Bangla Kobita Lyrics – বাংলা কবিতা লিরিক্স – Bengali Poem Lyrics

Samaresh Halder
17 Min Read
Bangla Kobita Lyrics - বাংলা কবিতা লিরিক্স - Bengali Poem Lyrics
Loading...

Bangla Kobita Lyrics

    প্রেমিকা 
         – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
কবিতা আমার ওষ্ঠ কামড়ে আদর করে
 ঘুম থেকে তুলে ডেকে নিয়ে যায়
 ছাদের ঘরে
 কবিতা আমার জামার বোতাম ছিঁড়েছে অনেক
 হঠাৎ জুতোর পেরেক তোলে!
 কবিতাকে আমি ভুলে থাকি যদি
 অমনি সে রেগে হঠাৎ আমায়
 ডবল ডেকার বাসের সামনে ঠেলে ফেলে দেয়
 আমার অসুখে শিয়রের কাছে জেগে বসে থাকে
 আমার অসুখ কেড়ে নেওয়া তার প্রিয় খুনসুটি
 আমি তাকে যদি
 আয়নার মতো
 ভেঙ্গে দিতে যাই
 সে দেখায় তার নগ্ন শরীর
 সে শরীর ছুঁয়ে শান্তি হয় না, বুক জ্বলে যায়
 বুক জ্বলে যায়, বুক জ্বলে যায়।
======

