স্বাভিমান – Bangla Premer Golpo – Govir Premer Golpo

Bongconnection Original Published
14 Min Read

স্বাভিমান - Bangla Premer Golpo - Govir Premer Golpo
Loading...

একটি নষ্ট মেয়ের গল্প
বয়ফ্রেন্ড টু বিয়ের পিঁড়ি

আঃ!! এটা কি ধরনের অসভ্যতা সোহম?
কেন? এতে অসভ্যতার কি দেখলে? তোমার ওপরে আমার পুরো অধিকার আছে।
তাই বলে এখানে? এভাবে? লজ্জা বলেও একটা কথা আছে।
ছাড়ো তো!! তোমাদের মফস্বলের মেয়েরা আজকাল কতকিছু করছে জানো? আর তুমি!
শোনো, কে কি করছে আর করছে না আমি জানি না আর জানতেও চাই না। কিন্তু আমি পারবো না।
আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে চলো এমন কোথাও যাই যেখানে শুধু আমরা থাকবো, আর কেউ থাকবে না।
এতো কিসের অসহিষ্ণুতা তোমার?
তোমাকে ছুঁয়ে দেখতে চাই। তোমার সৌন্দর্য এর পুরো স্বাদ নিতে চাই।
ছিঃ ছিঃ! তোমার কথা শুনে মনে হয় না তুমি একজন শিক্ষিত মানুষ।
উফ্! অসহ্য! তোমার এই সেকেলে মানসিকতা থেকে এবার বেরিয়ে এসো পিউ, নাহলে আমার পক্ষে আর এই শুকনো প্রেম টানা সম্ভব নয়।

শুকনো প্রেম!! কথাটা হজম করতে বেশ সময় লেগেছিল পিউ র। সোহমের সাথে তার আলাপ একটা সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে। আলাপের মাধ্যম ছিলো একটা পোস্ট। যেখানে তাদের নিজেদের মধ্যে একটা ঠান্ডা লড়াই হয় কমেন্ট বক্সে। তারপর সেটা চলে আসে ব্যক্তিগত মেসেজ বক্সে। লড়াইটা ধীরে ধীরে বন্ধুত্বে পাল্টে যায়।

বহরমপুরের মেয়ে পিউ। পড়াশোনাতে খুব সাধারণ। ভালোবাসে গান নাচ। পিউর বাবা বলতেন, নাচ গানের সাথে বই গুলোকেও একটু ভালবাস রে। ওরাই তোর সঙ্গী হবে পরে। হলো ও। স্নাতক হবার পরে শুধু বই নিয়েই তার সময় কাটে। বিভিন্ন নতুন পুরোনো সাহিত্যিক এর বই, তার সাথে চাকরীর পরীক্ষার বই। মা নেই তার। বাবা আর পিসি। এই দুজনই তার জগৎ। মা এর আদরটা সে পিসির কাছেই পেয়েছে। পিসির বাড়িটা খুব কাছেই। দাদু কেমন করে জানি বুঝতে পেরেছিলেন যে পিউর মা হয়তো তাকে বেশিদিন আদর দিতে পারবে না। যাবতীয় আব্দার ও তার পিসির কাছেই। পিকুর সাথে এই নিয়ে তার কম ঝগড়া হয় ভেবেছো? পিঠোপিঠি দুই ভাইবোনে বাড়ি ফাটিয়ে ফেলে তখন। কিন্তু পিসি এসে পিকুকে মারতে উদ্ধত হলেই তাকে আগলে দাঁড়াবে পিউ ই। খরবদার ভাই কে মারবে না। মেয়ের ওই রূপ দেখে বুঝতেন, পিকু কে আগলে রাখার জন্য আরো একজন আছে।

