রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – Romantic Valobashar Golpo

Bongconnection Original Published
17 Min Read


 রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – Romantic Valobashar Golpo

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প - Romantic Valobashar Golpo
Loading...


রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প কাহিনী

Loading...
বিবাহ বিচ্ছেদ 
 – ছবি ব্যানার্জি 

রাত দশটায় ধৃতিমান ফোনটা রিসিভ করতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখল লাবণ্যর ফোন।ফোন থেকে
লাবন্যর সব ছবি ডিলিট করলেও  নাম্বারটা নাম সহ  অজান্তেই থেকে
গিয়েছিল। দীর্ঘ সাত বছর হয়ে গেল লাবন্যকে ডিভোর্স করা।এতদিন পরে কি কারণে ফোন
করছে?ডিভোর্সের আগে সে তো এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা দিতেই চেয়েছিল।সে তখন
ঘৃনাভরে রিফিউজ করেছিল।তাহলে কি সে এখনো চাকরি পায়নি? টাকার সমস্যায় পড়েছে?

ফোনটা রিসিভ করে বলল–কেমন আছো লাবন্য?এতদিন পর কেন ফোন করলে?কোনো দরকারে?ও
প্রান্ত থেকে লাবন্য  বলল–ভালো আছি ধৃতি।আসলে ফোনটা ঠিক আমার দরকারে
করিনি।বলতে পারো তোমার দরকারে করেছি।–আমার দরকার?–তুমি কি সামনের রবিবার
একবার বর্ধমান আসতে পারবে?স্টেশনে আমার পরিচিত একজন  তোমাকে আমার বাড়ি
নিয়ে আসবে।স্টেশন থেকে মাইল সাতেকের দুরত্বে আমার বাড়ি।ধৃতিমান বলল–কিন্তু কি
দরকারটা কি বললে না তো?–ওটা না হয় এলেই বলব।আমার বাড়িতে সেদিন দুপুরে একটু ডাল
ভাত খেও।ফেরার সময় তোমাকে স্টেশনের পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।
ধৃতিমান বলল–আমি এই রবিবারই যাব।কিন্তু আমি তোমার পরিচিত মানুষটিকে চিনব
কিভাবে?লাবণ্য বলল– তোমার চেনার দরকার নেই।  তোমার একটা ছবি তার 
মোবাইলে সেন্ড করে দেব।–আমার ছবি এখনো ডিলিট করে দাওনি জেনে আশ্চর্য
হলাম।–দেড় বছরের বিবাহিত জীবনের সব স্মৃতি ডিলিট করে দিলেও একচিলতে স্মৃতি
বোধহয় সারাজীবনই থেকে যায়।

ধৃতিমান ফোনটা রেখে মনে মনে ভাবল ভাগ্যিস আজ রঞ্জা বাড়ি নেই। ইদানিং তাকে
সন্দেহ করাটা তার মানসিক রোগে পরিণত হয়েছে।রঞ্জার সংগে তার টানা তিনবছরের
সম্পর্ক যখন একসময় ভেঙে গেল তখন ধৃতিমানের প্রায় পাগল পাগল অবস্থা।রঞ্জা বিনা
নোটিশে একদিন বিয়ে করে আমেরিকা চলে গেল।চলে যাওয়ার দিন দশেক আগে পর্যন্ত সে
ঘুনাক্ষরেও জানতে পারেনি।মাস খানেক পরে সে ফোন করে ক্ষমা চেয়ে বলেছিল–ধৃতি
আমাকে প্লিজ ভুলে যেও। পরিস্থিতির চাপে পড়ে আমি বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি।কথাটা যে
সম্পূর্ণ মিথ্যে এটা পরে ধৃতি জেনেছিল। 

