চরিত্রহীনার গল্প – Charitraheenar Golpo – Bengali Story

Bongconnection Original Published
9 Min Read


 চরিত্রহীনার গল্প – Charitraheenar Golpo – Bengali Story

চরিত্রহীনার গল্প - Charitraheenar Golpo - Bengali Story
Loading...

চরিত্রহীন
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
 – শ্রাবন্তী মিস্ত্রী
ঝুমা বিয়ে হয়ে এই শহরে এসেছে, সাতটা বছর কেটে গেছে।স্বামী অরিন আর ছোট্ট
বুবাইকে নিয়ে সুখের সাজানো সংসার।বুবাইয়ের বয়স পাঁচ।শহরের একটা নামী স্কুলে
ভর্তি করা হয়েছে তাকে।অরিন বা ঝুমা দুজনেই মফঃস্বলের ছেলে মেয়ে।না বিয়ে টা
প্রেম করে হয়নি,দুই পরিবারের বিচারেই চার হাত এক হয়েছিল সাত বছর আগে।বিয়ে
করে অরিন ঝুমাকে নিয়ে আসে একটা ভাড়ার ফ্ল্যাটে তারপর টাকা জমিয়ে এখন নিজেদের
ফ্ল্যাট কিনেছে।ঝুমা অনেকবার শ্বশুর শাশুড়িকে বলেছে, আপনারা চলে আসুন এখানে
কিন্তু তারা নিজেদের ভিটে ছেড়ে আসতে চাননি।তবে মাঝেমধ্যে এসে ছেলে বৌমার কাছে
থেকে যান।তখন ঝুমা খুব খুশি হয়।আসলে শহরের সবাই কেমন যেনো!প্রয়োজন ছাড়া কেউ
কারো সাথে কথা বলে না, এমনকি বিপদেও কাউকে পাশে পাওয়া যায় না।তার চেয়ে ঢের
ভালো তাদের মফঃস্বল।দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ,চারিদিকে সবুজ,পাখিদের কলতান বড়
পছন্দের ঝুমার তাই এই কংক্রিটের জঞ্জালে ভরা শহরে প্রান হাঁপিয়ে ওঠে ঝুমার।
তাই প্রথম যখন সম্বন্ধটা এসেছিল ঝুমা বলেছিল – ” না আমি শহরে বিয়ে করবো না।”
মা আর দাদা বুঝিয়েছিল- ”অরিন আমাদের পরিচিত,ভালো ছেলে।ওদের পরিবারের সাথেও
আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো।তুই অনেক ভালো থাকবি।ভাবতো কতো আধুনিক হতে পারবি!”
ঝুমা মনে মনে ভাবছিল যে এতোদিন ধরে অরিন শহরে থেকেও গ্ৰামের মেয়েকে বিয়ে
করছে!এতোদিনে কি শহরের কাউকে পছন্দ হয়নি অরিনের?তবে ঝুমার এই প্রশ্নের উত্তর
ঝুমা পেয়ে গেছিল ফুলসজ্জার রাতে।সেই রাতে অরিন শুনিয়েছিল তার দু দুবার মন
ভাঙার কাহিনী।প্রথমে একটু খারাপ লেগেছিল শুনতে কিন্তু ঝুমা মেনে
নিয়েছিল।বলেছিল চলো অতীত ভুলে আমরা দুজন দুজনকে ভালোবেসে নতুন করে জীবন শুরু
করি।তখন অরিন শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিল ঝুমাকে।

তারপর কেটে গেছে কিছু মাস।মাঝেমাঝে অরিন রাত করে বাড়ি ফেরে।কখনো নেশাগ্রস্ত
হয়েও।অরিন বলে বন্ধুদের সাথে মাঝে মাঝে হয়েই যায়,এসব নিয়ে অতো মাথা ঘামানোর
দরকার নেই।বাবা মাকে এসব জানিও না তুমি আমার সহধর্মিণী তাই আমার পরিস্থিতিটা
বোঝাও তোমার কর্তব্য।প্রতিটা রাতে কিন্তু অরিন ঝুমাকে ভোগ করতে ছাড়ে না,
শরীরের খিদে মেটাতে ক্ষুধার্ত হায়েনার মতো।ঝুমা তো তার স্ত্রী অধিকার তো তার
আছে।দিনের পর দিন গর্ভনিরোধক ওষুধ খেতে খেতে অসুস্থ হয়ে পড়ে।কিন্তু অরিন বোঝে
না কষ্টটা।ঝুমা মনে মনে ভাবে এ সমাজে সার্টিফিকেট প্রাপ্ত ধর্ষকের উদাহরণ বুঝি
অরিন।বুবাই হওয়ার পর ঝুমা বলে ছেলে বড় হচ্ছে আর নেশা করে এসো না।এসব দেখে ও
কী শিখবে?ঝুমার কথায় আমল দেয় না অরিন।