এহেন সুন্দর পরিবেশে বড়ো হয়ে ওঠা পিউর কাছে বাইরের জগৎটা খানিকটা অপরিচিত। চাকরীর পরীক্ষার পড়াশোনার ফাঁকেই সোহমের সাথে আলাপ হওয়া। কাছের ও একমাত্র বন্ধু পিকু জানত সবটাই। কখনো কখনো পিউর উত্তর গুলো পিকুই গুছিয়ে লিখে দিত। বলতো, দাড়া, এই রিপ্লাই টা আমি করবো। আরে! আমি ও একটা ছেলে, আমি জানি কোন উত্তরে খুশি হবে ভদ্রলোক। এই সব নিয়ে দুইজনে কম হাসাহাসি করতো না। পিকু ২ বছর কমপ্লিট করে ফেলেছে তার এম.বি.এ। ফাইনাল পরীক্ষার বেশী দেরী নেই। আর পিউর বাবা তার বিয়ের দেখাশোনা শুরু করবেন এরকম একটা পরিস্থিতি আসার মুখেই জইনিং লেটার টা হাতে পায় সে। একটা গ্রামীণ ব্যাংক এ। পলাশী স্টেশনের থেকে খুব দূরে নয়। আসাযাওয়া টা একটু কষ্টকর হলেও, সরকারী চাকরী তো! অভ্যাস হয়ে যাবে। তার থেকেও বড় কথা, পিউ বাড়ির থেকেই যেতে পারবে।

সোহম ও খবর টা পেয়ে খুশি। বললো এবার তাহলে তোমার সাথে দেখা করতে পারবো মাঝে মাঝে। নিজের কাজের জায়গাটা খুব সুন্দরভাবে গুছিয়ে নিয়েছে পিউ। মাঝে মধ্যেই প্রশংসা বাক্যও প্রাপ্তি হয় বইকি।

ঠিক হয় সোহমের সাথে দেখা করবে। পিকুকেও জানায়। প্রথমবার যাবে একজন অচেনা মানুষের সাথে দেখা করতে। একটু ভয় তো আছেই। পিকুর পরামর্শ মতো একটা কফিশপ এ দেখা করে দুজন। প্রথম দেখা ভালোলাগাটাকে একটু বাড়িয়ে দেয় বলাইবাহুল্য। সপ্তাহে একদিন করে নিয়ম হয়ে যায়। কফিশপ টা ধীরে ধীরে আবছা আলো ঘেরা কোন মাঠের পাশে, বা কখনো স্টেশনের শেষ নির্জন প্রান্তের বেঞ্চিতে এসে পৌঁছায়। সোহমের হাত ধরে থাকাটা ধীরে ধীরে পৌঁছতে চায় পিউর শরীরের গোপন ঠিকানায়। প্রতিবাদ করে ওঠে পিউ। তার মনে হয় সব কিছুরই একটা সময় আর সৌন্দর্যবোধ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু সোহম এর অসহিষ্ণুতা পিউ কে অস্থির করে তোলে। পিকুকেও বলতে পারেনা। কোথাও একটা বাঁধে তার। ভাবে সোহম কে বুঝিয়ে নেবে। ওদের ভালোবাসা তো আর শরীর সাপেক্ষ নয়।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। সেদিন রাতেই ওদের পুরোনো গল্পের পাতাটা খুলে বসে পড়তে থাকে। তর্ক দিয়ে শুরু করা তাদের সম্পর্ক, সেখান থেকে অনেক কথা, নিজেদের কথা, ভালো, খারাপের নানান বিশ্লেষণ। কিন্তু কোথাও কোনো আলোচনাই শরীরকে নিয়ে নেই, বা বাহ্যিক সৌন্দর্য চর্চা ও নেই। নাহ্ কোথাও মনের সৌন্দ্যর্যের কথাও তো নেই!! তাহলে কি……

বেশ কিছুটা সময় ঐভাবেই কেটে যায়। মনটাকে শান্ত করে সোহম কে একটা মেসেজ করে।

পিউ: রাতের খাওয়া হয়েছে?
সোহম: হ্যাঁ
পিউ: ঘুমের মাসিপিসি ডাকছে নাকি?
সোহম: নাহ্
পিউ: তাহলে তো একটু গল্প হতেই পারে। 😃
সোহম: কি গল্প? 🤔
পিউ: আমাদের গল্প। আবার কি! 😊
সোহম: ওহ্! তোমার গল্প মানেই তো সতীপনা! 😏
পিউ: কি বলছো তুমি!! কি হয়েছে তোমার সোম?
সোহম: শোনো পিউ, অনেক দিন হলো। আমারও কিছু চাহিদা থাকতে পারে এই সম্পর্ক টা থেকে।
পিউ: চাহিদা? তুমি কোন চাহিদার কথা বলছো সোহম? শারীরিক? আমি তো সেটা অস্বীকার করিনি। শুধু এটাই বলেছিলাম যে সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে।
সোহম: তোমাদের শালা মেয়েদের এই ন্যাকামি দেখলে … জ্বলে যায়। প্রেম করতে পারো আর শারীরিক সম্পর্কে যতো আপত্তি!!! আজব মাইরি তোমরা।

