Premer Choto Golpo (প্রেমের ছোট গল্প) Romantic Love Story

Bongconnection Original Published
15 Min Read


 Premer Choto Golpo (প্রেমের ছোট গল্প) Romantic Love Story

Premer Choto Golpo (প্রেমের ছোট গল্প) Romantic Love Story
Loading...


লাল টুকটুকে বৌ

‘মা,তুমি ও লাল টুকটুকে বৌ সাজো না মা।‘
এক ঘর ভর্তি আত্মীয় স্বজনের সামনে অম্লান বদনে মায়ের কাছে আব্দার করে বসল সাত
বছরের সুনু।উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।সুনুর মা মৌসুমীর যেন লজ্জায়
দুকান কাটা গেল।মৌসুমীর পিসি শ্বাশুড়ি এগিয়ে এসে বললেন,
‘তোমাকে বৌ সাজাতে চাইছে তোমার ছেলে?বাহ! ভালোই তো শিক্ষা দিচ্ছো ছেলে কে?’
মৌসুমী কোনো উত্তর দিল না।এসব কথা শোনার জন্য তাকে প্রস্তুত থাকতেই হবে।ছেলে কে
একা মানুষ করতে হলে সেই রাস্তায় বাধা তো আসবেই! তাই মনে জোর আনল মৌসুমী।
‘এখান থেকে চলো সুনু।‘
ছেলের হাত ধরে ঘর থেকে বেরোতে চাইল মৌসুমী।পথ আটকালো মৌসুমীর শাশুড়ি।
‘শোনো বৌমা।তুমি আলাদা থাকতে চেয়েছিলে,আমরা রাজি হয়েছি।কিন্তু সুনু কে আর তোমার
কাছে আমরা রাখতে চাই না।ওকে তুমি রেখে যাবে।‘
মৌসুমী সুনু কে নিজের কাছে আঁকড়ে ধরল।একমাত্র সহায় সম্বল ছেলে কে সে কারোর কাছে
ছাড়তে নারাজ।


‘কি হলো? কথা কানে গেল না তোমার বৌমা?’
মৌসুমী দু চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরে পড়ছে।শাশুড়ির চোখে চোখ রেখে বলল,
‘যতদিন আপনার ছেলে ছিল,আমি আপনাদের বৌমা ছিলাম।এখন আমার পরিচয় শুধু মৌসুমী
সাহা,সায়ন্তন সাহার মা।‘
সবাই চুপ।মৌসুমীর শাশুড়ি কিছু বলার আগেই সুনু কে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে
গেল মৌসুমী।
নিজের এক কামরার ফ্ল্যাটে ফিরে সুনু কে শুইয়ে দিল।ছেলে টা পথে আসতে আসতেই
ঘুমিয়ে পড়েছিল।মৌসুমী আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো।কি চেহারা করেছে নিজের! মৌসুমীর
স্বামী দীপ্ত মারা গেছে বছর দুয়েক হতে চলল।কিন্তু সুনুকে ছাড়া আর কোনো সুখই
দীপ্ত ওকে দিতে পারেনি।বিয়ের পরদিন থেকেই শ্বশুরবাড়ির সবার জন্য ফরমায়েশ
খাটা,তাদের মুখ ঝামটা,প্যাঁচালো কথা শোনা,আর দিনের শেষে দীপ্তর সাথে ঝগড়া
অশান্তি,এই ছিল মৌসুমীর তিন বছরের বিবাহিত জীবন।দীপ্তর সাথে অশান্তির অনেক
চিহ্নই এখনো মৌসুমীর শরীরে খুঁজলে পাওয়া যাবে।এমনকি প্রথম সন্তানটাও দীপ্তর
ধাক্কায় মৌসুমীর পড়ে যাওয়ার জন্য……

ভেঙে পড়ল মৌসুমী।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।সুনু একটু নড়ে উঠলো।মৌসুমী
তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে ওর মাথার কাছে এসে বসল।এই সুনুই ওর জীবনে বেঁচে থাকার
একমাত্র আশা।অনেক কষ্টে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে সুনু কে।ওর জন্মানোর পর কয়েক বছর
শ্বশুর বাড়িতে সবাই কিছুটা খুশি থাকলেও দীপ্তর মদ্যপ চরিত্র মৌসুমীর ধৈর্যের
বাঁধ ভেঙে দিয়েছিল।বেরিয়ে এসেছিল বাড়ি ছেড়ে।কিন্তু দীপ্তর ভালোমানুষির নাটকে
ভুলে আবার পা রেখেছিল ঐ বাড়িতে।

