প্রথম প্রেমের গল্প – Prothom Premer Golpo – Love Story

Bongconnection Original Published
6 Min Read


প্রথম প্রেমের গল্প – Prothom Premer Golpo – Love Story

 

Prothom%2BPremer%2BGolpo 3627
Loading...

প্রথম প্রেমের গল্প

Loading...
তুমি আসবে বলেই
– পিয়ালী রায়
“তুমি আসবে বলেই
তুমি আসবে বলেই আকাশ মেঘলা বৃষ্টি এখনো হয়নি
তুমি আসবে বলেই কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো ঝরে যায়নি
তুমি আসবে বলেই.. “

জয়ন্তের মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল নচিকেতার গানে। কেন জানি না নচিকেতার এই গানটির
প্রতি একটা আলাদা ভালোবাসা আছে জয়ন্তর।ঘুম জড়ানো চোখে বিরক্ত হয়ে মোবাইলটা
ধরে জয়ন্ত। বিছানার পাশে জয়ন্তর স্ত্রী নন্দিতা শুয়ে ঘুমাচ্ছে নগ্ন
অবস্থায়। মুখে তৃপ্তির আভা ফুটে উঠেছে। কি সুন্দরী লাগছে আজ
নন্দিতাকে,নন্দিতার মুখের ওপর আসা চুলগুলো সরিয়ে দেয় জয়ন্ত। পাগলি বউ একটা!
কাল রাত সাড়ে চারটের সময় যখন জয়ন্ত আর নন্দিতা মিলনের পর ক্লান্ত,তখন পাগলিটা
বলে কিনা একটা গল্প বলো না। অনেক কষ্টে বুঝিয়ে সুজিয়ে ঘুম পাড়াতে হয়েছে
নন্দিতাকে।চাদরটা টেনে নন্দিতার নগ্ন শরীরটা ঢাকে জয়ন্ত আর মনে মনে হাসে।
পাগলিটা ওকে এত ভালোবাসে তা জানতেই এতদিন লেগে গেল ওর!


জয়ন্তরই বা দোষ কি, সারাদিন কলেজেই কেটে যায় ওর। জয়ন্ত শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং
কলেজের প্রফেসর। ওর স্ত্রী নন্দিতা একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির এইচ.
আর।এরেন্জ ম্যারেজ, প্রায় তিন বছর হল বিয়ে  হয়েছে। কিন্তু ওর আর ওর
স্ত্রীর সম্পর্কটা কেমন যেন বাধোবাধো। নন্দিতা কেমন যেন এড়িয়ে চলে জয়ন্তকে।
জয়ন্তর বন্ধুরাও বলেছে বউকে নিয়ে হানিমুনে ঘুরে আয়, জয়ন্তই রাজি হয়নি। একে
কলেজ থেকে ছুটি নিলে পরে হাজার ঝামেলা, এদিকে নন্দিতার চাকরির ক্ষতি হতে
পারে,তার ওপর দুজনের মধ্যে এখনো ভালোবাসাই হয়নি এতদিন, ছোঁয়া তো দুরের কথা।

ফুলসজ্জার রাতেই জয়ন্ত ওর বউ নন্দিতাকে বলেছিল “আমরা তখনই কাছাকাছি আসব, যখন
পরস্পরকে ভালোবাসবো। চিন্তা করো না, তার আগে তোমায় স্পর্শ করব না। ”

নন্দিতা অবাকই হয়েছিল। এদিকে কাজের চাপে দুজনের মধ্যে কোন সম্পর্কই এগোয়নি
এতদিন। এদিকে জয়ন্তর বন্ধুবান্ধব, বাবা মা সবাই আশা করে আছে কবে সুখবর শোনাবে
জয়ন্ত। একদিন তো জয়ন্তের মা রমলাদেবী জয়ন্তের কাছে কেঁদে বললেন, “বাবু,
মরবার আগে কি  নাতি নাতনীর মুখও দেখতে দিবি না! বউমার সমস্যা থাকলে বল,
আমরা আবার বিয়ে দিই তোর! ”

