেশন ‘ এর পরিকল্পনা  কপ্পোলার অনেকদিন আগেই করেছিলেন।
তখন কাহিনির মূল ফোকাস ছিল এক সদ্য বিবাহিত দম্পতির উপরে। কপ্পোলা নিজেও তখন
সবে বিয়ে করেছেন। বিয়ের প্রথম বছরটা তাঁর কাছে দুঃসহ ছিল।
শার্লটের স্বামী নিজের কাজে ব্যস্ত থাকত, সেই নিঃসঙ্গতা তাকে মিলিয়ে দেয়
নিঃসঙ্গ ববের সঙ্গে। শার্লট আর বব গভীরভাবে একে অন্যের ভালোবাসায় সিক্ত হয়।
কিন্তু সেই ভালোবাসাকে যদি তারা গোপন রেখে দিত, তবে বিভিন্নরকম জটিল অভিব্যক্তি
তৈরি হবে।
এরকম একটা কাহিনিতে সচরাচর রগরগে যৌনদৃশ্য থাকে। স্কারলেটেরও সেরকমই ধারণা ছিল।
এই ছবিতে অভিনয়ের আগে সে খুব বেশি প্রস্তুতি নিতে পারেনি। খুব তাড়াতাড়িই পুরো
ব্যাপারটা হয়ে যায়। 
যখন সে শ্যুটিং এর জন্য টোকিও পৌঁছায়, তখনও সে জানত না শেষে কী হতে চলেছে।
সোফিয়া বব-শার্লটের সম্পর্কের কথাও বিশদে ভাঙেননি। শুধু – ‘ এই দু’জন হারিয়ে
যাওয়ার পর পরস্পরের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেয়েছে ‘ মোটাদাগে বলে ছেড়ে
দিয়েছিলেন। 
৭৫ পৃষ্ঠার একটা প্রাথমিক খসড়াও দিয়েছিলেন। স্কারলেট বুঝলো আস্তে আস্তে সবটাই
পরিষ্কার হয়ে যাবে। 
টোকিও পৌঁছে  স্কারলেটের মনে হ’ল সে সত্যিসত্যিই হারিয়ে গেছে। তার চেতনা
যেন  ধোঁয়াটে হয়ে আসছে। ভাষা জানা না থাকলে বিদেশে গিয়ে অতি সহজ জিনিসকেও
কঠিন মনে হবে। তার মধ্যে স্কারলেটের সঙ্গে কোনো সহকারীও ছিল না।সেখানকার বহু
মানুষ আবার ইংরেজি ভালো জানেন না।
তারমধ্যে সোফিয়ার ভাই আবার জাপানি মাফিয়া ইয়াকুজা( yakuza)দের খপ্পরে পড়েছিলেন।
তারা তাদের এলাকায় শ্যুটিংয়ের পারমিশন দেওয়ার  জন্য টাকা দাবি
করেছিল। 
এই ছবিটা সত্যিসত্যিই স্কারলেটের প্রতিভার ঠিকঠাক বাহন হয়ে উঠলো। সাধারণ মানুষ
থেকে বোদ্ধারা কেউ ছবিটা দেখে হতাশ হ’লেন না। চরিত্রের সঙ্গে মেশার জন্য
স্কারলেটকে লম্বা দৃশ্য জুড়ে  নিজের হোটেল রুমে আটকে থাকতে হয়েছিল ।
কপ্পোলা তার মানসিক অবস্থাটাকে বারবার মেপে নিতেন। তিনি বলতেন – ‘ ধরো তুমি
নিজেকে মাতিয়ে রাখার চেষ্টা করছ,কিন্তু এদিকে তুমি ভেতরে ভেতরে  অসম্ভব
ঘেঁটে, 
তখন অদ্ভুত কিছু জিনিস চলে আসে যেমন নিজেই নিজের বুড়ো আঙুলকে বেঁকিয়ে তার উপরে
বসার চেষ্টা করা, বোকার মতো একইসঙ্গে হাসা আর কাঁদা। ‘
স্কারলেটের কাছে আরও একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ ছিল তার থেকে অন্তত তিন যুগ বয়সে
বড়ো  বিল মুরের সঙ্গে আবেগঘন দৃশ্যে অভিনয় করা। মুরের কিছু বদনাম ছিল।
সবচেয়ে টাটকা ঘটনা ছিল ‘ চার্লিস অ্যাঞ্জেলস’ এর শ্যুটিং চলাকালীন সহ
অভিনেত্রী লুসি লিউয়ের সঙ্গে তিনি উত্তপ্ত বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
কিছুক্ষণের জন্য শ্যুটিং থমকেও যায়।
তার ছোটবেলার আইকন বিল মুরের সম্পর্কে এসব  গল্পগাছা শুনে স্কারলেট সবসম?

scarlett johansson husband

পর্ব ২
২০০২ এর সেপ্টেম্বরে গ্র‍্যাজুয়েশনের তিন মাস পর স্কারলেটের সামনে তার তখনও
অবধি পাওয়া সবচেয়ে বড়ো প্রোজেক্টের দরজা খুলে গেল। 
তখন সে মাত্র ১৭। ঠিক তখনই  তার কাজের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির কিছু বড়ো নাম
জুড়ে গেল।
 ‘গডফাদার’ কিংবদন্তির পরিচালক ফ্রান্সিস ফোর্ড কপ্পোলার মেয়ে সোফিয়া
কপ্পোলা তাকে সুযোগ দিলেন।  ছবির নাম ‘লস্ট ইন ট্রান্সলেশন ‘। সোফিয়া
নিজেই ছিলেন রাইটার, প্রোডিউসার আর ডিরেক্টর। সদ্য গ্র‍্যাজুয়েট হওয়ার পর
টোকিও গিয়ে তাঁর যেরকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল, ছবির  কাহিনি তার উপরেই
ভিত্তি  করে। ছবিতে অন্যতম প্রধান চরিত্রে ছিলেন বিল মুরে। তাঁর
চরিত্রটা ছিল একজন পড়তি ফিল্মস্টারের। লোকে বাইরের দেশে গেলে কীভাবে খাপ
খাইয়ে নেয় মুরে নিজেও বেশ আগ্রহী ছিলেন। টোকিওতে পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন
হয়ে নিঃসঙ্গতায় ভুগত বব। প্রতিবেশী তরুণী শার্লটও তার বিবাহিত জীবনের ভবিষ্যৎ
নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান ছিল। পরিস্থিতিই মিলিয়ে দেয় এই দুই অসমবয়স্ক মানুষকে।
একটা মিষ্টি মধুর সম্পর্ক দু’জনের মধ্যে তৈরি হয়।
‘ লস্ট ইন ট্রান্সলেশন ‘ এর পরিকল্পনা  কপ্পোলার অনেকদিন আগেই করেছিলেন।
তখন কাহিনির মূল ফোকাস ছিল এক সদ্য বিবাহিত দম্পতির উপরে। কপ্পোলা নিজেও তখন
সবে বিয়ে করেছেন। বিয়ের প্রথম বছরটা তাঁর কাছে দুঃসহ ছিল।
শার্লটের স্বামী নিজের কাজে ব্যস্ত থাকত, সেই নিঃসঙ্গতা তাকে মিলিয়ে দেয়
নিঃসঙ্গ ববের সঙ্গে। শার্লট আর বব গভীরভাবে একে অন্যের ভালোবাসায় সিক্ত হয়।
কিন্তু সেই ভালোবাসাকে যদি তারা গোপন রেখে দিত, তবে বিভিন্নরকম জটিল
অভিব্যক্তি তৈরি হবে।
এরকম একটা কাহিনিতে সচরাচর রগরগে যৌনদৃশ্য থাকে। স্কারলেটেরও সেরকমই ধারণা
ছিল। এই ছবিতে অভিনয়ের আগে সে খুব বেশি প্রস্তুতি নিতে পারেনি। খুব তাড়াতাড়িই
পুরো ব্যাপারটা হয়ে যায়। 
যখন সে শ্যুটিং এর জন্য টোকিও পৌঁছায়, তখনও সে জানত না শেষে কী হতে চলেছে।
সোফিয়া বব-শার্লটের সম্পর্কের কথাও বিশদে ভাঙেননি। শুধু – ‘ এই দু’জন হারিয়ে
যাওয়ার পর পরস্পরের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেয়েছে ‘ মোটাদাগে বলে ছেড়ে
দিয়েছিলেন। 
৭৫ পৃষ্ঠার একটা প্রাথমিক খসড়াও দিয়েছিলেন। স্কারলেট বুঝলো আস্তে আস্তে সবটাই
পরিষ্কার হয়ে যাবে। 
টোকিও পৌঁছে  স্কারলেটের মনে হ’ল সে সত্যিসত্যিই হারিয়ে গেছে। তার চেতনা
যেন  ধোঁয়াটে হয়ে আসছে। ভাষা জানা না থাকলে বিদেশে গিয়ে অতি সহজ
জিনিসকেও কঠিন মনে হবে। তার মধ্যে স্কারলেটের সঙ্গে কোনো সহকারীও ছিল
না।সেখানকার বহু মানুষ আবার ইংরেজি ভালো জানেন না।
তারমধ্যে সোফিয়ার ভাই আবার জাপানি মাফিয়া ইয়াকুজা( yakuza)দের খপ্পরে
পড়েছিলেন। তারা তাদের এলাকায় শ্যুটিংয়ের পারমিশন দেওয়ার  জন্য টাকা দাবি
করেছিল। 
এই ছবিটা সত্যিসত্যিই স্কারলেটের প্রতিভার ঠিকঠাক বাহন হয়ে উঠলো। সাধারণ
মানুষ থেকে বোদ্ধারা কেউ ছবিটা দেখে হতাশ হ’লেন না। চরিত্রের সঙ্গে মেশার
জন্য স্কারলেটকে লম্বা দৃশ্য জুড়ে  নিজের হোটেল রুমে আটকে থাকতে হয়েছিল
। কপ্পোলা তার মানসিক অবস্থাটাকে বারবার মেপে নিতেন। তিনি বলতেন – ‘ ধরো তুমি
নিজেকে মাতিয়ে রাখার চেষ্টা করছ,কিন্তু এদিকে তুমি ভেতরে ভেতরে  অসম্ভব
ঘেঁটে, 
তখন অদ্ভুত কিছু জিনিস চলে আসে যেমন নিজেই নিজের বুড়ো আঙুলকে বেঁকিয়ে তার
উপরে বসার চেষ্টা করা, বোকার মতো একইসঙ্গে হাসা আর কাঁদা। ‘
স্কারলেটের কাছে আরও একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ ছিল তার থেকে অন্তত তিন যুগ বয়সে
বড়ো  বিল মুরের সঙ্গে আবেগঘন দৃশ্যে অভিনয় করা। মুরের কিছু বদনাম ছিল।
সবচেয়ে টাটকা ঘটনা ছিল ‘ চার্লিস অ্যাঞ্জেলস’ এর শ্যুটিং চলাকালীন সহ