ভালোবাসার গল্প কথা

ছেলের এইরকম বিধ্বস্ত চেহারা আর মাঝে মাঝেই তার গা থেকে মদের গন্ধ পেয়ে অর্পিতা
বলল–ধৃতি তোর কি হয়েছে বল তো?ধৃতি বলল–মা আমি বিয়ে করতে চাই।–আমার কি
করণীয়?বিয়ে তো তুই নিজেই ঠিক করে রেখেছিস রঞ্জার সংগে।অনুষ্ঠান করে বিয়ে করলে
আমি রঞ্জার বাবা মার সংগে কথা বলে একটা ডেট ঠিক করতে পারি।
ধৃতি বলল–মা রঞ্জা বিয়ে করে আমেরিকা চলে গেছে।–ও  বুঝেছি তাই বুঝি 
তুই দেবদাস হয়ে মদ ধরেছিস?আদৌ কি তোদের মধ্যে সত্যিকার ভালোবাসা ছিল বাবা?
তোদের এই যুগের ভালোবাসার মানেটাই আমি বুঝিনা।তোর পৌরুষে লেগেছে বলে জেদ করে
বিয়ে করতে চাইছিস না তো?–না মা,আমি অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আরো পড়ুন, Valobashar Golpo 2020


লাবণ্যর সংগে বিয়েটা সন্বন্ধ করেই হল।তাকে দেখতে গিয়ে পরিচয় ও বেরিয়ে
পড়ল।লাবণ্যর বাবা তার স্বামীর পরিচিত বন্ধু ছিলেন।দু বছর আগে তিনিও গত
হয়েছেন।লাবণ্যর মা  দাদা বৌদি তাদের যথেষ্ট আদর আপ্যায়ন করলেন।অর্পিতার
স্বামী পাঁচবছর আগে গত হয়েছেন।লাবণ্য এম এ পাশ।তার চেহারা ডানাকাটা সুন্দরী না
হলেও যথেষ্ট সুশ্রী কাটা কাটা চোখ মুখের লাবণ্যময়ী মেয়ে।
বিয়ের পর আস্তে আস্তে ধৃতির অস্থিরতা কমল।তার পরিবর্তন ও লাবণ্যর প্রতি অনুরাগ
দেখে মা অর্পিতা স্বস্তি পেল।লাবণ্যর অনেকটা সময় কাটত ফ্ল্যাটের দুটো বারান্দা
ভর্তি টবের গাছপালার সংগে।এই টব আর গাছ তারই শখে ধৃতি তাকে এনে
দিয়েছিল।গাছগুলোতে রোদ আলোর প্রাচুর্য কম থাকলেও লাবণ্যর পরিচর্যার গুণে গাছে
বেল,কামিনী,রজনীগন্ধা,রঙ বেরঙের গোলাপ ফুটত।আর ছিল তার বিভিন্ন ধরনের রান্নার
নেশা।এখনকার প্রজন্মের মেয়ে হয়ে রান্না, ঘর গেরস্থালির প্রতি তার ভালোবাসা দেখে
অর্পিতা মুগ্ধ হয়ে যেত। অবসর সময়ে ভালোবাসতো গান শুনতে বই পড়তে।

ধৃতিমান প্রথম প্রথম এটা খুব এনজয় করত। রঞ্জা ছিল উগ্র আধুনিকা  মেয়ে।তার
সংগে মেলামেশা করে ধৃতি অনেকটা  বোহেমিয়ান জীবন যাত্রায় অভ্যস্ত ছিল।ঘরের
থেকে বাইরের বিলাস বহুল জীবনযাত্রা,পার্টি,বাইরে খাওয়া দাওয়া শপিং ইত্যাদিতে
চাকরির বাইরে সময় কাটাত। লাবণ্যর এই অতিরিক্ত সংসার প্রীতি গাছ গাছালির প্রতি
ভালোবাসা শান্ত নিরুপদ্রব আলুভাতে মার্কা জীবনে সে ক্রমশই বিরক্ত হচ্ছিল।লাবণ্য
তার সংগে পার্টিতে বা ঘোরাঘুরিতে আপত্তি ছিল এমনটাও নয়।কিন্তু উগ্র আধুনিক সাজ
পোশাক লাবণ্য কখনোই পছন্দ করত না।রঞ্জা যদি গনগনে আগুন কিংবা উত্তাল সমুদ্র হয়
লাবণ্য শান্ত নদী কিংবা স্নিগ্ধ চাঁদের আলো। বিয়ের সাত আটমাসের  মধ্যে
রঞ্জার সংগে লাবণ্যর এই আসমান জমিন ফারাকটা ধৃতির চোখে প্রকট হয়ে  প্রতি
মুহূর্তেই ধরা পড়ত।এভাবেই চলছিল ওদের জীবন। 

