নারী তুমি তিলোত্তমা – International Women’s Day special Story – নারী দিবসের বিশেষ গল্প – Bengali Story

Bongconnection Original Published
6 Min Read

নারী তুমি তিলোত্তমা


আজ নারীদিবস।
হ্যাঁ নারী দিবস,তাতে কি?
আজও কোন বয়স্ক কাকু বা জেঠু চ্যাটে লিখবেন “তোমায় দেখলে না শরীরটা কেমন হয়,মনে ঢেউ আসে, তোমায় সম্পূর্ণ দেখতে চাই। সেন্ড মি ন্যুডস”।আজকেও কোন এক বছর পঞ্চাশের কাকুর বয়সী ‘ভদ্র মানুষ’ টি বাসে দাঁড়িয়ে পিছনের ভীড়ের পানে একবার তাকিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ের বয়সী মেয়েটির শরীরের নরম অংশটি স্পর্শ করে নিজের মুখে বিরক্তি এনে বলবেন “দেখে ধাক্কা দিন,সামনে লেডিস” আর তারপর ফেসবুকে লিখবেন নারী কে সম্মান করতে শিখুন। অন্যদিকে আজকেও ৫ বছরের ফুলের মতো শিশুটি পছন্দের কাকুটির সাথে বেড়াতে বেড়িয়ে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে বুঝতেও পাবে না ওর সাথে কী হয়েছে,ও শুধু জানে এই কথা বাড়িতে বললে মা-বাবা মরে যাবে। যেমনটা কাকু বলেছে। হ্যাঁ আজ নারীদিবস আজকেও কোন এক শাশুড়ি পরিবারের বাকি সকলের সাথে মিলে পণ দিতে না পারার জন্য অভাগিনী পত্রবধূকে আগুনে পুড়িয়ে মারবে।আজও কোন এক পূত্রবধূ তার শাশুড়িকে সংসারের আপদ তকমা দিয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবে।
আজকেও কোন এক মহিলা নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিত্তশালী মানুষটা সাথে বিছানায় যাবে কারণ চাকরিটা ওর খুব দরকার। আজকেও পাড়ার রকের ছেলেগুলোর “কে তুমি নন্দিনী,একটু আমাদেরও সুযোগ করে দাও” শুনে মেয়েটা গতিটা আরো বাড়িয়ে মাথাটা হেঁট করে এগিয়ে যাবে। আজকেও ‘ও এখন বাড়িতে নেই তুমি চলে এসো’ র আহ্বান বার্তা দিয়ে পছন্দের পুরুষকে ডেকে কোন মহিলা স্বামীর বিশ্বাসকে নিজের শরীরের মতোই নগ্ন করে পরকীয়াতে মেতে উঠবে।হ্যাঁ আজ নারী দিবস আজকেও কোন এক বীরপুরুষ স্বামী নেশার ঘোরে বাড়ি ফিরে মারতে মারতে মেরেই ফেলবে ‘সোয়ামির শাসন বটেক এগুলো মেনে লিতে হয়’ ভাবা অসহায় মহিলাটিকে। আজকেও সদ্য জন্মানো কন্যা সন্তানটিকে দেখে ভগ্ন হৃদয়ে মা-বাবা ভাবতে শুরু করবে “এ বড় হলে বিয়ে দিতে হবে”।

আজ না নারী দিবস? হ্যাঁ তাতে কি? প্রতিদিনের মতো নারীর কষ্টগুলো,চোখের জলটা,সামাজিক বিভেদটা কিংবা একশ্রেণীর নারীর ছলনা আজও চলতেই থাকবে। তাই একটা ৮ই মার্চ নারীর জীবনে কোন পরিবর্তন নিয়ে আসবে না।তার মানে কি নারী দিবস পালন বন্ধ হয়ে যাক?এসব পালন করা মূল্যহীন? এরকমটা একদমই বলছিনা।বরঞ্চ ভেবে দেখুন পুজো আমরা প্রতিদিন করলেও সবপুজো উদযাপনের একটি বা বিশেষ কয়েকটি দিন থাকে সে কালীপুজোর একটা দিন,দুর্গাপুজো চারটে দিন তাই একদিন ঘটা করে নারীদিবস পালনেও কোন ভুল নেই।হোক না একদিন ‘নারীর দিবস’ নারীর সাফল্যের উদযাপন উৎসবের দিন।


তাই বক্তব্যটা হলো শুধু ৮ ই মার্চ নয়,তাহিরা কাশ্যপ (যাকে অনেকে চেনেন আয়ুষ্মান খুরানার স্ত্রী হিসাবে!) যেদিন নিজের কেমো নেওয়া ন্যাড়া মাথায় ডান স্তন বাদ যাওয়ায় পিঠের স্পষ্ট সেলাইটা সবাইকে দেখিয়ে এক বিজয়িনীর হাসি মুখে নিয়ে ইনস্টাগ্রামে ছবি আপলোড করে বার্তা দেন “আমার ইচ্ছেশক্তি,জীবনিশক্তির আছে ক্যানসার খুব তুচ্ছ” সেই দিনটা নারী দিবস।