অভিনেত্রী লুসি লিউয়ের সঙ্গে তিনি উত্তপ্ত বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
কিছুক্ষণের জন্য শ্যুটিং থমকেও যায়।
তার ছোটবেলার আইকন বিল মুরের সম্পর্কে এসব  গল্পগাছা শুনে স্কারলেট
সবসময় বেশ ঘাবড়েই থাকত। 
কিন্তু পরে যত সে মুরেকে দেখলো ততই মুগ্ধ হ’ল। 
শ্যুটিংপত্র সব গুটানোর পর স্কারলেটের মনে হ’ল সবে একটা বক্সিং ম্যাচ যেন শেষ
হ’ল।
  একটা দারুণ উপমা দিয়ে সমালোচনা বেরিয়েছিল – ‘ স্কারলেট জোহানসনের কাজ
গুলতির মতো তাঁকে অভিজাত অভিনেত্রীদের গোষ্ঠীর মধ্যে ছুঁড়ে দেবে’।
স্কারলেট সেরা অভিনেত্রীর বাফটা পুরস্কার জিতলো। কপ্পোলাও অনেক নমিনেশনের
পাশাপাশি জিতলেন অরিজিনাল স্ক্রিনপ্লের জন্য অস্কার। 
সেরা অভিনেতা বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব জিতলেন বিল মুরে।
Scarlett Johansson Birthday Party Post, Biography - Happy Birthday Scarlett Johansson - স্কারলেট জনসন
কপ্পোলা স্কারলেটের সেরা অভিনয়টা  যেমন বার করে আনলেন, সেইসঙ্গে ব্যবহার
করলেন তার অসাধারণ দেহসৌষ্ঠবকেও। একইসঙ্গে স্কারলেটের শরীর আর অভিনয়কে
একসঙ্গে  এর আগে এত ভালো ব্যবহার কেউ করতে পারেনি।
স্কারলেট যে ভবিষ্যতে সেক্স বম্ব হতে চলেছে, এই ছবির মধ্যেই হয়তো সেই বীজ
পরোক্ষে লুকিয়েছিল।
ছবির শুরুতেই একটা বিখ্যাত দৃশ্য ছিল। গোলাপি রঙের খুবই স্বচ্ছ একটা
অন্তর্বাস পরা স্কারলেট। সেটা এতই স্বচ্ছ যে তার নগ্ন নিতম্ব একেবারে স্পষ্ট
দেখা যায়। শিল্পী জন ক্যাসেরের আঁকা ছবি থেকে কপ্পোলা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
জন তাঁর  ছবিগুলোয় অন্তর্বাস পরা নারীদের বিভিন্ন মুদ্রায় শরীরের
নিম্নাঙ্গ ফুটিয়ে তুলতেন। 
শিল্পের নামে সিনেমায় যা দেখানো হয় তার প্রয়োগ নিয়ে তখন ১৭ বছরের স্কারলেট
যথেষ্ট সন্দিহান। 
সে বললো অন্তর্বাস পরতে আপত্তি নেই, পুরো ছবি জুড়ে পরে থাকতে হ’লেও নেই
কিন্তু  স্বচ্ছ হ’লে সমস্যা। জাপানে শ্যুটিং চলাকালীন স্কারলেট জাপানি
নুডলস উডন এত বেশি খাচ্ছিল তার মনে হচ্ছিল তাতেই সে খানিক মুটিয়ে গেছে। ঐ
অন্তর্বাস পরলে তাকে বিচ্ছিরি দেখাবে। 
কিন্তু কপ্পোলা ভালো করেই জানতেন তিনি ঠিক কী চান। 
স্ক্রিপ্ট লেখার সময়েই তাঁর মাথায় অন্তর্বাসের দৃশ্যটা ছিল। এমনকি কোন
ব্র‍্যান্ড বা কী ধরনের হবে সেটাও। 
স্কারলেটের আপত্তি দেখে তিনি নিজে সটান অন্তর্বাসগুলো পরলেন। বললেন – ‘ তুমি
অন্তর্বাসটা পরলে ভালো হত। কিন্তু বুঝতে পারছি তুমি স্বচ্ছন্দ নও। কিন্তু
একবার শুধু  দেখো। নিজে জাস্ট  একবার  দেখো কেমন লাগছে। তারপর
যদি আপত্তি থাকে, তাহ’লে আর দরকার নেই ‘।
সোফিয়া কপ্পোলা ছিলেন ঋজু আর রোগা। তাঁর চেহারা ছিল বেশ  সাজানো 
অভিজাত ধরনের । তাই সেই অন্তর্বাস পরে তাঁকে দেখাচ্ছিলও চমৎকার। 
স্কারলেট আর আপত্তি করেনি। শুধু ফোটোগ্রাফির ডিরেক্টর ল্যান্স অ্যাকর্ডকে কপট
হুমকি দিয়ে বলেছিল – ‘ তোমার ক্যামেরায় আমার নিতম্বকে যদি খুব খারাপ
করে  দেখাও,  তোমার আর এখানে  কখনও কাজ করাই উচিত না’।
ল্যান্স ভরসা দিলেন – ‘ আমি কথা দিচ্ছি, দারুণ লাগবে ‘।
তারপর সবকিছুই ঠিকঠাক উতরে গেল। 
স্কারলেটের যৌন আবেদন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লো। এতটাই যে তার পরের ছবিগুলোয় সে
কত ভালো অভিনয় করছে,তা নিয়ে দর্শকের বিশেষ  মাথাব্যথা রইলো না। তার
অভিনয় দেখার থেকে তার যৌন আবেদনই আগে চলে এলো।
তার রূপ আর যৌন আবেদন নিয়ে একটা ইন্টারভিউতে স্কারলেট বলেছিল- ‘ আমার মনে হয়
আমাকে একটু ছেলে ছেলে লাগে, তবে অবশ্যই আমার শরীরকে নয়। পুরুষ অভিনেতাদের
ক্ষেত্রে সেক্সি তকমাটা ঝামেলারও হতে পারে। প্রচুর তরুণ অভিনেতা বহুরূপীর মতো
বহু বিচিত্র আর বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চান।সেক্ষেত্রে এই জিনিসটা
একটা বাধার মতো। 
মহিলাদের ক্ষেত্রে বরং আমার এই তকমাকে প্লাস পয়েন্ট মনে হয়। সবাই যদি
আকর্ষণীয় ভাবে, সেটা আখেরে ভালোই। কোনো কোনো লেখক তো বিশেষণের আতিশয্যে বড্ড
বাড়াবাড়িও করে ফেলেন।থামতে পারেন না।  সেসব পড়ে আমার বলতে ইচ্ছে হয়
নাহ!অতটাও গরম লাগেনি বাপু।  
 যৌন আবেদনের কথা ওঠা  ভালো। কিন্তু কোনোকিছুই অতি ভালো না। কিন্তু
ব্যবহার করা, টাচে থাকা ভালো। আমার মধ্যে একটা সেক্সুয়াল এনার্জি আছে। আমার
নারীত্বের মতো আমি  এজন্যও গর্বিত। কেউ যদি কাউকে সেক্সি ভাবে, সেটা তো
খারাপ নয়। গ্যাঁদগেদে ব্যাপারও নয়।’
যথারীতি ‘ লস্ট ইন ট্রান্সলেশন ‘ এর রিভিউতেও সেই ‘ দ্য ম্যান হু ওয়াজন’ট
দেয়ার’ এর মতো স্কারলেটের ম্যাচিয়োরিটি নিয়ে লেখা হ’ল এই দুই ছবিতেও বয়সে
অনেক বড়ো পুরুষের সঙ্গে তার চরিত্রের সম্পর্ক তৈরি হয়। স্কারলেট বেশ মজা পেল।
তার মনে হ’ল একজন বয়স্কা মহিলা আসলে তার যুবতী শরীরের মধ্যে আটকে আছে। 
সেই মহিলা তাড়াতাড়ি হাঁপিয়ে যায়, দুপুরে ঘুমাতে না পারলে তার  মেজাজ
বিগড়ে থাকে।
একটা ইন্টারভিউতে স্কারলেট কবুল করেছিল সমবয়সী ছেলেদেরকে তার বাচ্চা মনে হয়।
৩০ না পেরোলে তারা তরুণই। 
তারপর মজা করে আরেক ইন্টারভিউতে সে বলে এই মন্তব্য ছেপে বেরোনোর পর তার
সমবয়সীরা তার দিকে আর ঘেঁষতই না,সেই জায়গায় এক প্রজন্ম বড়ো মানুষদের হিড়িক
লেগে গেল। 
শুধু টেকো আর ভুঁড়িদার লোকজন। 
ব্যাপারটা ব্যালেন্স করার জন্য সে আবার খোলাখুলি আহ্বান জানায় – ‘ তরুণরা
আমায় সিডিউস করতে দ্বিধা কোরো না। কম বয়েসী হ’লে এমন তো নয় যে আমি গুলি করে
দেবো। তবে  বলবো তুমি বেশ মিষ্টি তো! কিন্তু মাত্র ২৫? সরি, আমার একটা
সীমারেখা আছে। বয়সে অনেক বড়ো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে
হয়। সেজন্য যদি ডেট করতেই হয়, আমি ত্রিশ পেরনো পুরুষদেরই করবো ‘।
২০০২ এর শেষের দিকেই বয়সে বড়ো একজন পুরুষের সঙ্গে স্কারলেট আবার নতুন
সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লো। বিল মুরের মতো বয়োবৃদ্ধ না হ’লেও  স্কারলেটের চেয়ে
বয়সে  ১১ বছরের  বড়ো। 
পাত্রের নাম প্যাট্রিক উইলসন। অপেরার নামকরা মুখ।
২০০৪ এর শুরু অবধি  এই দু’জন বেশ আলোচনায় থাকলো।  যথারীতি মিডিয়া
লেগে গেল হাঁড়ির খবর বার করতে।কেন সম্পর্ক টিকলো না হ্যানা ত্যানা। 
 কিন্তু বিশেষ সুবিধা করতে পারলো না। দেড় বছরের মধ্যেই প্যাট্রিক
ডাগমারা ডমিঙ্কজাইককে বিয়ে করে সব জল্পনায় জল ঢেলে দিলেন। 
একই বছরে স্কারলেট একইসঙ্গে বাফটা আর গোল্ডেন গ্লোবে নমিনেশন পেয়েছিল।
গোল্ডেন গ্লোবের ছবিটার নাম ‘ গার্ল উইথ আ পার্ল ইয়ারিং ‘। ‘ লস্ট ইন
ট্রান্সলেশন ‘ শেষ হওয়ার অল্পদিনের মধ্যে সেটার শ্যুটিং শুরু হয়ে যায়। 
ছবির পরিচালক ছিলেন পিটার ওয়েবার। তিনিও নিঃসন্দেহ হয়ে বলেছেন স্কারলেট যেন
তাঁর ছবির চরিত্রের জন্যই! ঐ বয়সেই! 
