Romantic Bangla Premer Golpo Love Story – রোমান্টিক বাংলা প্রেমের গল্প

Bongconnection Original Published
15 Min Read


 Romantic Bangla Premer Golpo Love Story – রোমান্টিক বাংলা প্রেমের
গল্প

Romantic Bangla Premer Golpo Love Story - রোমান্টিক বাংলা প্রেমের গল্প
Loading...

Bangla Premer Golpo Love Story

Loading...
ভুল বোঝাবুঝি
 – মৌসুমী রায়
আজ আকাশের মুখটা ভার।সকাল থেকেই দু এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে।না বলা কথাগুলো আবীরের
মনেও জমাট বাধা মেঘের সৃষ্টি করেছে।আজ রূপসাকে বলতেই হবে মনের গোপন কথাটা।সেই
প্রথম যেদিন নবীন-বরণে দেখেছিলো তাকে নীলাম্বরী শাড়িতে সেদিন থেকেই মনের জলরঙে
শুধু তারই ছবি এঁকেছে আবীর।একটু একটু করে বন্ধুত্ব হয়েছে রূপসার সাথে কিন্তু
ভালোবাসার কথাটা সাহস করে বলে উঠতে পারেনি এখনও।আজ ভ্যালেন্টাইন্স ডে।আজ মনের
মেঘটাকে আলগা করার দিন আজ বলবে সে রূপসাকে তার ভালোবাসার কথাটা।সব ঠিক থাকলে
মেঘ সরে গিয়ে রূপসার ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভিজবে তার হৃদয়।


Romantic Love Story In Bengali

কলেজে ঢোকার মুখেই দেখলো ভ্যানে করে গোছা গোছা লাল গোলাপ বিক্রি হচ্ছে।বাইকটাকে
স্ট্যান্ড করে এক গোছা লাল গোলাপ কিনে নিলো আবীর।
—–‘কী রে কার জন্য কিনলি গোলাপ?’
প্রশ্নটা শুনেই চমকে তাকালো আবীর।পাশেই সুজয় আর লোপা দাঁড়িয়ে হাসছে।উফফ!এই সময়ই
এ দুটোকে এখানে আসতে হলো।এখন শুরু করবে টিপ্পনী করা।
সুজয় বললো—— ‘কার জন্য আবার বুঝলিনা।এখনই ছুটবে আর্টস বিল্ডিংয়ে।কিছুদিন
ধরেই লক্ষ্য করছি সায়েন্স বিল্ডিং ছেড়ে আর্টস বিল্ডিংয়েই সময়টা বেশি কাটাচ্ছে
আবীর।’

লোপা ব্যঙ্গ করে বললো ——‘হুম নতুন বন্ধু পেয়েছে, কিন্তু কোন লাভ নেই।’

কথাটা শুনে একটা সজোরে বুকে ধাক্কা লাগলো আবীরের।পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো
লোপার দিকে 
—–‘লাভ নেই মানে?
——-‘মানে তাকে খানিক আগেই একজনের বাইকে চেপে কলেজে আসতে দেখলাম।প্রায়ই তো
দেখি তার সাথেই কলেজে আসে?আজ তো হাতে একগোছা গোলাপও দেখলাম বোধহয়।’
কথাটা শুনেই মুখটা শুকিয়ে গেলো আবীরের।আর আবীরের মনের মধ্যে ঝড় বইতে লাগলো সেই
ঝড়ের দাপটে তছনছ হতে লাগলো সাজানো স্বপ্নগুলো।তবে কী লোপা যা বলছে সত্যি?আবীর
একটু চুপ করে বললো 
——‘রূপসা তো আমায় কোনদিন বলেনি ওর বয়ফ্রেন্ড আছে?’
——–‘ওই দেখো মেয়েরা কী তার অ্যাফেয়ারের কথা ফলাও করে বলে নাকি রে?তার
মধ্যে ছেলেটা আবার কলেজের বাইরের।আর তোর সাথে কতদিনের বন্ধুত্ব ওর যে সব তোকে
বলবে?’

