স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু কথা 2023 – স্বাধীনতা দিবস (Independence Day)

Bongconnection Original Published
7 Min Read


স্বাধীনতা  দিবস নিয়ে কিছু কথা 2022 – স্বাধীনতা দিবস (Independence Day)

স্বাধীনতা  দিবস নিয়ে কিছু কথা 2023 - স্বাধীনতা দিবস (Independence Day)
Loading...

স্বাধীনতা দিবসের বক্তব্য 2023

(আজ 76 তম স্বাধীনতা দিবস। আজ আমরা স্বাধীন। কিন্তু সত্যিই কি আমরা স্বাধীন? 2023 এ নারী কি সত্যিই সব কিছু থেকে মুক্ত? জানি আমার লেখাটা অনেক বিতর্ক মূলক, লেখাটা নিয়ে অনেকের অনেক ভাবনা আসতেই পারে।কিন্তু আমার একটা বিষয় মনে হয় আজও অধিকাংশ মেয়ে কোন না কোন সময় বাধ্য হয় নিজের স্বপ্নটাকে বিসর্জন দিতে।মুখে যতই বলি আমরা স্বাধীন কিন্তু কাজে আমরা সেই পরাধীনতাই দেখায়। বাস্তব খুব কঠিন অনেক কষ্ট হয়।)



পৃথা অফিস থেকে ফিরে নিজের ঘরে একটু বিশ্রাম নিচ্ছে। হঠাৎ করেই বাইরে থেকে খুব চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পায়। প্রথমে বুঝতে পারে না যে কি জন্য চিৎকার হচ্ছে, পরে বোঝে ওর শাশুড়ি মা ওকে নিয়েই চিৎকার করছেন। চিৎকার করতে করতে শাশুড়ি মা ঘরে ঢুকে এসে বলতে লাগলেন, “দেখো বৌমা অনেক হয়েছে এবার সংসারের প্রতি একটু মন দাও। মেয়েমানুষ হয়ে সারাদিন শুধু বাইরের কাজে মন দিলে হবে না।” 

পৃথা: “কেন মা কি হইছে?”

শাশুড়ি মা: “কি আবার হবে, খোকা বলছিল তুমি নাকি অফিসের ট্যুর ফ্রুর কি সবে যাবে যেন!!”

পৃথা: “হ্যাঁ মা, এবারের অফিসের ট্যুরটা খুব জরুরী। আসলে আমি প্রতিবারই মানা করে দিই, কিন্তু এইবারের প্রজেক্টটা খুবই দরকার।”

শাশুড়ি মা: “সংসারের থেকে মেয়েদের কিছুই দরকারি হতে পারে না বৌমা!”

পৃথা: “মা আপনি ভুল ভাবছেন মাত্র দুদিনের জন্য। আপনি অনুমতিটা দিয়ে দিন মা, নাহলে হয়তো আমার কাজটা চলে যাবে না।”

শাশুড়ি মা: “যতসব ঢং, চাকরি করা বউ আনায় আমার ভুল হয়েছে জানো। আমার ছেলে তো তোমার রূপ দেখে গলে গেল ,কত করে বললাম এই মেয়ে সংসার সামলাতে পারবে না শুনলো আমার কথা!! হবেনা হবেনা ওসব যাওয়া হবে না, তাতে চাকরি থাকে থাকুক না থাকে না থাকুক, এমনিতেও ওই চাকরির টাকা আমার বাড়িতে আসে না।”

শাশুড়ি চলে যাওয়ার পর পৃথা খুব চিন্তায় পড়ে যায়। আসলেই চাকরিটাই তো একমাত্র সম্বল ওর বাবা মাকে একটু ভালো রাখার। বাবা মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে পৃথা, অনেক কষ্ট করে বাবা মা ওকে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষ করেছে। তাই চাকরি করে যে কটা টাকা পায়, সবটাই বাবা-মা’র কাছে দিয়ে দেয়। তাই নিয়েও ওর শ্বাশুড়ি ওকে কম কথা শোনায় না, কিন্তু ওইসব ভাবে না। আগে কষ্ট হতো, কিন্তু ওর মায়ের কথাটা মনে পড়লে সব সময় ওর সাহস আসে মনের মধ্যে। “মেয়েদের কখনো হাল ছাড়তে নেই রে পৃথা”।

কিন্তু এবার ও ঠিক করে নিয়েছে, আর না এবারের অফিসের ট্যুরে ও যাবেই। প্রতিদিন সকালবেলা উঠে জলখাবার রান্না করে রেখে পৃথা অফিসে বেরিয়ে যায়। তবে শাশুড়ি মা যদি বলে শরীরটা খারাপ, তাহলে দুপুরের খাবার‌ও রান্না করে ফ্রিজে রেখে যায়। কিন্তু সমস্যাটা হল সব কিছু করার পরও পৃথাকে শুনতে হয় “কি করলে তুমি আমাদের জন্য”। তাই কারোর থেকে কিছু প্রশংসা পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে।

আজ সকালবেলা সুজয় মানে ওর স্বামীকে জল খাবার দেওয়ার সময়, ওর শাশুড়ি মা উপর থেকে নেমে এসে বললেন: “বৌমা পরশু মানে শুক্রবার আমার দিদির বাড়ি থেকে নিমন্ত্রণ করল আমাকে। আমি বললাম ,আমি গেলে তোমাকে নিয়েই যাব।”

পৃথা: “কিন্তু আমি তো শুক্রবার অফিসের ট্যুরে বাইরে যাব। আপনাকে তো পরশুদিন সন্ধ্যেবেলায় বলেছি সব।”

শাশুড়ি মা: “খুব বেয়াদব মেয়ে তো তুমি!! তোমাকে বললাম না ওসব ট্যুরে যাওয়া হবে না। একটা কথা বারবার না বললে বুঝতে পারো না?” 

