ভালোবাসার সংক্রমণ | Valobashar Romantic Premer Golpo Bangla | Govir Premer Golpo

Bongconnection Original Published
6 Min Read



PicsArt 03 21 02.24.45
Loading...







ঠিক পাঁচদিন আগে,মেয়েটির সাথে ফোনে আন্তরিক বার্তালাপ হয়েছিল বোহাই’এর ..
প্রত্যেক কথার শেষে বোহাইয়ের কানে ভেসে আসছিলো অন্য প্রান্ত থেকে ঘন’ঘন কাশির শব্দ !
বিচলিত হয়ে ছেলেটি জানতে চেয়েছিলো:
–“কি হয়েছে তোমার?”
মুচকি হেসে চুঙহুয়া বলেছিলো :
–“দূর ! কিছুনা ..কাল থেকে একটু কমন কোল্ড ! ..তুমি অত ভেবোনা প্রিয়তম,,আগামীকাল কিন্তু ইন্টারভিউ’তে নিজেকে স্মার্টলি প্রেসেন্ট করবে.. আমার বিশ্বাস তুমি চাকরীটা পাবে I”
হাসির মধ্যেও যেন কত কষ্ট,কত বেদনা লুকিয়ে ছিল মিষ্টি মেয়েটির কণ্ঠে..
চিন্তিত বোহাই আরও অনেক কিছু বলতে চেয়েছিলো, কিন্তু তাকে সুযোগ না দিয়েই কল’টা ডিস্কানেক্ট করেছিল তার মনের মানুষ, চুঙহুয়া I
কিছুক্ষন পরে মিষ্টি চুঙহুয়া’র মুঠোফোন থেকে একটা টেক্সট ম্যাসেজ এসেছিলো বোহাইয়ের ফোনে..
বার্তা ছিল :
–“আর কথা নয় I কথা হবে থার্ড রাউন্ড ইন্টারভিউয়ের পর, আমার বিশ্বাস তুমি সিলেক্টেড হবে..তারপর আমি নিজে আসবো তোমার বুকে..
এর মাঝে আর কথা না..পড়াশোনায় মনোনিবেশ করো..”
****************************************************
প্রেমিকার কথা মতো,মনের কষ্ট পাঁজরে চেপে পরম উদ্যমে এগিয়ে গিয়েছিলো বোহাই..
ফার্স্ট রাউন্ড অতিক্রম করে সহজেই সেকেন্ড রাউন্ডে পৌঁছে তৃতীয় দিনের শীতল বিকেলে টেক্সট  ম্যাসেজ পাঠিয়েছিল সে মেয়েটিকে I
আর মেয়েটি…?
নিঃশব্দে…
সাংহাই প্রান্তের একটি নার্সিংহোমের বেডে শায়িত,কম্পমান হাতের সরু আঙুলে, স্ক্রল করে ঝিলিক দেওয়া হাসিতে পড়ছিলো,তার মনের মানুষের সাফল্যের বার্তাগুলি..
মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্য ভিডিও-কল করতে চেয়েছিলো বোহাই..
দৃঢ়তার সাথে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো:
‘অজানা ভাইরাল ফিভারে ‘আক্রান্ত মেয়েটি’ I
****************************************************
চতুর্থ দিনের শেষে,
বিকালে লাউঞ্জে কফিতে চুমুক বসানোর ফাঁকে জুল-জুল করে তাকিয়ে ছিল বোহাই; ডিসপ্লে বোর্ডের দিকে I
সহসা সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে উঠলো সে আনন্দে !
‘সবচেয়ে উপরে বোর্ডে চকচক করছিলো তার নাম’টা ‘..
কফির পেয়ালা রেখে সব ভুলে আঁকিবুকি কেটেছিল,সে তার সেলফোনে..
তারপর ফোনটা কানে রেখেছিলো সে একরাশ উল্লাস নিয়ে..
 চুরমার হলো সবকিছু …
চুঙহুয়া’র ফোন সুইচ্ড অফ অবস্থায় পেয়ে খুব শুকনো দেখাচ্ছিল বোহাই’কে I
বেশ কিছুক্ষন পর পুনরায় চেষ্টা করেছিল যুবকটি…
‘না !’ : আবারো ব্যর্থ হলো সে I
মন’কে বুঝিয়ে বাড়ি ফিরে, নিজের সর্বস্ব দিয়ে তৈরী হতে লাগলো শেষ ও চূড়ান্ত দিনের পরীক্ষার জন্য…
****************************************************নার্সিং হোমের বেডে ছটফট করছিলো মেয়েটি..তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল উত্তীর্ন হবে বোহাই I
বুকে তার অপরিসীম যন্ত্রনা,ফুসফুস’টা প্রায় বিকল..চিকিৎসকদের হাত থেকে ব্যাপারটা বেরিয়ে যাচ্ছিলো আস্তে আস্তে I
অন্তর্নিহিত সংক্রমণ’টা ধরা পড়তে অনেকটা বিলম্ব হয়ে গিয়েছে যে !
পঞ্চম দিনের সারা বেলা’টা বোধয় বোহাইয়ের হাতের মুঠোয় ছিল..
প্র্যাকটিকাল প্রেসেন্টেশনে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গিয়েছিলো মেধাবী বোহাই I
দুর্ভাগ্যবশত দুমড়ে পড়লো শেষ প্রোগ্রামিং টেস্টে..
কিছুতেই আউটপুট বের করতে পারছিলোনা সে..
ভীষণ মনে পড়ছিলো তার হৃদয়হরণী  চুঙহুয়া’র কথা..
শেষমেশ একটা বৈকল্পিক রাস্তায় কোনোরকমে একটা প্রেসেন্টেশন প্রস্তুত করলো সে মনে বিশ্বাস রেখে I
দাখিল করলো উত্তর..
বিচারক মন্ডলী কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে নিজেদের কক্ষে প্রস্থান করলেন I
****************************************************






