সুন্দর প্রেমের গল্প – Sundar Premer Golpo – Bengali Love Story
সুন্দর প্রেমের গল্প
Loading...
হসপিটালের কেবিনের দরজায় একটা আওয়াজ হতেই হাতে ধরা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের
“ঠিকানা নেই” বইটা থেকে চোখটা সরিয়ে দরজার দিকে তাকালেন লীনা দেবী।দরজায় সেই
চেনা মুখটা দেখতে পেয়ে বলে উঠলেন, তুমি আবার এসেছো স্বদেশ ? আচ্ছা তোমারও তো
বয়স বাড়ছে নাকি? আর আমি কি ছোট বাচ্চা যে রোজ দুবেলা নিয়ম করে আমায় দেখতে
আসতে হবে, আর আমিতো এখন ভালই আছি।
“ঠিকানা নেই” বইটা থেকে চোখটা সরিয়ে দরজার দিকে তাকালেন লীনা দেবী।দরজায় সেই
চেনা মুখটা দেখতে পেয়ে বলে উঠলেন, তুমি আবার এসেছো স্বদেশ ? আচ্ছা তোমারও তো
বয়স বাড়ছে নাকি? আর আমি কি ছোট বাচ্চা যে রোজ দুবেলা নিয়ম করে আমায় দেখতে
আসতে হবে, আর আমিতো এখন ভালই আছি।
নিজেও যে এতক্ষন ওই মুখটা দেখার জন্যই বইয়ের পাতা থেকে মুখটা তুলে বার কতক
ঘড়িতে দেখেছেন চারটে বাজলো কিনা, সেটা আড়াল করার একটা চেষ্টা করে গেলেন লীনা
দেবী।
ঘড়িতে দেখেছেন চারটে বাজলো কিনা, সেটা আড়াল করার একটা চেষ্টা করে গেলেন লীনা
দেবী।
স্বদেশ বাবু – তুমি যে বাচ্চা নও লীনা সে কি আর আমি জানিনা। তবে কি জানো মানুষ
অসুস্থ হলে, হসপিটালে পড়ে থাকলে আশা করে যে কেউ অন্তত তার কাছে একটু সময়ের
জন্য হলেও আসুক।
সেই বছর দুয়েক আগে শীতে আমার যখন শ্বাসকষ্ট হলো, তখন কিন্তু হসপিটালে শুয়ে
আমার খুব মনে হতো, কেউ অন্তত আসুক। দুদিন তিনদিন ছাড়া ছাড়া ওই অস্তরাগের
ছেলেগুলো দেখতে আসতো বটে, কিন্তু সেটা যেন ওদের একটা কর্তব্য, তাতে ঠিক
অনুভূতির টান ছিলনা।
আমার খুব মনে হতো, কেউ অন্তত আসুক। দুদিন তিনদিন ছাড়া ছাড়া ওই অস্তরাগের
ছেলেগুলো দেখতে আসতো বটে, কিন্তু সেটা যেন ওদের একটা কর্তব্য, তাতে ঠিক
অনুভূতির টান ছিলনা।
তবে তোমার এসব মনে হয় কিনা জানিনা। তুমি তো আবার বড্ড বেশি বাস্তববাদী।
লীনা দেবী – ব্যাস ঠুকে দিলে তো? কথায় কথায় আমায় না ঠুকলে কি শান্তি হয়না
তোমার?
তোমার?
স্বদেশ বাবু – কোথায় ঠুকলাম। এখানে তো না আছে পেরেক না আছে হাতুড়ি।
লীনা দেবী – সেসব ছাড়াও যে কথা দিয়ে দিব্যি ঠোকা যায় সে আর তোমার থেকে কে
ভালো পারে বলো।
ভালো পারে বলো।
স্বদেশ বাবু – আচ্ছা এসব ছাড়ো, এখন বলো তুমি কেমন আছো? পায়ের ব্যথাটা কেমন
এখন?
এখন?