তা ঠিক।লোপা ঠিকই বলেছে খুব কাছের বন্ধু তো নয় আবীর রূপসার।তাই হয়তো বলে উঠতে
পারেনি এখনও।বুকটা ভীষণ ব্যথা করছে,খুব কষ্ট হচ্ছে আবীরের।এভাবে সব শেষ হয়ে
যাবে ভাবেনি সে।তাও একবার সরাসরি প্রশ্ন করতেই হবে রূপসাকে?
‘—–সুজয়,লোপা তোরা ভেতরে যা আমি একটু আসছি।’
——-‘যা ঘুরে আয় আমার কথা তো বিশ্বাস হলোনা তোর।’
——-‘হ্যাঁ রে আমার মনের মধ্যে যে কী হচ্ছে এখন তা একমাত্র আমি জানি,
নিজেদের হলে বুঝতি।যতক্ষন না ওর মুখ থেকে একবার ….’
সুজয় বললো——-‘ ওকে একবার কথা বলতে দে না লোপা।যা ভাই একবার যা তুই।’
পাশের গেট দিয়ে আর্টস বিল্ডিংয়ে ঢুকলো আবীর চোখ দুটো তার শুধু রূপসাকেই
খুঁজছে।কয়েকজন বন্ধুর সাথে দেখা হতে জিজ্ঞাসা করলো
—— ‘দেখেছিস রূপসাকে?’
—–‘একজন বললো ওকে ক্যান্টিনে দেখেছিলাম ওর বান্ধবীদের সাথে।’
ক্যান্টিনের দিকে ছুটলো আবীর।ক্যান্টিনে ঢুকেই দেখলো একেবারে কোনের টেবিলটায়
বসে আছে রূপসা।লাল সালোয়ারে কী অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওকে।ঠিক যেন এক টুকরো ঝলমলে
রোদ্দুর।মনটা আবার বিষাদে ছেয়ে গেলো আবীরের।এই মেয়েটা কখনো আমার হবেনা?আমি
কোনদিন ওর ভালোবাসা পাবোনা।এই মুহূর্তটা এখানেই থেমে যাক।আমি শুধু চোখ ভরে ওকেই
দেখি।ক্যান্টিনের কোলাহলে ভাবনায় ছেদ পড়লো।নিজেকে একটু সামলে রূপসার টেবিলের
দিকে এগিয়ে গেলো আবীর।বললো
—- ‘রূপসা একটু কথা আছে তোর সাথে?’
——‘হ্যাঁ বলনা।আয় না বোস আমাদের সাথে।চা খাবি?’
——-‘না আমি একটু একলা কথা বলতে চাই তোর সাথে।’
পাশ থেকে রূপসার বান্ধবী মধুশ্রী কনুই দিয়ে এক ধাক্কা দিলো রূপসাকে।ফিসফিস করে
বলল
—–‘ কী ব্যাপার আজকের দিনে একলা কথা বলতে চাইছে,হাতে আবার লাল গোলাপের
গোছা।আজ নির্ঘাত প্রপোজ করবে তোকে।উফফ কী হ্যান্ডু লাগছে রে মালটাকে হোয়াইট
কুর্তা আর ব্লু ডেনিম জিন্সে।
——-‘চুপ করবি তুই মধু, চোখ বড় বড় করে বললো রূপসা।
——‘প্লিজ একটু ওদিকটায় আয়,আমি অপেক্ষা করছি বলে বেরিয়ে গেলো আবীর।
—–‘তর যেন আর সইছেনা।’
——‘উফফ মধু প্লিজ স্টপ ইট।’বলে আবীরের পেছন পেছন বেড়িয়ে গেলো রূপসা।