চরিত্রহীন নারী 

Loading...
ঝুমার বাড়িতে কাজের লোক বেশীদিন থাকেনা কোনো অজ্ঞাত কারণ বশত। যাওয়ার সময়
কেউ কিছু বলে যায়না। একদিন রান্নাঘরে ঢুকে ঝুমা অবাক হয়ে দেখে রান্নার মাসির
ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে অরিন তার শরীরটা তারিয়ে তারিয়ে দেখছে‌।ঝুমা বলে তুমি এখন
রান্নাঘরে?অরিন ঝাঁঝিয়ে বলে ওঠে – ”আমার বাড়ি আমি কোথায় যাবো তার পারমিশন
তোমার থেকে নিতে হবে নাকি?” মনে বড় ব্যাথা পায় ঝুমা কিন্তু স্বামীকে সন্দেহ
করতে যে মন সায় দেয় না।ব্যাপার টা কাকতালীয় ভেবে ছেড়ে দেয় হয়তো তার দেখার
ভুল।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলেই দেখে অরিন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।জিজ্ঞেস করলে
বলে বন্ধুদের ফোন।অরিনের কথা বলা হয়ে গেলেই বিছানাতে ফিরেই ঘুমন্ত ঝুমার উপর
শুরু করে তার কামনার বহিঃপ্রকাশ।এরকম ভাবে সাতটা বছর কেটে গেছে।এখন যেনো সবটা
সয়ে গেছে ঝুমার অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে সে।
হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে ফোন করে মা জানালো যে তার কাকার মেয়ে প্রিয়ার স্বামী
মারা গেছে।মাত্র ছ’মাস বিয়ে হয়েছিল মেয়েটার।বড্ড ভেঙে পড়েছে কিছু খাচ্ছে
না,কান্নাকাটি করছে। আশেপাশের লোকজন কথা শোনাচ্ছে।ঝুমা মাকে বললো প্রিয়াকে
আমার কাছে পাঠিয়ে দাও মনটা ঠিক থাকবে আর একাকিত্ব টাও দূর হবে।


কয়েকদিন পর প্রিয়া এলো ঝুমার বাড়িতে।ঝুমা ছোট বোনকে বুকে জড়িয়ে বললো –
”একদম কাঁদবি না, তোর দিদি আছে তো! তুই বিয়ের আগে বলেছিলি না এম এ পড়বি?তুই
আমার কাছে থেকেই আবার পড়াশোনা করবি।”

এখন সময় বেশ কেটে যায় প্রিয়ার সাথে।দুই বোন কখনো রান্না করে,কখনো শপিং মলে
যায়,কখনো গল্প করে।প্রিয়া এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে।বুবাইকে সে খুব
ভালোবাসে।খুব ভাব তার সাথে।

চরিত্রহীন গল্প 

সেদিন ছিল বুবাইয়ের জন্মদিন প্রিয়াকে কেক খাওয়ানোর পর প্রিয়া বুবাইকে কোলে
নিয়ে আদর করছিল।সেখানে চলে আসে অরিন। বুবাইকে নিজের কোলে তুলে নেওয়ার অছিলায়
তার হাত সজোরে আঘাত করে প্রিয়ার স্তনে।প্রিয়া হকচকিয়ে যায় প্রথমে তারপর
সামলে নেয় নিজেকে।
মাঝরাতে অরিন এখন প্রায় সবার অজান্তে উঁকি মারে সদ্য বিধবা প্রিয়ার ঘরে।তারপর
ফিরে এসে মজে ওঠে ঘুমন্ত ঝুমাকে জাগিয়ে শরীরের খেলায়।একদিন ঝুমা বুবাই কে
আনতে গেছে স্কুল থেকে।অসময়ে বাড়ি ফিরে এসে অরিন প্রিয়াকে কু প্রস্তাব দেয়।
প্রিয়া অসহায়ের মতো কাঁদতে থাকে।জামাইবাবুর এমন কদাকার রূপ সে কখনো ভাবতে
পারেনি।নিজেকে বাঁচাতে সে দরজা বন্ধ করে দেয়।দুমদাম শব্দ ওঠে দরজায়।দেখি
কতোদিন আমার হাত থেকে বাঁচতে পারিস তুই?শাসিয়ে বেরিয়ে যায় অরিন।
ঝুমা ফিরলে প্রিয়া বলে – ”আমি বাড়ি ফিরে যাবো দিদি।” 
ঝুমা বলে, ”এইতো কটা দিন এলি দিদির কাছে থাকতে ভালো লাগছে না?”
“না রে দিদি তা নয়।”
“তা নয় যখন আর কটা দিন থেকে যা।আর কোনো কথা আমি শুনবো না তোর।”
প্রিয়া কিছুই বলতে পারেনি দিদিকে সে চায়না তার দিদির সংসারটা নষ্ট হোক।সে ঠিক
করেছে পরের সপ্তাহে ফিরে যাবে।এ কদিন দিদির সাথে সাথেই থাকবে।ভয়ে প্রিয়া
জামাইবাবুর সামনে যাওয়াই বন্ধ করে দিল।
একদিন সকালে প্রিয়া নিজের ঘরেই ছিল।ঝুমা ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে গেছে।
অরিন যে বাড়িতে আছে খেয়াল করেনি প্রিয়া।ঝুমা চলে যেতেই ঘরে ঢুকে পড়লো
অরিন।আঁতকে উঠলো প্রিয়া। দিদি বলে ডেকে উঠলো প্রিয়া। 
“দিদিকে ডেকে লাভ নেই সোনা দিদি এখানে নেই।আচ্ছা তোমার সাথে আরেকটু সময়
কাটানোর জন্য দিদিকে আরেকটু দেরি করিয়ে দিচ্ছি।”
কল করে ঝুমাকে বললো ”খুব মাথা ধরেছে।আসার সময় মেডিসিন নিয়ে আসতে ভুলো না।”
ফোন টা রেখে বললো – ”বুঝলে প্রিয়া ওষুধ দোকান অনেকটা দূরে ফিরতে ফিরতে আমার
কাজ শেষ হয়ে যাবে।আর আমি জানি তুমি লক্ষী মেয়ে দিদিকে কিচ্ছুটি বলবে না বললে
যে তোমার মতো দিদির ও আর সংসার করা হবে না।স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেকদিন
স্বামী সোহাগ পাওনি তো?এসো কাছে এসো আজ আমি তোমাকে আদরে আদরে ভরিয়ে দেবো।”
 প্রিয়া হাত জোড় করে কাকুতি মিনতি করতে থাকলো কিন্তু সব বৃথা নিজস্ব
ভঙ্গিতেই অরিন ঝাঁপিয়ে পড়লো নতুন শরীর ভোগ করতে।


