Munmun Mukherjee Kobita (মুনমুন মুখার্জী)

Bongconnection Original Published
11 Min Read



Munmun Mukherjee Kobita (মুনমুন মুখার্জী) 

Munmun Mukherjee Kobita (মুনমুন মুখার্জী)
Loading...
Munmun Mukherjee (মুনমুন মুখার্জীর) কবিতা বা আবৃত্তি ভালো লাগে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া  বেশ দুষ্কর । YouTube এ তার ভিডিওটি লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিউজ বোধহয় তারই প্রমান দেয় । তাই মুনমুন মুখার্জীর বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় কবিতাকে একসঙ্গে পোস্ট করা হলো ….তো চলুন পড়ে ফেলা যাক…

Munmun Mukherjee Kobita Lyrics

Loading...





Munmun Mukherjee Kobita (মুনমুন মুখার্জী)

             সাধারণ মেয়ে 

আমি অন্তঃপুরের মেয়ে,
চিনবে না আমাকে।
তোমার শেষ গল্পের বইটি পড়েছি, শরৎবাবু,
‘বাসি ফুলের মালা’।
তোমার নায়িকা এলোকেশীর মরণ-দশা ধরেছিল
পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে।
পঁচিশ বছর বয়সের সঙ্গে ছিল তার রেষারেষি,
দেখলেম তুমি মহদাশয় বটে –
   জিতিয়ে দিলে তাকে।

নিজের কথা বলি।
বয়স আমার অল্প।
একজনের মন ছুঁয়েছিল
আমার এই কাঁচা বয়সের মায়া।
  তাই জেনে পুলক লাগত আমার দেহে –
ভুলে গিয়েছিলেম, অত্যন্ত সাধারণ মেয়ে আমি।
আমার মতো এমন আছে হাজার হাজার মেয়ে,
অল্পবয়সের মন্ত্র তাদের যৌবনে।

তোমাকে দোহাই দিই,
একটি সাধারণ মেয়ের গল্প লেখো তুমি।
বড়ো দুঃখ তার।
তারও স্বভাবের গভীরে
সাধারণ যদি কিছু তলিয়ে থাকে কোথাও
কেমন করে প্রমাণ করবে সে,
এমন কজন মেলে যারা তা ধরতে পারে।
কাঁচা বয়সের জাদু লাগে ওদের চোখে,
মন যায় না সত্যের খোঁজে,
আমরা বিকিয়ে যাই মরীচিকার দামে।

কথাটা কেন উঠল তা বলি।
মনে করো তার নাম নরেশ।
সে বলেছিল কেউ তার চোখে পড়ে নি আমার মতো।
এতবড়ো কথাটা বিশ্বাস করব যে সাহস হয় না,
না করব যে এমন জোর কই।

একদিন সে গেল বিলেতে।
চিঠিপত্র পাই কখনো বা।
মনে মনে ভাবি, রাম রাম! এত মেয়েও আছে সে দেশে,
এত তাদের ঠেলাঠেলি ভিড়!
আর তারা কি সবাই অসামান্য –
এত বুদ্ধি, এত উজ্জ্বলতা।
আর তারা সবাই কি আবিষ্কার করেছে এক নরেশ সেনকে
স্বদেশে যার পরিচয় চাপা ছিল দশের মধ্যে।

গেল মেলের চিঠিতে লিখেছে
লিজির সঙ্গে গিয়েছিল সমুদ্রে নাইতে –
বাঙলি কবির কবিতা ক’ লাইন দিয়েছে তুলে
সেই যেখানে উর্বশী উঠছে সমুদ্র থেকে –
তার পরে বালির ‘পরে বসল পাশাপাশি –
সামনে দুলছে নীল সমুদ্রের ঢেউ,
আকাশে ছড়ানো নির্মল সূর্যালোক।
লিজি তাকে খুব আস্তে আস্তে বললে,