তিনি অকপটে এটাও বলেছেন তিনি অন্তত ১৫০ জন মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের
সবার মধ্যে সবচেয়ে ‘ অ্যামেজিং’ ছিল স্কারলেট। তিনি বলেছেন – ‘ আমি প্রচুর
ভালো অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বলি কিন্তু সেখানে একজনই ছিল যাকে দেখে মনে
হয়েছে  আমার এই ছবির প্রতি সত্যিকারের সুবিচার সে করতে পারবে। ছবি তৈরির
সময় স্কারলেট স্কারলেট ছিল না’।
‘গার্ল উইথ আ পার্ল ইয়ারিং ‘ ছবিটা প্রবাদপ্রতিম শিল্পী ভারমির আর তাঁর
পরিচারিকা গ্রায়েটের সম্পর্ক নিয়ে। 
একবিংশ শতাব্দীর জাপানের পরিবেশ ছেড়ে অতি অল্পদিনের মধ্যেই সপ্তদশ শতকের ডাচ
সংস্কৃতির মধ্যে অনায়াসে স্কারলেট নিজেকে মিশিয়ে নিতে পেরেছিল। 
ব্যাপারটা তার ভাষায় – ‘ ব্যাগ খুললাম, আবার প্যাক করলাম, করে বেরিয়ে এলাম’।
একেকটা চরিত্রকে তার বাদ্যযন্ত্রের একেকটা কর্ড মনে হত।
জাপান থেকে শ্যুটিংয়ের ধকল নিয়ে ‘গার্ল উইথ আ পার্ল ইয়ারিং ‘ এর সেটে আসার পর
সবাই ঠাউরে নিলো স্কারলেট এখনো আগের চরিত্রের মধ্যেই ঢুকে আছে। তাই তার মুড
যথেষ্ট বিগড়ানো। সত্যিসত্যিই আগের ছবির ইমোশনাল অবস্থান থেকে স্কারলেট তখনও
বেরোতে পারেনি। সেটাকেই সে কাজে লাগিয়ে ফেললো। ইচ্ছে করেই নিজের মনকে আচ্ছন্ন
রেখে দিলো।
দু’মাস মতো সেখানে থেকে শুরু করলো  আস্তে আস্তে চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে
মানিয়ে নেওয়া ।  একটা বালতি আর ঝাঁটা তাকে দিয়ে ভালো করে দেখে নিতে বলা
হয়েছিল।  
চরিত্রের প্রয়োজনে রিসার্চের জন্যও বিশেষ সময় হাতে ছিল না।কোনোরকম জীবনী
ইত্যাদিও তাই পড়ে নেওয়া হ’ল না।দি হেগ এ ভারমিরের বিখ্যাত সেই পেইন্টিং দেখার
সুযোগ তার হ’ল কিন্ত তার মধ্যে ভয়াবহ কিছু মুগ্ধতার ছাপ দেখা গেল না। তার
বাবা একসময় তাকে নিয়ে মিউজিয়ামে যেতেন। একের পর এক পেইন্টিং দেখতেন তারপর
দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে  বলতেন- ‘ খাসা না?’
  ‘গার্ল উইথ আ পার্ল ইয়ারিং’ এর বিশেষ টাইম পিরিয়ড  নিয়ে সময়ের
অভাবে সেভাবে রিসার্চ করলো না স্কারলেট। তবে  সে মনে মনে কষে নিল সে
বর্তমান সময়ের একজন জীবিত মানুষ কিন্তু তাকে সেই সময়ের বিভিন্ন জিনিসপত্র
ব্যবহার করা আয়ত্ত করতে হবে। তাই প্রপ ডিপার্টমেন্টের হাতে নিজেকে ছেড়ে দিল-
‘ ওদের জীবনটা বড়ো অনিশ্চিত ছিল। প্লেগ এসে শহরের পর শহর একেবারে সাফ করে
দিয়ে যেত। এর পেছনে ঈশ্বরের হাত আছে কি নেই, সেই ধারণাও ওদের ছিল না। মনে হয়
তখনকার লোকেদের  একটা বোধ ছিল যে কীভাবে  সমাজে একটা ভালো অবদান
রেখে যাওয়া যায়। এখন আমরা ম্যাকডোনাল্ডস এর হ্যাপি মিলের জন্য অপেক্ষা করতে
করতে রেডিও নব ঘোরাই – আমি এই দুই সময়কে মেলাতেই পারি না। কারণ মেলানো যায়
না। ‘
ছবিতে তার বিপরীতে ভারমিরের চরিত্রে অভিনয় করলেন কলিন ফার্থ। তিনি আবার বয়সে
স্কারলেটের চেয়ে ২৪ বছরের বড়ো। অভিনয় করতে গিয়ে 
স্কারলেটের ভক্ত বনে গেলেন তিনি – ‘ একইসঙ্গে ওর মধ্যে একটা  শিশু আর
একটা  পরিণত নারী আছে। প্রয়োজনে ও দুঃসাহসী আর বেপরোয়া হতে পারে। আবার
এই কখনো ভীষণভাবে ভেঙে পড়ছে পরক্ষণেই নিজেকে  প্রচন্ড হিংস্র করে
ফেলছে’।
কস্টিউম ইত্যাদি দেখে স্কারলেট বেশ মজা পেয়ে গেল। কলিনের সঙ্গেও জমে গেল
বন্ধুত্ব। ‘ প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস ‘ এ স্কারলেট আগেই তাঁকে দেখেছিল
কিন্তু একসঙ্গে কাজ করতে কেমন লাগবে সেটা নিয়ে চিন্তায় ছিল। কিন্তু যাবতীয় আড়
ভেঙে দিলেন বন্ধুত্বপূর্ণ কলিনই।
স্কারলেটের কথায় – ‘ যদি ছবিতে এরকম একটা দৃশ্য থাকত যে গ্রায়েট তার বক্ষ
যুগল একটা বেসিনে ধুচ্ছে আর জানলার দিয়ে ভারমির সেটা দেখছেন,
ভারমির-গ্রায়েটের সম্পর্ককে সেটা দূষিত করে তুলত…
তাদের সম্পর্ক যৌন ছিল না এমন তো নয়, কিন্তু সবকিছুরই একটা স্থান আর কাল আছে।
যদি একটা সেক্সি প্রোজেক্ট করতাম, সেখানে সর্বস্ব দিতাম না কারণ তা দেখে
কিছুতেই ইন্টারেস্টিং মনে হবে  না। কী পেলাম না, সেই ভাবনাই বরং 
কোনো জিনিসকে অনেক বেশি  ইন্টারেস্টিং করে তোলে ‘।
স্কারলেট আর ফার্থের চরিত্রের মধ্যেকার সেক্সুয়াল টানাপোড়েনের দৃশ্যগুলো ছিল
নীরব। আবার  ‘কাট’ বলার পর তারা চরিত্রের বাইরে। ব্যাপারটা জলভাত নয়।
স্কারলেটের ভাবনায় গ্রায়েটের চরিত্রটা বেশ রেয়ার। এর প্রধান কারণ তার নিজের
ভেতরের সঙ্গে  যুদ্ধ করে চলা। তার মনের ভাবনাগুলোও চমৎকার।সেটাই এই
চরিত্রের সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণ। তার অনুভূতি বোঝানোর জন্য একটাও মাখোমাখো ডায়লগ
ছিল না,এমনকি অভিনেত্রীকে বেশিরভাগ সময় মুখ বুঁজেই থাকতে হয়েছে। স্কারলেটের
মতে প্রচুর লেখকের লেখা বিচ্ছিরি ডায়লগ বলার চেয়ে এ অনেক ভালো। 
ছবির রিভিউ ভালোই এলো। 
কেউ ‘ ট্রান্সলেশন ‘ এর রেশ যেতে না যেতেই আরেক স্কারলেটকে দেখে থমকে
গেলেন। 
কেউ ভারমির-গ্রায়েটের  নীরব যৌন টানাপোড়েনকে তুলনা করলেন জেন
ক্যাম্পিয়নের ‘ দ্য পিয়ানো’র সঙ্গে, কেউ লিখলেন ‘ স্কারলেট আশ্চর্য! খুব অল্প
শব্দ বলেছে কিন্তু যাবতীয় টানটান উত্তেজনা তার মুখেই জমেছিল’।
 রুথ স্টেইন লিখলেন – ‘ অহংকারশূন্য, মেক আপ প্রায়  শূন্য এমনকি
মাথাও স্কার্ফে ঢাকা। হুবহু যেন সেই বিখ্যাত পেইন্টিং এর অজানা সিটার’।
কাছাকাছি সময়ের মধ্যেই স্কারলেটের হাতে আরেকটা অন্যরকম প্রোজেক্ট এলো।
এবারে একটা অ্যানিমেশনের জন্য ছোট্ট একটা ভূমিকা। 
‘ স্পঞ্জবব স্কোয়ারপ্যান্টস’ 
অ্যানিমেটেড ছবিতে প্যাট্রিক স্টারফিশের প্রেমিকা মিন্ডির জন্য কণ্ঠদান করলো
স্কারলেট। সিনেমার এই ক’দিনের শারীরিক আর মানসিক ধকল থেকে ছোট্ট একটা রিলিফ!
পরিচালক স্কারলেটকে বলেছিলেন  এই বোকা, এই  ঠান্ডা তো এই মারমুখী
তো পরক্ষণেই  আবার দ্রুত এভাবে চরিত্রটাকে ফোটাতে হবে।
স্কারলেট কিছুটা ফাঁপরে পড়ে গেল। কারুর বিপরীতে অভিনয় করার সময় সে তো নিজেকে
হামেশাই ভেঙেছে কিন্তু তাবড় তাবড় কণ্ঠশিল্পীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গলার
কেরামতি দেখানো সহজ কথা নয়! 
