হৃদ – মাঝারে – Valobashar Golpo – Bengali Love Story – Hrid Majhare

Bongconnection Original Published
5 Min Read



হৃদ - মাঝারে - Valobashar Golpo - Bengali Love Story - Hrid Majhare
Loading...







দৃশ্যপট -১
—————–

–“না নাআ  ! আমি, মা-বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে এভাবে গা ভাসিয়ে দিতে পারবোনা..
বিশেষ করে বাবা তো কিছুতেই আমাদের সম্পর্ক’টা মেনে নেবেন না,আমি পারবোনা মেহতাব’দা ! আমাকে ক্ষমা করো..তুমি খুব ভালো ছেলে..
আমার থেকেও অনেক ভালো মেয়ে তুমি ডিসার্ভ করো..”
চোখের কোনে স্যালাইন ওয়াটার চিক’চিক করছে  মেহতাবের I
সেই কোন ছোটবেলায় আব্বা’কে হারিয়েছে..একটি পথ দুর্ঘটনায় কয়েক বছর আগে আম্মি কেও হারিয়ে বসেছিল সে ..
সেদিন হৈমন্তী তার বোতাম’খোলা বুকে হাত রেখে,আবেগ মাখানো স্পর্শ করে বলেছিলো:
–“নিজেকে একা ভেবোনা মেহতাব’দা,আমি থাকবো তোমার পাশে সারাজীবন !”
____________________________________
তবে আজ পরিস্থিতি পাল্টেছে, হয়তো কথা দেওয়া হয়;তা কোনো এক সময়ে ভাঙার উদ্দেশ্য নিয়েই I
একের পর এক নিজের জীবনের আন্তরিক অবলম্বন’গুলিকে এভাবে সহসা চলে যেতে দেখে,কিছুতেই নিজেকে স্থির রাখতে পারছিলোনা বছর চৌত্রিশ’ এর সুদর্শন পুরুষ’টি I
হৈমন্তীর কোমল হাত’দুখানি ধরে সে বলেছিলো:
–“আমাকে একবার তোমার বাবার সাথে কথা বলতে দাও প্লিস !,আমার মন বলছে উনি আমাকে ফেরাবেন না I”
–“হ্যাভ ইউ গন ম্যেড ?”  বাবা তোমাকে কি করবেন জানিনা, বাট আমাকে আস্ত রাখবেন’না ! তুমি কি সেটাই চাও ?”
ভারাক্রান্ত বিস্ময়ে মেহতাব মুখ খুলেছিল :
–“তুমি তো সব’ই জানতে হৈম ! আমার ধর্ম-সম্প্রদায়,সবটা ! . তাহলে কেনো,আমাকে দিনের পর দিন আস্কারা দিয়েছো?..
আজ যে আমি তোমাকে ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছিনা ..আমার যা উপার্জন,তাতে তোমাকে কষ্টে রাখবোনা,এটুকু ক্ষমতা আল্লাহ-তালাহ আমায় দিয়েছেন…”
নোনা জলে ঝাপসা হয়ে গিয়েছিলো মেহতাবের, প্রত্যয় মাখানো চোখ দুটি I
মাথা’নত করে জীবনের কাঠগড়ায় দাড়িয়ে,সেদিন হৈমন্তী উদীরিত করতে পারেনি কিছুই I
এই সব কিছু নিয়েই বয়ে গেলো সময়ের গণনাতীত ,অবুঝ স্রোত ..I
____________________________________
দৃশ্যপট-২
——————

