নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রচনা – Netaji Subhas Chandra Bose Rachana – Netaji Jayanti 2024

Samaresh Halder
7 Min Read
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রচনা - Netaji Subhas Chandra Bose Rochona
Loading...

Netaji Subhas Chandra Bose Rachana

প্রথম জীবন 
১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি, বর্তমান ওড়িশা রাজ্যের কটক শহরে (ওড়িয়া বাজার) জন্মগ্রহণ করেন সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি ছিলেন কটক-প্রবাসী বিশিষ্ট বাঙালি আইনজীবী জানকীনাথ বসু ও প্রভাবতী দেবীর চোদ্দো সন্তানের মধ্যে নবম। ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত সুভাষচন্দ্র একটি কটকের ইংরেজি স্কুলে পড়াশোনা করেন; বর্তমানে এই স্কুলটির নাম স্টিওয়ার্ট স্কুল। এরপর তাঁকে ভর্তি করা হয় কটকের রর্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে। সুভাষচন্দ্র ছিলেন মেধাবী ছাত্র। ১৯১১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় কলকাতা থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। ১৯১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনে সাম্মানিক সহ বি.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রচনা ছোটদের

Loading...
এরপর সুভাষচন্দ্র কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজউইলিয়াম হলে উচ্চশিক্ষার্থে ভর্তি হন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়ে তিনি প্রায় নিয়োগপত্র পেয়ে যান। কিন্তু বিপ্লব-সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সেই নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, “কোনো সরকারের সমাপ্তি ঘোষণা করার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা হল তা থেকে [নিজেকে] প্রত্যাহার করে নেওয়া”। এই সময় অমৃতসর হত্যাকাণ্ড ও ১৯১৯ সালের দমনমূলক রাওলাট আইন ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের বিক্ষুদ্ধ করে তুলেছিল। ভারতে ফিরে সুভাষচন্দ্র স্বরাজ নামক সংবাদপত্রে লেখালিখি শুরু করেন এবং বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রচার দায়িত্বে নিযুক্ত হন। তাঁর রাজনৈতিক গুরু ছিলেন বাংলায় উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। ১৯২৪ সালে দেশবন্ধু যখন কলকাতা পৌরসংস্থার মেয়র নির্বাচিত হন, তখন সুভাষচন্দ্র তাঁর অধীনে কর্মরত ছিলেন। ১৯২৫ সালে অন্যান্য জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে তাঁকেও বন্দী করা হয় এবং মান্দালয়ে নির্বাসিত করা হয়। এখানে তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রচনা বাংলায়

সুভাষচন্দ্র ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ হিন্দু। তিনি ধ্যানে অনেক সময় অতিবাহিত করতেন। স্বামী বিবেকানন্দের ভাবাদর্শ তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ছাত্রাবস্থা থেকে তিনি তাঁর দেশপ্রেমিক সত্ত্বার জন্য পরিচিত ছিলেন।
কর্মজীবন ও রাজনীতিতে প্রবেশ 
প্রায় বিশ বছরের মধ্যে সুভাষ চন্দ্র মোট ১১ বার গ্রেফতার হয়েছিলেন তাকে ভারত ও রেঙ্গুনের বিভিন্ন জায়গায় রাখা হয়েছিল। ১৯৩০ সালে তাকে ইউরোপে নির্বাসিত করা হয়। ১৯৩৪ সালে তিনি তাঁর প্রথম প্রেম এমিলি সেচঙ্কল এর সাথে পরিচিত হন ভিয়েনাতে। ১৯৩৭ সালে তারা ব্যাড গ্যাস্টিনে বিয়ে করেন।


Netaji Subhash Chandra Bose Paragraph In Bengali

তাঁর পিতার মৃত্যুর পর ব্রিটিশ সরকার তাকে শুধু মাত্র ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের উদ্দ্যেশ কিচ্ছুক্ষণের জন্য কলকাতা আসার অনুমতি দেয়।১৯৩৮ সালে তিনি গান্ধির বিরোধীতার মুখে ভারতীয় কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৩৯ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য ত্রিপুরা সেসনে কংগ্রেসের প্রসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে গান্ধি পট্টভি সিতারামায়াকে সমর্থন দেন; নির্বাচনের ফলাফল শোনার পর গান্ধি বলেন “পট্টভির হার আমার হার”। কিন্তু জয়যুক্ত হলেও তিনি সুষ্ঠু ভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারছেলেন না। গান্ধীর অনুগামীরা তার কাজে বাধা সৃষ্টি করছেলেন। গোবিন্দ বল্লভ পন্থ এইসময় একটি প্রস্তাব পেশ করেন যে, “কার্যনির্বাহক পরিষদকে পুনর্গঠন করা হোক”। এভাবে সুভাষ চন্দ্র বসু এ নির্বাচনে জয় লাভ করলেও গান্ধির বিরোধীতার ফল স্বরুপ তাকে বলা হয় পদত্যাগ পত্র পেশ করতে নইলে কার্যনির্বাহি কমিটির সকল সদস্য পদত্যাগ করবে। এ কারণে তিনি নিজেই কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেণ এবং অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি জাতীয় পরিকল্পনা পরিষদের প্রস্তাবনা দেন।
ভারত থেকে পলায়ন
ভারতবর্ষের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ গ্রহণের ব্যাপারে সুভাষ বসু নাখোশ ছিলেন। তিনি সে সময় গৃহ বন্দি ছিলেন। তিনি বুঝতে পারলেন ব্রিটিশরা তাঁকে যুদ্ধের আগে ছাড়বে না। তাই তিনি দুইটি মামলার বাকি থাকতেই আফগানিস্তান ও সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে জার্মানী পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আফগানিস্তানের পশতু ভাষা না জানা থাকায় তিনি ফরওয়ার্ড ব্লকের উত্তর-পশ্চিম সিমান্ত প্রদেশের নেতা মিয়া আকবর শাহকে তার সাথে নেন।
 