সেরা ভালোবাসার গল্প

একবছর পর থেকে ধৃতির পরিবর্তন তার মা অর্পিতা আর লাবণ্যর চোখে পড়ল।ধৃতি একটা
নামী মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার।তার চাকরির জায়গা থেকে
ফিরতে রাত নটা সারে নটা বেজে যায়।কিন্তু ইদানিং সে মাঝে মাঝেই রাত এগারোটার
বাড়ি 
 ফিরছে টলমল পায়ে।কখনো কখনো লাবণ্য ধৃতির শার্টে লিপস্টিকের দাগ দেখতে
পায়।গা থেকে মদের গন্ধের সংগে দামী মেয়েদের পারফিউমের গন্ধ পায়।
অনেকদিন লাবণ্য দাঁতে দাঁত চেপে এগুলো সহ্য করল।অপেক্ষায় ছিল   
ধৃতির স্বাভাবিক অবস্থায় ঘরে ফেরার জন্য।কিন্তু তার আগেই একদিন ধৃতি নেশায় চূড়
হয়ে ঘরে ফিরে চিৎকার করে বলল–তুমি কি ভেবেছো?নীরবে মুখ বুঁজে থেকে আমার দিকে
এভাবে ঘৃনার দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে প্রতিবাদ জানাবে?লাবণ্য শান্ত গলায় বলল–তোমার
সংগে আমার কথা আছে ধৃতি।কিন্তু এই অবস্থায় আমি একটা কথাও বলব না।–আলবত 
বলবে।আমি ঠিক আছি।বলো তোমার কি বলার আছে?
ছেলের চিৎকার কানে যেতেই অর্পিতা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে কঠিন গলায় বলল–
ধৃতি  তুই কি বলতে চাস আমাকে বল।–মা তুমি ঘরে যাও।তুমি আমাদের পার্শন্যাল
ব্যাপারে নাক গলিও না।–লাবণ্যর ব্যাপারে আমার দায়বদ্ধতা আছে।তুই কি চাস
পরিস্কার করে বল।তোর পরিবর্তন আমিও লক্ষ্য করেছি।–মা লাবণ্যর মতো গেরস্থালি
মার্কা মেয়ের সংগে আমি সম্পর্ক রাখতে পারব না।–তাহলে তুই বিয়ে করলি কেন?–আমি
ভেবেছিলাম লাবণ্য আধুনিক যুগের আধুনিক মনস্ক মেয়ে।আমি একটা রেস্পেক্টবল পোষ্টে
চাকরি করি।স্ট্যাটাস বজায় রাখতে আমাকে পার্টিতে যেতে হয়,ড্রিঙ্ক করতে হয়।লাবণ্য
এসব পছন্দ করে না।
অর্পিতা বলল–ও  প্রতিদিন  মাতাল হয়ে ঘরে ফেরার নাম বুঝি তোর চাকরির
স্ট্যাটাস?  শরীর দেখানো পোশাক পড়ার নাম আধুনিকতা?এগুলো তোর অজুহাত
ধৃতি।এবার আসল কথাটা বল।–মা রঞ্জা ডিভোর্স নিয়ে দেশে ফিরে এসেছে।তার স্বামী ওর
সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।তার বহু মেয়ের সংগে সম্পর্ক। আমাকে ছেড়ে গিয়ে ও খুব
অনুতপ্ত মা। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।
অর্পিতা বলল– এটাই তোর আসল কথা।তাহলে তুই লাবণ্যর সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করছিস না
বলছিস? আসল কথা কিন্তু এটা নয় ধৃতি।রঞ্জা ধূমকেতুর মতো ডিভোর্স নিয়ে দেশে না
ফিরলে তুই ঠিকই লাবণ্যকে ভালোবাসতিস আমি লাবণ্যর প্রতি তোর ভালোবাসা নিজে
দেখেছি।ওর সংগে দ্বিতীয়বার মেলামেশা করে তার সংগে খুঁজে খুঁজে ফারাকটা বের করে
অজুহাত তৈরি করেছিস।
ধৃতি বলল–বুঝে দ্যাখো মা।আমি লাবণ্যর সংগে জোর করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখলেই
বিশ্বাসঘাতকতা করতাম।বিশ্বাস করো মা আমি রঞ্জাক ভুলতে পারিনি।লাবণ্য বলল–ধৃতি
আমি  তোমাকে মিউচুয়াল ডিভোর্স দেব।গত ছমাস ধরে তুমি রঞ্জার সংগে নতুন করে
সম্পর্কে জড়িয়েছিলেই যদি তাহলে এত দেরি করলে কেন বলতে?ধৃতি বলল– আমাকে ক্ষমা
করো লাবণ্য।আমি তোমাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে চাই ।–ধন্যবাদ ধৃতি,আমার টাকার
দরকার নেই।
রঞ্জাকে বিয়ে করার পর মা মোটামুটি  আক্ষরিক অর্থেই  নিজেকে ঘর বন্দি
করল।রঞ্জা রান্না বা সংসারের কোনো কাজের ধারে কাছে যেত না।সে দেশে ফিরে একটা
কোম্পানির চাকরি জুটিয়ে নিয়েছিল।ঘর দেখবার তার সময় ও ছিলনা।কাজের মাসি রান্নার