অত্যাচারের মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল।মৌসুমীর শ্বশুরবাড়িতে সবাই জানত,মৌসুমী
অনাথ।ওর কোথাও কোনো জায়গা নেই যাওয়ার।তাই কোনো মায়াদয়া ছিল না তাদের শরীরে।তবে
ভগবান হয়ত যা করে ভালোর জন্যই।তাই এক বছরের মাথায় হঠাৎ স্ট্রোকে মারা গেল
দীপ্ত।কিন্তু তারপর মৌসুমী কে মানসিক যন্ত্রণা দেওয়া শুরু করল দীপ্তর বাড়ির
লোকজন।এমনকি দীপ্তর চাকরি টা মৌসুমী কে করতে দিতে চাইনি তারা।কিন্তু মৌসুমী আর
সহ্য করার পাত্রী ছিল না।তাই একপ্রকার জোর করেই ছেলে কে নিয়ে বেরিয়ে আসে ঐ নরক
থেকে।
আরো পড়ুন,  এতটা ভালোবাসি 4
এসব ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে গেল মৌসুমীর।পরদিন সকালে উঠে সুনু কে রেডি করে স্কুল
বাসে তুলে দিয়ে নিজে ও অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়ল।কিন্তু আজ ওর একটু ও ইচ্ছা করছে
না অফিস যেতে,মনটাও ভার।তাই অফিস থেকে ফার্স্ট হাফটা অফ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল নিজের
মতো করে সময় কাটাতে।প্রথমে একটা সিনেমা দেখল,তারপর শপিং মলটা ঘুরে দেখছিল এমন
সময় একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল।
একটা শাড়ির শোরুমের বাইরে এসে চোখ আটকে গেল মৌসুমীর।ভিতরে যে কাস্টমারটি কে
শাড়ি কিনতে দেখতে পেল,তাকে প্রায় আট বছর পর দেখল।তবু চিনতে ভুল হলো না।জীবনের
প্রথম প্রেম কে কি এতো সহজে ভোলা যায়! 

সায়ক দে,মৌসুমীর এক ব্যাচ সিনিয়র ছিল।পুরনো অনেক স্মৃতি মনে এসে গেলো
মৌসুমীর।অদ্ভুত একটা আনন্দ হলো মৌসুমীর,মনে হলো মনের ভার টা যেন এক নিমেষে
হালকা হয়ে গেল সায়ক কে দেখার পর।কথা বলার জন্য দোকানে ঢুকতে যাবে এমন সময়
ট্রায়াল রুম থেকে একটি মেয়ে বেরিয়ে এসে সায়কের সামনে দাঁড়ালো।তারপর দুজনের কিছু
কথা হলো,সায়ক কে জড়িয়ে ধরল মেয়েটি।ওদের দুজন কে বেরিযে আসতে দেখে সরে গেল
মৌসুমী।দেখল সায়ক আর মেয়েটি উপরের ফ্লোরে উঠছে।মেয়েটির বয়স বেশ কম মনে হলো।সায়ক
এই মেয়েটার সাথে কি করছে এখানে? মৌসুমী একবার ভাবল ওদের পিছু নেবে কিন্তু
পরক্ষণে সেটা করা উচিত নয় ভেবে মল থেকে বেরিয়ে এলো।

