Bangla Premer Golpo – প্রেমের গল্প – Bengali Love Story

Bongconnection Original Published
7 Min Read


 Bangla Premer Golpo – প্রেমের গল্প – Bengali Love Story

Bangla Premer Golpo - প্রেমের গল্প - Bengali Love Story
Loading...


Bangla Premer Golpo Love Story

Loading...
লংড্রাইভ
-শুভঙ্কর সাউ
আটদিনের মাথায় বিদিশা আর নির্মাল্যের
ওয়েডিং।এরেঞ্জন্ড ম্যারেজ।সেই ভাবে ওরা
একে অপরের সাথে বিশেষ পরিচিত নয়।শুধু ফোনে কথা বললে,বা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ
থাকলে,কিম্বা একদিন একটা কফিহাউসে বসে কিছুক্ষন সময় কাটালে কী আর বোঝা যায় ওদের
কতটা কী মেলে!তাই চাইলো বিবাহের আগে একটা
দিন একসঙ্গে দূরে কোথাও বেরিয়ে আসে।তাতে করে ওদের মধ্যে সম্পর্কটাও অনেক সহজ
হয়ে উঠবে।আর তাই দুজনে মিলে লংড্রাইভে যাওয়ার হঠাৎ প্ল্যানটা করলো।
রবিবার।ছুটির দিন।সকাল আটটার দিকে নির্মাল্য, বিদিশাকে ওদের বাড়ি থেকে পিক
করলো।গন্তব্য অজানা।যতদূর দুচোখ চায়।সুজুকি ডিজায়ারটা এই মাস খানেক হলো
নির্মাল্য নিয়েছে।প্রথমবার লংড্রাইভে যাচ্ছে সেটাকে নিয়ে।শীতের সকাল।বাইরে
হাল্কা কুয়াশা তখনও আছে।গাড়ির কাঁচটা ওপর অবধি টেনে দিয়ে যাত্রা শুরু হলো।তখন
সবে মায়াপুরটা পেরিয়েছে,নির্মাল্য বলল-‘কফি খাবে?’বিদিশা কাঁচের বাইরে দেখতে
পেলো বড় রাস্তার পাশে দু একজন মাটির ভাঁড়ে চা খাচ্ছে।ও নির্মাল্যকে বলল-‘মাটির
ভাঁড়ে কখনো চা খাইনি।খাবে তুমি?’নির্মাল্য বলল-‘কেনো নয়।চলো তাহলে নামা
যাক।’কথাটা বলে রাস্তার এক পাশে গাড়ি পার্ক করে দুজনে একজন চা ওলার কাছ থেকে

মাটির ভাঁড়ে চা নিলো।শীতের দিনে ভাঁড়ে গরম চা খাওয়ার অনুভূতিই আলাদা।বিদিশা
প্রথম চুমুকটা চা এ দিয়ে -‘ওয়াও’ বলে উঠলো।নির্মাল্য জিজ্ঞেস করলো-‘এই
প্রথমবার?’বিদিশা হাসি মুখে বলল- ‘হ্যাঁ.. বিয়ের পর আমায় কিন্তু মাটির ভাঁড়ে
চা 
খাওয়াতে নিয়ে বেরোতে হবে।’নির্মাল্য বলল
-‘আমার রোজগেরে অভ্যেস।দারুন লাগে। যাক এবার থেকে একজন সঙ্গীকে সাথে পাওয়া
যাবে। ‘বিদিশা বলল-‘প্রতিদিন কিন্তু।’নির্মাল্য বলল- ‘একদম।প্রতিদিন।’

Romantic Love Story In Bengali

চা পান করে আবার গাড়ি ছাড়লো।কিছুটা গিয়ে এক জায়গায় ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে তারা
পড়লো।গাড়ির উইন্ডক্রিনের সামনে চোখে পড়লো,দুটো বাচ্ছা,গায়েতে ময়লা
জামাকাপড়,হাতে কয়েকটা রাস্তায় পড়ে থাকা রঙবেরঙের ছেঁড়া কাগজ,ছোটো ছোটো বাক্স
ইত্যাদি নিয়ে রাস্তা পেরোচ্ছে নির্মাল্য, বিদিশাকে বলল-‘দেখেছো,ওই সব
বাচ্ছাগুলোর জীবন।’বিদিশা বলল-‘সত্যি।ওদের অবস্থা দেখলে কেমন একটা লাগে। গিল্টি
ফিল হয় এটা ভেবে যে,আমরা কত সুখে আছি তাও..।’ নির্মাল্য বলল- ‘চলো, গাড়িটা
কোথাও সাইড করে ওদের কিছু
কিনে দিই।একদিন ওদের জন্য অন্তত কিছু কিনে
দিতে পারলেও ভালো লাগবে।’

