অনুপ্রেরণার গল্প - Bengali Motivational Story

Bongconnection Original Published
0

 অনুপ্রেরণার গল্প - Bengali Motivational Story


অনুপ্রেরণার গল্প - Bengali Motivational Story


অর্ধাঙ্গিনী
                     - পাপড়ি চক্রবর্ত্তী

পরিবার থেকে যখন বলা হয়েছিল তোকে যে দেখতে আসছে সে একজন সৈনিক।
সত্যি বলতে আমি প্রথমে আপত্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম সবার দিকে একনজরে।
কিছুদিন আগেই তো আমার বান্ধবী অদ্রিজার স্বামী আহত হয়েছেন জঙ্গি হামলায়।একটুর জন্য প্রানে বেঁচে গেছেন তিনি। আবারও সেই দেশ প্রেমিক কে বিয়ে করতে হবে?  পরিবারের চেয়ে দেশমাতৃকার চোখের জলের দাম যাদের কাছে বেশি।ধুস আর ভাবতেই পারছি না।তাই ঘরের লাইট বন্ধ করে সেই রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সকালে উঠে একখানি চিঠি লিখে রেখে গেলাম আমার টেবিলের উপর বাবার উদ্দেশ্যে।তাতে লেখা ছিল,


জীবনের অনুপ্রেরণার গল্প

            প্রিয় পূজনীয় বাবা,
    আমি তোমার সেই ছোট্ট মেয়ে মিমি।যে সারা বেলা তোমার পিঠে চড়ে ঘোড়াঘোড়া খেলে বেড়াত।আজ আবার সে নাকি হয়েছে বড়ো তোমাদের কাছে। আজও যে মেয়েটা রুপকথার গল্প শুনে ঘুমিয়ে পড়ে মায়ের কোলে,তাকে তোমরা এতো তাড়াতাড়ি পর করে দিতে চাইছো? আমি জানি আজ আমাকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসছে,তাই না বলেই আজ কলেজে চলে গেলাম।এই প্রথম বার তোমার কথার অবাধ্য হলাম। আমি চাইনা একজন দেশের সৈনিক কে বিয়ে করতে। আমি কখনই চাইনা আমার কারনে তোমরা কষ্ট পাও।তাই খুব ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত টা নিয়েছি আমি।

                                                                      ইতি
                                                         তোমার মিমি


আরো পড়ুন, 
Romantic Bangla Premer Golpo Love Story  

                                                                              
সেই দিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে এলাম, দেখলাম বাবা,মা দুজনেই নিচের বসার রুমে বসে টিভি দেখছেন। দুজনের মুখেই গম্ভীর ভাব। আমি কিছু না বলেই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে এলাম।আলোটা জ্বালাতেই নিজের রুমে দেখতে পেলাম টেবিলের উপর আমার চিঠির পাশে আর একটি চিঠি রাখা।চিঠিটা খুলতেই বাবার হাতের লেখাটা আমার নজরে পড়লো, আমি বুঝতে পারলাম এটা বাবারি লেখা।

                 স্নেহের 
                         আমার মিষ্টি মা মিমি
আমি যানি মা তুমি আমাদের কতোটা ভালোবাসো।তবে যে দেশ মাতাকে ভালোবেসে নিজের জীবন বলিদান দিতে পারে তার ভালোবাসার মধ্যে কোন খাদ নেই এটা বলতে পারি। ছোট থেকে কখনও তোমার কোন কিছুরি অভাব রাখেনি আমরা তাই তোমাকে বলছি, দেশ প্রেমিকের অর্ধাঙ্গিনী হওয়া যতোটা গর্বের ঠিক ততোটাই সম্মানের।এবার কি করবে সেটা একান্তই তোমার ইচ্ছা আমরা জোর কোরবো না তোমাকে।কারন তুমি বড়ো হয়েছো তোমারও ব‍্যক্তিগত অভিমত থাকতেই পারে।
                                                               ইতি
                                                         তোমার বাবা