Bangla Premer Kobita Lyrics

Loading...
       ভালোবাসি, ভালোবাসি
                  – সুনীল
গঙ্গোপাধ্যায়
ধরো কাল তোমার পরীক্ষা,
রাত জেগে পড়ার
টেবিলে বসে আছ,
ঘুম আসছে না তোমার
হঠাত করে ভয়ার্ত কন্ঠে উঠে আমি বললাম-
ভালবাসো?
তুমি কি রাগ করবে?
নাকি উঠে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…..
ধরো ক্লান্ত তুমি,
অফিস থেকে সবে ফিরেছ,
ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত পীড়িত,
খাওয়ার টেবিলে কিছুই তৈরি নেই,
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে
ঘর্মাক্ত আমি তোমার
হাত ধরে যদি বলি- ভালবাসো?
তুমি কি বিরক্ত হবে?
নাকি আমার হাতে আরেকটু চাপ দিয়ে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…..
ধরো দুজনে শুয়ে আছি পাশাপাশি,
সবেমাত্র ঘুমিয়েছ তুমি
দুঃস্বপ্ন দেখে আমি জেগে উঠলাম
শতব্যস্ত হয়ে তোমাকে ডাক দিয়ে যদি বলি-ভালবাসো?
তুমি কি পাশ ফিরে শুয়ে থাকবে?
নাকি হেসে উঠে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…..
ধরো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি দুজনে,
মাথার উপর তপ্ত রোদ,
বাহন পাওয়া যাচ্ছেনা এমন সময়
হঠাত দাঁড়িয়ে পথ
রোধ করে যদি বলি-ভালবাসো?
তুমি কি হাত সরিয়ে দেবে?
নাকি রাস্তার সবার
দিকে তাকিয়ে
কাঁধে হাত দিয়ে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…..
ধরো শেভ করছ তুমি,
গাল কেটে রক্ত পড়ছে,
এমন সময় তোমার এক ফোঁটা রক্ত হাতে নিয়ে যদি বলি- ভালবাসো?
তুমি কি বকা দেবে?
নাকি জড়িয়ে তোমার গালের রক্ত আমার
গালে লাগিয়ে দিয়ে খুশিয়াল গলায় বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…..
ধরো খুব অসুস্থ তুমি,
জ্বরে কপাল পুড়েযায়,
মুখে নেই রুচি,
নেই কথা বলার অনুভুতি,
এমন সময় মাথায় পানি দিতে দিতে তোমার মুখের
দিকে তাকিয়ে যদি বলি-ভালবাসো?
তুমি কি চুপ করে থাকবে?
নাকি তোমার গরম শ্বাস আমার শ্বাসে বইয়ে দিয়ে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি..
ধরো যুদ্ধের দামামা বাজছে ঘরে ঘরে,
প্রচন্ড যুদ্ধে তুমিও অংশীদার,
শত্রুবাহিনী ঘিরে ফেলেছে ঘর
এমন সময় পাশে বসে পাগলিনী আমি তোমায়
জিজ্ঞেস করলাম- ভালবাসো?
ক্রুদ্ধস্বরে তুমি কি বলবে যাও….
নাকি চিন্তিত আমায় আশ্বাস দেবে, বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…….
ধরো দূরে কোথাও যাচ্ছ তুমি,
দেরি হয়ে যাচ্ছে,বেরুতে যাবে,