রোমান্টিক প্রেমের গল্প

দুজনে লক্ষ্য রাখলো ছেলেগুলো কোন দিকে গেলো।জ্যাম কাটতে ওরা সেই রাস্তা
নিলো।গাড়িটা একটা ফাঁকা জায়গা দেখে সাইড করে রেখে গেলো।কিছুটা হাঁটবার পর
ছেলেগুলোর দেখা পেলো।ওরা তখন মোট চারজন।একটা বন্ধ বাড়ির দরজায় বসে কে কী নিয়ে
এসেছে সেই সবেরই 


হিসেব চলছিলো।বিদিশা তাদের প্রথম ডেকে বলল-‘এই,তোমরা কী করছো?’ ওদের মধ্যে
একজনের হাতে নতুন একটা জামা ছিলো,আর একজনের হাতে ক’টা মোমবাতি।ওরা দুজন কাঁদন
মাদন হয়ে বলে উঠলো-‘আমরা চুরি করিনি দিদি..’
বিদিশা বলল-‘শান্ত হও।আমি কী বললাম তোমরা চুরি করেছো?’ তখন ওদের মধ্যে একজন
বলল-‘ এই জামাটা আমরা সব বাচ্ছারা মিলে পয়সা জমিয়ে জমিয়ে কিনেছি।’ এবার
নির্মাল্য বলল- ‘কার জন্য নিয়েছো এটা?’ওদের একজন বলল- ‘আজ আমাদের বোন মুনির
জন্মদিন।ওর জন্যে
এটা কিনেছি।’নির্মাল্য বলল-‘জন্মদিন?আমাদের নিয়ে যাবেনা?’ওদের একজন হাসি মুখে
চোখ বড় বড় করে বলল-‘তোমরা যাবে?খুব আনন্দ হবে তাহলে।’নির্মাল্য আর বিদিশা মিলে
ঠিক করলো মুনির জন্ম দিনটা ওরাও ওই বাচ্ছাগুলোর করে পালন করবে। কেক নিলো,নতুন
জামা, জুতো, আরও কত কী খেলনা নিয়ে ওই বাচ্ছাগুলোর সঙ্গে
ওরা ওদের থাকবার জায়গায় গেলো।
ওরা বাচ্ছাগুলোর সঙ্গে গিয়ে ওদের যে থাকবার জায়গা দেখলো তাতে সত্যি চোখে জল এসে
যাওয়ার মত কথা।ওই মানুষগুলোর এক জীবন আর..ভাবাই যায় না।মুনিকে নিজের হাতে
বিদিশা নতুন জামা পড়ালো।সবাই মিলে কেক কাটলো, খাওয়া দাওয়া করলো,আনন্দ
করলো,নাচলো,কত কত ছবি তুললো।ফেরার সময় ওই নির্ভেজাল মনের মানুষগুলো বিদিশা আর
নির্মাল্যকে প্রান ভরে আশীর্বাদ করলো-‘তোমরা দুজনে অনেক সুখী হবে।গরীবের এই
এইটুকু আশীর্বাদ রইলো।’

ওরা শেষবার ‘বাই’ করে গাড়িতে ফিরে এসে ফের সামনের দিকে রহনা দিলো। দুজনের মনেই
তখন যেন বিরাট একটা প্রশান্তির হাওয়া।জীবনটা দারুন সুন্দর মনে হচ্ছে।বিদিশা
বলল-‘আমরা যখনই সুযোগ পাবো,এই সব মানুষগুলোর কাছে আসবো হ্যাঁ?’ নির্মাল্য
বলল-‘তোমার মনটা সত্যি সুন্দর।’ ‘বিদিশা বলল-‘তোমারও..।’ বিকেল হবো হবো।তখন ওরা
কতুলপুরে। বিদিশা দেখতে রাস্তার মোড়ে একজন গ্যাস বেলুন বিক্রি করছে।বিদিশা,
নির্মাল্যর কাছে বাচ্ছা মেয়ের মত আবদার করলো
-‘বেলুন কিনে দেবে?’নির্মাল্য হেসে বলল-‘বাচ্ছা মেয়ে নাকি?’বিদিশা বলল-‘বাচ্ছাই
তো।দেখছোনা, এখনো ভালো করে চুল জড়াতে পারিনা।হাতে নেলপলিশ লাগাতে
পারিনা।’নির্মাল্য হা হা করে হেসে বলল-‘হায়রে!এমন বাচ্ছা মেয়েটাকে নিয়ে আমায়
সংসার করতে হবে।’বিদিশা বলল-‘আমি এমনই থাকতে চাই সারাজীবন।’ নির্মাল্য বলল-
‘থাকবে।কে বারণ করবে।।’

