Bangla Premer Golpo Love Story – এরই নাম প্রেম – বাংলা প্রেমের গল্প

Bongconnection Original Published
9 Min Read


 Bangla Premer Golpo Love Story – এরই নাম প্রেম – বাংলা প্রেমের গল্প

Bangla Premer Golpo Love Story - এরই নাম প্রেম - বাংলা প্রেমের গল্প
Loading...

Bangla Premer Golpo Love Story

Loading...
রাকা কালো বলেই বোধহয় ওর বাবা-মা ওর বিয়ের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলো। পোষ্ট
গ্র্যাজুয়েশন সাইকোলজি নিয়ে করতে চাওয়ার মধ্যে রাকার অনেক স্বপ্ন লুকিয়ে ছিলো
কিন্তু ভারতে মেয়ে জন্মালে তাকে নিঃশ্বাস নিতে সময় না দিয়েই তার বিয়ের
কথা  শুরু হয়ে যায়।মেয়ের গায়ের রঙ ফর্সা হলে আয়া মাসী মাড়ি বের  করে
মেয়ের বাবাকে বলে,’মেয়ে ফর্সা হয়েছে। বিয়ের চিন্তা নাই। আমার কিন্তু ভালো
শাড়ি  চাই।‘ বাচ্চাকে তখনো হয়তো বাপে দেখেইনি। আর কালো হলে? আয়া মাসী
মুখটা আরো কালো করে বলবে,’চুক-চুক-চুক! একে মেয়ে তায় কালো! কী করে যে বিয়ে
দেবেন!’অথচ আবহাওয়া অনুযায়ী ভারতের বেশীরভাগ মানুষের ই গায়ের রঙ কালো আর সেটাই
স্বাভাবিক।এদেশের ফর্সা মুখে হাল্কা গোঁফের রেখা ওয়ালা মেয়েরাও সুন্দরী।এবং
এদেশে যাদের ফর্সা বলা হয় ইংল্যান্ড-আমেরিকার মতো দেশে তাদের কালোই বলে।


বাংলা প্রেমের গল্প লাভ স্টোরি 

রাকা কালো, মানে শ্যামবর্না। দীঘল কালো চোখ, মাথায় লম্বা ঘন চুল।হাতের আঙুল
লম্বা।ওর চেহারা, কথাবার্তায় শিক্ষার প্রসাধন।রাকা মানা করলেও বাবা-মায়ের জিদের
কাছে হার স্বীকার করলো। মায়ের তো সোজা কথা,’সাইকোলজি তে এম এ করে কী চাকরী
পাবি? চাকরীর যা বাজার!’ রাকা রাতে ঠাকুমার কাছে শোয়। নারায়নী দেবী স্বশিক্ষিত
মানুষ।নাতনির এতো তাড়াতাড়ি  বিয়ে চাননি।তবু ওনার কথাতেই এম এ পরীক্ষায়
বসতে পারলো। ঠাকুমা  স্বান্তনা দেন আদরের নাতনিকে।
-কাইন্দোনা দিদি! সোয়ামী মানুষ ডা  যদি ভালা অয়, তারে নিজের ইচ্ছা কইবা।
হেয় চাইলে তুমারে পড়াইবার পারব।
ঋজু পেশায় সিএ।রাকার ছবি দেখেই তার পছন্দ হয়েছে। গায়ের রঙ টং ওর কাছে কিছু
গুরুত্ব পায়না। শিক্ষিতা, বুদ্ধিমতী মেয়ে হলেই হবে। ঋজুর একটাই  ভয় বউ যেন
কর্কশ কন্ঠী না হয় আর ঝগড়া যেন না করে। ঋজুর মা এবং দিদিরা  খুব
ঝগড়ুটে।ঋজুর মা-বোনের টাইম পাস ই হচ্ছে ঝগড়া। হয় প্রতিবেশীর সাথে নইলে নিজেদের
মধ্যেই।
নগদ টাকা নেওয়ার ইচ্ছে ছিলো ঋজুর বাবা-মায়ের কিন্তু জীবনে প্রথমবার ঋজু জিদ
দেখালো। বলল, পণ নিলে আমি শ্বশুরবাড়ীতে ঘরজামাই হয়ে থাকব।
-তোর দিদিদের বিয়েতে পণ দিয়েছিনা!
-সে দিদিরাও সমর্থন করেছে বলে।আর ওদের দেওয়া পণ তুমি আমায় বেচে সুদে-আসলে
মেটাবে? সে হবেনা!পণ গরু-ছাগলেরা নেয়।
ঋজুর বড়দির গায়ে লাগলো। তার বর এক চোখে দেখেনা তবু একলাখ টাকা পণ আর স্কুটার
নিয়েছে কারন সরকারী চাকুরে।মেজো দিদির বর ক্যাশ নেয়নি তবে বাকী সব ই 
চেয়ে  নিয়েছে।অনেক ঝগড়া, কান্নাকাটির পরে বিয়ের দিন ঠিক হলো। ঋজু চাকরী
করে গুজরাটে।সে বিয়ের সাত দিন পরেই বউ নিয়ে চলে গেলো নিজের কর্মস্থলে।
আরো পড়ুন, 