লাঞ্চে একটা রেস্টুরেন্টের একটা কর্নারের সিটে একা বসে আছে মৌসুমী।কিছুতেই যেন
সায়ক আর ঐ মেয়েটি কে ভুলতে পারছে না সে।খাবারে মন বসানোর চেষ্টা করছে বারবার
কিন্তু পারছে না।
‘কি রে? কি এতো ভাবছিস তখন থেকে?’
পৃথার ডাকে সম্বিত ফিরল মৌসুমীর।পৃথা দি,মৌসুমীর অফিস কলিগ ও দিদির মতো।
‘ও পৃথা দি তুমি? কই কিছু ভাবছি না তো।অফিস ছুটি নিয়েছ আজ?’
‘আরে,ভাই অনেকদিন পর ফিরেছে কাল বিদেশ থেকে তাই ওর সাথে এখানে লাঞ্চ করব বলে
এলাম।তুই একা এখানে বসে?’
‘আমি ও লাঞ্চের জন্যই এসেছি।কই তোমার ভাই কে দেখছি না?’
‘আসছে বলল।কি একটা জরুরী কাজে আটকে গেছে নাকি।তোর কি তাড়া আছে?’
‘হ্যাঁ,একটু অফিস ঢুকব।কয়েকটা কাজ পেন্ডিং আছে,করে আসি।‘
মৌসুমীর ফোন বাজল।সুনুর স্কুল থেকে ফোন এসেছে।কথা বলে ফোন রেখে মৌসুমী একটু
চিন্তায় পড়ে গেল।
‘কি হয়েছে রে? এনি প্রবলেম?’
‘আরে দেখো না।সুনুর আজ তাড়াতাড়ি ছুটি হবে,এদিকে আমার ও অফিস না গেলে নয়।কি যে
করি বুঝতে পারছি না।‘
‘উমম! একটা কাজ করা যায়।তুই স্কুলে বলে দে ওকে বাসে না তুলতে।আমি আর ভাই তো ঐ
পথেই বাড়ি ফিরব।সুনু কে পিক আপ করে আমার বাড়ি নিয়ে যাব।তুই অফিসফেরতা এসে নিয়ে
যাস।‘
প্রস্তাবটা মনে ধরল মৌসুমীর।স্কুলে ফোন করে বলে দিয়ে উঠে পড়লো মৌসুমী।
‘বাঁচালে গো পৃথা দি।তুমি একটু সামলে রেখো সুনু কে,আমি গিয়ে নিয়ে আসব।থ্যাঙ্ক
ইউ।‘

Premer Choto Golpo Pdf
অফিস সেরে পৃথা দির বাড়ি পৌঁছতে আটটা বেজে গেল মৌসুমীর।মৌসুমী চিন্তায় ছিল,সুনু
তো সবার সাথে কমফোর্টবল হতে পারে না।পৃথা দির বাড়ি তে কি করছে সেটা নিয়ে
সারাদিন ভেবেছে।কিন্তু এসে সম্পূর্ণ অবাক করে দেওয়ার মতো কথা শুনল।সুনু নাকি
একটু ও দুষ্টুমি করেনি,উল্টে পৃথার ভাইয়ের সাথে দারুণ ভাব জমিয়ে ফেলেছে।দুজনে
ছাদে বসে খেলা করছে।
মৌসুমী ছাদে গেল।দেখল এক কোণায় পৃথার ভাই ও সুনু পিছন ঘুরে বসে মনের সুখে গল্প
করে যাচ্ছে।হঠাৎ খেয়াল করল মৌসুমী এসেছে,অমনি সুনু দৌড়ে চলে এলো মায়ের
কাছে।পৃথার ভাই ও পিছন ঘুরে তাকালো,আর তারপরই পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল
মৌসুমীর।ওর চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সায়ক।সায়ক ও মৌসুমী কে দেখে একপ্রকার অবাকই
হয়েছে।খানিকটা হেসে এগিয়ে এলো।

‘কেমন আছো মৌসুমী? সায়ন্তন তোমার ছেলে? জানতাম না তো! ভারী মিষ্টি ছেলে।কতো
খেলা করলাম দুজনে সারাদিন।‘