নার্সিং’হোমের বিছানায় শায়িত এক বিধবা বয়স্কা..
পাশে উদগ্রীব ছেলে ও বৌমা I
–“এখন কেমন আছো মা ?”.
( আস্তে আস্তে  হাত নেড়ে,এক গাল হেসে ফিস্ফিসিয়ে উত্তর এলো )
–“ভঃহাআলো !”
 দিনচারেক পূর্বে হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি,সাফল্যের সাথে সম্পন্ন হয়েছে বয়স্কা’র I
গতকাল মাঝ রাতে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো তার…মনের অবচেতনে ডুকরে কেঁদে উঠেছিলেন তিনি I
কান্নার আওয়াজ শুনে আয়া’টি ছুটে এসে বৃদ্ধা’কে জড়িয়ে,শান্ত করার চেষ্টা করেছিল প্রানপন I
পরে কারণ জিজ্ঞেস করাতে,মুখ খোলেনি বয়স্কা.
____________________________________
একটা হিসেব কিছুতেই মেলাতে পারছেননা, আজ জীবনের সুদূর প্রান্তে উপস্থিত হয়ে,বৃদ্ধা হৈমন্তী দেবী..I
ক’এক দিন ধরেই না জানি কেনো,নুতন করে মনে পড়ছে তার অতীতের জঠরে’র সুপ্ত ঘটনা’গুলি..
মন’টা যেন, এই বয়সেও বেহায়ার মতো হু-হু করে উঠছে..
ঠিক প্রথমবার মেহতাবের বুকে মাথা রাখার সময় যেমন উত্তেজনা হয়েছিল,ঠিক তেমন’ই I
তার সাথে নিজের অপরাধ বোধ’ও যেন তাকে চাবুক মেরে চলেছে নিরন্তর I
–‘কেনো এমন হচ্ছে?’
সেদিন স্বপ্নাদেশে সে দেখেছিলো মেহতাব’কে I
হাঁটু’ মুড়িয়ে তার সামনে বসে জুল’জুল করে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ..কত করুন সেই মুখ !
বুক’টা মোচড় দিয়ে উঠেছিল সহসা I
‘কিন্তু সেতো অনেক আগের কথা !’
তার পর নুতন জীবন…
স্বামী,সমন্বয়,নুতন পরিবার,দায়-দায়িত্ব,সন্তান;
এসবের বেড়াজালে স্মৃতি’টা ধূলিকণা হয়ে গিয়েছিলো যেন..I
নবসাজে,এতদিন পর,এতো উন্মাদনা এভাবে আবার ফিরে আসবে,স্বপ্নেও কল্পনা করেননি হৈমন্তী দেবী I
____________________________________





দৃশ্যপট -৩
——————-

সকালটা খুব সুন্দর লাগছে বৃদ্ধা হৈমন্তী দেবীর I নার্সিং হোম থেকে মুক্তি পেয়ে,আজ নিজের বাড়িতে স্বমহিমায় বিদ্যমান তিনি..I
বিছানায় শুয়ে ছেলের সাথে স্বানন্দে বার্তালাপ করছেন..I
তবে সেই মানুষটির উপস্থিতি যেন তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাকে প্রতিনিয়ত ..I
–“এতো কিছুর মাঝে আসল জিনিষটা’তো জানাই হয়নি !..”
কথায় কথায় তার ছেলেই তার কৌতূহলের নিবারণ ঘটালো..
–“জানো মা ! হার্ট ডোনার একজন সমাজসেবক,..ব্যাচেলর একজন মানুষ … দুস্থ্য মানুষদের উন্নতিকরণের জন্য মৃত্যুর আগের মুহূর্ত অব্দি নিজের সবটা দিয়ে নির্লিপ্ত কাজ করে গিয়েছেন..
ব্লাড গ্ৰুপ’টার ও মিল পাওয়া গেলো,.. তোমার অপারেশন’এর জাস্ট ১২ঘন্টা আগে ঊনি মারা গিয়েছিলেন ,আর……..”
কোনো এক শ্বাসরোধ করা যন্ত্রনায় কাতরাতে কাতরাতে ছেলে কে থামিয়ে দিয়ে হৈমন্তী দেবী বলে উঠলেন :
–”ওনার নামটা ?? “
ধীর গলায় উত্তর এলো…
–” মুহাম্মদ মেহতাব হুসেন !”
,কেঁপে উঠলো যেন গোটা পৃথিবী !একটা দলা পাকানো কষ্ট ভীষণ ভাবে বেরিয়ে আসতে  চাইছিলো বৃদ্ধার বুক ভেঙে …
দুচোখ দিয়ে প্রবাহিত,অঝোর ধারা ভিজিয়ে দিচ্ছিলো হৈমন্তী দেবীর ভাঁজ পড়া গাল I
সত্যিকারের ভালোবাসা বোধয় হারিয়ে যায়না..
ঠিক জায়গা করে নেয়, মনের অন্তঃপুরে ..
ঢুকে পড়ে আস্ত শরীরে প্রঃশাস হয়ে, রয়ে যায় বুকের ধুকপুকুনি হয়ে…I
****************************************************

ভালো থাকুন , ভালোবাসুন নিজের ভালোবাসাকে ❤️
আর আমাদের ওয়েবসাইটের প্রিয় গল্পগুলো শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সাথে …

কারণ , আমরা গল্প লিখি না
            জীবনের গল্প বলি । 

Share This Article