মাসি  সংসার দেখতো।লাবণ্যর টবের ফুল গাছগুলো যত্ন ও পরিচর্যার অভাবে
শুকিয়ে গেল।
বিয়ের এক বছরের মাথায় রঞ্জা কনসিভ করল। ধৃতির সংগে প্রবল ঝগড়াঝাঁটির সময়ে একথা
অর্পিতার কানে গেল।রঞ্জার উত্তপ্ত চিৎকার শোনা যাচ্ছিল।– আমার পরিস্কার কথা
আমি এত তাড়াতাড়ি বাচ্চা নেব না। এখনো জীবনটা ভোগই করলাম না।এর মধ্যে ফিগার নষ্ট
করে কি করে ভাবলে তুমি আমি বাচ্চা ক্যারি করব?ধৃতি বলল–এক বছর তার ও আগে সারে
তিন বছর যথেষ্ট জীবন ভোগ করেছো তুমি।আমি আবারও বলছি এ বাচ্চা নষ্ট কোরোনা।তোমার
পাল্লায় পড়ে জীবন ভোগ করার নামে উচ্ছৃঙ্খল জীবনে আমার সংগে তুমিও অভ্যস্ত হয়ে
পড়ছ।এবার থামা এবং থিতু  হওয়ার দরকার।
রঞ্জা শোনার মেয়েই ছিলনা।সে নার্সিং হোম থেকে এবরেশন করে এল।ঠিক তার দুদিন পর
মা বাড়ি ছেড়ে চলে গেল একটা চিঠি লিখে রেখে।চিঠিতে লেখা–ধৃতি তোদের দুজনের
উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন আমি এই একটা বছর মুখ বুজে সহ্য করলাম।আমি পুরোনো মানসিকতার
মানুষ।আমি আধুনিকতার নামে ছেলে কিংবা মেয়ে কারোর মদ খাওয়া আজ ও মানতে পারিনা।
পার্টির নামে তোদের দুজনের নেশা করে ঘরে ফেরা আমি দেখেও ঘর থেকে বেরোতাম
না।নিত্যদিনের ঝগড়াঝাঁটি অশান্তি আমি আর সহ্য করতে পারলাম না।বাচ্চাটা রঞ্জা
নষ্ট করে এল।সেটাও দেখলাম।আমি একটু শান্তির খোঁজে শান্তিকুঞ্জ বলে একটা জায়গায়
চলে গেলাম।আমাকে বৃথা খোঁজার চেষ্টা করিস না।তোকে আমি ঠিকানা জানাব 
না।  ইতি মা।
ধৃতিমান মায়ের চিঠি পড়ে প্রথমে স্তব্ধ হয়ে গেছিল।রঞ্জা বাচ্চাটা এবরেশন না করলে
মা হয়তো এভাবে চলে যেতনা।একটা ছোট্ট বাচ্চা সংসারে অনেক কিছু জোড়া লাগাতে
পারে।তার  রঞ্জার বহির্মুখি মনকে ঘরমুখি করতে পারত একটা শিশুর আগমন।মাকে
খোঁজার জন্য সে কলকাতার আশেপাশে সব বৃদ্ধাশ্রমে গোরু খোঁজা করে
খুঁজেছিল।শান্তিকুঞ্জ নামে একটা বৃদ্ধাশ্রমের খোঁজ ও পেয়েছিল। সেখানে তিনজন
অর্পিতা নামের মহিলা ছিলেন।কারোর টাইটেল অর্পিতা সেন নয়।তবু খড়কুটো আঁকড়ানোর
মতোই তিনটে মহিলার ঘরে গিয়ে হতাশ হতে হল।এখানেও তার মা নেই।
মা চলে যাওয়ার পর এই অগোছালো ফ্ল্যাটটাকে তার এখন রাত্রিবাসের হোটেল মনে
হত।লাবণ্যর সংগে বিয়ের আগে পর্যন্ত মা কনক  মাসী বলে দীর্ঘদিনের একটা সব
সময়ের মাসীর সাহায্যে নিজে ছেলের পছন্দের রান্না করত।লাবণ্য এসে রান্নার
দায়িত্বটা হাসিমুখে নিজে নিয়েছিল।আজ মনে হয় রঞ্জা যদি ছুটিছাটার দিনে এক আধটা
পদ নিজে হাতে রান্না করত। যত্ন করে খাবারটা বেড়ে দিয়ে যদি বলত–খাবার ঠান্ডা
হয়ে যাচ্ছে খেতে এসো।অসময়ে চা চেয়ে স্ত্রীর ছদ্ম বিরক্তি ভরা মুখটা দেখতে পেত।
 নাঃ এসব ভেবে আর লাভ নেই।অনেকটা রাত  হয়ে গেল।টেবিলে ঢেকে রাখা
খাবারটা আজ আর মাইক্রোওভেনে গরম করতে ইচ্ছে করল না।কোনোরকমে খেয়ে বিছানায় এল।
আজ বড় ইচ্ছে করছে  ঘর গেরস্থালিকে ভালোবাসার মেয়েটার কথা ভাবতে।তার যত্নে
লাগানো শুকিয়ে যাওয়া ফুলের গাছগুলো ফেলে দিয়ে নতুন করে রঙ বেরঙের ফুল গাছ এনে
আবার ফুল ফোটাতে বড় ইচ্ছে করছে।কল্পনা করতে ইচ্ছে করছে লাবণ্য আজ ও বিয়ে
করেনি।তার গভীর টলটলে দুচোখে ভালোবাসার ছায়া ধরে রেখেছে শুধু তারই জন্যে। তার
বুকের ভিতর মায়াবী নদীটা একলা নিঃসঙ্গে বয়ে চলেছে কারোর প্রতীক্ষা না করেই।ছিঃ
ছিঃ  এসব কি আকাশ কুসুম কল্পনা করছে সে।তার নিজের দরকারে লাবণ্য তাকে
ডেকেছে এটাই বাস্তব।