Heart Touching Love Story In Bengali

কৃষ্নচূড়া গাছটার তলায় দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালো আবীর।সকালের বৃষ্টিতে গাছটা
তখনও সিক্ত।ছিটেফোঁটা জল ঝড়িয়ে দিলো আবীরের শরীরে।আবীর ভাবলো ভালোবাসার
বৃষ্টিতে ভেজা বোধহয় আর হলোনা।রূপসা এসে বললো
—–‘ বল কী বলবি?’তারপর টান দিয়ে আবীরের দু ঠোঁটের মাঝখান থেকে জ্বলন্ত
সিগারেটটা ফেলে দিয়ে বললো কলেজের মধ্যে স্মোক করছিস,কোন স্যারের চোখে পড়লে।
——‘সরি আসলে মাথাটা ধরেছে।’
——-‘আচ্ছা বল কেনো ডাকলি?’
——‘কখন এলি তুই কলেজে?’
——-‘আধঘন্টা আগে হবে?কেনো বলতো?’
——‘না লোপা বললো তোকে নাকি একজনের সাথে কলেজে আসতে দেখেছে?কে ওটা রূপসা?তোর
বয়ফ্রেন্ড?’
লোপার কথা শুনেই মাথাটা  ‌ভীষণ গরম হয়ে গেলো রূপসার ।
বললো ——‘কেনো লোপা এটা বলেনি সে আমার কে হয়?যা না ওকে গিয়েই জিজ্ঞাসা কর’।
——-‘এভাবে কথা বলছিস কেনো রূপসা?আসলে তুই তো আগে কখনো বলিসনি তোর কারো সাথে
সম্পর্ক আছে তাই।’
——কেনো বলবো বলতো?এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।কেউই বলেনা সব কথা। হয়তো তুইও
না ।
——‘মানে?’
——-‘ছাড় সেসব ।’
রূপসার কথাগুলো তীরের মতো বিঁধলো আবীরের বুকে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো সে।
——‘তা এই ফুলগুলো তোকে কে দিলো আবীর?
লোপা নিশ্চয়ই?’
হৃদয় পুড়ে ছাড়খার হচ্ছে আবীরের রূপসার কথার দাবানলে।আর কত কষ্ট দেবে তাকে
মেয়েটা?নিজের বয়ফ্রেন্ড আছে বলে তাকে শুধু শুধু এবার লোপার সাথে জড়িয়ে ছিঃ…..
রেগে গিয়ে বললো আবীর ——‘সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার আমি কাউকে উত্তর দিতে
বাধ্য নই।’
—–‘সেটাই আবীর কেউ কাউকে উত্তর দিতে বাধ্য নয়’ বলে চলে গেলো রূপসা।তার
যাওয়ার পথে পদপিষ্ট হলো ঝরে পড়া বৃষ্টি সিক্ত নিষ্পাপ কয়েকটা আগুনরাঙা
কৃষ্নচূড়া।সে দিকে তাকিয়ে চোখটা ঝাপসা হয়ে গেলো আবীরের।সেদিন কলেজ ছুটি হওয়ার
পর আবীরেরও চোখে পড়লো একটা ষন্ডামার্কা ছেলের বাইকে চেপে তার কোমর জড়িয়ে ধরে
কলেজেটাকে পেছনে ফেলে চলে গেলো রূপসা।আবীর ভাবলো কী আছে ওর যেটা আমার নেই।
দিন পনেরো হয়েছে আর্টস বিল্ডিংয়ে আর যায়না আবীর।ভাঙা হৃদয়টা কে নিয়ে শুধু কলেজ
আর বাড়ি করে বেড়ায়।বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডাতেও আর খুব একটা দেখা যায়না
তাকে।আজ আবীর কলেজে ঢুকতেই সুজয় বললো—–‘ ভাই শুনেছিস কথাটা?’
——‘কী রে?’
——‘রূপসার তো’
—–‘প্লিজ সুজয় ওর ব্যাপারে কোন কথা আমায় বলিসনা।’
——‘না মানে মধুশ্রী বলছিলো হাসপাতালে..’
আবীর বাকিটা না শুনেই কলেজে ঢুকে গেলো।কিন্তু কথাগুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে
তার।কী বলছিলো সুজয়?কে হাসপাতালে?আর রূপসার কথাও কী যেন বলছিলো?কিছু হয়নি তো
মেয়েটার?সে কেনো এতো ভাবছে?কোন অধিকারে?কিন্তু এতো মনটা ব্যাকুল হচ্ছে কেনো
তার?কোথায় গেলো সুজয়? ঐ তো 
—–‘এই শোন কী বলছিলি যেন একটু আগে,রূপসার ব্যাপারে?’
——‘আরে মধুশ্রী বলছিলো রূপসার নাকি খুব শরীর খারাপ হয়েছিলো।হাসপাতালে ছিলো।
কাল ছুটি হয়েছে হাসপাতাল থেকে।’
——‘কী বলছিস?’
——‘হ্যাঁ ভাই তাই তো শুনলাম।’
আবীর ভাবলো কী হলো মেয়েটার হঠাৎ করে?কিছুদিন আগেও তো কী সুন্দর রঙীন প্রজাপতির
মতো উড়ে বেড়াতো।
——-‘এই আবীর কী অতো ভাবছিস বলতো?’
——‘না মানে এখন কেমন আছে?জানিস।’
——-‘হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিয়েছে যখন তখন মনে হয় ভালোই আছে।শোননা বলছি কী
মধুশ্রী আর ওর এক বান্ধবী যাচ্ছে আজ রূপসাদের বাড়ি ওকে দেখতে। ভাবছি আমি আর
লোপাও ঘুরে আসি ওদের সাথে।খবরটা যখন শুনলাম তখন একবার যাওয়াটা তো উচিত। তুই
যাবি?’

