রহস্য রোমাঞ্চ গল্প – Rohoshyo Romancho Golpo – Bengali Thriller Story

Bongconnection Original Published
8 Min Read


রহস্য রোমাঞ্চ গল্প – Rohoshyo Romancho Golpo – Bengali Thriller Story

 

রহস্য রোমাঞ্চ গল্প - Rohoshyo Romancho Golpo - Bengali Thriller Story
Loading...

রহস্য রোমাঞ্চ গল্প

Loading...
হার্ট অ্যাটাকের আড়ালে খুনের গন্ধ 
– দিব্যেন্দু দাস
আজ ইউনিভার্সিটিতে বার্ষিক অনুষ্ঠান। মৃত্যুঞ্জয় বাবু সহ সৃজিত বাবু, 
প্রিন্সিপাল দেবদাস চ্যাটার্জী ও কলেজের বাকি ছেলে মেয়েরা সবাই খুব excited..
কেননা আজ এক বছর হতে চললো তাদের ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠান কিছু হয় নি সেরকম।
       কারণ গত বছর আজকের দিনে একটা দুর্ঘটনায় 
মোহিতবাবু, ইংলিশ বিষয়ের যিনি প্রফেসর ছিলেন তিনি অনুষ্ঠানের সকাল বেলায়
হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। এই বছরেও অনুষ্ঠান হতো না। নেহাতই সৃজিত বাবু
মৃত্যুঞ্জয় বাবুকে নিয়ে প্রিন্সিপালের কাছে আবেদন করেছিলেন। আসলে ৫৮ বছরের
প্রিন্সিপাল বাবু মৃত্যুঞ্জয় বাবুকে নিজের ছেলের মতো ভালবাসেন। ইউনিভার্সিটিতে
আসার সময় নিজের স্ত্রীর হাতে করা খাবার তাঁর জন্য নিয়ে আসতেন। আসলে লাহিড়ী
বাবুর নিজের বলতে তেমন কেও নেই। সেই ছোট বেলায় তিনি মাকে হারিয়েছেন। আর এই
দু’বছর হলো তাঁর বাবা ও মারা গেছেন। নিজের একটা বোন থাকলেও তার বিয়ে দিয়ে
দিয়েছেন। আর উনি এখনো বিয়ে করেন নি। বয়স তার ২৯+ । 
       যাই হোক, প্রিন্সিপাল বাবুকে অনুষ্ঠানের অনুরোধ
করলে তিনি না বলতে পারেন নি মৃত্যুঞ্জয় বাবুর কথাকে। তাই আজকের এই অনুষ্ঠানের
সমস্ত ক্রেডিট মৃত্যুঞ্জয় বাবুর নিজের। 
       অনুষ্ঠানের আগের দু’দিন থেকে তিনি কলেজেই আছেন। সব
কাজ সামলাচ্ছেন। সব ছাত্র ছাত্রীরাও স্যারকে এই দু’দিন পেয়ে খুব খুশি। 
অনুষ্ঠানের দিনও তিনি নিজেকে কর্মব্যস্ত রেখেছেন।
কিন্তু তাঁর কপালে ক্লান্তির লেস মাত্র নেই। 
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার ঠিক আগে মৃত্যুঞ্জয় বাবু প্রিন্সিপাল বাবুকে অনবরত কল
করে যাচ্ছেন ফোনে, কিন্তু রিং হলেও তিনি ফোন ধরছেন না। লাহিড়ী বাবু ভাবলেন
হয়তো তিনি রাস্তায় আছেন। 
কিন্তু এক ঘণ্টা পার হয়ে যাবার পরও তিনি যখন ফোন ধরছেন না তখন তাঁর চিন্তা হতে
লাগলো। কারণ প্রিন্সিপাল স্যারের বাড়ি থেকে ইউনিভার্সিটির রাস্তা খুব বেশি হলে
আধ ঘন্টার পথ। 
লাহিড়ী বাবু সৃজিত বাবু কে নিয়ে হন্যে হয়ে ইউনিভার্সিটির চারদিকে খুঁজে
চলেছেন। তাঁর বাড়িতে ফোন করে জানা গেলো তিনি নাকি সকাল ৮ তেই  বেরিয়ে
গেছেন। 
স্যার এর কেবিনের বাইরে যখন সবাই এসে উপস্থিত তখন দেখা গেলো স্যারের কেবিন ভেতর
থেকে বন্ধ। অনেক ডেকেও যখন কোনো লাভ হলো না তখন মৃত্যুঞ্জয় বাবু দরজা ভেঙে
দেখলেন প্রিন্সিপাল স্যারের নিষ্প্রাণ দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে। 