এ কোন সোহম? একে পিউ চেনেই না। গত ৬ মাস ধরে যার সাথে কথা বলেছে আর আজকে যাকে দেখেছে বা এখন কথা বললো, একই ব্যক্তি? কেন এই পরিবর্তন তার? নাকি পিউর ই চিনতে বা বুঝতে ভুল হয়েছিল!! দ্বন্দ্বটা কাটে না সে রাতে। পরের দিন সকালেই পিকুর কাছে ছুটে যায়। সবকিছু খুলে বলে। মনের ভারটা যেন একটু হলেও হালকা হয়। পিকু বয়েস এ অল্প কিছু ছোটো হলেও পিউর থেকে বেশী চেনে বাইরের জগৎটা। তবু বুঝে উঠতে পারেনা। কারন বহুবার পিকু নিজেই পিউ সেজে চ্যাট করেছে সোহমের সাথে। মুখে বলে, তুই কদিন একটু এড়িয়ে চল। ওকে একটু একা ছেড়ে দে। আমার মনে হয় কোথাও একটা কিছু ভুল হচ্ছে, গন্ডগোল হচ্ছে।

আরো পড়ুন  লকডাউন কলহ

পিকুর সাথে কথা বলে পিউ অফিস চলে গেলে একটা নতুন প্রোফাইল তৈরী করে পিকু। একটা মেয়ের নামে। মনের মধ্যে কোথাও একটা খারাপলাগা কাজ করলেও ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট টা পাঠিয়ে দেয়। কিছুক্ষন অপেক্ষা করেও কোনো উত্তর না আসায় খুশি হয়।

অফিস থেকে ফিরে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়েই পিকুকে ফোন করে পিউ।

পিউ: কি রে, কিছু ভাবলি?
পিকু: কি ভাববো? একটু সময় দিতে বলছি তো তোকে! একদিনেই এতো অস্থির হোস না। খেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড় একদম। কিচ্ছু ভাবিস না।

পিউ কে কোনরকমে শান্ত করেই নতুন প্রোফাইল খুলে বসে আবার পিকু। সারাদিন একদমই সময় পায়নি সে। পড়ার চাপে ভুলেও গেছিলো। দেখে, ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট তখনও একসেপ্ট হয়নি। খানিক হতাশ হয়। পিউর জন্য একটু চিন্তা হয় বইকি।

ম্যাডাম আজকাল বড্ড চুপচাপ যে?
কই নাতো!
বললেই হবে? কম সময় তো হলো না আপনাকে দেখছি। আমাদের মতো বাচাল আখ্যার যোগ্য না হলেও, মৌন সাধিকাও আপনাকে বলা যায় না!

শৈবাল এর কথার ধরনে হেসে ফেলে পিউ। পিউর সহকর্মী। পাশের টেবিল এই বসে। পিউর ই বয়েসি হবে বা কিছু বড়ো। বেশ মজাদার মানুষ। সবার সাথেই বন্ধুত্ব সুলভ তাঁর আচরণ। আপনাকে আজকাল আর কফিশপ এ যেতে দেখিনা। কিছু মনে করবেন না। সব কিছু ঠিক আছে তো? আসলে, এখানে আপনি আসার পর থেকেই দেখেছি ওই ভদ্রলোকটি কে। কিন্তু বেশ কিছদিন, তা প্রায় সপ্তাহ দুয়েক তো বটেই। আপনিও চুপচাপ আর ওনাকেও দেখিনা। তাই আর থাকতে না পেরে…….. মাফ করবেন।