——‘আমি?না মানে আমার যাওয়াটা কী উচিত হবে?’ ——‘ধূর চলতো উচিত আর অনুচিত
আর কিছু না হোক তোরা বন্ধু তো।’

বাংলা প্রেমের গল্প কাহিনী

এ কী শরীরের অবস্হা হয়েছে রূপসার।মেয়েটার হরিণের মতো চোখ দুটোতে যেন অমাবস্যার
গাঢ় কালো অন্ধকার নেমে এসেছে।বিছানায় শুয়ে আছে সে।এতোটা অসুস্হ হলো কী করে?
লোপা জিজ্ঞাসা করলো—–‘ কেমন আছিস রূপসা ?’
——‘এখন একটু ভালো।’
ওদের কথার মাঝেই ঐ ষন্ডামার্কা ছেলেটা ভেতরে ঢুকে বললো——‘ ওষুধটা এবার খেয়ে
নিতে হবে।’
ওর কথায় বাধ্য মেয়ের মতো ওষুধগুলো খেয়ে নিলো রূপসা।আবীর বুঝলো ব্যাপারটা
অনেকদূর গড়িয়েছে।বাড়িতেও যাওয়া আসা রয়েছে ছেলেটার।অজান্তেই একটা দীর্ঘ নিশ্বাস
বেড়িয়ে এলো বুক থেকে। খানিকবাদেই রূপসার মা এলেন মিষ্টির প্লেট সাজিয়ে নিয়ে
সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো
——‘তোমরা রূপসার বন্ধু প্রথমবার এসেছো একটু মিষ্টিমুখ করো।তারপর বললো এই যে
মেয়েটা বৃষ্টিতে ভিজে,না খেয়ে অনিয়ম করে বাধিয়ে বসলো।তারপর সেই ছেলেটাকে দেখিয়ে
বললো আর এই হয়েছে আর একজন, বোন অন্ত প্রাণ।সব কাজ ছেড়ে বোনের সেবা করে চলেছে।
ওহ! তোমাদের সাথে তো আলাপ নেই আমার ছেলে রণ।’

ভীষণ জোরে একটা বিষম খেলো আবীর ….দাদা!রূপসার দাদা।তাহলে কেনো মিথ্যে বললো
রূপসা?লোপারও একই অবস্হা সেও ভুল বুঝেছিলো।মনে মনে খুব লজ্জিত হলো।রূপসার চোখের
দিকে চেয়ে বারবার উত্তরটা খোঁজার চেষ্টা করলো আবীর।কিন্তু তাকে বারবার এড়িয়ে
গেলো রূপসা।আবীর মনে মনে ভাবলো রূপসা কী কোনমতে বুঝে ফেলেছিলো তার মনের
কথাটা।আবীরকে হয়তো তার পছন্দ নয় তাই তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য মিথ্যে একটা নাটক
করলো।এর থেকে তো সরাসরি বললেই পারতো যে সে আবীরকে পছন্দ করেনা।এই প্রশ্নের
উত্তরগুলো জানতেই হবে আবীরকে।বাড়িতে এসে অনেকবার ফোনে ট্রাই করলো সে
রূপসাকে।কিন্তু রূপসা তার ফোনটা কিছুতেই ধরলোনা।