আরো পড়ুন, এতটা ভালোবাসি 4
রবিবার ধৃতি বেলা বারোটায় বর্ধমান স্টেশনে নামল।একটা সুদর্শন সুবেশ দীর্ঘদেহী
যুবক এগিয়ে এসে নমস্কার করে স্মিত হেসে বলল–আমি জয়ব্রত বসু।আপনি নিশ্চয়ই
ধৃতিমান সেন।আসুন আমি আপনার জন্যেই অপেক্ষা করছি।মিনিট কুড়ির মধ্যে গাড়িটা একটা
সুন্দর একতলা  বাড়ির  বড় গেটের মধ্যে ঢুকল।বাড়ির মধ্যে একপাশে সাজানো
মরসুমি ফুলের বাগানে ফুলে ফুলে আলো হয়ে আছে ।বাগানটায় যত্ন ও পরিচর্যার ছাপ
স্পষ্ট।ধৃতি বলল–বাহ্ ভারি সুন্দর বাগান তো। জয়ব্রত বাবু বললেন– সবটাই
লাবণ্যর শখ। একটা মালি থাকলেও সে নিজে হাতে বাগানের পরিচর্যা করে।আমি গাড়িটা
গ্যারেজ করে আসছি।আপনি যান।লাবণ্য আপনার অপেক্ষায় আছে।ভদ্রলোকের মুখে লাবণ্যর
নাম শুনে ধৃতি একটু অবাক হল।ইনি কেমন পরিচিত মানুষ যে অবলীলায় লাবণ্যর নাম ধরে
ডাকে।
লাবণ্য বলল–এসো ধৃতি।তোমাকে অনেক কষ্ট দিলাম।জয়ব্রতকে দেখিয়ে বলল– আশা করি
আমার পরিচিত মানুষটির সংগে পরিচয় হয়েছে।জয়ব্রত বলল–হ্যাঁ পরিচয় হয়েছে।কিন্তু
তোমার সংগে সম্পর্কের কথা জানেন না বোধহয়।লাবণ্য বলল–ধৃতি জয়ব্রত আমার স্বামী।
ও বর্ধমান কলেজের অধ্যাপক।আমি বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথে একটা উচ্চ
মাধ্যমিক স্কুলে চাকরি করি।আর ওর হাত ধরে যে দাঁড়িয়ে তোমাকে অবাক হয়ে দেখছে সে
আমাদের  একমাত্র ছেলে সত্যব্রত।ওকে আমরা আদর করে ব্রতী বলে ডাকি। 
 ব্রতী ইনি তোমার একটা আঙ্কেল।প্রণাম করো।
ধৃতি উত্তরোত্তর অবাক হচ্ছিল।ও লাবণ্য তাহলে তার সুন্দর ছবির মতো বাড়ি ,সাজানো
বাগান, ছেলে আর স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার পেতেছে?ধৃতি বলল– তোমাদের সুখি
দাম্পত্য জীবনের জন্য অভিনন্দন লাবণ্য।তুমি এটা দেখাবে বলেই কি আমাকে
ডেকেছিলে?–না ধৃতি একটা অতি সাধারণ মেয়ের আটপৌরে সংসার তোমাকে ডেকে দেখানোর
মতো ধৃষ্টতা আমার নেই। তোমার দরকারটা এখনো বলিনি।অনেক বেলা হয়ে গেছে ধৃতি।একটু
লেবু দিয়ে ঠান্ডা সরবত খেয়ে খাওয়া দাওয়া করো তারপর বলব।আমি নিজে রান্না করেছি।
ধৃতি প্রায় সাতবছর পর লাবণ্যর হাতে যত্নে বেড়ে দেওয়া ভাত খেতে বসল।খেতে বসে
বলল– এতবছর পরেও আমার পছন্দের পদ না ভোলার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ লাবণ্য। লাবণ্য
বলল–তোমাকে তো আগেই বলেছিলাম কিছু টুকরো স্মৃতি সারাজীবন মনের কোনে থেকেই
যায়।ওটাকে ইচ্ছা করলেও ডিলিট করা যায় না।তবে ইলিশের মাথা দিয়ে কচুর শাক,ইলিশ
ভাজা,ইলিশ ভাপা,পনিরের ডালনা,ঘন মুগের ডাল,ঝুরো আলুভাজা,   শুধু