হঠাত বাধা দিয়ে বললাম-ভালবাসো?
কটাক্ষ করবে?
নাকি সুটকেস ফেলে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি
ধরো প্রচন্ড ঝড়,উড়ে গেছে ঘরবাড়ি,
আশ্রয় নেই
বিধাতার দান এই পৃথিবীতে,
বাস করছি দুজনে চিন্তিত তুমি
এমন সময় তোমার
বুকে মাথা রেখে যদি বলি ভালবাসো?
তুমি কি সরিয়ে দেবে?
নাকি আমার মাথায় হাত রেখে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি..
ধরো সব ছেড়ে চলে গেছ কত দুরে,
আড়াই হাত মাটির নিচে শুয়ে আছ
হতভম্ব আমি যদি চিতকার করে বলি-
ভালবাসো?
চুপ করে থাকবে?
নাকি সেখান থেকেই
আমাকে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…..
যেখানেই যাও,যেভাবেই থাক,
না থাকলেও দূর
থেকে ধ্বনি তুলো,
ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি..
দূর থেকে শুনব তোমার কন্ঠস্বর,
বুঝব তুমি আছ, তুমি আছ
ভালোবাসি,ভালোবাসি……..!
======
      মেঘ বলতে আপত্তি কি ?
               – জয় গোস্বামী
মেঘ বলতে আপত্তি কি?
 বেশ, বলতে পরি
 ছাদের ওপোর মেঘ দাঁড়াতো
 ফুলপিসিমার বাড়ি
 গ্রীষ্ম ছুটি চলছে তখন
 তখন মানে? কবে?
 আমার যদি চোদ্দো, মেঘের ষোলো-সতেরো হবে
 ছাদের থেকে হাতছানি দিতো
 ক্যারাম খেলবি?… আয়…
 সারা দুপুর কাহাঁতক আর ক্যারম খেলা যায়
 সেই জন্যেই জোচ্চুরি হয়
 হ্যাঁ, জোচ্চুরি হতো
 আমার যদি চোদ্দো, মেঘের পনেরো-ষোলো মত।
 ঘুরিয়ে দিতে জানতো খেলা শক্ত ঘুঁটি পেলে
 জায়গা মত সরিয়ে নিতো আঙ্গুল দিয়ে ঠেলে
 শুধু আঙ্গুল?… বোর্ডের উপর লম্বা ফ্রকের ঝুল
 ঝপাং ফেলে ঘটিয়ে দিতো ঘুঁটির দিক ভুল
 এই এখানে… না ওখানে..
 এই এইটা না ঐটা
 ঝাঁপিয়ে পরে ছিনিয়ে নিলো ঘুঁটির বাক্সটা
 ঘুঁটির ও সেই প্রথম মরন
 প্রথম মরা মানে?
 বুঝবে শুধু তারাই… যারা ক্যারাম খেলা জানে।
 চলেও গেলো কদিন পরে.. মেঘ যেমন যায়
 কাঠফাটা রোদ দাঁড়িয়ে পড়ল মেঘের জায়গায়
 খেলা শেখাও, খেলা শেখাও, হাপিত্যেস কাক
 কলসিতে ঠোঁট ডুবিয়ে ছিলো, জল তো পুরে খাক
 খাক হোয়া সেই কলশি আবার পরের বছর জলে…
 ভরল কেমন তোমায়?…
 ধ্যাত্, সেসব কি কেউ বলে?…
 আত্মীয় হয়.. আত্মীয় হয়? আত্মীয় না ছাই
 সত্যি করে বল এবার, সব জানতে চাই
 দু এক ক্লাস এর বয়স বেশি, গ্রীষ্ম ছুটি হলে
 ঘুরেও গেছে কয়েক বছর, এই জানে সক্কলে
 আজকে দগ্ধ গ্রীষ্ম আমার তোমায় বলতে পারি
 মেঘ দেখতাম, ছাদের ঘরে, ফুলপিসিমার বাড়ি।
======
Bangla Kobita Lyrics - বাংলা কবিতা লিরিক্স - Bengali Poem Lyrics


