২২ শে শ্রাবণ (Baishe Srabon) Buddhadeva Bose

Bongconnection Original Published
4 Min Read


২২ শে শ্রাবণ (Baishe Srabon) Buddhadeva Bose

২২ শে শ্রাবণ (Baishe Srabon) Buddhadeva Bose
Loading...

বাইশে শ্রাবণ বুদ্ধদেব বসু


দিনটা ছিল ১৯৪১ সনের সেই ঝরো ঝরো অথচ মূক ৭ই আগস্ট, যার বাংলা নাম ২২শে শ্রাবণ।
তখন সেই বয়েস যখন মনের মাটিতে বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটার দাগ পড়ে। সেই মাটিতে
উদাসীন নির্মম কঠিন কোনো ধাতুতে ইমারাত তৈরি করা কল্পনাও করা যায়না। সেই বয়েস
সেই সময়। জানতাম তিনি কোলকাতায় আনিত।  চেতনা অচেতনার মাঝখানের চৌকাঠে
অনিশ্চিত অবস্থায় আচ্ছন্ন। প্রতিদিন তাঁর স্বাস্থ্যসমাচার সংক্রান্ত পত্রিকা
বের হয়,আর তার ওপর তখন হুমড়ি খেয়ে পড়ি আমরা, যারা দূরবাসী, আচার্য্য
দ্রোণের একলব্য শ্রেনীর।কুয়াশা কেটে ফেটে মাঝে মাঝে যেমন কাঞ্চনজঙ্ঘার রৌদ্রাভ
শুভ্র রুপ দেখা দেয়, তেমনি তখনও চলছে মুখে মুখে রচনা। প্রায় প্রতহ্য একটি।
অবিশ্বাস্য সেইসব ঘটনার সাক্ষী তখনকার প্রভাতী পত্রিকাগুলোর কয়েকটি সংখ্যা। আর
অজ্ঞাত অগণিত আমরা তখনও কি সেই প্রত্যাশা করছিনা যে, পরমাশ্চর্য কোনো
প্রত্যাবর্তন ঘটবে।কিংবা সত্যবানের মত তাঁরও প্রাণ প্রত্যর্পণে বাধ্য হবেন
একালের সেই মৃত্যু অধিপতি। জীবন মরণের সীমানা ছাড়িয়ে কম্পিত পায়ে তিনি তো
আগেও এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রান্তিক এক বিন্দুতে।কিন্তু ফিরেও তো এসেছিলেন
আবার।ইতিহাস কি নিজেকে আবৃত করতে পারেনা আবার? পারে হয়তো, করেনি।খবরের কাগজের
বিশেষ সংস্করণে, সেই অমোঘ সত্যটাকে শিরোধার্য করে বেরিয়ে এসেছিল, রবি 
 অস্তমিত ।

মুহুর্তে সব কাজ থেমে গেল।কলকাতা শহর উপচে পড়ল রাস্তায়,
স্কুল কলেজ শূন্য, রাজকার্য অর্থহীন হয়ে গেল।উকিলের শামলা, পাদ্রীর আলখাল্লা,
হলুদ আর গেরুয়া রঙের উত্তরীয়, গোল টুপি, বাঁকা টুপি, পাগড়ি, কেও চলছে, কেও
ছুটছে, কেও বা দাঁড়িয়ে আছে চুপ করে। থেকে থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বৃষ্টি তাঁর যাবার
পথটা ধুয়ে ধূলিহীন করে দিচ্ছে।ঢেও এর পর আসছে ঢেও, ভেঙে ভেঙে ঢেও ছড়িয়েও
যাচ্ছে।সেই ঢেওয়ের চুড়ায়,তলায়, ফেনায় ফেনায় মহামান্য নেতা থেকে সামান্য
মানুষে মানুষে গড়া জনতা মিলে মিশে একাকার। তারই মধ্যে শয়ান বনস্পতিকে বহন করে
নিয়ে গেল একদল লোক। অথবা সবার আগে আগে ওই যে তিনি নিজেই বুঝি চলেছেন, চলে
গেলেন। এমন নয় যে অকাল মৃত্যু, এমন নয় যে অপ্রত্যাশিত, তবু সেই মুহুর্তে কঠিন
মাটি ফেটে গিয়ে গহ্বর খুলে গেল। রবীন্দ্রনাথ নেই, কে আমাদের ভালোবাসবেন, শাসন
করবেন।কাকে আমরা উত্যক্ত করব সেই সব তুচ্ছ দাবি নিয়ে, যা শুধু তাঁরই হাতে রত্ন
হয়ে উঠত।স্বদেশের সংকটের সময় কে আমাদের পরামর্শ দেবেন, তর্কযুদ্ধ মিটিয়ে
দেবেন কে? জগতটাকে এনে দেবেন আমাদের দরজায়, আমাদের নবজাত সন্ততির নামকরণ
করবেন,আমাদের জীবনে ও প্রতিষ্ঠান গুলিতে অর্পণ করবেন স্বীয় মর্যাদা। এতক্ষণ
শক্ত ছিলাম, না পারছি সদ্য সৃষ্ট শূন্যতাকে পুরণ করতে, না আছে শক্তি ‘তবু শূন্য
শূন্য নয়’ বলতে। কিন্তু যেই চোখে পড়ল টেবিলের ওপর রাখা তাঁর সঞ্চয়িতা কাব্য
সংকলনটি, সেই মুহুর্তে নিজেকে আর ধরে রাখা গেলো না, একটা আঘাত ভেতরটাকে আমূল
কাঁপিয়ে দিয়ে গেল, যেন এই দেখা টুকুরই অপেক্ষায় ছিলাম। প্রয়োজন ছিল 
sweet my child I live for thee বলে ভেঙে পড়া,  জননীর মত।কতবার পড়া তার
কাবিতাগুলোকে মনে হোলো অনাথ, পিতৃহীন। স্রষ্টার অন্তর্ধানে তাঁর সৃষ্টি কি
করুণ।  আস্তে আস্তে বাস্প জমছে চোখের পাতায়।মনের দিগন্তে আর কালো কোমল
ছায়ায় টের পাচ্ছি, ঠেকে যাচ্ছে।সূর্যগ্রাসের সময় যেমন ঢাকে। অঝোর বর্ষণ তখন
আর বাইরের প্রকৃতিতে আর নেই।সেই জলধারা ঠাঁই নিয়েছে ঘরে ঘরে, টলমল মনের
পরমনে।পরিবেশ যখন স্নাত, স্নিগ্ধ, তখন বহ্নিমান চিতা জ্বলছিল গঙ্গার কোলে।

আরো পড়ুন, Baishe Srabon Poems In Bengali

ভিডিও দেখুন 


  

ভালো লাগলে নিজের প্রিয়জন আর বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ..

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ..


Thank You, Visit Again…


Tags – Rabindranath TagoreBaise Srabon

Share This Article