পনিরটা বাদ দিয়ে এসব আমার স্বামীর ও ভারি পছন্দের খাবার।আমার স্বামী ইলিশের টক
ভালোবাসে ওর জন্যে ইলিশের টক ও করেছি।
খাওয়া দাওয়ার পর লাবণ্য বলল–ধৃতি এবার পাশের ঘরে এসো।দরকারটা ওখানেই জানতে
পারবে।ঘরে এসে ধৃতি অবাক হয়ে বলল–মা তুমি এখানে?অর্পিতা বলল–তুই বাড়ি ঢোকার
সময় সাদা মার্বেল পাথরে  বাড়ির নেম প্লেটটা  লক্ষ্য করিস নি?লাবণ্য
বলল–এই বাড়িটার নাম শান্তিকুঞ্জ।আমার শাশুড়ি মার নাম ছিল শান্তি।উনি দেড়বছর হল
প্রয়াত।ধৃতি বলল–লাবণ্য তুমি খবরটা আমাকে জানাতে পারতে।
অর্পিতা বলল–আমি তাকে নিষেধ করেছিলাম। তোকে জানাবে না এই শর্তে লাবণ্যর সংসারে
আমি থাকতে রাজি হয়েছিলাম।ডিভোর্সের পর ফোনে লাবণ্যর সংগে আমার যোগাযোগ ছিল।তাকে
আমি বলেছিলাম আমাকে একটা বৃদ্ধাশ্রমের খোঁজ দিতে।লাবণ্য বলেছিল–মা তুমি আমাদের
বাড়ি শান্তিকুঞ্জে চলে এসো।আমার জীবনে  আমার মা তিনজন।একজন গর্ভধারিণী
মা,একজন শাশুড়ি মা আর একজন তুমি।
অর্পিতা বলল–আজ ও আমি তোকে জানাতাম না। এখানে আসার আগে আমি আমার নিজস্ব সব
গয়না আর কিছু সঞ্চয়ের কাগজ সংগে এনেছিলাম। ওগুলো আমার একমাত্র উত্তরাধিকারী
আমার নাতির হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু লাবণ্য দিতে দেয়নি।সে বলেছে–মা
তুমি আমার মা।এই পরিচয়টা শুধু আমি মাথায় রাখব।কিন্তু আমার ছেলেকে তোমার
উত্তরাধিকার বললে আমার স্বামী জয়ব্রতকে অপমান করা হবে।আমার ছেলে তার বাবা
জয়ব্রতের সব কিছুর ন্যায্য উত্তরাধিকার। তোমার উত্তরাধিকার তোমার একমাত্র ছেলে
ধৃতি।মা যে পালন করে সেই প্রকৃত অর্থে যোগ্য পিতা হয়।মা যখন সন্তানকে তার বাবার
সংগে পরিচয় করিয়ে দেয় সন্তান তখনই জানতে পারে তার বাবাকে। আমি আমার সন্তানকে
জয়ব্রতকে বাবা বলে পরিচয় করিয়েছি,তাকে বাবা বলে ডাকতে শিখিয়েছি। আমি মনে প্রাণে
বিশ্বাস করি আমার সন্তানের যোগ্য ও আদর্শ বাবা জয়ব্রত। 
অর্পিতা বলল–আমি অন্তর দিয়ে অনুভব করলাম লাবণ্যর কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। সে
ডিভোর্সের সময় তিনমাসের অন্তঃসত্তা ছিল। চারমাসের সন্তান নিয়ে স্কুলের চাকরিতে
এখানে জয়েন করে। জয়ব্রতর সংগে সেই সময় তার পরিচয় ও ভালোবাসা।শান্তি দেবী দেবীর
মতো মানুষ ছিলেন।ছেলের ভালোবাসা তিনি সানন্দে মেনে নেন।  শাস্তি দেবী মারা
যাওয়ার পর 
 লাবণ্য ক্রমাগত আমাকে তাগাদা দিত এই গয়না আর সঞ্চিত কাগজপত্র তোর হাতে
তুলে দেওয়ার জন্য। সে নিজে মা হয়ে হয়তো অনুভব করত মা ও সন্তানের নাড়ির টান।
তাই  বহুদিন ধরে চেয়েছিল মায়ের সংগে ছেলের দেখা হোক। 