Bangla Kobita Lyrics Rabindranath Thakur

        অনন্ত প্রেম 
             – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
 শত রূপে শত বার
 জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।
 চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়
 গাঁথিয়াছে গীতহার,
 কত রূপ ধরে পরেছ গলায়,
 নিয়েছ সে উপহার
 জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।
 যত শুনি সেই অতীত কাহিনী,
 প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
 অতি পুরাতন বিরহমিলনকথা,
 অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে
 দেখা দেয় অবশেষে
 কালের তিমিররজনী ভেদিয়া
 তোমারি মুরতি এসে,
 চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।
 আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি
 যুগল প্রেমের স্রোতে
 অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে।
 আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা
 কোটি প্রেমিকের মাঝে
 বিরহবিধুর নয়নসলিলে,
 মিলনমধুর লাজে—
 পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।
 আজি সেই চিরদিবসের প্রেম
 অবসান লভিয়াছে
 রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।
 নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ,
 নিখিল প্রাণের প্রীতি,
 একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে
 সকল প্রেমের স্মৃতি—
 সকল কালের সকল কবির গীতি।
======
      মেঘবলিকার জন্য রূপকথা
                   – জয় গোস্বামী
আমি যখন ছোট ছিলাম
 খেলতে যেতাম মেঘের দলে
 একদিন এক মেঘবালিকা
 প্রশ্ন করলো কৌতুহলে
 ‘এই ছেলেটা, নাম কি রে তোর?’
 আমি বললাম, ফুস মন্তর
 মেঘবালিকা রেগেই আগুন,
 মিথ্যে কথা, নাম কি অমন হয় কখনো?
 আমি বললাম, নিশ্চয়ই হয়, আগে আমার গল্প শোনো
 সে বলল, শুনবো না যাঃ, সেই তো রাণী সেই তো রাজা
 সেই তো একই ঢাল তলোয়ার
 সেই তো একই রাজার কুমার পক্ষিরাজে
 শুনবো না আর ওসব বাজে।
 আমি বললাম, তোমার জন্য নতুন করে লিখব তবে।
 সে বলল, সত্যি লিখবি! বেশ তাহলে মস্ত করে লিখতে হবে।
 মনে থাকবে? লিখেই কিন্তু আমায় দিবি।
 আমি বললাম, তোমার জন্য লিখতে পারি এক পৃথিবী।
 লিখতে লিখতে লেখা যখন সবে মাত্র দু চার পাতা
 হঠাৎ তখন ভুত চাপলো আমার মাথায়
 খুঁজতে খুঁজতে চলে গেলাম ছোটবেলার মেঘের মাঠে
 গিয়েই দেখি, চেনা মুখ তো একটিও নেই এ তল্লাটে
 একজনকে মনে হল ওরই মধ্যে অন্যরকম
 এগিয়ে গিয়ে বলি তাকেই
 তুমি কি সেই মেঘবালিকা, তুমি কি সেই?
 সে বলেছে, মনে তো নেই। আমার ওসব মনে তো নেই
 আমি বললাম, তুমি আমায় লেখার কথা বলেছিলে।
 সে বলল, সঙ্গে আছে? ভাসিয়ে দাও গাঁয়ের ঝিলে।
 আর হ্যা, শোন, এখন আমি মেঘ নই আর
 সবাই এখন বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়।
 বলেই হঠাৎ এক পশলায় আমায় পুরো ভিজিয়ে দিয়ে
 অন্য অন্য বৃষ্টি বাদল সঙ্গে নিয়ে
 মিলিয়ে গেল দূরে কোথায়, দূরে দূরে…।
 বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়….
 বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়….আপন মনে বলতে বলতে
 আমিই কেবল বসে রইলাম ভিজে এক-সা কাপড় জামায়
 গাছের তলায় বসে রইলাম
 বৃষ্টি নাকি মেঘের জন্য…
 এমন সময় অন্য একটি বৃষ্টি আমায় চিনতে পেরে বলল
 তাতে মন খারাপের কি হয়েছে?
 যাও ফিরে যাও-লেখ আবার
 এখন পুরো বর্ষা চলছে, তাই আমরা সবাই এখন নানান দেশে ভীষণ
ব্যস্ত
 তুমিও যাও, মন দাও গে তোমার কাজে।
 বর্ষা থেকে ফিরে আমরা নিজেই যাব তোমার কাছে।
 এক পৃথিবী লিখবো আমি
 এক পৃথিবী লিখবো বলে ঘর ছেড়ে সেই বেড়িয়ে গেলাম
 ঘর ছেড়ে সেই ঘর বাঁধলাম গহিন বনে
 সঙ্গী শুধু কাগজ কলম
 একাই থাকব, একাই দুটো ফুটিয়ে খাব
 ধুলোবালি দু এক মুঠো যখন যারা আসবে মনে
 তাদের লিখব, লিখেই যাব।
 এক পৃথিবীর একশ রকম স্বপ্ন দেখার সাধ্য থাকবে যে রূপকথার
 সে রূপকথা আমার একার।
 ঘাড় গুজে দিন লিখতে লিখতে
 ঘাড় গুজে রাত লিখতে লিখতে
 মুছেছে দিন মুছেছে রাত
 যখন আমার লেখবার হাত অসাড় হল
 মনে পড়ল, সাল কি তারিখ, বছর কি মাস
 সেসব হিসেব আর রাখি নি।
 লেখার দিকে তাকিয়ে দেখি
 এক পৃথিবী লিখব বলে একটা খাতাও শেষ করিনি।
 সঙ্গে সঙ্গে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল খাতার উপর, আজীবনের লেখার
উপর
 বাইরে তখন গাছের নিচে নাচছে ময়ূর আনন্দিত
 এ গাছ ও গাছ উড়ছে পাখি, বলছে পাখি
 এই অরণ্যে কবির জন্যে আমরা থাকি
 বলছে ওরা, কবির জন্য আমরা কোথাও, আমরা কোথাও, আমরা কোথাও হার
মানিনি।
 কবি তখন কুটির থেকে, তাকিয়ে আছে অনেক দূরে
 বনের পরে মাঠের পরে নদীর পরে
 সেই যেখানে সারা জীবন বৃষ্টি পড়ে বৃষ্টি পড়ে
 সেই যেখানে কেউ যায়নি, কেউ যায় না কোনদিনই
 আজ সে কবি দেখতে পাচ্ছে
 সেই দেশে সেই ঝর্ণা তলায়
 এদিক ওদিক ছুটে বেড়ায়
 সোনায় মোড়া মেঘ হরিণী
 কিশোর বেলার সেই হরিণী।
======