মধুশ্রীকে বলে রাখলো আবীর রূপসা যেদিন কলেজে আসবে তাকে খবর দিতে।দিন সাতেক বাদে
কলেজে এলো রূপসা।মধুশ্রী খবর দিলে আবীর বললো ——‘ওকে বল আমি দেখা করতে চাই
এখনই।’
খানিকবাদে মধুশ্রী জানালো—-‘ এখন হবেনা।আজ পাঁচটা পর্যন্ত ক্লাস আছে।ছুটির পর
হতে পারে।
——-‘ঠিক আছে আমি গেটের বাইরে অপেক্ষা করবো বলিস।’
আবীরের আড়াইটেতে ছুটি হয়ে গেলো।
সুজয় বললো—–‘ ভাই বাড়ি যাবিনা?
—–‘ না একজনের সাথে একটা বোঝাপড়া আছে।তুই যা আমি পরে আসছি।’
ঠিক পাঁচটা‌। আর্টস বিল্ডিংয়ের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আবীর।গুটিকতক বান্ধবীর
সাথে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে রূপসা।কমলা সালোয়ারে গোধুলির শেষ আভার মতোই
স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে ওকে।আবীরের সামনে এসে থামলো সে।তারপর বললো
——‘মধুশ্রীকে বলেছিস দেখা করতে। বল কী বলবি?’
——‘এখানে না বাইকে বস।’
—-‘না ‘
——‘কেনো?’
——-‘একটু পরেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে।ফিরতে দেরি হলে মা চিন্তা করবে।’
—–‘করুক।আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আজকে কোথাও যাওয়া হবেনা তোর।বেশি সময়
নেবোনা তোর। দরকার হলে আমি বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আসবো।বস শিগগির।’
অগত্যা উঠে বসলো রূপসা।
একটু দূর এগোতেই ঝুপ করে অন্ধকার নেমে এলো।শীতকাল।কলেজ ছুটির পর এ দিকটায় লোকজন
একেবারেই থাকেনা।খানিকটা গিয়েই গাড়িটা দাঁড় করালো আবীর।রূপসা নেমেই বললো
—–‘ যা বলার আছে তাড়াতাড়ি বল।’-
‘—–এই মিথ্যে অভিনয়টার কী দরকার ছিলো রূপসা?’
তারপর রূপসার কাছে গিয়ে তার কাধের দুপাশে হাত রেখে ঝাঁকিয়ে বললো কেনো করলি আমার
সাথে এটা?’ঐ ষন্ডামার্কা ছেলেটা যে’
‘——ঐ মুখ সামলে কথা বল’ ক্ষেপে গিয়ে বললো রূপসা।
——‘সরি মানে ঐ ভদ্রলোক যে তোর দাদা কেনো বলিসনি আগে?’
——‘ছাড় আমাকে লাগছে আমার। ছাড় বলছি।’
আবীরকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো রূপসা।তারপর নিজেই আবীরের কাছে গিয়ে তার
বুকের কাছে জামাটা দু হাত দিয়ে খামচে ধরে বললো ——‘কেনো বলিনি?তুই কেনো
বলিসনি?’
——‘আমি কি বলিনি।’
—-‘লোপার সাথে তোর সম্পর্ক আছে।বলেছিস তুই’
অবাক হয়ে গেলো আবীর রূপসার হাত দুটো বুকের কাছে চেপে ধরে বললো—–‘ কী বলছিস
তুই এসব?কেনো মিথ্যে বদনাম দিচ্ছিস?’
——‘বাজে কথা বলিসনা।’
—–‘লোপা নিজে মুখে বলেছে আমায়?’
—–‘লোপা বলেছে?কী বলেছে?’
——আমি একদিন ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আবীর তোর খুব ভালো বন্ধু না রে?ও বললো
বন্ধু ছাড়াও আমাদের একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে।’
—–হ্যাঁ তারপর?
——‘তারপর আর কী?আমি আর কিছু জানতে চাইনি।’
—–‘কেনো জানতে চাসনি শুনি?’
—–আর শোনার ক্ষমতা ছিলোনা আমার।প্রথমদিনই ভালো লেগেছিলো তোকে।তারপর কখন যে
জড়িয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি।’
—–‘আর আমার শোনার ক্ষমতা ছিলো তাইনা?দাদাকে প্রেমিক।আর গোলাপ ফুলগুলো কে
দিয়েছিলো তোকে রূপসা সত্যি ব‌লতো?’