রহস্য রোমাঞ্চকর গল্প

কিছুক্ষন সব নিস্তব্ধ !! সৃজিত বাবু বললেন, “call the police right now !!”
মৃত্যুঞ্জয় বাবু তখন ও নিস্তব্ধ পাথরের মত দাঁড়িয়ে। বলার আর বাকি নেই যে,
সেদিন আর অনুষ্ঠান শুরু হয়ে উঠতে পারে নি।

পুলিশ আসে যথারীতি। সঙ্গে আসে ডাক্তার, প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা করার জন্য।
ডাক্তার বডি দেখে বলেন , ” প্রাথমিক ভাবে তো দেখে মনে হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক !!”
সবার নিস্তব্ধতা ভেঙে দিয়ে মৃত্যুঞ্জয় বাবুর গম্ভীর কণ্ঠে শোনা যায় –
“প্রিন্সিপাল স্যারের মৃত্যু হার্ট অ্যাটাক হলেও It’s a cold blooded Murder !”
সবাই অবাক হয়ে মৃত্যুঞ্জয় বাবুর দিকে তাকিয়ে। সবাই বুঝতেই পারছে না কিভাবে
তিনি বুঝলেন যে এটা হত্যা !! 
থানার বড়ো বাবু বললেন, ” স্যারকে দেখে তো স্বাভাবিক ভাবেই মারা গেছেন বলে মনে
হচ্ছে । ”
লাহিড়ী বাবু একটু গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, ” আমাদের চোখ সব সময় যা দেখে তা যে ঠিক
সেটা ভাবা উচিত নয়। ”
ইউনিভার্সিটিতে কোনো ছেলে মেয়ে বা স্যার দের মধ্যে কারোরই লাহিড়ী বাবুর মুখের
ওপর কিছু বলার কোনো সাহস নেই। কারণ তারা সবাই জানেন যে লাহিড়ী বাবু যখন একটা
কথা বলেন তখন সেটা পাথরের লেখার মত, যা কোনো দিনও মোছা যায় না …
তাহলে খুন টা করলো কে ??? আদৌ কি খুন নাকি লাহিড়ী বাবুর ভুল ভাবনা ??
                     
        

রোমাঞ্চকর রহস্য গোয়েন্দা গল্প


(দ্বিতীয় পর্ব)
প্রিন্সিপাল স্যারের বডিটা প্রায় আধ ঘন্টা হলো পুলিশরা নিয়ে গেছেন। স্যারের
বাড়িতেও জানানো হয়েছে। লাহিড়ী বাবু প্রিন্সিপাল স্যারের বাড়ি গিয়ে তাঁর
স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিয়ে এসেছেন। কিন্তু লাহিড়ী বাবু নিজেকে কিছুতেই
সান্ত্বনা দিতে পারছেন না। প্রায় এক ঘন্টা হতে চলেছে। ইউনিভার্সিটিতে যেন
শোকের ছায়া নেমে এসেছে ! যেখানে এই কদিন আনন্দের অবহাওয়া ছিল সেটা কয়েক ঘন্টার
মধ্যে শোকের দিনে পরিণত হয়েছে !! 
মৃত্যুঞ্জয় বাবু স্যারদের কমন রুমের বাইরে এক কোণে দাঁড়িয়ে। 
সৃজিত বাবু বললেন, ” স্যার…স্যার….?”
কিছুক্ষন কোনো কথা নেই। সব চুপ। হঠাৎ লাহিড়ী বাবু বললেন, ” কে স্যারকে খুন
করেছেন সেটা না জানা পর্যন্ত আমার শান্তি নেই সৃজিত বাবু…”
সৃজিত বাবু সামান্য দ্বিধা বোধ করে বললেন, ” আচ্ছা লাহিড়ী বাবু, আপনি কি করে
বুঝলেন যে স্যার এর মৃত্যুটা স্বাভাবিক নয়?”