টানা তিরিশ মিনিট চোখ বন্ধ করে ওয়েটিং লাউঞ্জে বসে ছিল বোহাই..
মনটা নাজানি কেন রীতিমতো ছটফট করছিলো মেয়েটির জন্য..
ইন্টারভিউয়ের পরিণতির কথা যেন বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছিলো মস্তিষ্কে I
ফল প্রকাশ হলো :
নাম ঘোষণা করা হলো নূতন নিযুক্ত কার্মিকের..
‘যেন নিজের মধ্যে ছিলোনা আর বোহাই !’
নামী সফ্টওয়্যার কোম্পানির সহকারী প্রোগ্রামারের শূন্যপদে নিযুক্ত হয়েছে সে I স্বপ্ন সফল হয়েছে তার !
একনিমেষে বেরিয়ে পড়লো সে হন্তদন্ত হয়ে বাইরে…

-‘কি নির্মম যন্ত্রনা !’
 কিছুতেই সে যোগাযোগ করতে পারলোনা তার স্বপ্নসুন্দরী চুঙহুয়ার সাথে..
-‘এতক্ষন ফোন বন্ধ করে কি করছে মেয়েটি? ও ঠিক আছে তো? ‘
উত্তেজনায় যেন ফেটে যাচ্ছিলো যুবকটির মস্তিষ্কের শিরা উপশিরা..
****************************************************
পরবর্তী দৃশ্যপট…
চুঙহুয়া’র শীতল নিথর নরম পায়ের পাতায় চুম্বন’রত অবস্থায় অঝোর ধারায় কেঁদে যাচ্ছিলো যুবক বোহাই I
কয়েক ঘন্টা আগেই ঢোলে পড়েছিল মেয়েটি চিরসত্য মৃত্যুর নির্মম কোলে I
কোভিড-১৯’এর প্রাণঘাতী ভাইরাল সংক্রমণ নিঃশেষ করেছিল মেয়েটির বেঁচে থাকার স্বপ্ন I
বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরা তার’ই ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা,বোহাইয়ের একটি কৌতুক মুদ্রার ছবি উঁকি দিচ্ছিলো চুঙহুয়া’র হাতের মুঠো দিয়ে I

 মৃত মেয়েটির বুকে আছড়ে পড়ে, চিৎকার করে কেঁদে উঠলো,জয়ী হয়েও হেরে যাওয়া মানুষটি I
****************************************************




হলঘরের প্রত্যেকটি দর্শক নিজেদের আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে উঠলো আবেগী হয়ে..
প্রায় প্রত্যেকের’ই চোখের কোনে চিকচিক করছে স্যালাইন ওয়াটার..
করতালিতে যেন ফেটে পড়ছে মঞ্চ I
পর্দা নামছে ধীর গতিতে..
 ‘চুঙহুয়া’ ও ‘বোহাইয়ের’ চরিত্র রূপায়ণে সৌরভ ও অন্বেষার প্রসংশায় পঞ্চমুখ দর্শকবৃন্দ I
কলেজ ফেস্টে সৌরভের স্ক্রিপ্টে লেখা নাটক’টি ছিল অনুষ্ঠানের শেষ চমক I
পর্দার নেপথ্যে সৌরভের চোখে অথৈ জলের বন্যা দেখে, হতবাক হয়ে অন্বেষা বলে উঠলো:
–“তুই ভালো লিখিস জানতাম, কিন্তু এতো ভালো অভিনয় করিস জানতামনা-রে !,চরিত্র’কে হারানোর সিচুয়েশনটা এতো ভালো ফুটিয়ে তুলবি স্বপ্নেও ভাবিনি ! “

চোখের জল ধরে রেখে,সৌরভ আধো গলায় জবাব দিলো:
–“চরিত্র’কে নয়’রে ইডিয়েট ! তোকে হারানোর সিচুয়েশন’টা সামলাতে পারিনি আজ !”
দুচোখ মুহূর্তে লজ্জায় ঢেকে ফেললো বি.এ ফাইনাল ইয়ারের অন্বেষা I
সৌরভও স্তব্ধ …
সে স্বপ্নেও ভাবেনি এতদিনের চেপে রাখা মনের গোপন কথাটি,সে এভাবে প্রকাশ করতে পারবে অন্বেষার সামনে I
 যত্ন করে অন্বেষার হাতে হাত রাখলো তার সহপাঠী সৌরভ I
দুজন দুজনার চোখে চোখ রেখে, হারিয়ে যাচ্ছিলো এক ভিন্ন সংক্রমণের চাহিদায় I 
****************************************************

Share This Article