চরিত্রহীন উপন্যাস

ঝুমা ফিরে ভাবলো প্রিয়া নিশ্চয়ই টিভি দেখছে।আর অরিনের মাথা ধরেছে তাই কলিংবেল
না চেপেই ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে এসে শুনলো। প্রিয়ার ঘরে
আওয়াজ।ছুটে গিয়ে যা দেখলো তাতে তার মাথা ঘুরে গেল।ঝুমাকে দেখেই চমকে উঠলো
অরিন।তাড়াহুড়ো করে পোশাক টা পরে বললো – ”এই নোংরা মেয়েটাকে বাড়িতে আশ্রয়
দিয়েছ তুমি দেখো ও কেমন?আমাকে বললো জামাইবাবু আমাকে নিজের করে নাও নাহলে আমি
মরে যাবো তাই…… ”
প্রিয়া কিছু বলছে না মাথা নীচু করে কেবল অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে।ঝুমা এবার সজোরে
চড় কষালো অরিনের গালে।বললো- ”তোমার এই সংসার আর নোংরা জীবন নিয়ে তুমি
থাকো।চরিত্রহীন স্বামীর চেয়ে সারাজীবন একা থাকা ভালো।আমি আজ ই বুবাই কে নিয়ে
বাপের বাড়ি চলে যাবো।আর তোমার সাথে আমার আবার দেখা হবে কোর্টে।প্রিয়া
সালোয়ার টা পরে নে।”
”তুমি এই শয়তানি মেয়েছেলেটার জন্য নিজের স্বামীকে অবিশ্বাস করছো ঝুমা?সাত
বছরে আমার প্রতি তোমার এই বিশ্বাস?”
ঝুমা বললো – ”সাত বছর ধরে তোমাকে অন্ধ বিশ্বাস করেছি সেটা আমার ভুল।আর প্রিয়া
কে দোষ দিচ্ছ মাথা ব্যাথায় ওষুধ টা কিসের বাহানা ছিল? নেহাত রিয়ার মায়ের
সাথে দেখা হল বললো দোকান বন্ধ তাই তো তাড়াতাড়ি ফিরে সবটা জানতে পারলাম।অভাগী
মেয়েটা আমাকে বলতো না।ওইজন্য চলে যেতে চাইছিলি বোন?আমি বুঝতে পারিনি রে।”
প্রিয়া দিদির বুকে পড়ে বললো, ” দিদি আমার জন্য তোর ঘর ভাঙবে চাইনা রে।”
ঝুমা বললো,” যে ঘরের ভিত নড়বড়ে সে ঘর এমনিতেই ভাঙবে।চল তোকে আর বাবাই কে
নিয়ে আমরা ফিরে যাবো আমারে ছোট্ট মফঃস্বলে আগের মতো একসাথে থাকবো।আর বুবাই কে
কখনো ওই লোকটার সংস্পর্শে আসতে দেবো না।নিজেদের মনে মতো করে বড় করবো ওকে দুজন
মিলে।”
সমাপ্ত

Share This Article