 যেহেতু তিনি পশতু ভাষা জানতেন না তাই তাঁর ভয় ছিল, আফগানিস্তানবাসীরা ব্রিটিশ চর ভাবতে পারে। তাই মিয়া আকবর শাহের পরামর্শে তিনি অধিবাসীদের কাছে নিজেকে একজন কালা ও বোবা বলে পরিচিত করেণ। সেখান থেকে সুভাষ বসু মস্কো গমন করেন একজন ইতালির কাউন্ট অরল্যান্ডো মাজ্জোট্টা” নামক এক নাগরিকের পরিচয়ে। মস্কো থেকে রোম হয়ে তিনি জার্মানী পৌছেন। তিনি বার্লিনে মুক্ত ভারতীয় কেন্দ্র (Free India Center) গড়ে তোলেন। ভারতের স্বাধীনতার জন্য তিনি জার্মান চ্যান্সেলর এডলফ হিটলারের সাহায্য প্রার্থনা করেণ। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতার ব্যাপারে হিটলারের উদাসিনতা তার মনোবল ভেঙ্গে দেয়। ফলে ১৯৪৩ সালে সুভাষ বসু জার্মান ত্যাগ করেণ। একটি জার্মান সাবমেরিন তাকে সমুদ্রের তলদেশে একটি জাপানি সাবমেরিনে পৌছিয়ে দেয়, সেখান থেকে তিনি জাপান
পৌছেন।


নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ রচনা

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রচনা - Netaji Subhas Chandra Bose Rochona
ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী
ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী (INA=Indian National Army) মূলত গড়ে উঠেছিল জাতীয়তাবাদী নেতা রাসবিহারী বসুর হাতে, ১৯৪৩ সালে রাসবিহারি বসু এই সেনাবাহিনীর দ্বায়িত্ব সুভাষ চন্দ্র বসুকে হস্তান্তর করেণ । একটি আলাদা নারী বাহিনী (রানি লক্ষ্মীবাঈ কমব্যাট) সহ এতে প্রায় ৮৫,০০০ হাজার সৈন্য ছিল। এই বাহি্নীর কর্তৃত্ব ছিল প্রাদেশিক সরকারের হাতে, যার নাম দেওয়া হয় “মুক্ত ভারতের প্রাদেশিক সরকার” (আরজি হুকুমাত-ই-আজাদ হিন্দ)। এই সরকারের নিজস্ব মুদ্রা, আদালত ও আইন ছিল। অক্ষ শক্তির ৯ টি দেশ এই সরকারকে স্বীকৃতি দান করে আই.এন.এ.-র সৈন্যরা জাপানিজদের আরাকান ও মেইক্টিলার যুদ্ধে সাহায্য করে।

Subhash Chandra Bose Essay

সুভাষ চন্দ্র বসু আশা করেছিলেন, ব্রিটিশদের উপর আই.এন.এ.-র হামলার খবর শুনে বিপুল সংখ্যাক সৈন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে হতাশ হয়ে আই.এন.এ.-তে যোগ দেবে। কিন্তু এই ব্যাপারটি তেমন ব্যাপকভাবে ঘটল না। বিপরীতদিকে, যুদ্ধে পরিস্থিতির অবনতির সাথে সাথে জাপান তার সৈন্যদের আই.এন.এ. থেকে সরিয়ে নিতে
থাকে। একই সময় জাপান থেকে অর্থের সরবরাহ কমে যায়। অবশেষে, জাপানের আত্মস্বমর্পন এর সাথে সাথে আই.এন.এ. ও আত্মসমর্পন করে।
অন্তর্ধান ও তথাকথিত মৃত্যু
 

একটি মতে নেতাজী সোভিয়েত রাশিয়ার কাছে বন্দী অবস্থায়, সাইবেরিয়াতে মৃত্যুবরণ করেন। আর একটি মতে, বর্তমানে রেনকোজি মন্দিরে রাখা নেতাজির চিতাভষ্ম পরীক্ষা করে জানা গেছে -ঐ চিতা ভস্ম নেতাজির নয়। আসলে ভারতবর্ষে নেতাজির তুমুল জনপ্রিয়তায় ঈর্স্বানিত হয়ে একদল উঁচুতলার ভারতীয় নেতা এবং ইংরেজ সরকার মিলিত ভাবে ষড়যন্ত্র করে নেতাজীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়।তাই ভারতীয় সরকার কখনো নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের প্রকৃত মৃত্যুর কারণ জনসমক্ষে আনেন নি। অনেকের মতে ফোইজাবাদের ভগবান জি ওরফে গুনমানি বাবা হলেন নেতাজি। কিন্তু এ ব্যাপারটি আজও স্পষ্ট নই। আরেকটি মতে নেতাজী নাকি আজও জীবিত।
Tags –
Netaji Subhas Chandra Bose, Netaji Birthday, Bengali Quotes

Share This Article