পৃথা: “কিন্তু এটা আমার অনেক দিনের স্বপ্ন। সব থেকে বড় কথা আমি না গেলে আমার কাজটা থাকবে না।”

শাশুড়ি মা: “আমার তো এই বাড়িতে কোনো দামই নেই, যার যা ইচ্ছে শুধু তাই করে।”

পৃথা: “আচ্ছা মা আপনার ছেলে যদি অফিসের কাজে বাইরে যেত, তাহলে আপনি ওকে আটকাতেন? না আটকাতেন না, তাহলে আমার বেলায় কেন এরকম করছেন?” 

শাশুড়ি মা: “শোনো মুখে মুখে তর্ক করো না, যদি তুমি অফিসের ট্যুরে বাইরে যাও, এই বাড়িতে আর ফিরতে হবে না সোজা বাপের বাড়ি চলে যাবে বলে দিলাম।”

পৃথা দৌড়ে ঘরে চলে যায়। ওর খুব কষ্ট হচ্ছে আজকে। সুজয় ঘরে এসে বলে: “কি হলো ওভাবে চলে এলে কেন?? তুমি তো জানোই মা ওই রকমই। তাছাড়া এতবার যখন বারণ করছে তখন যাওয়ার কি দরকার!!” 

আরো পড়ুন, স্বাধীনতা দিবসের কবিতা

পৃথা: “সুজয় তুমিও!! তুমি তো বোঝো, আমি এমনি এমনি যাব বলছি নাকি। আর মাত্র 2 দিনে তো ব্যাপার।” 

সুজয়: “তোমরা মেয়েরা পারও বটে!! ঝগড়া অশান্তি তোমাদের করতেই হবে।” 

পৃথা: “আচ্ছা একটা কথা বলবে আমায়, সবাই নাকি বলে মেয়েদের এখন অনেক স্বাধীনতা। কিন্তু ঘরে ঘরে হাজারো মেয়ে তাদের স্বপ্নকে প্রতিনিয়ত গলা টিপে মেরে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে, তাহলে কিসের স্বাধীনতা?”

সুজয়: “হাহাহাহাহা!! নারীবাদের মতো কথা বলছো তো আজকে।” তারপর সুজয় পৃথাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “লক্ষ্মীটি প্লিজ যেও না, এমনিতেও তোমাকে ছাড়া আমার ভালো লাগবে না।”

এরপর পৃথা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে: “সুজয় তুমিও কিন্তু এক‌ই করছো!! তোমার মা আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে আটকাচ্ছে, আর তুমি আমাকে আটকাতে চাইছো ইমোশনাল করে। কেউই আমাকে সাহস দিচ্ছনা এগিয়ে যাওয়ার।” এই বলে পৃথা ব্যাগ নিয়ে অফিসের জন্য বেরিয়ে যায়।

অফিসে গিয়ে মাকে ফোন করে সব কিছু বলে। ওর মা অবশ্য বলে, “শোন পৃথা কাজটা বড় নয় রে মা! মেয়েদের কাছে সংসারের থেকে বড় কিছু হতে পারে না। তোর ট্যুরে যেতে হবে না।”

পৃথা: “মা আমার চাকরি করার স্বপ্নটা তাহলে ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। তাহলে কেন বলে সবাই মেয়েরা এখন সবকিছু করতে পারে!! মেয়েরা কিছুই করতে পারে না, মেয়েরা সব সময় অন্যের জন্য নিজের স্বপ্নটাকে বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়।”

অবশেষে পৃথাও আর পাঁচটা মেয়ের মতো নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্নকে পিছনে ফেলে, সংসারের বেড়াজালে আটকে পড়ে। পৃথার যেদিন ট্যুরে যাওয়ার কথা ছিল সেই দিনটা ছিল ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস। পৃথা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ভাবছে, স্বাধীনতার এত বছর পরেও কি মেয়েরা সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন!!!

শুধু পৃথার না, এই প্রশ্ন আমার ,আপনার, এমনকি প্রত্যেকটা ঘরের মেয়ের। দেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমরা কি আদৌ স্বাধীন হতে পেরেছি!! যে কোন কিছু করার আগে আমাদের দশবার ভাবতে হবে, এমনকি 10 জনের থেকে অনুমতি নিতে হবে। এরপরেও বলা হয় মেয়েরা নাকি স্বাধীন। আর নিজের স্বপ্নকে নিজের চোখের সামনে শেষ হতে দেখা যে কতটা কষ্টের, সেটা একমাত্র যে উপলব্ধি করেছে সেই বুঝতে পারবে।

                                                  সমাপ্ত

Tags – Independence Day, Swadhinota Dibosh

Share This Article