—–‘আমিই কিনেছিলাম রাস্তা থেকে।মা এর লাল গোলাপ খুব পছন্দ তাই।ফেরার পথে যদি
আর না পাই।’
—-‘আর তোর ফুলগুলো?নিশ্চয়ই লোপা?’
—-‘এক থাপ্পড় মারবো আর যদি একটা কথা বলেছিস।লোপার সাথে আমার সত্যি একটা বিশেষ
সম্পর্ক আছে।সুজয়কে তো চিনিস।ও আসলে আমার মাসতুতো দাদা। সুজয়ের  হবু বৌ
লোপা।ওদের সম্পর্কটা বাড়ির সবাই জানে ।তাই হয়তো লোপা বলেছে।আর তুই সেটাকে নিয়ে
ছিঃ ছিঃ।’
—-‘কী বললি ছিঃ ছিঃ।হ্যাঁ আমিতো খারাপ।তুই কখনো বলেছিস সুজয় লোপাকে
ভালোবাসে?কখনো বলেছিস সুজয় তোর দাদা?’
——‘হ্যাঁ ওদের সম্পর্কের কথাটা বলা হয়ে ওঠেনি
আর সুজয় আর আমি পিঠোপিঠি।তাই ওই ভাইয়ের সম্পর্কের থেকে আমাদের বন্ধুত্বের
সম্পর্কটাই বেশি।
পাগলি এতোটুকু বুকে এতো অভিমান জমিয়ে রাখলি, ভুল বুঝে আমায় এতোগুলো দিন দূরে
সরিয়ে রাখলি তাও আমায় একবার মনের কথাটা বললিনা।
—–‘বললে কী লাভ হতো তোর?’
—-তাই তো আমার কী লাভ হতো?এতোগুলো দিন ধরে যে এতো কষ্ট পেলাম?
——কষ্ট পেলি না ছাতা?
—– কতো ভালোবাসি পাগলি তোকে এখনো বোঝাতে পারলাম না।রূপসাকে কাছে টেনে দু হাত
দিয়ে জড়িয়ে নিজের বুকে মিশিয়ে দিতে  দিতে বললো আবীর —–‘এখানে আমার বুকে
কান পাত শুধু তোর নাম শুনতে পাবি।’
মুহূর্তরা থমকে গেলো খানিকক্ষন।ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভিজে গেলো দুটি মন।হুশ ফিরতে
রূপসার মনে হলো বাড়ি ফিরতে হবে আবীরের বাহুডোর থেকে আলগা করতে চাইলো নিজেকে,আরো
একবার কাছে টেনে তাকে আদরে সোহাগে চুম্বনে ভরিয়ে দিলো আবীর।সময় জানান দিলো
বারবার এবার রূপসার বাড়ি ফেরার পালা।
——‘এবার বাড়ি যাবো’
——‘ আর একটু থাক আমার কাছে’
—— না রে অনেক দেরি হয়ে গেছে।’
—–‘আমি বাড়িতে ছেড়ে দেবো বললাম তো।’
—–না বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত ছেড়ে দে তাহলেই হবে।’
বাস স্ট্যান্ডে এসেও দু চারটে বাস মিস করলো রূপসা।আবীর বললো—–‘ তোকে ছাড়তে
একদম ইচ্ছে করছেনা রে।আজ যদি সময় এখানেই থমকে যেতো।
—–‘কালই তো দেখা হবে আবার আবীর।’
বাস এলো উঠে পড়লো রূপসা।আবীর মনে মনে বললো এই চঞ্চল পাহাড়ী ঝর্নাটা আমার।শুধুই
আমার।রূপসার বাসটা চলে গেলো।না জানি কতক্ষন তার ফেলে যাওয়া পথের দিকেই চেয়ে
রইলো আবীর।বুক পকেটে থাকা তার মুঠোফোনটা বেজে উঠতেই ঘোর কাটলো আবীরের।তাকেও যে
ফিরতে হবে এবার।অন্ধকার শুনশান হাইওয়ের বড় বড় গাড়ীর হর্ণ ছাপিয়ে ভেসে আসছে তখন
তার ফিকে হয়ে যাওয়া মুঠোফোনের রিংটোন
……যখন.. নীরবে দূরে, দাঁড়াও এসে
যেখানে পথ বেঁকেছে। 
তোমায় ছুঁতে চাওয়ার মুহূর্তরা
কে জানে কি আবেশে দিশাহারা…..
Also read, 

Share This Article