সুন্দর প্রেমের গল্প

গ্যাসবেলুন কিনে সেগুলো গাড়ির সামনে ঝুলিয়ে  ফের গাড়ি ছাড়লো।নির্মাল্য
বলল-‘এই মানুষটার সাথে থাকা যাবেতো?’বিদিশা বলল-‘আমি রান্না পারিনা।সকালা ঘুম
থেকে উঠতে পারিনা।গুছিয়ে কখনো কথা বলতে পারিনা।আর মাঝে মধ্যে রাতে
ভুল বকার অভ্যেস আছে।স্বপ্ন দেখি বলে।এবার বলো তুমি থাকতে পারবে তো?’ নির্মাল্য
বলল- ‘ঘুমের ঘোরে লাথি মারার অভ্যেস নেই তো?’বিদিশা বলল-‘বিয়ের খাটটা একটু বড়
সাইজের কিনবে।তাহলে এক আধবার যদি পাও চলে যায় তো নীচে

পড়বার ভয় থাকবেনা।’নির্মাল্য ভ্রু চাগিয়ে বলল-  ‘বাবা!এতো বিয়ে নয়,আমি
যুদ্ধ করতে নামছি।’


True Love Story In Bengali Language

জয়পুর জঙ্গলের সীমানা এসে পড়লো ওদের সামনে।ক্রমে জঙ্গলের প্রাকৃতিক শোভা আরও
ঘনীভূত হলো।নির্মাল্য বলল -‘এখানে একটু নামি চলোনা।’বিদিশা বলল-‘আমি তোমাকে
এটাই বলব ভাবছিলাম।’বিদিশা গাড়ি থেকে নেমে পাখিদের মিষ্টি আওয়াজের তালে তালে
শিসের ধ্বনি দিতে লাগলো।হাত প্রসারিত করে ওর ইচ্ছে হলো পুরো জঙ্গলের
গাছপালাগুলোকে ও ওর বুকেতে নিয়ে ফিরতে।নির্মাল্য,গাড়ির সামনে থেকে গ্যাসবেলুন
গুলো নিয়ে এসে বলল-‘এই নাও,এগুলো উড়িয়ে দাও এখানে।’বিদিশা নির্মাল্যর হাতটা
মুঠোয় ধরে বলল-‘একা কেনো।এসো,একসাথে ওড়াই।’বেলুন
গুলো ধীরে ধীরে পাতাদের আড়ালে চলে গেলো।বিদিশা আচমকা নির্মাল্যকে জড়িয়ে বলে
উঠলো- ‘আজকের দিনটা স্পেশাল।’নির্মাল্যর দুটো খোলা হাত তখন বিদিশাকে বাঁধনে
জড়ালো।নির্মাল্য বলল-‘তুমিও খুব স্পেশাল আমার জন্য।’

বিকেল সরে গোধূলি নেমে এলো।আর সমুখে নয়।যা মেলানোর ছিলো প্রায় সবই দুজনের মিলে
গেছে।এবারে তাই ঘরেতে ফেরবার পালা।গাড়িতে বসে নির্মাল্য বলল -‘সোয়টারটা চাপিয়ে
নাও।’ বিদিশা গায়ে সোয়টার পড়ে নিয়ে বলল-‘বিয়ের আগে আর একদিন বেরোনো যায়?’
নির্মাল্য বলল- ‘কোথায় যেতে চাও।’ বিদিশা বলল-‘যেখানে খুশি।’ নির্মাল্য
বলল-‘তবু বলো কোথায় যেতে চাও।’ বিদিশা বলল-‘যেতে চাওয়াটা আমার লক্ষ্য নয়।তুমি
ছেলেটার সাথে আরও টাইম স্পেন্ড করতে ইচ্ছে হচ্ছে।’ নির্মাল্য কথাটা শুনে বেশ
আবেগে ভাসলো।বলল-‘বাকিটা জীবন তো আমার সঙ্গেই। অনেক সময় পাবে কাটানোর।’ বিদিশা
তখন নির্মাল্যর সীটের দিকে ঘেঁষে এসে ওর কাঁধের কাছে মুখটা বাড়িয়ে বলল-‘এমনই
থাকবে তো?বিয়ের পর বদলে যাবে নাতো?’ নির্মাল্য বলল-‘

“জীবন যদি অন্যরকমও হয়
 প্রত্যেকদিন,প্রত্যেকটা রাতে
 বদলে যাব নতুন মুখের ভীড়ে
 তোর সঙ্গে যুগের সাথে সাথে”
বিদিশা স্টিয়ারিংএ নির্মাল্যর হাতটা ছুঁয়ে বলল-
“এই জন্মই শুধু কেনো,পরজন্ম পাই যদি
 তোমার ভালোবাসায় হবো খরস্রোতা নদী”

Share This Article