এখন যেমন বড়ো বাজেটের বিখ্যাত অ্যানিমেশন ছবিগুলো যেমন ‘শ্রেক’,’ শার্ক টেল’,
‘ অ্যান্টজ’ এগুলোর ক্ষেত্রে ক্যারেক্টর ডিজাইন করাই হয় বড়ো বড়ো অভিনেতা
অভিনেত্রীদের মাথায় রেখে। বিশেষ পোশাক পরে তাঁরা অঙ্গভঙ্গি, অভিনয় করেন।
পর্দায় সেটাই হয়ে যায় অ্যানিমেটেড চরিত্র৷ কিন্তু তাদের আদবকায়দা, চালচলন
থাকে সেই অভিনেতা অভিনেত্রীদের মতো।
‘ স্পঞ্জবব’ এর ক্ষেত্রে তা ছিল না। তবুও সে যাত্রায় ভালোভাবেই পাশ করে যায়
স্কারলেট। 
প্রোজেক্টের ব্যাপারে স্কারলেট বরাবরই খুব খুঁতখুঁতে। তাঁর উইলিয়াম মরিস
এজেন্সির এজেন্ট স্কট ল্যাম্বার্ট বলেছিলেন স্কারলেট তাঁকে বলেছিল ‘ আ লাভ সং
ফর ববি লং’ এ জন ট্রাভোল্টার সঙ্গে অভিনয় করাটা তার কাছে স্বপ্নের মতো। এই
উইলিয়াম মরিস এজেন্সি জন ট্রাভোল্টারও প্রতিনিধি ছিল। স্কারলেটের যখন ১৫ বছর
বয়েস, তখন থেকেই তাকে এই প্রোজেক্টের জন্য ভাবা হয়। খুঁতখুঁতে স্কারলেটের এই
স্ক্রিপ্ট পছন্দ হয়ে গেছিল। কিন্তু কাজ শুরু হতে কিছুটা সময় লেগে যায়। 
ট্রাভোল্টার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দারুণ মজা হ’ল। দু’জনের বন্ধুত্বও বেশ জমে
গেল। ট্রাভোল্টা নিজে পাইলট, তাঁর প্রাইভেট জেটে করে বেড়ানোর আমন্ত্রণ
জানালেন। এমনকি কথাও দিলেন আফ্রিকায় লাঞ্চ করতে নিয়ে যাবেন। সবাই জানালো
ট্রাভোল্টা সবসময় কথা দিয়ে কথা রাখার জন্য বিখ্যাত। 
এর অনেকদিন পর ২০১৫ র অস্কারের রেড কার্পেটে পাপারাৎজিদের ক্যামেরার সামনে
পোজ দিয়ে স্কারলেট ছবি তুলছিল। ট্রাভোল্টা পেছন দিয়ে যাওয়ার সময় স্কারলেটের
গালে হঠাৎ  একটা চুমু দিয়ে যান। ছবিগুলো সামনে আসার পর ট্রাভোল্টা
অশালীন আচরণ করেছেন এই মর্মে বিতর্কের ঝড় ওঠে। কিন্তু স্কারলেট ট্রাভোল্টার
পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিল ট্রাভোল্টার দিক থেকে কখনোই আচমকা অভদ্রতা কিংবা বিকৃতি
ছিল না। পুরো ব্যাপারটা ছিল খুবই মিষ্টি। কয়েকটা স্টিল ফোটো দেখে মিডিয়া
তিলকে তাল করেছে। লাইভ ভিডিও দেখলেই ব্যাপারটা ভালো করে বোঝা যাবে। 
‘ এ লাভ সং ফর ববি লং ‘ এ
স্কারলেটের কাজ দেখে ট্রাভোল্টা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এ গোল্ডেন গ্লোবে
নমিনেশন পাবেই।
অক্ষরে অক্ষরে সে কথা মিলিয়ে স্কারলেট গোল্ডেন গ্লোব নমিনেশন পেয়েছিল।ব
ববি লং এর কাজ শেষ হওয়ার পরপর আমেরিকায় ‘ গার্ল ইউথ আ পার্ল ইয়াররিং’ আর ‘
লস্ট ইন ট্রান্সলেশন ‘ এর প্রিমিয়ার হয়েছিল। 
এবার সত্যিসত্যিই স্টারডম বলতে যা বোঝায়,স্কারলেট তা পেয়ে গেল। বিভিন্ন রকমের
নতুন নতুন প্রোজেক্টের দরজা তার সামনে খুলে গেল। সিনেমা  ছাড়াও বিভিন্ন
ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ, বিভিন্ন ব্র‍্যান্ডের বিজ্ঞাপন। মা মেলানী বছরের পর বছর
ধরে মেয়ের ম্যানেজারের কাজ সামলাচ্ছিলেন। ক্রমাগত মেয়েকে উৎসাহ যোগাচ্ছিলেন
যাতে সে বিনা চাপে তার পছন্দমতো রোল বেছে নিতে পারে। তার বয়েসী প্রচুর যুবক
যুবতীর কেরিয়ার তাদের মা কিংবা বাবার তত্ত্বাবধানে চলত।তাদের অনেকেই 
অনেক ছোট থেকে কেরিয়ার শুরু করলেও অনেক সময় তাঁদের অতি হস্তক্ষেপে সেটা ধ্বংস
হয়ে যেত।
 সেখানে মেলানী মেয়েকে বিভিন্ন ইন্টারভিউতে নিজের পক্ষে বলার জন্য জোর
দিতেন, নিজে নাক গলাতে চাইতেন না। মেলানীর এই পরোক্ষ প্রভাবেই স্কারলেট
টাইপকাস্ট হয়ে যায়নি, বিভিন্ন জঁরে নিজের প্রতিভা দেখাতে পেরেছে। মা বুঝতেন
মেয়েকে নিয়ে পরিচালকরা ঠিক কী ছবি বানাতে চাইছেন। ছবির প্রয়োজনে যেকোনো রকমের
পোশাক পরা নিয়েও কিছু বলেননি। শুধু মুখে বলতেন – ‘ আমার স্ক্রিপ্টটা একদম
ভাল্লাগেনি তবে তোমার ভালো লাগবে’।
এমনকি মেলানী ছোট্ট ইনপুট দিয়েছিলেন বলে  পিটার ওয়েবারের ছবিটায় তাঁর
নাম ‘ স্পেশাল থ্যাঙ্কস’ বলে ক্রেডিটে দেওয়া আছে। 
মিডিয়ার বানানো ভুলভাল গল্প পড়ে স্কারলেট বিরক্ত হয়ে যেত। মেয়ের বোকামি দেখে
মেলানী গজগজ করতেন।
২০০৪ এর নিজেই নিজেকে হারিয়ে ‘ ট্রান্সলেশন ‘ এর জন্য বাফটা পাওয়ার পর
স্কারলেট মা’কে ধন্যবাদ জানিয়েছিল – ‘একের পর এক অডিশনে নিয়ে যাওয়া আর তারপরে
হট ডগ কিনে দেওয়ার জন্য ‘।
এরপর নতুন একটা মজা শুরু হ’ল। স্টুডিওগুলো স্কারলেটকে এবার আরেকটু কমবয়েসী
রোলে নিতে চাইল।
সমালোচকরা বলেন ২০০৪ সালই স্কারলেটকে ভবিষ্যতের তারকা হওয়ার পথে বেশ কয়েক ধাপ
ঠেলে দিয়েছিল। 
তার আত্মবিশ্বাস দেখে সবাই মুগ্ধ হত। 
কিন্তু আগেই বলা হয়েছে ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষেত্রে এই বছর আবার স্কারলেটের
কাছে ভালো ছিল না। প্যাট্রিক উইলসনের সঙ্গে সেই বছরই তার বিচ্ছেদ হয়। সেই
বিষয়ে স্কারলেট কখনো সরাসরি মুখ না খুললেও বলেছিল- ‘ সম্পর্কে থাকলে যাবতীয়
আপোস করা কিংবা  সিদ্ধান্ত দু’জনে মিলেই নিতে হয়। একা থাকার সিদ্ধান্ত
আমি ভেবেচিন্তেই নিয়েছি। কাউকে দোষ দেবো না।…  প্রচুর ফালতু লোকের
সংস্পর্শে এসেছি। কিন্তু আমি সুখী কারণ সেইসব ফালতু লোকগুলোই আমার চাওয়া না
চাওয়ার মাত্রা ঠিক করতে সাহায্য করেছে। জীবনে বহু বিচিত্র মানুষের সঙ্গে
মোলাকাত হবে, তারা একেবারে ভুলভাল হতে পারে, তাদের কাউকে অসাধারণ মনে হতে
পারে, কেউ প্রেমে পরার মতো হতে পারে – তবে যখনই ঠিক মানুষটা আসবে, বোঝা যাবে
সেটা একদম  নিশ্চিত।’
 স্কারলেট সেই সময়ে  সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো লস অ্যাঞ্জেলস এ যাবে।
লস অ্যাঞ্জেলস এ যাওয়া মানে হলিউডের আরও কাছাকাছি হওয়া।
পেশাগতভাবে এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট কঠিনই ছিল। লস অ্যাঞ্জেলস এ সত্যিকারের বন্ধু
পাওয়াটাই দুষ্কর।
অনেক বেশি কম্পিটিশন সেখানে। সবাই সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখে। তবে এইসব জিনিস
যদি এড়ানো যায়, লস লস অ্যাঞ্জেলস এ কিন্তু প্রচুর ভালো জিনিসও আছে। নিউ
ইয়র্কের তুলনায়  
লস অ্যাঞ্জেলস এর কালচারের অনেক তফাত। লস অ্যাঞ্জেলস বেশ ফাঁকা ফাঁকা আর
অনেকটাই কঠিন পরিবেশ বলে  মনে হ’ল স্কারলেটের। ভালো বন্ধু না থাকলে
নিজেকে অসম্ভব একা মনে হবে। সেখানে গভীর রাতে বাচ্চারাও কোকেন নিয়ে ঝিমোয়।
সেভাবেই তারা অভস্ত্য। সেখানে স্কারলেটের সময় কাটত টিউব দেখে। একদিন সে জ্যাক
লেমন আর ওয়াল্টার ম্যাথিউ এর ‘ অড কাপল’ দেখল। 
কিন্তু স্কারলেটেরও সেই কোকেনের অভিজ্ঞতা হয়ে গেল। কোকেনে আসক্ত একজনকে 
ডেট করতে গিয়ে  অভিজ্ঞতাও হ’ল সাংঘাতিক। তাই সে ঠিক করলো পরবর্তীতে এমন
কোনো সম্পর্কে সে জড়াবে না যেখানে তার থেকেও ড্রাগ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।সেসব
কোকেনখোরদের কক্ষনো বিশ্বাস করা যায় না। 
লস অ্যাঞ্জেলসে একটা বাড়ি কিনলেও সেখানে স্কারলেটের নিজেকে খুব একা মনে হত।
তাই বাড়ি বিক্রি করে সে শ্যাতু মারমন্ট এ উঠে এলো। সেটা আসলে একটা হোটেল
কমপ্লেক্স। সিনেমার স্টারদের বেশ পেয়ারের জায়গা।  কিন্তু এই হলিউডি
গ্ল্যামার আর কেচ্ছার ভিড়ে এখানেও সে ঠিকঠাক সঙ্গী পেল না। অগত্যা সে একটা
জাপানি ফাইটার মাছ পুষতে শুরু করলো। নাম রাখলো ক্যাসিয়াস। তার খুব যত্ন
নিত,সপ্তাহে তিনবার করে জল পাল্টাত। কিন্তু এক সপ্তাহের জন্য অন্য হাতে পড়ায়
তারা জল নোংরা করে  ফেললো।চর্মরোগে মারাই গেল মাছটা। ভীষণ ভেঙে পড়লো
স্কারলেট।
ক্যাসিয়াসকে সে নিজের বন্ধু মনে করত।
 শ্যাতু মারমন্টে একটা বিরাট গর্ত খুঁড়ে সে মাছটাকে পুঁতে দিল।
কিছুদিন পরেই আরেকটা ঘটনা স্কারলেটকে একেবারে শিরোনামে এনে দেয়। প্রেস আর
পাপারাজ্জিরা অনেক সময়েই তাদের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। তাদের কাজ অনেকসময়ই
হ্যারাসমেন্টের পর্যায়ে পড়ে। সেরকমই একটা নতুন গল্প তৈরি হ’ল সে বছর
ফেব্রুয়ারিতে  অস্কারের ঠিক আগে। শ্যাতু মারমন্ট হোটেলে অভিনেতা বেনিসিও
ডেল টোরোর সঙ্গে স্কারলেটকে রাত সাড়ে তিনটেয় একে অপরকে জড়াজড়ি করে চলতে দেখা
যায়। তারপর খুব ঘনিষ্ঠভাবে তারা লিফটে ওঠে। খবরের কাগজে রিপোর্ট হয় কারা
দেখলো কি না দেখলো ওরা তাতে পাত্তাই দেয়নি। ডেল টোরোর বয়স তখন ছিল ৩৭।
স্কারলেটের প্রায় দ্বিগুণ। দু’জনে হোটেলের পুলের দিকেও যায়নি। হোটেলের রুমে
গেছিল। মিডিয়া দু’য়ে দু’য়ে চার করে নিল। হোটেলের ঘরে নিশ্চয়ই তারা ঘুমাতে
যায়নি!