শিক্ষনীয় ছোট গল্প


পরের দিন বিকালে আমি সেজেগুজে পাত্র পক্ষের সামনে গিয়ে বসলাম।কারন বাবার চিঠিতে লেখা শেষের দুটি লাইন আমার মন কে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এবং আমার বিবেককেও জাগ্রত করেছিল। সত্যিই তো যে মানুষ গুলোকে আমরা সবাই অবহেলা করি আজ, তাদের জন‍্যই আমরা এই পৃথিবীর বুকে স্বাধীনভাবে বেঁচে আছি আজও। পাত্র পক্ষ আমার নাম জিজ্ঞাসা করল, আমি বললাম মিমি। আমি বেশ কিছুক্ষণ ধরে লক্ষ্য করলাম আমার পাশের চেয়ারে বসে থাকা যুবকটি আড় চোখে আমাকে তাকিয়ে দেখছে বারবার। আমি বুঝতে পারলাম এটাই হয়তো পাত্র। কিছুক্ষণ পরে বুঝতে পারলাম আমার ধারণা ঠিকই। পাত্রের নাম যানতে পারলাম "নিলয়" ।উভয় পরিবারেরই পাত্র, পাত্রি পছন্দ হওয়ার কারণে  সিদ্ধান্ত নেওয়া হল সামনের অগ্রহায়নে বিবাহ অনুষ্ঠান  সম্পন্ন হবে।তার মাঝে দুই একবার তার সঙ্গে কথা হয়েছিল আমার। প্রথম বার কথা হলে সে আমাকে বলেছিল আমার ব‍্যাপারে তুমি সবটাই জানো। আমি নিজের জীবন, দেশ মাতার রক্ষার্থে নিজেকে অনেক আগে সপে দিয়েছি দেশের কাজে। আমি আমার লক্ষ্যে অটল।পারবে কি তুমি সব মানিয়ে নিয়ে আমাকে ভালোবাসতে? আমি তখন বলেছিলাম এ লড়াইটা তোমার একার লড়াই নয়। তোমার অর্ধাঙ্গিনী হওয়ার কারণে এ লড়াইটা  আমারও। তাই দুজন মিলে একসাথে লড়াইটা লড়তে চাই। তুমি দেশের জওয়ান হিসাবে। আর আমি তোমার স্ত্রী হয়ে পাশে থেকে সারা জীবন উৎসাহ দিয়ে যাবো। শেষ মেষ বিয়েটা হয়েই গেল। দেখতে দেখতে তিনটে মাস কেটে গেছে। বিয়ের পর সেই যে সে চলে গেল আর ফিরল না।সেই শেষ বারের মত দেখছিলাম তাকে। তারপর দু,চার বার ফোনে কথা হতো।সে বলেছিল এবার ফিরে আসলে তোমাকে কাশ্মিরের সৌন্দর্য দেখাতে নিয়ে আসবো।  যেখানে আমি এখন আছি। কিন্তু আসলো কাফিনে বন্দি হয়ে। মাঠের মাঝে অনেক মানুষ তার মাঝে তাকে একবার দেখতে পাওয়ার সুযোগ খুবই কম। তবুও ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে গেলাম।তার অর্ধাঙ্গিনী হিসাবে আমাকে একটি বারের জন্য দেখার সুযোগ করে দেওয়া হল।আজকে বড়ই শান্ত দেখাচ্ছে তাকে। চুপচাপ শুয়ে আছে গভীর ঘুমে তাই তাকে বিরক্ত করলাম না বরং তার কানের কাছে মুখটা নিয়ে ফিসফিস করে বললাম কথাছিল দুজনে একসাথে লড়বো তবে তুমি কেন চুপটি করে আজ ঘুমিয়ে আছো? একবার তাকিয়ে দেখো কতো মানুষ আজ তোমাকে দেখতে এসেছে।আজ আমার গর্বে বুক ভরে যাচ্ছে যে আমার স্বামী একজন সৈনিক। চোখের জল মুছে ফেললাম হাত দিয়ে।না আজ আমি কাঁদবো না বরং অর্ধাঙ্গিনী হিসাবে তোমার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেব। তোমার আশা পূরণ কোরবো।তাই কাফিনের উপরে রাখা ভারতের পতাকাটা নিজে গায়ে জড়িয়ে নিলাম। হাতে নিজের স্বামির পোশাকটি হাতে নিয়ে প্রতিজ্ঞা করলাম যে কাজটা আমার স্বামী পূর্ণ করতে পারিনি, আজ থেকে আমি সেই কাজে নিজেকে নিযুক্ত করলাম। আমার শ্বাশুড়ি মা চোখের জলটা মুছে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।আজ আমার বাবাও এসেছেন। আমার দিকে এগিয়ে এসে কপালে নিজের হাতটা ঠেকিয়ে জোরপূর্বক গলায় বলে উঠলেন, "জয় হিন্দ"। আর আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,আজ তোমাকে নিয়ে আমার গর্বে বোধ হচ্ছে মা। সমস্ত নিয়ম মেনে নিলয়ের কাফিনে মোড়ানো দেহটা সমাধিস্থ করা হল।সেই দিনটির কথা মনে পড়লে আজও একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে দু'চোখ বুজি।তবে আজ নিজেকে নিয়েও গর্ব হয় কারণ নিলয়ের স্বপ্ন গুলো পূরণ করার জন্য আজ আমি নিজের ঘাড়ে সেই দায়িত্ব তুলে নিয়েছি। আমি আমার লক্ষ্য পূরণে স্থির।কারন এখন আমি একজন আর্মি অফিসার। আমার মতো হয়তো হাজারো মিমি এই দেশে এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন প্রান্তে। তার স্বামীর স্বপ্ন পূরণের আশায়।তবে তাদের জীবনের কাহিনী টা হয়তো কিছুটা হলেও ভিন্ন।আবার কেউ নিজের প্রথম সন্তান কে হারিয়ে বংশের শেষ সন্তানকেও এই কাজে নিযুক্ত করছেন দেশ মাতাকে ভালোবেসে।তাদের শেষ সম্বল টুকুও দেশের কাজে নিয়োগ করছেন তারা বুকে পাথর চেপে।তবে কষ্ট বা যন্ত্রণাটা সবাইয়ের একই।
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

আরো পড়ুন,
প্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া | অনুপ্রেরণার গল্প


Post a Comment

0Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
Post a Comment (0)
To Top