Bangla Kobita Lyrics Keu Kotha Rakheni

           কেউ কথা রাখেনি
                   – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি
 ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল
 শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
 তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই
বোষ্টুমী
 আর এলোনা
 পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি।
 মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর
 তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো
 সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর
 খেলা করে!
 নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো?  আমার মাথা এ ঘরের ছাদ
 ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায়
 তিন প্রহরের বিল দেখাবে?
 একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনো
 লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা
 ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি
 ভিতরে রাস-উৎসব
 অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পরা ফর্সা রমণীরা
 কত রকম আমোদে হেসেছে
 আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি!
 বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন, আমরাও…
 বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই
 সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস-উৎসব
 আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবেনা!
 বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,
 যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
 সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে!
 ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়েছি
 দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
 বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীল পদ্ম
 তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
 এখনো সে যে-কোনো নারী।
 কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটল, কেউ কথা রাখে না!
======
Bangla Kobita Lyrics - বাংলা কবিতা লিরিক্স - Bengali Poem Lyrics
          টেলিফোনে প্রস্তাব
                  – নির্মলেন্দু গুণ
আমি জানি, আমাদের কথার ভিতরে এমন কিছুই নেই,
 অনর্থ করলেও যার সাহায্যে পরস্পরের প্রতি আমাদের
 দুর্বলতা প্রমাণ করা সম্ভব। আমিও তো তোমার মতোই
 অসম্পর্কিত-জ্ঞানে এতদিন উপস্থাপন করেছি আমাকে।
 তুমি যখন টেলিফোন হয়ে প্রবেশ করেছো আমার কর্ণে-
 আমার অপেক্ষাকাতর হৃৎপিণ্ডের সামান্য কম্পনও আমি
 তোমাকে বুঝতে দিই নি। দুর্বলতা ধরা পড়ে যায় পাছে।
 তুমিও নিষ্ঠুর কম নও, তুমি বুঝতে দাওনা কিছু। জানি,
 আমার কাছেই তুমি শিখেছিলে এই লুকোচুরি করা খেলা।
 কিন্তু এখন, যখন ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে আমাদের বেলা,
 তখন ভেতরের চঞ্চলতাকে আমরা আর কতটা লুকাবো?
 অস্ত যাবার আগে প্রবল সূর্যও চুম্বন করে পর্বত শিখর,
 আর আমরা তো দুর্বল মানুষ, মিলনে বিশ্বাসী নর-নারী।
 কার ভয়ে, কী প্রয়োজনে আমরা তাহলে শামুকের মতো
 স্পর্শমাত্র ভিতরে লুকাই আমাদের পল্লবিত বাসনার শূঁড়।
 তার চেয়ে চল এক কাজ করি, তুমি কান পেতে শোনো,
 তুমি শুধু শোনো, আর আমি শুধু বলি, বলি, ভালবাসি।
======
            বনলতা সেন
                   – জীবনানন্দ দাশ
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
 সিংহল সমুদ্র থেকে আরো দূর অন্ধকারে মালয় সাগরে
 অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
 সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকার বিদর্ভ নগরে;
 আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
 আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।
 চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
 মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর
 হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
 সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
 তেমনই দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতোদিন কোথায়
ছিলেন?’
 পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে চাওয়া নাটোরের বনলতা সেন।
 সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
 সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
 পৃথিবীর সব রঙ মুছে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন,
 তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল।
 সব পাখি ঘরে আসে — সব নদী; ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
 থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।
======