রাকাও একটা এনজিও তে  চাকরী পেলো। স্যালারী ভালোই। ঋজু অবশ্য বলেছে ও
চাইলে পিএইচ ডি ও করতে পারে। রাকা খুব খুশী ঋজুকে পেয়ে।গায়ের রঙ নিয়ে বিয়ের আগে
কত কথা  শুনেছে কিন্তু ঋজুকে দেখো, ওর চোখে রাকা সবচেয়ে সুন্দরী। 
ঋজুর মন কেড়েছে রাকার গান। ওর গান চোখ বন্ধ করে শুনলে মনে হয় গীতা দত্ত গাইছেন।
না ঠিক গীতা দত্ত ও না। বেগম আখতার আর গীতা দত্তের মিক্সড। রোজ রাতে ঋজুর
আবদারে অনেক গান শোনাতে হয়।

রোমান্টিক প্রেমের গল্প

দেখতে দেখতে তিন বছর কেটে  গেছে।নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া সুন্দর হওয়ায় বিয়ের
পরে পরেই মা-বাবা হতে চায়নি।এখন ওরা প্ল্যান করেছে নতুন কাউকে আনার। ঋজুর ইচ্ছে
রাকার মত একটা মেয়ে হোক আর রাকার ইচ্ছে চেলে-মেয়ে যেই আসুক সুস্থ, নীরোগ হলেই
হবে। কালো-ফর্সা নিয়ে তার জীবন ঘোলাটে করবেনা।
ভালোবেসে যে দেহ মিলিত হয় তা যেন স্বর্গীয় সুখ বহন করে আনে। তিন বছরে রাকা একটু
ভরাট চেহারার হয়েছে বিয়ের সময় বেশ  রোগা ছিলো। ঋজুর স্পর্শে যৌবন এখন উছলে
পরছে রাকার। কে বলবে এই মেয়ের রূপ নিয়ে কত কথা  শুনতে হয়েছে!ঋজু অডিটে
গিয়েছিলো প্রায় পনেরোদিন পরে ফিরেছে।একটু বিরহ কাতর তো দুজনেই ছিলো তাই 
সেদিন রাতে দুজনেই যখন দুজনকে আদরে,ভালোবাসায় ভাসাচ্ছে হঠাত রাকার বুকের পাশে
কিছুটা অংশ বেশ  শক্ত লাগে ঋজুর।
-আহ! করে ওঠে রাকা।
-কী হয়েছে?
-এইখানে একটু যন্ত্রনা মতন হয়েছে। ফোঁড়া হবে হয়তো।
-এখানে একটা ডেলা মতন। ব্যথা নেই?
-এই কয়েকদিন ধরে ব্যথা লাগছে। 
ঋজু লাইট জ্বালিয়ে দেখে। রাকার ডান দিকের স্তনবৃন্তের পাশে একটা ডেলা।চামড়ার
কালার ও চেঞ্জ হয়েছে। একটা ডেলা যা ঋজুর বুকে ভয়ের চোরা স্রোত বইয়ে দেয়। 
-কালকেই ডক্টরের কাছে চলো।
-মা হইনি তবু কী……
-কোন কথা  নয়।চলো ঘুমোও।
রাকাকে বুকের মধ্যে চেপে জড়িয়ে ঘুমোয় ঋজু। রাকাও কেমন  অভ্যস্ত হয়ে গেছে
এই হাত বালিশে ঘুমোতে!
পরেরদিন ডাক্তার দেখেন।ম্যামোগ্রাফি এবং অন্য টেস্ট  সবেতেই  ধরা
পরলো ব্রেষ্ট ক্যান্সার। রাকা খুব ভেঙে পরলো।ডাক্তারবাবু বোঝালেন,’একদিকে
ব্রেষ্ট বাদ দিয়ে কেমো নিলে নর্ম্যাল  হয়ে যাবেন।‘আজকাল  কিছু
ক্যান্সার সেরে যায়। তার জন্য চাই সাহস। আপনি মনের জোর হারাবেন না।
একটা মেয়ের শরীরের সবচেয়ে আকর্ষনীয় অঙ্গ বাদ দেওয়ার কথা  সহজ ভাবে নিতে
পারেনা অনেকেই। রাকা নিজের থেকেও বেশী ঋজুর কথা  ভাবছিলো।
-তুমি আমার জীবন সেটা কী জানো? তোমার ব্রেষ্ট,  পার্ট অফ ইওর বডি।তুমি
পাশে থাকলে আমি খুশী তে জীবন কাটাতে পারবো, রাকা। সাইকোলজি পড়েও  আমার মন
বোঝোনা!