জীবনের প্রথম প্রেমের গল্প

জয়ন্ত রেগে গিয়ে বলেছে, “ছিঃ!মা তুমি নারী হয়ে আর একটা নারীর অসম্মান কি করে
কর! নন্দিতার যদি কোনো সমস্যা দেখা যায়, ওর চিকিৎসার দায়িত্ব আমার! নন্দিতা
আমার স্ত্রী, তাকে অগ্নি সাক্ষী করে বিয়ে করেছি আমি! তাকে মাঝ রাস্তায় এভাবে
একলা ফেলে পালাতে বলছ আমায় কাপুরুষের মত! নন্দিতার কোন দোষ নেই এতে, আমিই এই
সম্পর্ক গড়ার জন্য সময় নিচ্ছি শুধু। যদিও কোন সমস্যা দেখা যায় আমিই ওর
চিকিৎসা করাব, যদি তাতেও সন্তান না আসে দত্তক নেব! কিন্তু নন্দিতাকে ফেলে দিয়ে
কাউকে গ্রহণ করতে পারব না।”
জয়ন্তের বাবা, অখিলবাবু খুশি হন ছেলের কথায়।  বলেন, “বাবু, এমন জবাবই
চেয়েছিলাম তোর কাছে। আজ আমার গর্ব বোধ হচ্ছে এটা ভেবে যে আমি তোর বাবা!
আশির্বাদ করি তোরা সুখী হ।”
অখিলবাবুর আশির্বাদই ফলল কিনা কে জানে, বাবা-মাকে হঠাৎ আমেরিকার টিকিট পাঠালো
জয়ন্তের দিদি তিন্নি। তিন্নি এখন প্রেগন্যান্ট, ওর আমেরিকান ডাক্তার বর ওর
দেখাশোনা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।অখিলবাবু ও রমলাদেবী দুজনেই খুব খুশী।
বাড়িময় খুশীর আবহাওয়া। নির্দিষ্ট দিনে ফ্লাইট ধরে আমেরিকায় পাড়ি দিলেন
অখিলবাবু ও রমলাদেবী। বাড়িটা এখন ফাঁকা।তবুও জয়ন্তর কলেজ ও নন্দিতার অফিস
চলতেই থাকল। মাঝে মধ্যে টুকিটাকি কথা ছাড়া কিচ্ছু হয় না। এমন সময় দেশে কোরনা
দেখা দিল। কাতারে কাতারে লোক মরছে।নন্দিতা ও জয়ন্ত অখিলবাবু ও রমলাদেবীকে
বললেন এখন ক মাস না ফিরতে। নন্দিতার অফিস ও বন্ধ হয়ে গেল। জয়ন্তর কলেজ ও ছুটি
দিল ওকে।সরকার লকডাউন ঘোষণা করলেন। এখন ওদের হাতে অঢেল সময়। কাজ কর্ম ও বিশেষ
নেই। দুজনেই গৃহবন্দী। বেশ ভালো রাঁধে নন্দিতা। এতদিন নন্দিতাকে বিশেষ কিছুই
করতে হয় নি। রাধুঁনী ছিল, এছাড়া রমলাদেবী তদারকি করতেন। এখন রাধুঁনীও ছুটি
নিয়েছে। 

আমার প্রথম প্রেমের গল্প

এখন ভালো করে গল্প ও করে দুজনে। নন্দিতা অবাক হয়, কত কিছুই জানে জয়ন্ত। বেশ
হাসাতেও পারে। নন্দিতা জয়ন্তকে বইমুখো গম্ভীর লোক ভেবেছিল। জয়ন্ত তার একদম
উল্টো। জয়ন্তের মত প্রাণ খোলা হাসি হাসতে নন্দিতা কাউকে দেখেনি। নন্দিতা সময়
কাটানোর জন্য যখন হারমোনিয়ামে গান গায়, জয়ন্ত ও গলা মেলায়। এত ভালো গলা
জয়ন্তর, নন্দিতা জানতোই না। ধীরে ধীরে দুজনেই দুজনের প্রেমে পড়ে যায়। কাল
রাতে ফ্রেস হয়ে ঘরে ঢুকে জয়ন্ত অবাক। এত সুন্দর করে ঘর সাজালো কে! গোটা ঘর
সুগন্ধি ক্যান্ডেলে আর ফুলে সাজানো।কাঁধে হাতের স্পর্শ পেতেই ঘুরতেই জয়ন্ত আরো
অবাক হয়ে গেল। নন্দিতা একটা লাল শাড়ি পরেছে,হাতে লাল কাঁচের চুড়ি,খোঁপায়
লাল গোলাপ, কপালে লাল টিপ। 


“তুমিই তো বলেছিলে জয়ন্ত, ভালো না বাসলে কখনো কাছাকাছি না আসতে। তোমার আমি
ভালোবাসি জয়ন্ত। বল, তুমি কি আমায় ভালোবাসো? ” মিষ্টি হেসে নন্দিতা
বলে। 
জয়ন্ত এতটাই বিভোর নন্দিতা কে দেখে ও খালি ঘাড় কাত করে হ্যাঁ জানায়, বাকিটা
ইতিহাস। 
জয়ন্ত ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে তিন্নির গলা, “কিরে,কেমন দিলাম তোর
সারপ্রাইজ!অবশেষে পিসি হলাম তাহলে! ”
” দিদি তুইও না! পারিস বটে” লাজুক হাসে জয়ন্ত। 
                     
           সমাপ্ত

Share This Article