‘আঙ্কল তুমি আমার মা কে চেনো?’
‘চিনি তো।‘
‘কি করে?’
‘আমি যেমন তোমার বন্ধু,তেমন তোমার মা আমার বন্ধু।‘
মৌসুমীর মুখ থেকে কোনো কথা বেরলো না।একদৃষ্টিতে সায়ক কে দেখছে।এখনো ঠিক একই রকম
পার্সোনালিটি।কলেজে কতো মেয়ে যে পাগল ছিল সায়কের জন্য! মৌসুমী ও তাদের মধ্যে
একজন ছিল।দূর থেকে দেখত সায়ক কে।কয়েকবার কথা হয়েছিল,যদিও উদ্যোগটা সায়কই
নিত।কারণ তখন ও মৌসুমী ওকে দেখে একইরকম নির্বাক হয়ে যেত।
নীচে এসে দেখল পৃথা দি ডিনারের ব্যবস্থা করেছে।খাবার টেবিলে সায়ক সম্পর্কে অনেক
কিছু জানল মৌসুমী।সায়ক এতদিন বিদেশে চাকরি করত।কিন্তু দিদি এখানে একা থাকে তাই
দিদির কাছে ফিরে এসেছে।
‘তবে কি জানিস মৌসুমী,একটাই আফসোস থেকে গেল।ভাই টা আমার বিয়েই করতে চায় না।‘
মৌসুমী অবাক হলো।তার মানে শপিং মলে যাকে দেখেছিল সে তবে কে?মনে মনে ভাবল
মৌসুমী,যদিও উত্তর টা পৃথা দিই দিয়ে দিল।
‘আমার মেয়ে,জিনিয়া।সে ও তো ভাইয়ের কাছেই থাকে।কাল ই এসেছে,বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ে
তাই মামা ভাগ্নিতে মিলে আজ শপিং করতে গিয়েছিল।সে ও নিজের মামা কে এতো বছরে রাজি
করাতে পারল না।‘
মৌসুমী লজ্জা পেল।পৃথা দির মেয়ে কে সায়কের সাথে দেখে কি না কি ভেবে
নিয়েছিল।ইসস! কিন্তু কোথাও যেন একটা আনন্দও হলো।তারমানে সায়কের জীবনে সত্যি কেউ
নেই?
আরো পড়ুন, হৃদ – মাঝারে
সায়ক নিজে মৌসুমী আর সুনু কে বাড়ি ড্রপ করার প্রস্তাব দিল।সুনুর ঘুম
পাচ্ছিল,তাই ওকে গাড়ির ব্যাক সিটে শুইয়ে সায়কের পাশের সিটে এসে বসল মৌসুমী।একটা
অদ্ভুত উত্তেজনা কাজ করছে মৌসুমীর মনের মধ্যে,যা এর আগে কারোর জন্য হয়নি।বেশ
খানিকক্ষণ দুজনেই চুপ করে নিস্তব্ধতা টা অনুভব করল।মৌনতা ভাঙল সায়ক।
‘দিদির কাছে শুনলাম সবটা।কলেজ শেষ হওয়ার পর তো তোমার আর কোনো খবর পাইনি।যোগাযোগ
ও তো রাখলে না আর।‘
‘যোগাযোগ বুঝি এক তরফা রাখা যায়?’
সায়ক হাসল।
‘বুঝেছি।হ্যাঁ,ভুল আমার ও হয়েছিল।কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ কলেজ ছেড়ে চলে
এসেছিলাম।তবে আমি কিন্তু তোমায় খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম অনেকবার।‘
মৌসুমী বুঝতে পারল না,সায়ক কি সত্যি কথা বলছে? ওকে খুঁজেছিল? কেন?
ফোন বাজল মৌসুমীর।পৃথা দি।জিজ্ঞেস করল পৌঁছে গেছে কিনা বাড়ি।হঠাৎ গাড়িটা জোরে
ব্রেক কষে দাঁড়ালো।ফোন টা কান থেকে পড়ে গেল মৌসুমীর।গাড়ির সামনে একটা কুকুরের
বাচ্চা এসে গেছিল।গাড়ি থেকে নেমে পড়ল সায়ক।মৌসুমী ফোনটা হাতে নিয়ে নামল গাড়ি
থেকে।সুনু তখন ও ঘুমোচ্ছে।মৌসুমী দেখল সায়ক কুকুরছানা টা কে কোলে তুলে
নিয়েছে।সে ও বেশ আরাম খাচ্ছে।
‘আমার যতদূর মনে পড়ে তুমি তো জীবজন্তু পছন্দ করতে না সেভাবে?’
সায়ক তাকালো মৌসুমীর দিকে।
‘করতাম না।কিন্তু একবার কলেজে একজন কে খুব কাঁদতে দেখেছিলাম,একটা কুকুরছানা কে
মারা যেতে দেখে।তারপর থেকে ধারণাটা বদলে যায়।‘
মৌসুমী মনে করার চেষ্টা করল।তারপর ওর নিজের কান্নারত মুখটা মনে পড়ল।
‘এরকম তো আমি করেছিলাম কলেজে।শেষ অবধি তুমিই এসে থামিয়েছিলে।‘
সায়ক এগিয়ে এসে কুকুরছানা টা কে মৌসুমীর কোলে দিয়ে বলল,
‘ঠিক এইভাবে একটা কুকুরছানা খুঁজে এনে তোমার কোলে দিয়ে।‘
সেদিন সারারাত ঘুম হলো না মৌসুমীর।শরীরের মধ্যে একটা আনচান অনুভব করল।নিজেকে
বারবার আয়নায় দেখতে থাকল।কতদিন কোনো পুরুষ মানুষের ছোঁয়া সে পাইনি।প্রকৃত পুরুষ
কেমন হয়,সেটা আজ অবধি জানা হলো না মৌসুমীর।দীপ্ত তার স্বামী ছিল ঠিকই,কিন্তু
তার জীবনের প্রকৃত পুরুষ হতে পারেনি।