বাংলা কবিতা Lyrics

             বউ 
             – নির্মলেন্দু গুণ
কে কবে বলেছে হবে না? হবে,বউ থেকে হবে।
 একদিন আমিও বলেছিঃ ‘ওসবে হবে না ।’
 বাজে কথা। আজ বলি,হবে,বউ থেকে হবে।
 বউ থেকে হয় মানুষের পুনর্জন্ম,মাটি,লোহা,
 সোনার কবিতা,–কী সে নয়?
 গোলাপ,শেফালি,যুঁই,ভোরের আকাশে প্রজাপতি,
 ভালোবাসা,ভাগ্য,ভাড়াবাড়ি ইতিপূর্বে এভাবে মিশেনি।
 ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল,দুইজন্ম এবার মিশেছে, দেখা যাক।
 হতচ্ছাড়া ব্যর্থ প্রেম,গাঁজা,মদ,নৈঃসঙ্গ আমার
 ভালোবেসে হে তরুণ,তোমাকে দিলাম,তুমি নাও।
 যদি কোনদিন বড় কবি হও,আমার সাফল্য
 কতদূর একদিন তুমি তা বুঝিবে।
 আমি কতো ভালোবাসা দু’পায়ে মাড়িয়ে অবশেষে,
 কল্পনার মেঘলোক ছেড়ে পৌঁছেছি বাস্তব মেঘে।
 আজ রাত বৃষ্টি হবে মানুষের চিরকাম্য দাবির ভিতরে।
 তার শয্যাপাশে আমার হয়েছে স্থান,মুখোমুখি,
 অনায়াসে আমি তা বলি না,বলে যারা জানে দূর থেকে।
 আমি কাছে থেকে জানি,বিনিময়ে আমাকে হয়েছে দিতে
 জীবনের নানা মূল্যে কেনা বিশ্বখানি,তার হাতে তুলে।
 অনায়াসে আমিও পারিনি। ক্রমে ক্রমে,বিভিন্ন কিস্তিতে
 আমি তা দিয়েছি,ফুলে ফুলে ভালোবেসে যেভাবে প্রেমিক।
 প্রথমে আত্মার দ্যুতি,তারপর তাকে ঘিরে মুগ্ধ আনাগোনা।
 স্বর্গের সাজানো বাগানে পদস্পর্শে জ্বলে গেছি দূরে,তারপর
 পেয়েছি বিশ্রাম । আজ রাত সম্পর্কের ভিতরে এসেছি।
 সবাই মিলবে এসে মৌন-মিহি শিল্পে অতঃপর,
 তোমার প্রদত্ত দানে পূর্ণ হবে পৃথিবী আমার।
======
        গৃহত্যাগী জোৎস্না
              – হুমায়ুন আহমেদ 

প্রতি পূর্নিমার মধ্যরাতে একবার আকাশের দিকে তাকাই
গৃহত্যাগী হবার মত জ্যোৎস্না কি উঠেছে ?
বালিকা ভুলানো জ্যোৎস্না নয়।
যে জ্যোৎস্নায় বালিকারা ছাদের রেলিং ধরে ছুটাছুটি করতে করতে
বলবে-
ও মাগো, কি সুন্দর চাঁদ !
নবদম্পতির জ্যোৎস্নাও নয়।
যে জ্যোৎস্না দেখে স্বামী গাঢ় স্বরে স্ত্রীকে বলবেন-
দেখ দেখ নীতু চাঁদটা তোমার মুখের মতই সুন্দর !
কাজলা দিদির স্যাঁতস্যাতে জ্যোৎস্না নয়।
যে জ্যোৎস্না বাসি স্মৃতিপূর্ন ডাস্টবিন উল্টে দেয় আকাশে।
কবির জ্যোৎস্না নয়। যে জ্যোৎস্না দেখে কবি বলবেন-
কি আশ্চর্য রূপার থালার মত চাঁদ !
আমি সিদ্ধার্থের মত গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নার জন্য বসে আছি।
যে জ্যোৎস্না দেখামাত্র গৃহের সমস্ত দরজা খুলে যাবে-
ঘরের ভেতরে ঢুকে পরবে বিস্তৃত প্রান্তর।
প্রান্তরে হাঁটব, হাঁটব আর হাঁটব-
পূর্নিমার চাঁদ স্থির হয়ে থাকবে মধ্য আকাশে।
চারদিক থেকে বিবিধ কন্ঠ ডাকবে- আয় আয় আয়।
======

Share This Article