একটু বিরক্ত হলেও গলার কাছে কান্নাটা দলা পাকিয়ে আসে। চোখ দুটো সামলাতে পারেনা জল। শৈবাল খুব অপ্রস্তুত হয়। বলে ওঠে, এতদিন তো শুধু ক্যান্টিন এর চা খেয়েছেন, আজকে চলুন নিতাইদার স্পেশাল চা খাবেন। বলেই পিউ কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওর মোবাইল টা টেবিল থেকে তুলে নিয়ে বাইরের দিকে হাঁটা লাগায়। হতভম্ব পিউ একপ্রকার বাধ্য হয় তার সাথে বাইরে যেতে। দুটো স্পেশাল চা আর বিস্কুটের অর্ডার করে মোবাইল টা পিউকে ফিরিয়ে দিয়ে ক্ষমা চায়, বলে এইটা যদি না তুলতাম তাহলে যে আপনার হাত ধরে টানতে হতো। সেটা খুব একটা সুখকর হতো বলে মনে হয় নি। অগত্যা মোবাইল এর সাহায্য।

বলে চলে শৈবাল। আমার জানা নেই কি নিয়ে আপনাদের মনোমালিন্য যার জেরে আপনার এই মন খারাপ। তবে একটা কথা অযাচিত ভাবেই বলতে চাই। চায়ের কাপ টা হাতে নিয়ে শুনতে থাকে পিউ। আমাদের সব সম্পর্কগুলোই চাওয়া পাওয়ার, দেওয়া নেওয়ার। সেখানে কোনো পক্ষ যদি দাবি করে বসে এমন কিছুর, যা অন্য পক্ষের কাছে অনভিপ্রেত বা তার আত্মসম্মান কে আহত করছে, তাহলে সেই সম্পর্ক এর ভার বহন করার কোনো মানে নেই। নিজেকে কষ্ট দিয়ে, শুধু ভালবাসার দোহাই দিয়ে অন্যের চাহিদাকে পুরন করাটা ভালোবাসা নয়, সেটা ক্ষণস্থায়ী একটা আবেগ। সেই আবেগটা যে মুহুর্তে চলে যাবে, মন আত্মগ্লানিতে পরিপূর্ণ হবে। সম্পর্ক নষ্ট হবার কষ্টের থেকেও যেটা অনেক বেশী মারাত্বক। ভেবে দেখবেন কথাগুলো। অন্যকে প্রাধান্য দেওয়া ভালো কিন্তু নিজের অন্তর কে রক্তাক্ত করে একেবারেই নয়।

শৈবাল চলে যাওয়ার পরেও পিউ দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে ওর বলে যাওয়া কথাগুলো। অনুভব করে প্রতিটি কথা খাঁটি। যে মানুষটা এতদিন ধরে তার সাথে কথা বলে, মিশেও বুঝতে পারলনা তার মনকে, যার কাছে পিউর ভালোবাসা টা ন্যাকামি বলে মনে হয়েছে, তাকে মনে হয় বোঝাবার কিছু নেই পিউর কাছে।

ফিরে সেদিন পিসির বাড়িতে যায়। পিকুর সাথে বসে কথা বলে। জানায় ওকে শৈবাল এর কথাগুলো। কিন্তু এভাবে এতো সহজেই ব্যাপারটা হয়ে যাবে!! পিকু খুলে বসে পিউর চ্যাট বক্স।

পিউ: হাই!
সোহম: আরে!! কাকে দেখি?
পিউ: কেমন আছো তুমি?
সোহম: তোমাকে ছাড়া ভালো কি করে থাকবো বলো!
পিউ: তাহলে আমাকে ফোন, মেসেজ কিছুই করলে না কেন?
সোহম: শোনো, পাখিকে মাঝে মাঝে একটু ছেড়ে দিতে হয়, তবেই তো সে বুঝবে তার আসল জায়গা।
পিউ: আমি কি তোমার পোষা নাকি যে তুমি ছেড়ে বা বেঁধে রাখবে?
সোহম: নও বলছো?
পিউ: তুমি পাল্টে গেছো সোম। কেমন যেন একটা হয়ে গেছে তোমার কথাবার্তা।
সোহম: আঃ!! আবার ন্যাকামি! ছাড়ো ওসব। বলো কবে দেখা করবে? এক বন্ধুর নতুন ফ্ল্যাটে নিয়ে যাবো তোমাকে। শুধু আমরা দুজন। তোমার গায়ের গন্ধটা যেন এখনই পাচ্ছি।
পিউ: আমিও পাচ্ছি, তোমার মনের ভিতর থেকে উঠে আসা দুর্বিষহ পাঁকের গন্ধ। দেখতে পাচ্ছি তোমার ক্ষুধার্ত দুটো চোখ, যা একনিমেশে শেষ করে দিতে পারে মনের নিষ্পাপ ভালোবাসাকে। শুনতে পাচ্ছি কোলাহল অজস্র কীটের তোমার মাথার ভেতরে। এদের কারোর কাছেই “শুকনো প্রেম” এর কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।