‘এই সেদিন তুমি এসেছ, দুদিন পরে যাবে চলে;
ঝিনুকের দুটি খোলা,
মাঝখানটুকু ভরা থাক্‌
একটি নিরেট অশ্রুবিন্দু দিয়ে –
দুর্লভ , মূল্যহীন। ‘
কথা বলবার কী অসামান্য ভঙ্গি।
সেইসঙ্গে নরেশ লিখেছে, ‘কথাগুলি যদি বানানো হয় দোষ কী,
কিন্তু চমৎকার –

হীরে-বসানো সোনার ফুল কি সত্য, তবুও কি সত্য নয়। ‘
বুঝতেই পারছ
একটা তুলনার সংকেত ওর চিঠিতে অদৃশ্য কাঁটার মতো
আমার বুকের কাছে বিঁধিয়ে দিয়ে জানায় –
আমি অত্যন্ত সাধারণ মেয়ে।
মূল্যবানকে পুরো মূল্য চুকিয়ে দিই
এমন ধন নেই আমার হাতে।

ওগো, নাহয় তাই হল,
নাহয় ঋণীই রইলেম চিরজীবন।

পায়ে পড়ি তোমার, একটা গল্প লেখো তুমি শরৎবাবু,
নিতান্তই সাধারণ মেয়ের গল্প –
যে দুর্ভাগিনীকে দূরের থেকে পাল্লা দিতে হয়
অন্তত পাঁচ-সাতজন অসামান্যার সঙ্গে –
অর্থাৎ, সপ্তরথিনীর মার।
বুঝে নিয়েছি আমার কপাল ভেঙেছে,
হার হয়েছে আমার।

কিন্তু তুমি যার কথা লিখবে
তাকে জিতিয়ে দিয়ো আমার হয়ে,
পড়তে পড়তে বুক যেন ওঠে ফুলে।
ফুলচন্দন পড়ুক তোমার কলমের মুখে।

তাকে নাম দিয়ো মালতী।
ওই নামটা আমার।
ধরা পড়বার ভয় নেই।
এমন অনেক মালতী আছে বাংলাদেশে,
তারা সবাই সামান্য মেয়ে।
তারা ফরাসি জর্মান জানে না,
কাঁদতে জানে। কী করে জিতিয়ে দেবে।
উচ্চ তোমার মন, তোমার লেখনী মহীয়সী।
তুমি হয়তো ওকে নিয়ে যাবে ত্যাগের পথে,
দুঃখের চরমে, শকুন্তলার মতো।

দয়া কোরো আমাকে।
নেমে এসো আমার সমতলে।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে রাত্রির অন্ধকারে
দেবতার কাছে যে অসম্ভব বর মাগি –
সে বর আমি পাব না,
কিন্তু পায় যেন তোমার নায়িকা।

রাখো-না কেন নরেশকে সাত বছর লণ্ডনে,
বারে বারে ফেল করুক তার পরীক্ষায়,
আদরে থাক্‌ আপন উপাসিকামণ্ডলীতে।
ইতিমধ্যে মালতী পাস করুক এম . এ .
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে,
গণিতে হোক প্রথম তোমার কলমের এক আঁচড়ে।
কিন্তু ওইখানেই যদি থাম
তোমার সাহিত্যসম্রাট নামে পড়বে কলঙ্ক।

আমার দশা যাই হোক
খাটো কোরো না তোমার কল্পনা।
তুমি তো কৃপণ নও বিধাতার মতো।
মেয়েটাকে দাও পাঠিয়ে য়ুরোপে।
সেখানে যারা জ্ঞানী, যারা বিদ্বান, যারা বীর,
যারা কবি, যারা শিল্পী, যারা রাজা,
দল বেঁধে আসুক ওর চার দিকে।
জ্যোতির্বিদের মতো আবিষ্কার করুক ওকে –
শুধু বিদুষী ব’লে নয়, নারী ব’লে।
ওর মধ্যে যে বিশ্ববিজয়ী জাদু আছে
ধরা পড়ুক তার রহস্য, মূঢ়ের দেশে নয় –
যে দেশে আছে সমজদার, আছে দরদি,
আছে ইংরেজ জর্মান ফরাসি।