কেউ কেউ লিখলো দু’জনে তাহ’লে আসলে ঘরে যায়নি, লিফটেই যৌনতা ঘটেছিল। 
‘ আমরা  লিফটে পরস্পরকে আদর করি, সেক্স করি যাইই করি না কেন ব্যাপারটা
খুবই অস্বাস্থ্যকর ‘- স্কারলেটের ‘জবানবন্দী’ হিসেবে এই কথাগুলো উদ্ধৃত করা
হয়। 
স্কারলেটের একটু বেশি বয়সের পুরুষ যেহেতু  পছন্দ,সেকথা নিজেও সে বারবার
বলে এসেছে, 
তাই ডেল টোরো নিছক জল্পনা না ই হতে পারেন এই মর্মে যাবতীয় তীরের ফলা
স্কারলেটের দিকে ঘুরে যায়।
। কেউ বললো ওর এই চপল স্বীকারোক্তি ওকে হলিউডের সেনসেশন বানিয়ে দেবে। কেউ
অবাক হয়ে হিসেব কষতে বসলো,এমনকি লিফট ব্যবহারকারী একজনের বয়ানও শুনলো – ‘
শ্যাতু মারমন্টের লিফটে কীভাবে যৌন লীলাখেলা সম্ভব! লিফটগুলো ছোট ছোট। 
অন্তত ৮০ বছরের পুরনো কাঠে তৈরি । কেউ লম্ফঝম্প করলেই তো খড়মড় আওয়াজ হবে।
আমার তো ব্যবহার করতেই বিরক্ত লাগে ‘।
এই অস্ত্রই ব্যবহার করে স্কারলেট যাবতীয় গুজব নস্যাৎ করে দেয়- ‘ যদি কখনো
শ্যাতু মারমন্টের লিফট ব্যবহার  করে থাকেন, ঠিকই বুঝবেন। জনসমক্ষে যৌনতা
করার লোক আমি নই, ওসব বেডরুমের জন্যই জমিয়ে রাখি’। 
যদিও এই দাবিতে কেউ কর্ণপাত করেনি। এসব গল্প একবার তৈরি হ’লে কে আর বিশ্লেষণ
করতে চায়! 
পরে স্কারলেট বলেছিল – ” লিফটে ডেল টোরোর সঙ্গে আমি কখনোই সেক্স করিনি তবুও
আমাকে সারাজীবন ধরে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যেতে হবে। আমি এক সাংবাদিককে
ব্যঙ্গ করে বলেছিলাম সর্বসমক্ষে আমরা লিফটে সেক্স করেছিলাম। সেটাকেই সব কাগজ
ঘুরিয়ে ছেপে দেয়।  ‘সর্বসমক্ষে’ শব্দটাকে অন্যভাবে ব্যবহার করে।
স্কারলেটের দাবি সে একাই সেই রাত্রে মায়ের কাছে গেছিল কিন্তু তার সেই দাবি
কেউ মানেনি।
পুরো ব্যাপারটাই স্কারলেটের কাছে অত্যন্ত বিব্রতকর হ’লেও এসব গুজবে ডেল টোরো
বিশেষ মাথা ঘামাননি।উল্টে তিনি লাইমলাইটে চলে আসেন।এসব ঘটনায় সচরাচর ঝক্কি
পোয়াতে হয় মেয়েদেরই,আর খ্যাতি পায় পুরুষরা। তিনি বলেছিলেন- ‘ একটা অ্যাওয়ার্ড
শো’র পর আমি লিফটে স্কারলেটের সঙ্গে ওসব করেছি?আমি জানি না, আপনারাই বলতে
পারবেন। ব্যাপারটা কারুর কল্পনাতেই থাকতে দিন।আমি নিশ্চিত জিনিসটা আগেই
হয়েছে। মোটেই শেষবারের মতো হতে পারে না।’ তাঁর বক্তব্য কিন্তু কিছুটা হ’লেও
আগুনে ঘি ফেলেছিল। পরে সব মোটামুটি ঠান্ডা হয়ে আসার পর  আবার বলেছিলেন –
‘আটতলা হোটেলের দোতলায়  লেদার জ্যাকেট নিয়ে আমার তখন নাজেহাল অবস্থা,
শার্ট খোলার জন্য সাত তলায় নামিনি’। 
এসবের পর সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলার ব্যাপারে স্কারলেটের যথেষ্ট শিক্ষা
হয়ে গেল। বুঝলো এ সামলানো সম্ভব নয়। একের পর এক মানুষের সঙ্গে তাকে জড়িয়ে
গুজব,  ভুয়ো খবর ছাপা হতে দেখে কাগজ পড়াই একরকম সে বন্ধ করে দিলো। সে
মেনে নিলো তার যা পেশা, তাতে নানারকম চর্চা হবেই।চাইলেও সাধারণভাবে জীবন
কাটানো যাবে না। 
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আবার আরেকটা গুজব ছড়িয়ে পড়লো। খবর হ’ল তার অন্যতম
কাছের বান্ধবী ডিজাইনার তারা সাবকফের সঙ্গে চুম্বনরত অবস্থায় স্কারলেটকে দেখা
গেছে। একটা বারের অন্ধকার কোণায় স্কারলেটকে নিয়ে গিয়ে গভীর আর দীর্ঘ চুমু
খান সাবকফ।উপস্থিত লোকজন দেখে চমকে যায়। ঘটনাটার ফের পুনরাবৃত্তি ঘটে। 
এই গল্পটাই বিভিন্নভাবে নানা জায়গায় ফাঁদা হ’ল। স্কারলেটকে ফের বিবৃতি দিতে
হ’ল- ‘ কিছুদিন আগে পড়লাম আমি আর আমার বান্ধবী নাকি হোটেলের লবিতে পরস্পরকে
আদর করেছি। প্রথমত, তখন প্রিমিয়ার ছিল। আমি হোটেলে ছিলাম না।দ্বিতীয়ত ও আমার
অন্যতম প্রিয় বান্ধবী, তাই এসব সম্ভব নয়।’
সাবকফ বলেন সেই সন্ধ্যায় ফুড পয়জনিংয়ের জন্য তিনি নিজের বাড়িতেই ছিলেন। 
স্কারলেট বুঝতে পারলো সত্যি সত্যিই সে তারকা হওয়ার দিকে অনেকটা এগিয়ে
গেছে।  সেজন্যই তাকে নিয়ে খবর তৈরি করা হচ্ছে।
তার মনে হ’ল সে ঠিকমতো হাল সামলাতে পারছে না। নিজের জীবন নিয়ে বেশি বেশি করে
থাকতে চাইছি কিন্তু বারবার হাল পিছলে যাচ্ছে। অতটা ধূর্ত সে তখনও হতে পারেনি।
সে নিজের মতো করে নিজের জীবনে বাঁচা আর সতর্ক হয়ে থাকার মধ্যে একটা লাইন
টানতে গিয়ে দেখলো সে সাধু-সন্ত হতে চায় না। কিন্তু ঠিকঠাক উপদেশ চায়।
সাবকফের ঘটনা একটু ফিকে করার চেষ্টা চালালো সে। দু’রাত পর একটা 
ক্যান্ডললাইট ডিনারের আয়োজন করে সারারাত জুড়ে  সাবকফকে ফাজলামি করে
সে  ‘my petal’ বলে সম্বোধন করে গেল। সাবকফ যেন কপট লজ্জায় মাটিতে মিশে
গেল। স্কারলেট  বললো – ‘ তোমাকে আরেক পাত্তর ওয়াইন দেবো বাবু? বেরিয়েই
তো গেছে আমরা এখন কাপল’।
ডেল টোরোর কিসসা এক জিনিস, সেটা সত্যি ছিল না কিন্তু অসম্ভব বিরক্তিকর।
কিন্তু এই নতুন কিসসা আরেক। সেখানে আবার প্রশ্ন উঠেছে স্কারলেট লেসবিয়ান
কিনা। তার নিজের কিছু এসে না গেলেও এই গুজব তার বন্ধু আর বন্ধুত্বকে আঘাত
করেছে। 
নিজের আইনজীবীকে ডাকলো স্কারলেট। 
সংবাদমাধ্যম বরাবরই তাকে নিয়ে রসালো খোরাক তৈরি করতে চেয়েছে। উইলসনের সঙ্গে
বিচ্ছেদের পর তাকে উদ্ধৃত করা হয়েছিল – ‘ আমি খুবই স্নেহশীলা, যে দুটো
সম্পর্কে থেকেছি, সেখানে আমি সবসময়ই ভালোবেসে চুমু দেওয়ার জন্য এগিয়ে
গেছি।এমনও নয় যে ফিরতি চুমু পাইনি তবে বেশিরভাগ সময়ে আমাকেই যেন অগ্রসর হতে
হত।’
২০০৬ সালে ‘ সিনসিনাটি’ কে স্কারলেট বলেছিল ‘ অন্যান্য স্টারদের সঙ্গে আমাকে
জড়িয়ে নানা কেচ্ছা রটার পর অনেকেই বিশ্বাস করে আমি বোধহয় বড্ড সুলভ হয়ে
গেছি… আবার এমনও নয় যে  যৌনতার ব্যাপারে আমি উদার নই। এমনও নয় যে আমি
একের পর এক সম্পর্কে ঢুকি।আসলে যখন কোনো সম্পর্কে থাকি আমি সেখানেই থাকি…
একটা স্তর অবধি গিয়ে আমরা প্রাণীই, সেজন্য প্রজননও করতে হয়। কোনো সম্পর্কে
থাকলে আমি কঠিন পরিশ্রম করি।’
 
একটা দৃশ্যে ছিল ভারমির তাঁর স্ত্রীকে চুমু খাচ্ছেন আর গ্রায়েট সেটা দেখছে।
সব চরিত্রকে তার এতটাই আপন  হয়ে গেছিল যে এই দৃশ্যে সত্যিসত্যিই
স্কারলেট বেশ দুঃখ পেয়েছিল- ‘ অভিনয় করা অভিনেতা অভিনেত্রীদের কাছে খুব
আশ্চর্য একটা কাজ কারণ কাজের সময় ইমোশনালি সারাক্ষণ তাঁরা একরকম হিংস্র হয়ে
থাকেন। এমনও নয় যে তাঁরা গুমঘরে আটকে আছেন কিংবা আশেপাশে একটা লোকও নেই
কিন্তু ব্যাপারটা সেরকমই। ‘
এতটা গৌরচন্দ্রিকা করার কারণ মানুষটার খানিকটা পরিচয় দেওয়া, অনেকটা চেনানো।
এরপর তাঁকে আবিষ্কার করবেন কিংবদন্তি উডি অ্যালেন। যুগান্তকারী সব ছবি তৈরি
হবে তাঁদের হাত ধরে। তারপর ‘ ব্ল্যাক উইডো’ হয়ে স্কারলেটের অসাধারণ দুই
অভিনয়ের দলি?