Bengali Thriller Short Story

কিছুক্ষন চুপ থেকে লাহিড়ী বাবু বলতে লাগলেন, ” আমরা যখন স্যারের ঘর ভেঙে ভেতরে
ঢুকলাম তখন স্যার এর রুমের জানালা খোলা ছিল, সেটা লক্ষ্য করেছিলেন কি ? ”
সৃজিত বাবু একটু ভেবে বললেন,” হু, দেখেছিলাম..তো তাতে কি হয়ছে?”
মৃত্যুঞ্জয় বাবু বললেন, ” তাতেই তো সব হয়েছে ! স্যারের ঘরের এসি চালানো
ছিল..এদিকে দেখুন ঘরের জানালা খোলা। কাউকে দেখেছেন এসি চালিয়ে জানালা খোলা
রাখতে !
তাছাড়া যদি আমরা ধরেই নিই যে স্যারের ইচ্ছে হয়েছিল জানালা খোলার আর তার পরই
তার হার্ট অ্যাটাক আসে তবে তো তিনি জানালার পাশেই পড়ে যেতেন। কিন্তু সেটা হয়
নি। তিনি পড়ে ছিলেন জানালা থেকে প্রায় চার – পাঁচ হাত দূরে। তার মানে তিনি
কিছুটা দূরে দাঁড়িয়েছিলেন ! 
আর একটা কথা, তিনি এত সকালে ইউনিভার্সিটিতে কি করছিলেন, আর কেও তাকে আসতেও
দেখেন নি। এত লুকিয়ে আসার কি ছিল বলতে পারবেন ?”
সৃজিত বাবু সহ সব ছাত্র ছাত্রীরাও চুপ।
মৃত্যুঞ্জয় বাবু আবার বলতে লাগলেন, ” স্যারের টেবিলের বাম পাশে থাকা ফাইলগুলো
ও ঘাটা হয়েছে ।”
“সেটা কিভাবে বুঝলেন”, বললেন সৃজিত বাবু। 
লাহিড়ী বাবু বলতে লাগলেন, ” স্যার সব সময় প্রতিটা semester এর ডকুমেন্টের
ফাইল পরপর বছর অনুযায়ী রাখতেন। কিন্তু সেখানে ওপরেই আছে ২০০২, ১৯৯৮, ২০০০
এভাবে সালের ফাইল ! ”
সৃজিত বাবু বললেন, ” কিন্তু আপনি সেটা দেখলেন কিভাবে ?”
লাহিড়ী বাবু বললেন, ” পুলিশ আসার আগেই আমি স্যারের ডেস্ক টাকে ভালো ভাবে দেখে
নিয়েছিলাম, যখন আপনারা পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে ব্যস্ত ছিলেন তখন ।

আর একটা কথা, স্যার এর চোখ গুলো জানালার দিকে তাকিয়ে বাইরে বেরিয়ে ছিল। এর
মানে তিনি  তাঁর কাছে যে এসেছিল তাকে জানালা দিয়ে যেতে দেখেছেন। আর ঘর
ভেতর থেকে বন্ধ মানে, স্যারের কাছে যে এসেছিলেন সে স্যারের পরিচিত, কারণ দরজা
ভাঙার চেষ্টা সে করে নি। ”

এই বলে মৃত্যুঞ্জয় বাবু চুপ করলেন। সৃজিত বাবু অবাক ! সঙ্গে ইউনিভার্সিটির
ছেলে মেয়ে সকলে । সবাই মনে মনে এটাই ভাবছে, ” সত্যিই যেন গল্পের ব্যোমকেশ
বক্সী আর ফেলুদাকে একসঙ্গে দেখছে তারা !!”
আর সৃজিত বাবু ভেবে চলেছেন, ” ছোট বেলায় শার্লক হোমস এর গল্প পড়েছেন, সেই
মানুষটাকেই আজ যেন স্বচক্ষে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছেন !!”

আর লাহিড়ী বাবু ভাবছেন, ” You have to pay for this…the bloody Murderer !!

চলবে…

Share This Article