ভাষা দিবস – Bhasha Dibosh Er Golpo – অমর একুশে

Bongconnection Original Published
6 Min Read


 ভাষা দিবস – Bhasha Dibosh Er Golpo

ভাষা দিবস - Bhasha Dibosh Er Golpo - অমর একুশে
Loading...


ভাষাদিবস

Loading...
আ_মরি_বাংলা_ভাষা
দীপান্বিতা দে রায় 
কাল হেডমাস্টার এসে বলে গেছেন সক্কলে যেন পরিস্কার কাচা স্কুলের ইউনিফর্ম পরে
আসে। কাল এলাকার প্রধান আসবেন। অবশ্য কথাগুলো বলার সময় পান্তুয়া একমনে জানলার
বাইরে তাকিয়ে পাশেই খেলার মাঠে ফুটবল খেলা দেখছিল তাই কথাগুলো শুনতে পায়নি, পরে
বিল্টে যখন বললো তখন শুনেছিল।
….”কেন? কাল কী হবে?” পান্তুয়া প্রশ্ন করে বিল্টেকে
….”কাল আমাদের বাংলা দিবস।” বিল্টে ব্যাগ গোছাতে গোছাতে উত্তর দিল।
….”অন্যদিনগুলো কী তবে?”
….”অত কথায় কাজ নেই তোর। হেডু বলেছে ব্যাস। না এলে মেরে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেবে
হেডু সেটা তো জানিস। আর প্রধান আসবে যখন লাড্ডুও দিতে পারে। আগেরবার তো পতাকা
তুলে লাড্ডু দিল মনে নেই।” বিল্টে পান্তুয়াকে ব্যাপারটা বোঝানোর চেষ্টা করে।
আসলে স্কুলে ওর একটাই বন্ধু তাই পান্তুয়া না এলে ওর ভালো লাগেনা।

…”হুম।” পান্তুয়া ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করে।
বাড়ি যেতেই সোজা ছোটকাকার ঘরে গেলো পান্তুয়া।  বাড়ির মধ্যে এই একজনই আছে
যাকে জিজ্ঞেস করলে সবকিছুর উত্তর পাওয়া যায়। বাংলার দিন নিয়েও বেশ কিছু প্রশ্ন
ঘুরছিল পান্তুয়ার মাথায়।
….”আচ্ছা কাকাই কাল কী গো?” কাকাইয়ের টেবিলের কাছে এসে একটা নতুন পেন দেখে
সেটা নিয়ে খেলতে খেলতে জিজ্ঞেস করলো পান্তুয়া। 
….”কাল বৃহস্পতিবার।” ইতিহাস বইয়ের পাতা থেকে মুখ না তুলেই জবাব দিল কাকাই।
সবাই বলে কাকাই কোনো কাজকর্ম করেনা। গ্রামের বাচ্চাদের টিউশানি পড়ায়, কিন্তু এই
যে সারাদিন এত্ত মোটামোটা বই পড়ে কাকাই সেটা কেউ দেখেনা। পান্তুয়ার তো পড়তে
বসলেই ইয়া বড়ো বড়ো হাই ওঠে। 
….”না গো কাকাই, কাল বাংলার দিন।” কাকাই কী তবে জানে না কাল কী? নিজের মনেই
প্রশ্নটা করলো পান্তুয়া। 
….”ও আচ্ছা, তুই জানলি কী করে? ঠিক তো কাল একুশে ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশের
ইতিহাসের……”
….”ও কাকাই আমি যাই মা ডাকছে। মনে হয় ভাত বেড়েছে।” এখন কাকাই যদি শুরু করতো
তাহলে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামবে। বিল্টেরা আবার পাড়ায় আজ ক্রিকেট ম্যাচ
রেখেছে। আর কাকাই ইতিহাসের পড়া ধরবে বলেছিল, তাই মানে মানে সরে পড়তে হবে। কাল
কী, সেটা স্কুলে গিয়ে জানলেই হবে। এখন জেনে কাজ নেই বাবা।

ভাষা দিবস নিয়ে কিছু কথা

…..”দেখ বিল্টু একদিনেই স্কুলের সবাই কত পড়াশোনা করেছে। চারিদিকে পোস্টার
লাগিয়েছে কত। ওই দেখ সামনের পোস্টারটায় আবার “অ আ ক খ” লেখা। আমার মাসির ছোট
মেয়েটা সবে কথা বলতে শিখেছে। আমি বাড়ি যাওয়ার সময় ওই পোস্টারটা ছিঁড়ে নিয়ে
যাবো। মাসির আর বাংলা বই কিনতে হবেনা বুঝলি।” পান্তুয়া আর বিল্টের মধ্যে তখন
জোর আলোচনা চলছে।
….”জানিস পান্তুয়া রোজ যদি বাংলার দিন হতো কী ভালোই না হতো। আমার ওই ইংরেজির
মাস্টারটা হেবি পাজি। টেনস, প্যারাগ্রাফ না পারলেই টেনে কান ছিঁড়ে নেয়। রোজ যদি
বাংলার দিন হতো আর ইংরেজি পড়তে যেতে হতো না।” চুইংগাম চিবোতে চিবোতেই আফসোসটা
জানায় বিল্টে।
এরই মধ্যে সুচিত্রা দিদিমণি সকলকে চুপ করে বসতে বলেন এবং স্টেজে হেডমাস্টারকে
উঠে আসতে বলেন। 