জন্মদিনে স্কারলেটকে নিয়ে কয়েকটা কথা 
পর্ব ৩ 
( অনেক বড় লেখা বলে তিন পর্বে ভেঙে দিতে হল। আশা করি পাঠক এবং অ্যাডমিনরা
নিশ্চয়ই সাহায্য করবেন)
২০০২ এর শেষের দিকেই বয়সে বড়ো একজন পুরুষের সঙ্গে স্কারলেট আবার নতুন
সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লো। বিল মুরের মতো বয়োবৃদ্ধ না হ’লেও  স্কারলেটের চেয়ে
বয়সে  ১১ বছরের  বড়ো। 
পাত্রের নাম প্যাট্রিক উইলসন। অপেরার নামকরা মুখ।
২০০৪ এর শুরু অবধি  এই দু’জন বেশ আলোচনায় থাকলো।  যথারীতি মিডিয়া
লেগে গেল হাঁড়ির খবর বার করতে।কেন সম্পর্ক টিকলো না হ্যানা ত্যানা। 
 কিন্তু বিশেষ সুবিধা করতে পারলো না। দেড় বছরের মধ্যেই প্যাট্রিক
ডাগমারা ডমিঙ্কজাইককে বিয়ে করে সব জল্পনায় জল ঢেলে দিলেন। 
একই বছরে স্কারলেট একইসঙ্গে বাফটা আর গোল্ডেন গ্লোবে নমিনেশন পেয়েছিল।
গোল্ডেন গ্লোবের ছবিটার নাম ‘ গার্ল উইথ আ পার্ল ইয়ারিং ‘। ‘ লস্ট ইন
ট্রান্সলেশন ‘ শেষ হওয়ার অল্পদিনের মধ্যে সেটার শ্যুটিং শুরু হয়ে যায়। 
ছবির পরিচালক ছিলেন পিটার ওয়েবার। তিনিও নিঃসন্দেহ হয়ে বলেছেন স্কারলেট যেন
তাঁর ছবির চরিত্রের জন্যই! ঐ বয়সেই! 
তিনি অকপটে এটাও বলেছেন তিনি অন্তত ১৫০ জন মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের
সবার মধ্যে সবচেয়ে ‘ অ্যামেজিং’ ছিল স্কারলেট। তিনি বলেছেন – ‘ আমি প্রচুর
ভালো অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বলি কিন্তু সেখানে একজনই ছিল যাকে দেখে মনে
হয়েছে  আমার এই ছবির প্রতি সত্যিকারের সুবিচার সে করতে পারবে। ছবি তৈরির
সময় স্কারলেট স্কারলেট ছিল না’।
‘গার্ল উইথ আ পার্ল ইয়ারিং ‘ ছবিটা প্রবাদপ্রতিম শিল্পী ভারমির আর তাঁর
পরিচারিকা গ্রায়েটের সম্পর্ক নিয়ে। 
একবিংশ শতাব্দীর জাপানের পরিবেশ ছেড়ে অতি অল্পদিনের মধ্যেই সপ্তদশ শতকের ডাচ
সংস্কৃতির মধ্যে অনায়াসে স্কারলেট নিজেকে মিশিয়ে নিতে পেরেছিল। 
ব্যাপারটা তার ভাষায় – ‘ ব্যাগ খুললাম, আবার প্যাক করলাম, করে বেরিয়ে এলাম’।
একেকটা চরিত্রকে তার বাদ্যযন্ত্রের একেকটা কর্ড মনে হত।
জাপান থেকে শ্যুটিংয়ের ধকল নিয়ে ‘গার্ল উইথ আ পার্ল ইয়ারিং ‘ এর সেটে আসার পর
সবাই ঠাউরে নিলো স্কারলেট এখনো আগের চরিত্রের মধ্যেই ঢুকে আছে। তাই তার মুড
যথেষ্ট বিগড়ানো। সত্যিসত্যিই আগের ছবির ইমোশনাল অবস্থান থেকে স্কারলেট তখনও
বেরোতে পারেনি। সেটাকেই সে কাজে লাগিয়ে ফেললো। ইচ্ছে করেই নিজের মনকে আচ্ছন্ন
রেখে দিলো।
দু’মাস মতো সেখানে থেকে শুরু করলো  আস্তে আস্তে চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে
মানিয়ে নেওয়া ।  একটা বালতি আর ঝাঁটা তাকে দিয়ে ভালো করে দেখে নিতে বলা
হয়েছিল।  
চরিত্রের প্রয়োজনে রিসার্চের জন্যও বিশেষ সময় হাতে ছিল না।কোনোরকম জীবনী
ইত্যাদিও তাই পড়ে নেওয়া হ’ল না।দি হেগ এ ভারমিরের বিখ্যাত সেই পেইন্টিং দেখার
সুযোগ তার হ’ল কিন্ত তার মধ্যে ভয়াবহ কিছু মুগ্ধতার ছাপ দেখা গেল না। তার
বাবা একসময় তাকে নিয়ে মিউজিয়ামে যেতেন। একের পর এক পেইন্টিং দেখতেন তারপর
দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে  বলতেন- ‘ খাসা না?’
  ‘গার্ল উইথ আ পার্ল ইয়ারিং’ এর বিশেষ টাইম পিরিয়ড  নিয়ে সময়ের
অভাবে সেভাবে রিসার্চ করলো না স্কারলেট। তবে  সে মনে মনে কষে নিল সে
বর্তমান সময়ের একজন জীবিত মানুষ কিন্তু তাকে সেই সময়ের বিভিন্ন জিনিসপত্র
ব্যবহার করা আয়ত্ত করতে হবে। তাই প্রপ ডিপার্টমেন্টের হাতে নিজেকে ছেড়ে দিল-
‘ ওদের জীবনটা বড়ো অনিশ্চিত ছিল। প্লেগ এসে শহরের পর শহর একেবারে সাফ করে
দিয়ে যেত। এর পেছনে ঈশ্বরের হাত আছে কি নেই, সেই ধারণাও ওদের ছিল না। মনে হয়
তখনকার লোকেদের  একটা বোধ ছিল যে কীভাবে  সমাজে একটা ভালো অবদান
রেখে যাওয়া যায়। এখন আমরা ম্যাকডোনাল্ডস এর হ্যাপি মিলের জন্য অপেক্ষা করতে
করতে রেডিও নব ঘোরাই – আমি এই দুই সময়কে মেলাতেই পারি না। কারণ মেলানো যায়
না। ‘
ছবিতে তার বিপরীতে ভারমিরের চরিত্রে অভিনয় করলেন কলিন ফার্থ। তিনি আবার বয়সে
স্কারলেটের চেয়ে ২৪ বছরের বড়ো। অভিনয় করতে গিয়ে 
স্কারলেটের ভক্ত বনে গেলেন তিনি – ‘ একইসঙ্গে ওর মধ্যে একটা  শিশু আর
একটা  পরিণত নারী আছে। প্রয়োজনে ও দুঃসাহসী আর বেপরোয়া হতে পারে। আবার
এই কখনো ভীষণভাবে ভেঙে পড়ছে পরক্ষণেই নিজেকে  প্রচন্ড হিংস্র করে
ফেলছে’।
কস্টিউম ইত্যাদি দেখে স্কারলেট বেশ মজা পেয়ে গেল। কলিনের সঙ্গেও জমে গেল
বন্ধুত্ব। ‘ প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস ‘ এ স্কারলেট আগেই তাঁকে দেখেছিল
কিন্তু একসঙ্গে কাজ করতে কেমন লাগবে সেটা নিয়ে চিন্তায় ছিল। কিন্তু যাবতীয় আড়
ভেঙে দিলেন বন্ধুত্বপূর্ণ কলিনই।
স্কারলেটের কথায় – ‘ যদি ছবিতে এরকম একটা দৃশ্য থাকত যে গ্রায়েট তার বক্ষ
যুগল একটা বেসিনে ধুচ্ছে আর জানলার দিয়ে ভারমির সেটা দেখছেন,
ভারমির-গ্রায়েটের সম্পর্ককে সেটা দূষিত করে তুলত…
তাদের সম্পর্ক যৌন ছিল না এমন তো নয়, কিন্তু সবকিছুরই একটা স্থান আর কাল আছে।
যদি একটা সেক্সি প্রোজেক্ট করতাম, সেখানে সর্বস্ব দিতাম না কারণ তা দেখে
কিছুতেই ইন্টারেস্টিং মনে হবে  না। কী পেলাম না, সেই ভাবনাই বরং 
কোনো জিনিসকে অনেক বেশি  ইন্টারেস্টিং করে তোলে ‘।
স্কারলেট আর ফার্থের চরিত্রের মধ্যেকার সেক্সুয়াল টানাপোড়েনের দৃশ্যগুলো ছিল
নীরব। আবার  ‘কাট’ বলার পর তারা চরিত্রের বাইরে। ব্যাপারটা জলভাত নয়।
স্কারলেটের ভাবনায় গ্রায়েটের চরিত্রটা বেশ রেয়ার। এর প্রধান কারণ তার নিজের
ভেতরের সঙ্গে  যুদ্ধ করে চলা। তার মনের ভাবনাগুলোও চমৎকার।সেটাই এই
চরিত্রের সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণ। তার অনুভূতি বোঝানোর জন্য একটাও মাখোমাখো ডায়লগ
ছিল না,এমনকি অভিনেত্রীকে বেশিরভাগ সময় মুখ বুঁজেই থাকতে হয়েছে। স্কারলেটের
মতে প্রচুর লেখকের লেখা বিচ্ছিরি ডায়লগ বলার চেয়ে এ অনেক ভালো। 
ছবির রিভিউ ভালোই এলো। 
কেউ ‘ ট্রান্সলেশন ‘ এর রেশ যেতে না যেতেই আরেক স্কারলেটকে দেখে থমকে
গেলেন। 
কেউ ভারমির-গ্রায়েটের  নীরব যৌন টানাপোড়েনকে তুলনা করলেন জেন
ক্যাম্পিয়নের ‘ দ্য পিয়ানো’র সঙ্গে, কেউ লিখলেন ‘ স্কারলেট আশ্চর্য! খুব অল্প
শব্দ বলেছে কিন্তু যাবতীয় টানটান উত্তেজনা তার মুখেই জমেছিল’।
 রুথ স্টেইন লিখলেন – ‘ অহংকারশূন্য, মেক আপ প্রায়  শূন্য এমনকি
মাথাও স্কার্ফে ঢাকা। হুবহু যেন সেই বিখ্যাত পেইন্টিং এর অজানা সিটার’।
কাছাকাছি সময়ের মধ্যেই স্কারলেটের হাতে আরেকটা অন্যরকম প্রোজেক্ট এলো।
এবারে একটা অ্যানিমেশনের জন্য ছোট্ট একটা ভূমিকা। 
‘ স্পঞ্জবব স্কোয়ারপ্যান্টস’ 
অ্যানিমেটেড ছবিতে প্যাট্রিক স্টারফিশের প্রেমিকা মিন্ডির জন্য কণ্ঠদান করলো
স্কারলেট। সিনেমার এই ক’দিনের শারীরিক আর মানসিক ধকল থেকে ছোট্ট একটা রিলিফ!