যেদিন অসহ্য যন্ত্রণাকে সহ্য করেও স্বপ্না বর্মণ কিংবা দারিদ্র্যতা কে শোচনীয় ভাব পরাজিত করা হিমা দাস দেশের জন্য পদক জিতে দেশের পতাকা গায়ে জড়িয়ে ভিকট্রি সাইন দেখায় মুখে একটা কোটিটাকার হাসি এনে,সেদিনটাও নারীদিবস।

কোন এক সুপর্ণা মল্লিক  যখন নিজের প্রেগনেন্সীর সময় ডেলভারীর দশদিন আগেও ভ্রূণকে সাথে নিয়ে স্কুটি চালিয়ে স্কুলে যায় এটা ভেবে “দায়িত্বটা আমার সেটা আমাকেই পালন করতে হবে।ছুটি আমি নিতেই পারি কিন্তু আমি তো দুর্বল নই।আমি জানি আমি পারবো,আমার কিছুই হবে না” সেই ভাবনার,আত্মবিশ্বাসের আত্মনির্ভরশীলতার প্রতিটা দিন নারীদিবস।

হঠাৎ করে দু-তিন মাসের পরিচয়ে বিয়ে হয়ে অন্য একটা পরিবারে এসে সকলের সাথে মানিয়ে নিয়ে সুন্দর করে সংসার করতে পারা,নিজের স্বামীর মা-বাবা কেও নিজের আপনজন ভাবতে শিখে তাদের ভালোবাসতে শেখা বছর ২৫এর মেয়েটা কিংবা নিজের ছেলের জীবনসঙ্গী হয়ে বাড়িতে আসা নতুন মেয়েটিকে নিজের মেয়ের দৃষ্টিতে দেখার মানসিকতা গড়ে তুলছেন বছর পঞ্চাশের যে মহিলাটি উভয়ের জন্যই এই ইতিবাচক ভাবনার প্রতিটাদিন নারীদিবস।ভালোবাসার,স্নেহের,আপনকরে নেওয়ার নারীদিবস।

এরকমই প্রতিমুহুর্তে সংসারের যুদ্ধে,সমাজের যুদ্ধে,ভালোবাসার যুদ্ধে,দায়িত্ববোধের যুদ্ধে,আত্মবিশ্বাসের যুদ্ধে জয়ী হওয়া মহিলাদের জন্য প্রতিটা দিন নারীদিবস।

আর যে সমস্ত নারীর মনটার দখল নিয়েছে ভয়,সমাজের চোখ রাঙানি, “থাক কী হবে এড়িয়ে যাই” তাদের জন্যও প্রতিটাদিন নারী দিবস হতে পারে। যখন আপনি বাসে দাঁড়ানো কামান্ধ মানুষটির অসভ্যতার বিরুদ্ধে “থাক কী হবে এড়িয়ে যাই” ভাবনাকে পাঞ্চ করে “এটা ভুল,এটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে” ভেবে আওয়াজ তুলবেন, বয়স্ক মানুষটির সেন্ড মি ন্যুডস কে পাবলিক করবেন, মাতাল স্বামীর অত্যাচার কে ‘সোয়ামির শাসন’ না ভেবে তাঁর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন,যখন বিছানার কথা বলে চাকরির অফার করা বসের গালে একটা থাপ্পড় এঁকে জানিয়ে দেবেন “বিছানার কৃতিত্বে নয় নিজের যোগ্যতাতেই আমি চাকরি পাবো,অবশ্যই পাবো”, যখন গায়ের রঙের কারণে বিয়ে ভাঙা মেয়েটা সিলিং ফ্যানটা আপন না করে শপথ নেবে আমি দেখিয়ে দেবো সবাই কে মানুষের পরিচয় গায়ের রঙে নয় নিজের কর্মে।

বিশ্বাস করুন প্রতিমাসে নিয়ম করে কিছুদিনের ওই যন্ত্রণা,রক্তস্রোত থেকে ১০ মাস একটা নতুন প্রাণ কে ধারণ করার শক্তি যে মানুষগুলো সৃষ্টিগত ভাবে লাভ করেছে তাদের শক্তি অসীম।এই শক্তির ব্যবহারের সিদ্ধান্তটা আপনার। আপনিই ঠিক করুন বছরের একটা ৮ ই মার্চে সোশ্যাল সাইটে,চারপাশের সহানুভূতি নিয়ে নারীদিবসের মিথ্যার আবেশ জড়িয়ে বাকিদিন গুলো যন্ত্রণায় কাটাবেন নাকি প্রতিটা পদক্ষেপে ‘আমি নারী আমি সব পারি’ অাত্মবিশ্বাস নিয়ে,মাথাটা উঁচু করে সমস্ত অন্যায়গুলোর প্রতিবাদে গর্জে উঠে নিজের সত্যিকারের স্বাধীনতা,সুখটা খুঁজে নেবেন।

কারণ , আমি, আমরা প্রত্যেকেই জানি এবং বিশ্বাস করি , নারী তুমি তিলোত্তমা ….

লেখাটি ভালো লাগলে , 👇 নিচের শেয়ার অপশনে ক্লিক করে বন্ধুদের সাথে লেখাটি শেয়ার করতে ভুলবেন না …

Share This Article