লীনা দেবী – আগের থেকে অনেক ভালো। এই জানো, আজকে তুমি সকালে গেলে, ব্রেকফাস্টের
পর ওরা আমায় ধরে ধরে হাঁটালো। কতদিন পর মাটিতে পা রাখলাম।
পর ওরা আমায় ধরে ধরে হাঁটালো। কতদিন পর মাটিতে পা রাখলাম।
Also read,
স্বদেশ বাবু – পারলে হাঁটতে? কষ্ট হয়নি তো?
লীনা দেবী – কষ্ট তো একটু হবেই, কিন্তু বসে থাকলে তো চলবেনা। আবার কবে যে আগের
মত…
মত…
স্বদেশ বাবু – আগের মত ঠিক পারবে লীনা। তুমি অত ভেবোনা। আচ্ছা ওরা কবে ছুটি
দেবে কিছু বললো?
দেবে কিছু বললো?
লীনা দেবী – আমিও না রোজ এই কথাটাই জিজ্ঞেস করি ডক্টর এলে জানো। উনি তো
বলছেন একটু ঠিকমত হাঁটতে না পারা অবদি ছাড়তে পারবেনা। তারজন্য আরো এক দু
সপ্তাহ।
বলছেন একটু ঠিকমত হাঁটতে না পারা অবদি ছাড়তে পারবেনা। তারজন্য আরো এক দু
সপ্তাহ।
স্বদেশ বাবু – সেই তো।এই বয়সে এসে একটা এত বড় অ্যাকসিডেন্ট, যেভাবে পড়ে
গেছিলে তাতে আমিতো ভেবেছিলাম…
গেছিলে তাতে আমিতো ভেবেছিলাম…
লীনা দেবী – কি ভেবেছিলে মরে গেছি তাই তো? ওরে বাবা মেয়েমানুষের কইমাছের জান
বুঝেছো, এত সহজে নিস্তার নেই।
বুঝেছো, এত সহজে নিস্তার নেই।
একটি সুন্দর প্রেমের গল্প
স্বদেশ বাবু – কি যা তা বলছো লীনা।আমি কি তাই বললাম।
লীনা দেবী – যা তা কি বলছো? আমাদের বয়স কি কম হলো নাকি। এইতো আমার এখন
বাহাত্তর। তুমি হয়তো আমার থেকে বছর তিনেকের ছোট। কি তাইতো?
বাহাত্তর। তুমি হয়তো আমার থেকে বছর তিনেকের ছোট। কি তাইতো?
স্বদেশ বাবু – হ্যাঁ ওই ঊনসত্তর।
শোনো এখনও চলে যাওয়ার বয়স হয়নি মোটেই।
এখনও অস্তরাগের পুকুরটায় সাঁতার কাটা বাকি, তুমিই কিন্তু চ্যালেঞ্জ করেছিলে
আমায়। দুর্গাপুজোর প্রত্যেকদিন সকালে শিউলি ফুলের মালা গাঁথবে বলেছিলে। এসব
কিন্তু তোমারই কথা লীনা।
আমায়। দুর্গাপুজোর প্রত্যেকদিন সকালে শিউলি ফুলের মালা গাঁথবে বলেছিলে। এসব
কিন্তু তোমারই কথা লীনা।
ও হ্যাঁ তোমার মেয়ে ফোন করেছিল আমায়, বললো তোমার ফোনটা সুইচ অফ।
লীনা দেবী – ইচ্ছা করেই সুইচ অফ করে রেখেছিলাম, আমি তো জানি ওইসময় জিনি রোজ
ফোন করে।
ফোন করে।
স্বদেশ বাবু – জেনেশুনে ফোনটা অফ করে রাখলে? এ কিন্তু তোমার ভারী অন্যায় লীনা।
মেয়েটা কত দূর থেকে তোমায় ফোন করছে।
মেয়েটা কত দূর থেকে তোমায় ফোন করছে।
Also read,
লীনা দেবী – আমি কি আর এমনি এমনি বন্ধ রেখেছি? মেয়েটা ফোন করলেই বলে মা হসপিটাল
থেকে ছুটি দিলেই তুমি আর অস্তরাগে যাবেনা, আমার কাছে এসে থাকবে। আচ্ছা বলতো এ
কি আর হয়।