সকালে অফিস পৌঁছে যে ঘটনাটা ঘটল,তার জন্য একটু ও প্রস্তুত ছিল না মৌসুমী।পৃথা
দি তাকে একটা অদ্ভুত কাজের ভার দিল।

‘আমি?’
‘হ্যাঁ তুই।একমাত্র তুই ই পারবি ভাই কে রাজি করাতে বিয়ের জন্য।মেয়ে আমি দেখে
রেখেছি,তুই শুধু ওকে আজ ডেকে নিয়ে আয়।‘
‘তারপর?’
‘দেখা করাবি ভাইয়ের সাথে মেয়েটা কে।‘
মৌসুমীর মুখটা ভার হয়ে গেল।এই কাজটা তো পৃথা দি নিজেই করতে পারে,ওকে কেন করতে
বলছে? আবার সায়কের সাথে দেখা করার ইচ্ছাটা ও প্রবল।আর মেয়ে দেখলেই যে পছন্দ
হবে,তেমন টা তো নাও হতে পারে।অগত্যা পৃথা দির কথায় রাজি হয়ে গেল মৌসুমী।
সায়ক কে একবার বলতেই সে রাজি হয়ে গেল মৌসুমীর সাথে দেখা করতে।মৌসুমী কে আজ একটু
আলাদারকম দেখতে লাগছিল।অনেকদিন পর একটু সেজেছে আজ।হয়ত সায়ক কে দেখাবে বলে! সায়ক
কে আজ একটু নার্ভাস লাগছে।মনে হচ্ছিল কিছু বলতে চাইছে মৌসুমী কে।
‘তুমি জানো আমি কেন তোমাকে এখানে ডেকেছি?’
কফি কাপে চামচ টা নাড়তে নাড়তে জিজ্ঞেস করল মৌসুমী।
‘আমায় বিয়ে করার জন্য রিকোয়েস্ট করবে,দিদির দেখে রাখা মেয়ে কে।তাইতো?’
মৌসুমী এবার সরাসরি সায়কের চোখের দিকে তাকালো।সায়ক ও ঠিক একইভাবে দেখছে মৌসুমী
কে।মৌসুমী আর জল টা ধরে রাখতে পারল না।এক ফোঁটা টেবিলের উপর পড়ল।সায়কের চোখ
এড়ালো না কিছুই।আলতো করে মৌসুমীর হাতের উপর হাত টা রাখল নিজের।
‘যে ছেলে টা কে কুকুরছানা কে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলে,যাকে অপেক্ষা করা কাকে বলে
বুঝিয়েছিলে,তাকে একবার আপন করে নেওয়া যায় না মৌ?’
মৌসুমী কোনো উত্তর দিতে পারল না।মনে হলো এক নিমেষে ওর সব কষ্ট গুলো যেন কেউ
ভুলিয়ে দিল।আঁকড়ে ধরলে সায়কের হাত দুটো।নিজেকে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে ফেলতেই
যাচ্ছিল,হঠাৎ খেয়াল হলো ও কেন আজ ডেকেছিল এখানে সায়ক কে?নিজের হাত টা সরিয়ে
নিল।চোখ মুছে বলল,
‘পৃথা দি কে একটা ফোন করে দেখি,মেয়েটা কখন আসবে।আমাকে আবার বেরোতে হবে।‘
‘আপনি মৌসুমী ম্যাডাম?’
ওদের টেবিলের সামনে একজন ক্যুরিয়ার বয় দাঁড়িয়ে আছে,হাতে একটা পার্সেল নিয়ে।