পরিচালক স্কারলেটকে বলেছিলেন  এই বোকা, এই  ঠান্ডা তো এই মারমুখী
তো পরক্ষণেই  আবার দ্রুত এভাবে চরিত্রটাকে ফোটাতে হবে।
স্কারলেট কিছুটা ফাঁপরে পড়ে গেল। কারুর বিপরীতে অভিনয় করার সময় সে তো নিজেকে
হামেশাই ভেঙেছে কিন্তু তাবড় তাবড় কণ্ঠশিল্পীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গলার
কেরামতি দেখানো সহজ কথা নয়! 
এখন যেমন বড়ো বাজেটের বিখ্যাত অ্যানিমেশন ছবিগুলো যেমন ‘শ্রেক’,’ শার্ক টেল’,
‘ অ্যান্টজ’ এগুলোর ক্ষেত্রে ক্যারেক্টর ডিজাইন করাই হয় বড়ো বড়ো অভিনেতা
অভিনেত্রীদের মাথায় রেখে। বিশেষ পোশাক পরে তাঁরা অঙ্গভঙ্গি, অভিনয় করেন।
পর্দায় সেটাই হয়ে যায় অ্যানিমেটেড চরিত্র৷ কিন্তু তাদের আদবকায়দা, চালচলন
থাকে সেই অভিনেতা অভিনেত্রীদের মতো।
‘ স্পঞ্জবব’ এর ক্ষেত্রে তা ছিল না। তবুও সে যাত্রায় ভালোভাবেই পাশ করে যায়
স্কারলেট। 
প্রোজেক্টের ব্যাপারে স্কারলেট বরাবরই খুব খুঁতখুঁতে। তাঁর উইলিয়াম মরিস
এজেন্সির এজেন্ট স্কট ল্যাম্বার্ট বলেছিলেন স্কারলেট তাঁকে বলেছিল ‘ আ লাভ সং
ফর ববি লং’ এ জন ট্রাভোল্টার সঙ্গে অভিনয় করাটা তার কাছে স্বপ্নের মতো। এই
উইলিয়াম মরিস এজেন্সি জন ট্রাভোল্টারও প্রতিনিধি ছিল। স্কারলেটের যখন ১৫ বছর
বয়েস, তখন থেকেই তাকে এই প্রোজেক্টের জন্য ভাবা হয়। খুঁতখুঁতে স্কারলেটের এই
স্ক্রিপ্ট পছন্দ হয়ে গেছিল। কিন্তু কাজ শুরু হতে কিছুটা সময় লেগে যায়। 
ট্রাভোল্টার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দারুণ মজা হ’ল। দু’জনের বন্ধুত্বও বেশ জমে
গেল। ট্রাভোল্টা নিজে পাইলট, তাঁর প্রাইভেট জেটে করে বেড়ানোর আমন্ত্রণ
জানালেন। এমনকি কথাও দিলেন আফ্রিকায় লাঞ্চ করতে নিয়ে যাবেন। সবাই জানালো
ট্রাভোল্টা সবসময় কথা দিয়ে কথা রাখার জন্য বিখ্যাত। 
এর অনেকদিন পর ২০১৫ র অস্কারের রেড কার্পেটে পাপারাৎজিদের ক্যামেরার সামনে
পোজ দিয়ে স্কারলেট ছবি তুলছিল। ট্রাভোল্টা পেছন দিয়ে যাওয়ার সময় স্কারলেটের
গালে হঠাৎ  একটা চুমু দিয়ে যান। ছবিগুলো সামনে আসার পর ট্রাভোল্টা
অশালীন আচরণ করেছেন এই মর্মে বিতর্কের ঝড় ওঠে। কিন্তু স্কারলেট ট্রাভোল্টার
পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিল ট্রাভোল্টার দিক থেকে কখনোই আচমকা অভদ্রতা কিংবা বিকৃতি
ছিল না। পুরো ব্যাপারটা ছিল খুবই মিষ্টি। কয়েকটা স্টিল ফোটো দেখে মিডিয়া
তিলকে তাল করেছে। লাইভ ভিডিও দেখলেই ব্যাপারটা ভালো করে বোঝা যাবে। 
‘ এ  
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আবার আরেকটা গুজব ছড়িয়ে পড়লো। খবর হ’ল তার অন্যতম
কাছের বান্ধবী ডিজাইনার তারা সাবকফের সঙ্গে চুম্বনরত অবস্থায় স্কারলেটকে দেখা
গেছে। একটা বারের অন্ধকার কোণায় স্কারলেটকে নিয়ে গিয়ে গভীর আর দীর্ঘ চুমু
খান সাবকফ।উপস্থিত লোকজন দেখে চমকে যায়। ঘটনাটার ফের পুনরাবৃত্তি ঘটে। 
এই গল্পটাই বিভিন্নভাবে নানা জায়গায় ফাঁদা হ’ল। স্কারলেটকে ফের বিবৃতি দিতে
হ’ল- ‘ কিছুদিন আগে পড়লাম আমি আর আমার বান্ধবী নাকি হোটেলের লবিতে পরস্পরকে
আদর করেছি। প্রথমত, তখন প্রিমিয়ার ছিল। আমি হোটেলে ছিলাম না।দ্বিতীয়ত ও আমার
অন্যতম প্রিয় বান্ধবী, তাই এসব সম্ভব নয়।’
সাবকফ বলেন সেই সন্ধ্যায় ফুড পয়জনিংয়ের জন্য তিনি নিজের বাড়িতেই ছিলেন। 
স্কারলেট বুঝতে পারলো সত্যি সত্যিই সে তারকা হওয়ার দিকে অনেকটা এগিয়ে
গেছে।  সেজন্যই তাকে নিয়ে খবর তৈরি করা হচ্ছে।
তার মনে হ’ল সে ঠিকমতো হাল সামলাতে পারছে না। নিজের জীবন নিয়ে বেশি বেশি করে
থাকতে চাইছি কিন্তু বারবার হাল পিছলে যাচ্ছে। অতটা ধূর্ত সে তখনও হতে পারেনি।
সে নিজের মতো করে নিজের জীবনে বাঁচা আর সতর্ক হয়ে থাকার মধ্যে একটা লাইন
টানতে গিয়ে দেখলো সে সাধু-সন্ত হতে চায় না। কিন্তু ঠিকঠাক উপদেশ চায়।
সাবকফের ঘটনা একটু ফিকে করার চেষ্টা চালালো সে। দু’রাত পর একটা 
ক্যান্ডললাইট ডিনারের আয়োজন করে সারারাত জুড়ে  সাবকফকে ফাজলামি করে
সে  ‘my petal’ বলে সম্বোধন করে গেল। সাবকফ যেন কপট লজ্জায় মাটিতে মিশে
গেল। স্কারলেট  বললো – ‘ তোমাকে আরেক পাত্তর ওয়াইন দেবো বাবু? বেরিয়েই
তো গেছে আমরা এখন কাপল’।
ডেল টোরোর কিসসা এক জিনিস, সেটা সত্যি ছিল না কিন্তু অসম্ভব বিরক্তিকর।
কিন্তু এই নতুন কিসসা আরেক। সেখানে আবার প্রশ্ন উঠেছে স্কারলেট লেসবিয়ান
কিনা। তার নিজের কিছু এসে না গেলেও এই গুজব তার বন্ধু আর বন্ধুত্বকে আঘাত
করেছে। 
নিজের আইনজীবীকে ডাকলো স্কারলেট। 
সংবাদমাধ্যম বরাবরই তাকে নিয়ে রসালো খোরাক তৈরি করতে চেয়েছে। উইলসনের সঙ্গে
বিচ্ছেদের পর তাকে উদ্ধৃত করা হয়েছিল – ‘ আমি খুবই স্নেহশীলা, যে দুটো
সম্পর্কে থেকেছি, সেখানে আমি সবসময়ই ভালোবেসে চুমু দেওয়ার জন্য এগিয়ে
গেছি।এমনও নয় যে ফিরতি চুমু পাইনি তবে বেশিরভাগ সময়ে আমাকেই যেন অগ্রসর হতে
হত।’
২০০৬ সালে ‘ সিনসিনাটি’ কে স্কারলেট বলেছিল ‘ অন্যান্য স্টারদের সঙ্গে আমাকে
জড়িয়ে নানা কেচ্ছা রটার পর অনেকেই বিশ্বাস করে আমি বোধহয় বড্ড সুলভ হয়ে
গেছি… আবার এমনও নয় যে  যৌনতার ব্যাপারে আমি উদার নই। এমনও নয় যে আমি
একের পর এক সম্পর্কে ঢুকি।আসলে যখন কোনো সম্পর্কে থাকি আমি সেখানেই থাকি…
একটা স্তর অবধি গিয়ে আমরা প্রাণীই, সেজন্য প্রজননও করতে হয়। কোনো সম্পর্কে
থাকলে আমি কঠিন পরিশ্রম করি।’
 
একটা দৃশ্যে ছিল ভারমির তাঁর স্ত্রীকে চুমু খাচ্ছেন আর গ্রায়েট সেটা দেখছে।
সব চরিত্রকে তার এতটাই আপন  হয়ে গেছিল যে এই দৃশ্যে সত্যিসত্যিই
স্কারলেট বেশ দুঃখ পেয়েছিল- ‘ অভিনয় করা অভিনেতা অভিনেত্রীদের কাছে খুব
আশ্চর্য একটা কাজ কারণ কাজের সময় ইমোশনালি সারাক্ষণ তাঁরা একরকম হিংস্র হয়ে
থাকেন। এমনও নয় যে তাঁরা গুমঘরে আটকে আছেন কিংবা আশেপাশে একটা লোকও নেই
কিন্তু ব্যাপারটা সেরকমই। ‘
এতটা গৌরচন্দ্রিকা করার কারণ মানুষটার খানিকটা পরিচয় দেওয়া, অনেকটা চেনানো।
এরপর তাঁকে আবিষ্কার করবেন কিংবদন্তি উডি অ্যালেন। যুগান্তকারী সব ছবি তৈরি
হবে তাঁদের হাত ধরে। তারপর ‘ ব্ল্যাক উইডো’ হয়ে স্কারলেটের অসাধারণ দুই
অভিনয়ের দলিল ‘ ম্যারেজ স্টোরি’ আর ‘ জোজো র‍্যাবিট’। একইসঙ্গে সেরা
অভিনেত্রী আর সহ অভিনেত্রীর অস্কার নমিনেশন সে এই দুই ছবির জন্য পেয়েছিল।