থেকে ছুটি দিলেই তুমি আর অস্তরাগে যাবেনা, আমার কাছে এসে থাকবে। আচ্ছা বলতো এ
কি আর হয়।
আমি নিজেই তো চলে এসেছিলাম ওদের কাছ থেকে।
স্বদেশ বাবু – তো আবার গিয়ে থাকতেই পারো, এত করে যখন বলছে।
লীনা দেবী – তা হয়না স্বদেশ। আমি জিনির বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মেয়ে
জামাইয়ের সংসারেই ছিলাম একটা বছর। আমার রোজ গানের রেওয়াজ নিয়ে জিনির কোন
আপত্তি না থাকলেও জামাই এর আপত্তি ছিল। মুখ দেখে বুঝতে পারিনি কখনো, আমাকে
সামনাসামনি বলেওনি কোনোদিন, কিন্তু একদিন রাতে ওদের ঘরের সামনে দিয়ে বাথরুম
যেতে গিয়ে কানে এলো শুভ্র জিনিকে বলছে, তোমার মায়ের এই সকাল সন্ধ্যা হেঁড়ে
গলায় কেত্তন আর নেওয়া যাচ্ছেনা জিনি, প্লিজ এবার এটা বন্ধ করতে বলো। তুমি তো
জানো গান ছাড়া আমি অচল। তাই নিজেই বৃদ্ধাশ্রমের খোঁজ করতে লাগলাম, এই
অস্তরাগের ঠিকানা পেতেই চলে এলাম এখানে।
জামাইয়ের সংসারেই ছিলাম একটা বছর। আমার রোজ গানের রেওয়াজ নিয়ে জিনির কোন
আপত্তি না থাকলেও জামাই এর আপত্তি ছিল। মুখ দেখে বুঝতে পারিনি কখনো, আমাকে
সামনাসামনি বলেওনি কোনোদিন, কিন্তু একদিন রাতে ওদের ঘরের সামনে দিয়ে বাথরুম
যেতে গিয়ে কানে এলো শুভ্র জিনিকে বলছে, তোমার মায়ের এই সকাল সন্ধ্যা হেঁড়ে
গলায় কেত্তন আর নেওয়া যাচ্ছেনা জিনি, প্লিজ এবার এটা বন্ধ করতে বলো। তুমি তো
জানো গান ছাড়া আমি অচল। তাই নিজেই বৃদ্ধাশ্রমের খোঁজ করতে লাগলাম, এই
অস্তরাগের ঠিকানা পেতেই চলে এলাম এখানে।
এবার বলো আমার কোন ভুল হয়েছে কি?
স্বদেশ বাবু – একদম ঠিক করেছো লীনা। তবে তুমি অনেক ভাগ্যবতী তাই নিজের ইচ্ছায়
চলে আসতে পেরেছো, তোমার স্বামী তোমার জীবন সুরক্ষিত করে দিয়ে গেছে লীনা।
চলে আসতে পেরেছো, তোমার স্বামী তোমার জীবন সুরক্ষিত করে দিয়ে গেছে লীনা।
আমার তো পেনশন আছে, শক্ত আছি এখনও, তাও ছেলে মেয়ে দুজনে মিলে বুঝিয়ে বাড়িটা
বিক্রি করে দিলো প্রোমোটারের কাছে। ওদের মা মারা গেছে বছর দশেক হলো। আমায় বলল
বাড়িটা না হওয়া অবদি আমার ভাড়াবাড়িতে থাকতে কষ্ট হবে তাই অস্তরাগে ভালভাবে
থাকতে পারবে, গৃহপ্রবেশের দিন একদম নিয়ে যাবে ওখানে। তারপর গৃহপ্রবেশের দিন
এলো, ছেলে নিয়েও গেছিলো আমায়, কিন্তু তারপর বোঝালো দুই কামরার ফ্ল্যাট বাবা,
তোমার তো হাতপা ছড়িয়ে থাকতে ভালো লাগে, আর এতদিনে অস্তরাগে থেকে অভ্যস্ত হয়ে
গেছো তাই ওখানেই…. অগত্যা সেদিন রাতেই আবার দিয়ে গেলো আমায়। তারপর আর আসেনি