শেষ কথাগুলো পিউ নিজে টাইপ করে পাঠিয়ে দিয়েই বন্ধ করে দেয় চ্যাট বক্স। ব্লক করে দিয়ে পিকু কে বলে, চল একটু ছাদে যাই। আজকে অনেকদিন পরে মনটা হালকা লাগছে। আত্মসম্মান যে কতটা মূল্যবান সেটা বোঝানোর জন্য শৈবাল কে মনে মনে অসংখ্য ধন্যবাদ জানায়। পিকু চেঁচিয়ে বলে, মা, তিনটে চা নিয়ে ছাদে চলে এসো। আজকে খুব সুন্দর হাওয়া দিচ্ছে, দক্ষিণের।

মাসখানেক পরের কথা। সেদিন বাড়ির গেটটা খুলে ঢুকতে ঢুকতে পিউ শুনতে পায় অনেক লোকজনের কণ্ঠস্বর। এই সময় আবার কারা এলো!! ওর আসার শব্দে পিকু বেরিয়ে আসে ঘর থেকে, বলে তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। পিকুর সাথে ঘরে ঢুকেই সোহম কে দেখে চমকে যায়। ঘরে সবাই রয়েছে। বাবা, পিসি, পিকু আরো দুজন। সোহমের বাবা মা-ই হবেন। পিউ বুঝে উঠতে পারে না এসবের অর্থ।

আরো পড়ুন , পেটুক প্রেমিকা

সোহম উঠে ঘরের জানলার কাছে গিয়ে বলতে শুরু করে। আমি খুব সাধারণ একটা ছেলে। যার কাছে জগৎ মানে বাবা, মা আর বই। এহেন ছেলের যে বন্ধু সংখ্যা একটু কম হবে সেটা না বললেও চলে। যতটুকু ছিলো সেখানেও আমার ভাবনাগুলো কোনো জায়গা পেতো না। আমি যেন একটা অন্য গ্রহের জীব। স্কুল কলেজে পড়ার সময়ই দেখতাম বাকিরা প্রেম করছে। এখানে ওখানে ঘুরতে যাচ্ছে। কিন্তু আমার মাথায় তখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন। বাবাকে বিশ্রাম দেবার আকাঙ্ক্ষা। চাকরি করতে গিয়েও দেখলাম আমি বড্ড পিছিয়ে আছি। দোয়েল, আমার সাথেই কাজ করে। ভালো লাগলো ওকে দেখে। সম্পর্কটা গড়েও উঠলো। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝলাম আমাদের চাহিদাগুলো একদম আলাদা। তাও আমার সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করলাম খুশি করার। তবে বৃথা হলো সব চেষ্টা। জানলাম মনের সাথে শরীরকেও তৃপ্ত করতে শিখতে হবে। কিন্তু তা কি করে সম্ভব যদি না দুটো মন এক হতে পারে? টিকলো না সম্পর্ক টা। দোয়েল কে এড়ানোর জন্য পলাশীতে ট্রান্সফার নিলাম। সময় কাটানোর জন্য সোশাল মিডিয়ার দ্বারস্থ হলাম। তোমার সাথে আলাপ ও হলো। ভালোলাগা অনেক খানি বেড়ে গেলো দেখা করে। সাহস করে নিজেকে পাল্টানোর চেষ্টা করলাম, তোমার মনটাকে পরখ করবার লোভে, যাতে এই বার আর কোনো ভুল না হয়। বুঝলাম সফল হয়েছি, যখন দেখলাম তোমার প্রোফাইল এ ব্লক হলাম। জানলাম আমার মনের ধারণা ভুল নয়। তুমিও আমার মতো করেই ভাবো।

তারপরেরটা মনে হয় না বললেও তুমি বুঝে গেছো। যদি রাগ আর ক্ষোভ গুলো চলে গিয়ে থাকে তাহলে জানিও কবে আসবো তোমাকে নিয়ে যেতে, আমার বাড়ির ছাদে বসে চা খেতে। দখিনা বাতাস সেখানেও বয় কিন্তু।
              ———————————————

Share This Article