আলাদা আলাদা বই লেখা যায় সেসব নিয়ে। 
উডি অ্যালেনের ‘ম্যাচ পয়েন্ট’ ছবিতে  অভিনয় করে তার একটা গোল্ডেন গ্লোব
নমিনেশনও জুটে যায়। কিন্তু গোল্ডেন গ্লোব সে পায়নি। সেখানেই ঘটে গেল একটা
ঘটনা। শুধু ঘটলোই না, একেবারে  আলোড়নও ফেলে দিল।
রেড কার্পেট লাইভ চলার সময় কমেন্ট্রি করার সময় আইজাক মিজরাহি স্কারলেটের বাঁ
স্তন খামচে ধরলেন। এই মিজরাহি নামকরা একজন ডিজাইনার। নানারকম কর্মকান্ডের
জন্য তিনি আগেও কয়েকবার খবরে এসেছেন।  সেদিন তিনি ছিলেন 
কমেন্টেটরের ভূমিকায় । জনসমক্ষে তিনি ইভা লঙ্গোরিয়াকে তাঁর পিউবিক হেয়ার
সম্পর্কে জিগ্যেস করেন,চেক করতে যান এমনকি টেরি হ্যাচারের পোশাক নামিয়েও
দেন। 
স্কারলেটের ইন্টারভিউ নিতে নিতে তার বাঁ দিকের বুক চেপে ধরেন। কিন্তু ঘোষিত
সমকামী বলে মিজরাহি সে যাত্রায় পার পেয়ে যান। কিন্তু চারদিকে নিন্দার ঝড়
ওঠে। 
ঘটনাটা যা ঘটেছিল সেটা হ’ল সেদিন স্কারলেট শরীর কামড়ে ধরা একটা আঁটোসাঁটো লাল
পোশাক পরেছিলেন। সেটা ডিজাইন করেছিলেন রোলান্ড মুরেট।তিনি বলেছিলেন সেটা অতি
টাইট না হওয়াই ভালো।কিন্তু স্কারলেট চাইছিল আরও টাইট হোক। ডিজাইনার 
স্কারলেটকে বলেছিলেন এই পোশাক পরে তুমি তো বসতেই পারবে না। সত্যিই সেদিন
গাড়িতে উঠতে গিয়ে পোশাকটার জিপ ভেঙে গেছিল, তাড়াতাড়ি সূঁচ সুতো দিয়ে
ব্যাপারটা ম্যানেজ করা হয়। সেই অবস্থায় সে অ্যাওয়ার্ড প্রেজেন্ট ও করে, তারপর
পোশাক সামাল দিতে সোজা বাড়ি! 
সেই পোশাকের জ্যামিতি নিয়ে কথা বলতে বলতে মিজরাহি  স্কারলেটের বাঁদিকের
বুকে হাত রেখে বলতে থাকেন – ‘ ইট’স বিল্ট ইন, আই জাস্ট ওয়ান্না ফিল ইট- ওহ,
আই জাস্ট লাভ দ্যাট’।
বেশ কিছুদিন পর এই বিষয়টা নিয়ে স্কারলেট মুখ খোলে। পুরো ব্যাপারটায় সে
একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেছিল। দু’ঘন্টা ধরে কেশবিন্যাস  আর মেক আপ করার
পর ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন ব্যক্তি তার নিজের সুখ এভাবে
মিটিয়ে নিল-এই ব্যবহার তার ভয়ানক মনে হয়। তাও আবার ক্যামেরা সামনে টেলিভিশনের
লাইভ শো তে। স্কারলেট বলেছিল- ‘ মিজরাহি যে এই ব্যাপারটায় বিশাল কিছু রোমাঞ্চ
পেয়েছিলেন,এমনটাও নয়।নিজেকে আলাদা দেখাতে চ্যানেলের জন্য এরকম ভয়াবহ অনেক শো
আগেও বানিয়েছেন ‘।
গোল্ডেন গ্লোবের ইন্টারভিউয়ার হিসেবে মিজরাহি সেবারই খাতা খুলেছিলেন। সেজন্যই
এভাবে ছাপ ফেলতে গেছিলেন। স্কারলেটের কথায় সে আসলে বলেছিল ‘ হচ্ছে টা কী
‘? 
তার কথায় লোকে যতটা বিষয়টাকে ফাঁপাচ্ছে, সেরকম  রোমাঞ্চকর কিছুই ছিল না।
স্কারলেটের ধারণা তার পোশাককে মিজরাহি অজুহাত হিসেবে খাড়া করেননি –
‘ আমি নিশ্চিত সেই মুহূর্তে তিনি আমার পোশাকে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছিলেন। সেই
পোশাকের মারপ্যাঁচ তিনি  জানতেন না।
টেলিভিশন দিয়ে কেরিয়ার শুরু করে এমন একটা বড়ো  অনুষ্ঠানে তিনি সুযোগ
পেয়েছেন… সেই মুহূর্তটাকে রোমাঞ্চকর করে রাখার জন্য এমন করেছেন। তাঁর উপরে
তখন রাগতে পারিনি। আমার বুক খামচে তিনি সত্যিই শিহরিত হয়েছেন এবং যা
অ্যাটেনশন পাওয়ার পেয়ে গেছেন । তাঁর মোটিভ খুবই সেক্সুয়াল হতে পারত। আমি জানি
তিনি আমার দলের লোকও নন। তবুও… ’
স্কারলেটের পাবলিসিস্ট মার্সেল পারিসিউও একজন সমকামী পুরুষ। এই ঘটনায়
স্কারলেটের চেয়েও তিনি বেশি অবাক হয়েছিলেন। কারণ স্কারলেট তখম মঞ্চে।তিনি
ব্যাপারটা ঠাহরই করতে পারেননি। তাঁর কথায় – ‘ আমার বয়ফ্রেন্ড ফোন করে বলেছিল
তোমার ক্লায়েন্টের সঙ্গে এই এই ঘটেছে। তিনি সবেমাত্র ছোঁয়া পেয়েছেন ‘।
মার্সেল বলেছেন – ‘ আমি ভাবতেই পারি না একজন স্ট্রেট পুরুষ কিংবা মহিলা দূরে
থাকতে পারত’। 
কারণ স্কারলেটের দেহ সৌষ্ঠব   এতটাই অসাধারণ যে, স্কারলেট সবসময়ই
মধ্যমণি থেকেছে।
২০০৬ সালে ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের জন্য স্কারলেট আর কিয়েরা
নাইটলে একসঙ্গে একটা নগ্ন ফোটোশ্যুট করেন। দুই নগ্ন অভিনেত্রীর  সঙ্গে
সেই ছবিতে ছিলেন কোট প্যান্ট  পরা ফ্যাশন ডিজাইনার টম ফোর্ড। 
অভিনেত্রী র‍্যাচেল ম্যাকঅ্যাডামসকেও সেই প্রচ্ছদের জন্য ভাবা হয়েছিল কিন্তু
নগ্ন ফোটোশ্যুট বলে তিনি সরে যান। 
সেই ফোটোশ্যুট নিয়ে বলতে গিয়ে হতাশ গলায় স্কারলেট বলেছিল তার নিরাবরণ দেহের
উপরে মনে হয় কারুর ইন্টারেস্ট ছিল না। স্কারলেট আর কিয়ারার পরনে অল্প পোশাক
থাকলেও স্টাইলিশ তা বাদ দিয়ে দেন। 
স্কারলেটের কথায় – ‘ আমি আর কিয়ারা তখন সম্পূর্ণ নগ্ন। কয়েকজনের চোখ 
সেইসময়  ব্ল্যাকবেরি কম্পিউটারে। সবাই কাজে ব্যস্ত। কিন্তু আমার মনে
হয়েছিল সবাই যদি আমার দিকে তাকিয়ে থাকত, বরং সেটাই অনেক ভালো হত। যদিও পুরো
ব্যাপারটাই ছিল অত্যন্ত কম্ফোর্টেবল’। 
এই ফোটোশ্যুটের প্রভাব পড়লো সাংঘাতিক। ম্যাগাজিনের সাবস্ক্রাইবার প্রায় তিন
হাজারের উপর বেড়ে গেল আর পঞ্চাশ লক্ষের উপরে ওয়েবসাইটের সাবস্ক্রাইবার বেড়ে
গেছিল।
কিন্তু সবটাই অনুকূলে যায়নি।
দু’জন নগ্ন মহিলা আর আর একজন পোশাক পরা পুরুষ – এটা বৈষম্য আর মিসোজিনি এই
নিয়ে কথা উঠে গেল। 
ম্যানিলা বুলেটিন এক পাঠকের উদ্ধৃতি তুলে দেয়- ‘ ২০০৬ এও কেন একজন নারীকে
তাদের সাফল্যের বদলে কাপড় খুলে শিরোনামে আসতে হবে ‘? 
ভ্যানিটি ফেয়ার সম্ভবত নিজেদের প্রমোট করার জন্য স্কারলেটের  একমাত্রিক
দিকটাই প্রচার করেছিল,এরকম পাবলিসিটি স্টান্ট কিন্তু স্কারলেটের  ঘোর
অপছন্দ ছিল। 
প্রথম থেকে যা যা ছবির উদাহরণ দিলাম, প্রায় সবগুলোতেই তার বিপরীতে ছিলেন বয়সে
অনেক বড়ো এবং পরিণত পুরুষরা। অনেকটা সেই কারণেই এবং পারিবারিক জীবনে লড়াই
করতে করতে তার মধ্যে তৈরি হয়েছে অস্বাভাবিক ম্যাচিয়োরিটি।  দু’ দুটো
বিয়ে ভেঙে গেছে, বহুজনের সঙ্গে নিজের নাম জড়ালেও নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে
কখনোই মিডিয়ার কাছে খোরাক হতে দেননি। তৃতীয় বিয়েটাও করেছেন একপ্রকার
আড়ালেই। 
বরাবরই তিনি ব্যতিক্রম। চরিত্র নির্বাচন থেকে শুরু করে লড়ে গেছেন নিজের
সঙ্গে। বারবার ছক ভেঙেছেন।
( অন্বয় গুপ্ত)

Also read,
Tags –
Movies,
Hollywood,
Celebrity, Scarlett Johansson

Share This Article