মালতীর সম্মানের জন্য সভা ডাকা হোক-না, বড়ো বড়ো নামজাদার সভা।
মনে করা যাক সেখানে বর্ষণ হচ্ছে মুষলধারে চাটুবাক্য,
মাঝখান দিয়ে সে চলেছে অবহেলায় –
ঢেউয়ের উপর দিয়ে যেন পালের নৌকো।

ওর চোখ দেখে ওরা করছে কানাকানি,
সবাই বলছে ভারতবর্ষের সজল মেঘ আর উজ্জ্বল রৌদ্র
মিলেছে ওর মোহিনী দৃষ্টিতে।
( এইখানে জনান্তিকে বলে রাখি
সৃষ্টিকর্তার প্রসাদ সত্যই আছে আমার চোখে।
বলতে হল নিজের মুখেই,
এখনো কোনো য়ুরোপীয় রসজ্ঞের
সাক্ষাৎ ঘটে নি কপালে। )
নরেশ এসে দাঁড়াক সেই কোণে,
আর তার সেই অসামান্য মেয়ের দল।

    আর তার পরে?
তার পরে আমার নটেশাকটি মুড়োল,
স্বপ্ন আমার ফুরোল।
হায় রে সামান্য মেয়ে!
হায় রে বিধাতার শক্তির অপব্যয়!




Munmun Mukherjee Kobita (মুনমুন মুখার্জী)

            কেউ কথা রাখেনি 


 কেউ কথা রাখেনি তেত্রিশ বছর কাটলো
কেউ কথা রাখেনি

ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল
শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে।
তারপর চন্দ্রভুক অমাবস্যা এসে চলে গেল, সেই বোষ্টুমী আর এলো না।
পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি।
মামার বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর  তোমাকে আমি তিনপ্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো।
যেখানে পদ্ম ফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করে ‌।

নাদের আলী আমি আর কত বড় হবো?
আমার মাথা এই ঘরের ছাদ ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায় তিন প্রহরের বিল দেখাবে ?
একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনো,
লাঠি লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্কর বাড়ির ছেলেরা
ভিখারীর মতো চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি
ভিতরের রাস উৎসব
অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কন পরা ফর্সা রমণীরা
কতরকম আমোদে হেসেছে
আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি।

বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলে ছিলেন দেখিস আমরাও….
বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই…
সেই রয়্যাল গুলি ,সেই লাঠি লজেন্স ,সেই রাস উৎসব
আমায় কেউ ফিরিয়ে নেবে না ।
বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,
যে দিন আমায় সত্যিকারের ভালোবাসবে
যেদিন আমায় বুকেও এই রকম আতরের গন্ধ হবে।
ভালোবাসার জন্যে আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়েছি
দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়,,
বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮ টা নীল পদ্ম,
তবু কথা রাখেনি বরুণা,
এখনো তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ,
এখনো সে যে কোন নারী।

কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনা , কেউ কথা রাখেনা,,!!

                        মনে থাকবে 




পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক
আমরা তখন প্রেমে পড়বো
মনে থাকবে?

বুকের মধ্যে মস্তো বড় ছাদ থাকবে
শীতলপাটি বিছিয়ে দেব;
সন্ধে হলে বসবো দু’জন।
একটা দুটো খসবে তারা
হঠাৎ তোমার চোখের পাতায় তারার চোখের জল গড়াবে,
কান্ত কবির গান গাইবে
তখন আমি চুপটি ক’রে দুচোখ ভ’রে থাকবো চেয়ে…
মনে থাকবে?

এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দেব
এই জন্মের চুলের গন্ধ পরের জন্মে থাকে যেন
এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মে থাকে যেন
মনে থাকবে?