হেডমাস্টার উঠে এসে প্রধানকে একটা বড়ো ফুলের তোড়া দিয়ে ওনাকে কিছু বলার জন্য
অনুরোধ করেন। 
…..”আমার পিও ছাত্র ছাত্রীরা, আজ তোমরা জানো আনতরজাতিক ভাসা দিবস। বাংলাদেশের
ভাইয়েরা আজকের দিনে গুলি খেয়েও ভাসার জন্য লড়াই করেছিল। সেইসব কমরেডদের জানাই
লাল সেলাম। তোমরা আরো বেসি বেসি করে বাংলা পরবে। তবেই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে।
বলো সবাই আমি বাংলা ভালোবাসি।”


ঠিক প্রথম সারিতে বসেছিল বিল্টে আর পান্তুয়া। পান্তুয়া উঠে দাঁড়ায়…. “আমি
বাংলা ভালোবাসি স্যার। বাংলার দিদিমনির কাছে পড়লেই সব প্রশ্ন কমন আসে। আমার
বাবাও ভালোবাসে কিন্তু মা একদম ভালোবাসেনা। খালি বাবাকে গালমন্দ করে।”
পিন পরলেও শোনা যাবে এমন নিস্তব্ধতা। গ্রামের প্রধান পান্তুয়ার দিকে তাকিয়ে
আছে। মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেছে, অন্ধকার নেমে আসছে ধীরেধীরে। 

 সুচিত্রা দিদিমণি ততক্ষণে হারমোনিয়ামে সুর তুলেছে….গলা মিলিয়েছে ক্লাস
নাইনের মেয়েরা। 

ভাষা দিবস ইন বাঙ্গালী

“মোদের গরব মোদের আশা আ… মরি বাংলা ভাষা।”
সেদিন পান্তুয়ার কী হয়েছিল সে গল্প অন্য একদিন বলবো। তবে লাড্ডু দেওয়ার সময়
বিল্টে বা পান্তুয়াকে স্কুলে দেখতে পায়নি কেউ। পরের দুইদিন পেটে ব্যাথার
অজুহাতে স্কুল না গেলেও হেডস্যার যে সব ভুলে গেছিলেন এমন খবর পাইনি।
———————————– 
একুশে ফেব্রুয়ারী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ দিনে ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে
অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ‘বাংলাভাষা’ কে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি
পেয়েছিলাম। পৃথিবীতে এই প্রথম কোনো জাতি অনেক প্রাণের বিনিময়ে মাতৃভাষার
মর্যাদা আনতে সক্ষম হয়েছিলো, তাই ইউনেস্কো, ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর,
প্যারিস অধিবেশনে, এই দিনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। নিজের মাতৃভাষার
অস্তিত্ব রক্ষায় এরকম আত্ম বলিদান পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।#দীপান্বিতা

এই যে বছরের একদিন যাদের মনে পরে আমরা বাঙালি…….সত্যাগ্রহী হয়ে ইংরেজি
বর্জন করা নৈতিক কর্তব্য,…. আসুন গর্জে উঠি,….. আমাদের শহিদ মিনার রক্তে
রাঙানো,….. ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনাদের অনুরোধ গিয়ে দেখে আসুন শহিদ মিনারে আজও
সিংহের গর্জন শোনা যায় বছরের বাকি দিনগুলোতেও, কিন্তু তাদেরকেও যদি ভুল করে
বাংলায় কততম সাল ও কোন মাস চলছে জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে গুগলবাবা ছাড়া কতজন উত্তর
দেবে জানার ইচ্ছে খুব রইল। সারা বছর পিঠে একমন ওজনের ব্যাগ নিয়ে স্কুল -টিউশন –
বাড়ির ত্রিকোণ প্রেমে আটকা পরা শৈশব বছরের একদিন জানতে পারে ভাষা দিবস কাকে
বলে? বাকি দিন Baa baa black sheep চিৎকারে খোকাও ঘুমায় না আর পাড়া ও জুড়ায় না।

…….”আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসেনা” বলা গর্বিত মায়ের মুখে বাচ্চা বছরের এই
একদিন জানে ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ নাকি Bengali Day.
-সমাপ্ত
Tags –
Bangla Golpo,
Bengali Story, Bhasha Dibosh

Share This Article