লাবণ্য বলল– ধৃতি, মা তোমার সংগে হয়তো ফিরে যেতে চাইবেনা।কিন্তু আমি তোমাকে
কথা দিচ্ছি মাকে জয়ব্রত আর আমি ভালোবাসায় মুড়ে রাখব।তুমি তো এই বাড়ির ঠিকানা
জানলে।তুমি মাঝে মাঝে মাকে এসে দেখে যেতে পারো। আমার স্বামী উদার প্রকৃতির
মানুষ। তার অনুমতি না নিয়েই আমি এটা বলার সাহস রাখি।ধৃতি বলল–  অনেক
ধন্যবাদ লাবণ্য।আমি সারাজীবন তোমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।মনে মনে বলল–লাবণ্য আমার
সন্তান আর মা এই দুজন প্রাণের অধিক প্রিয় জন তোমার কাছে গচ্ছিত থাকল।সন্তানের
ছোঁয়া পেতে আর মাকে দেখতে তুমি অনুমতি না দিলে আমার সাধ্য ছিলনা আসার। আজ
স্বীকার করছি আমি, লাবণ্য তুমি একজন সত্যিই রত্নসমা নারী। আমার শ্রান্ত ক্লান্ত
জীবনে তোমার শীতল ছায়ায় না হয় দুদন্ডের জন্যেই  জুড়িয়ে যাব।এটাই না হয়
আমার বাকি জীবনের প্রাপ্তি ও শাস্তি হোক লাবণ্য।

প্রিয় গল্প পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে। 
ভালো থাকুন, ভালোবাসায় থাকুন। ..
Thank You, Visit Again…

Share This Article