এখানে, তা প্রায় মাস ছয়েক হতে চললো, এখন ফোনেই কথা হয় মাঝেসাঝে। তারপর এই
তুমি এলে, এখন ভালই লাগে, আসলে সবার সাথে তো মানসিকতা মেলে না।
বিক্রি করে দিলো প্রোমোটারের কাছে। ওদের মা মারা গেছে বছর দশেক হলো। আমায় বলল
বাড়িটা না হওয়া অবদি আমার ভাড়াবাড়িতে থাকতে কষ্ট হবে তাই অস্তরাগে ভালভাবে
থাকতে পারবে, গৃহপ্রবেশের দিন একদম নিয়ে যাবে ওখানে। তারপর গৃহপ্রবেশের দিন
এলো, ছেলে নিয়েও গেছিলো আমায়, কিন্তু তারপর বোঝালো দুই কামরার ফ্ল্যাট বাবা,
তোমার তো হাতপা ছড়িয়ে থাকতে ভালো লাগে, আর এতদিনে অস্তরাগে থেকে অভ্যস্ত হয়ে
গেছো তাই ওখানেই…. অগত্যা সেদিন রাতেই আবার দিয়ে গেলো আমায়। তারপর আর আসেনি
এখানে, তা প্রায় মাস ছয়েক হতে চললো, এখন ফোনেই কথা হয় মাঝেসাঝে। তারপর এই
তুমি এলে, এখন ভালই লাগে, আসলে সবার সাথে তো মানসিকতা মেলে না।
রোমান্টিক প্রেমের গল্প
তোমার সাথে কথা বলে একটু শান্তি পাই।
লীনা দেবী – দুঃখ কোরোনা স্বদেশ হয়তো এটাই লেখা ছিল আমাদের কপালে। এই দেখো
তুমি আবার আমায় ভালোবেসে ফেলোনি তো, আমি কিন্তু বয়সে বড় তোমার থেকে।
তুমি আবার আমায় ভালোবেসে ফেলোনি তো, আমি কিন্তু বয়সে বড় তোমার থেকে।
স্বদেশ বাবু – তুমি ভালোবাসার কি বুঝবে। যা কাঠখোট্টা মহিলা।
লীনা দেবী – অ্যাই শোনো আমায় কিন্তু তুমি ইনসাল্ট করছো। আমার মনে হচ্ছে আমি
আসল কথাটা ধরে ফেলেছি স্বদেশ।
আসল কথাটা ধরে ফেলেছি স্বদেশ।
Also read,
স্বদেশ বাবু – হোক না ভালোবাসা, তোমার তাতে কি? কিছু কথা মনে মনে থাকাই ভালো।
বয়স হচ্ছে তো নাকি?
বয়স হচ্ছে তো নাকি?
লীনা দেবী – বয়স যতই বাড়ুক, কিছু কথা যেমন মনে মনে থাকা ভালো, তেমন কিছু কথা
হারিয়ে যাওয়ার আগে কাছের মানুষকে বলে দেওয়াও ভালো।
হারিয়ে যাওয়ার আগে কাছের মানুষকে বলে দেওয়াও ভালো।
স্বদেশ বাবু – আচ্ছা বাবা বললাম ভালোবাসি ভালোবাসি।
আর তুমি?
লীনা দেবী -সব মেয়েরা ভালোবাসার কথা মুখ ফুটে বলেনা স্বদেশ। শুধু এটুকু বলতে
চাই, হাঁটতে পারলেই হাতে হাত রেখে কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে সূর্যোদয় দেখতে যাওয়ার
ইচ্ছে আছে খুব।
চাই, হাঁটতে পারলেই হাতে হাত রেখে কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে সূর্যোদয় দেখতে যাওয়ার
ইচ্ছে আছে খুব।
নিয়ে যাবে আমায়?
স্বদেশ বাবু – যাবো লীনা, নিশ্চয়ই যাবো। এই দ্যাখো এখনও আমি তোমার হাতটা ধরে
আছি। আহা কি শান্তি।
আছি। আহা কি শান্তি।
পত্রালিকা