Bangla Love Story

শ্বশুরবাড়িতে জানাতেই সুনামি আছড়ে পরলো।ঋজুর মা- বোনে রা কেউ একজন মহিলাও রাকার
জন্য কোন সিমপ্যাথি দেখালোনা। ঋজুর মা পরিস্কার বলে দিলেন,’যাদের মেয়ে তাদের
কাছে পাঠিয়ে দে। বাঁচুক, মরুক আমাদের কী! তখনই বুঝে ছিলাম অমন রোগা মেয়ে, কোন
রোগ আছেই।‘
-তোমার কথা  শেষ হয়েছে? 
-কেন?
-না তাহলে ফোন রাখব। শুধু শুধু ফোনের টাকা খরচের কোন মানে হয়না।আজ যদি এই রোগ
দিদিদের বা তোমার হতো?আমার বউ, আমি ট্রিটমেন্ট করাবো।
-রাকা সব ই শুনছিলো। ও কাঁদতে পারেনা তবু শাশুড়ির কথায় খুব আহত হয়। এই
ভদ্রমহিলাকে নিয়ে কত জায়গায় বেড়াতে গেছে।নানা রকম উপহার কিনে দিয়েছে উনি চেয়েও
নিয়েছেন। আর আজ কত সহজে বলে দিলেন যাদের মেয়ে তাদের বাড়ী  পাঠা।
অসময়েই  মানুষ চেনা  যায়।রাকার বাবা-মা খবর পেয়ে আসেন। টাটা 
মেমোরিয়ালে নিয়ে যাওয়া হয় ওকে। সার্জারি, কেমো।একদিনের জন্য ঋজুর মুখে রাকা
হতাশা দেখেনি।সবসময় রাকাকে সাহস দিয়েছে, আনন্দে রেখেছে। 
 কেমোর পরে চুল ঝরে যায়। কেমন ভাবে ঝরে? বালিশ থেকে মাথা ওঠালে দেখা 
 যায় বালিশেই চুল, অল্প কিছু চুল নিয়ে সে উঠেছে।এই চুল রাকার খুব আদরের
ছিলো। মাথা পুরো ন্যাড়া করে  নিলো রাকা,রোজ রোজ চুল ঝরে যাওয়া দেখলে
নিজেকে  আরও  দুর্বল  লাগে।এখনো কিছুদিন রাকাকে মুম্বইতে থাকতে
হবে। বাবা-মা চলে যান কারন ঠাকুমা একা। কিছু একটা আন্দাজ করেই রাকার জন্য একটা
মহাভারত পাঠিয়েছেন ওর ঠাকুমা।  ঋজুর সাথে ওর বাড়ীর সম্পর্ক টাকা-পয়সায়
দাঁড়িয়ে আছে। ও মাস গেলেই এক থোক টাকা পাঠিয়ে দেয়।

Bangla Love Story Golpo

 সেদিন সকালে রাকা যার চিকিতসায় আছে সেই ডক্টর  এসে বললেন,’কেমন
আছেন?’
-আমি কী বাড়ী যেতে পারি!
-ও সিওর! হোয়াই নট। বাড়ী  গিয়ে নিয়ম করে ওষুধ খাবেন, মেডিটেশন ইজ মাস্ট।
থিংক পজিটিভ ম্যাম।
-আমার হাজবেন্ড কী এসেছেন?
-হ্যাঁ! উনি খুব মন দিয়ে সব কিছু বুঝে নিচ্ছেন। ইউ আর ভেরি লাকি।
লাকিদের বুঝি এমন অসুখ হয়!
এখানে কত নাটক দেখি ম্যাম। স্ত্রীর ব্রেষ্ট ক্যান্সার সার্জারি করাবে না। ওর তো
সৌন্দর্যই চলে যাবে। ভাবুন। বউএর প্রানের থেকেও সৌন্দর্য বড়।কত রকমের স্বামী
দেখি। আপনার জনটি রিয়েলী ডিফারেন্ট।
দূরে করিডর ধরে ঋজুকে আসতে দেখা যায় কিন্তু একী!
-এটা কী করলে?
-কী করলাম? আইডেন্টিকাল টি-শার্ট পড়ি, জুতো পরি আর আইডেন্টিকাল হেয়ার কাট না
করলে চলে! এখন বল্ড হেয়ার ফ্যাশনে ইন। তাই বাদ দিলাম। আমায় কেমন লাগছে?
-রাকার দুচোখে আনন্দের জল। ও ঋজুর নেড়া মাথায় চুমু খেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে।
এবার  বাড়ীতে তো চলো।কেমো নিয়ে রাকা দুর্বল হয়ে  গেছে। হোয়াইট ব্লাড
কাউন্ট কমে গেছে, প্লেটলেট কমে গেছে;;।  ঝড় চলে গেছে এখন রাকা আর ঋজুকে
নতুন করে সব শুরু করতে হবে।ঋজু হুইল চেয়ার ঠেলে এগিয়ে নিয়ে যায় রাকা কে
হাসপাতাল ্থেকে দূরে, এক নতুন জীবনে।
আরো পড়ুন, 

Share This Article