‘হ্যাঁ,আমি মৌসুমী।কি ব্যাপার?’
‘এটা আপনার জন্য।এই কাগজে একটা সই করে দিন।‘
মৌসুমী কে প্যাকেট টা দিতে সে বেশ অবাক হল।সায়কের দিকে তাকালো।ওর মুখেও একটা
বিস্ময়ের ছাপ।
‘কে পাঠিয়েছে এটা?’
লোকটাকে জিজ্ঞেস করল মৌসুমী কিন্তু উনি কিছু বলতে পারলেন না।
‘খুলে দ্যাখো কি আছে?’,সায়ক বলল।
মৌসুমী সন্তর্পণে প্যাকেট টা খুলল।ভিতরে একটা লাল বেনারসী শাড়ি সুন্দর করে ভাঁজ
করে রাখা।মৌসুমীর প্রচন্ড রাগ হলো।এরকম ইয়ার্কি কে করতে পারে তার সাথে? সায়ক?
কিন্তু সে তো নিজেই অবাক হয়ে গেছে।লোকটা কে ধরতে হবে,এটা ভেবে মৌসুমী সবে উঠে
দাঁড়িয়েছিল চেয়ার ছেড়ে এমন সময় একটা হাসির আওয়াজে পাশের দিকে তাকালো।
দরজা দিয়ে সুনু ঢুকে এলো,সাথে পৃথা দি।সায়ক ও মৌসুমী দুজনেই চমকে গেল।সুনু দৌড়ে
এসে মা কে জড়িয়ে ধরল।পৃথা দি এগিয়ে এসে সায়কের কানটা বেশ জোরেই মুলে দিল।
‘আহ দিদি! লাগছে তো!’
‘লাগুক।খুব শয়তান হয়েছিস তুই।দিদি কে একবার জানাতে পারলি না যে মৌসুমীই সেই
মেয়ে যার জন্য এতগুলো বছর চিরকুমার হয়ে বসে আছিস?’
মৌসুমী এবার প্রচন্ড লজ্জা পেল।পৃথা দি দুজনকে বসতে বলে একটা কফি আর সুনুর জন্য
আইসক্রিম অর্ডার করল।সায়ক আর মৌসুমী এখনো ধোঁয়াশায়।
‘কি ভাবছিস? আমি কি করে জানলাম,তাই তো? ভাগ্যিস সেদিন মৌসুমী তোকে ফোন করেছিলাম
আর গাড়ির ব্রেকে ফোন টা কেটে যায়নি।নাহলে কি আর তোদের কুকুরছানা নিয়ে কথোপকথন
টা শুনতে পেতাম?’
এতক্ষণে সবটা পরিষ্কার হলো।সায়ক জিভ কেটে ফেলল।মৌসুমী হাতের মধ্যে নিজের মুখ
লুকিয়ে নিল।এদিকে সুনু ততক্ষণে প্যাকেট থেকে লাল বেনারসী টা বের করে তার ভাঁজ
খুলে ফেলেছে।এরপর যেটা করল,সেটা দেখে কফি শপে সবাই একসাথে হাততালি দিয়ে উঠলো।
শাড়িটা কে মৌসুমীর মাথার উপর দিয়ে ঘোমটা বানিয়ে দিল সুনু।তারপর মায়ের থুতনি টা
ধরে বলল,
‘এই তো,আমার লাল টুকটুকে বৌ।‘

প্রিয় গল্প পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে। 
ভালো থাকুন, ভালোবাসায় থাকুন। ..
Thank You, Visit Again…

Share This Article