আমি হবো উড়নচন্ডি
এবং খানিক উস্কোখুস্কো
এই জন্মের পারিপাট্য সবার আগে ঘুচিয়ে দেব
তুমি কাঁদলে গভীর সুখে
এক নিমেষে সবটুকু জল শুষে নেব
মনে থাকবে?

আর যা কিছু হই বা না হই
পরের জন্মে তিতাস হবো
দোল মঞ্চের আবীর হবো
শিউলিতলার দুর্বো হবো
শরৎকালের আকাশ দেখার__
অনন্তনীল সকাল হবো;

পরের জন্মে তুমিও হবে
নীল পাহাড়ের পাগলা-ঝোরা
গাঁয়ের পোষাক ছুড়ে ফেলে
তৃপ্ত আমার অবগাহন।
সারা শরীর ভ’রে তোমার হীরকচূর্ণ ভালোবাসা।
তোমার জলধারা আমার অহংকারকে ছিনিয়ে নিল।
আমার অনেক কথা ছিল
এ জন্মে তা যায়না বলা
বুকে অনেক শব্দ ছিল__
সাজিয়ে গুছিয়ে তবুও ঠিক
কাব্য করে বলা গেল না!

এ জন্ম তো কেটেই গেল অসম্ভবের অসঙ্গতে
পরের জন্মে মানুষ হবো
তোমার ভালোবাসা পেলে
মানুষ হবোই__ মিলিয়ে নিও!

পরের জন্মে তোমায় নিয়ে…
বলতে ভীষণ লজ্জা করছে
ভীষণ ভীষণ লজ্জা করছে
পরের জন্মে তোমায় নিয়ে…
মনে থাকবে?

“মনে থাকবে?”



Munmun Mukherjee Kobita Tui Chai

 

           তুই চাই 




আমি একটা তুই চাই
একটা সত্যিকারের তুই চাই,
যে জানবে আমার পুরো ভিতরটা
জানবে আমার লুকানো সব দোষ,
আমার বদমাইশি, আমার নোংরামি,
আমার কলঙ্ক।
যে নিজে থেকে আমার ভুলগুলোর
অংশীদার হবে,
আমার পাপগুলোকে অর্ধেক করে লিখে নেবে
নিজের খাতার প্রথম পাতায়।

আমি এমন একটি তুই চাই
যাকে আমি নির্দ্বিধায় উপহার দেব
আমার সব অনিয়ম,আমার অপারগতা,
আমার বদভ্যাস, আমার উশৃঙ্খলতা।
আমি পিঠ চাপড়ে তার
কাঁধে তুলে দেব আমার
অসহায়ত্বের ঝুলি,
আমার একাকীত্ব, আমার নিঃসঙ্গতার কষ্ট,
আমার দুশ্চিন্তা, আমার হতাশা।

সবগুলো ঝাড়ুদারের মতো কুড়িয়ে নিয়ে
সে বাধবে মস্ত বড় এক বস্তা,
তারপর কুলির মতো
মাথায় করে বয়ে নিয়ে যাবে সেইসব অভিশাপ,
আর হাসতে হাসতে বলবে –
ভীষণ ভারী রে, কি করে এতদিন বইলি
এই বোঝা?
তারপর,
ঠিকানা ছাড়া পথে হাটতে থাকবে অসীম
সমুদ্র পর্যন্ত
সাগর পাড়ে এসে
প্রচন্ড শক্তিতে ছুঁড়ে ফেলে দেবে সেই বোঝা
ঠিক সাগরের মাঝখানে হারিয়ে যাবে
আমার সব অভিশাপের ঝুলি।

আমি ঠিক এরকম একটা তুই চাই
যে কোনদিন তুমি বা আপনি গুলোর মাঝে
হারিয়ে যাবে না,
আমি একটা তুই চাই।



 মন ছুঁয়ে যাওয়া এমন কবিতাটি ভালো লাগলে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ..
ভালো থাকুন, কবিতায় থাকুন। ..
Thank You, Visit Again ….

Tags – Bangla Kobita, Bengali Poem, Bengali Lyrics  

Share This Article