এতটা ভালোবাসি 4 – Bangla Premer Golpo – Bengali Love Story – Bangla Valobashar Golpo – বং কানেকশন

Bongconnection Original Published
9 Min Read



এতটা ভালোবাসি 4 - Bangla Premer Golpo - Bengali Love Story - Bangla Valobashar Golpo - বং কানেকশন
Loading...
প্রেমের গল্প – এতটা ভালোবাসি 4







ভুঁড়িওয়ালা চৌকিদার’টি হাতল ভাঙা চেয়ারে বসে,দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে, নিশ্চিন্তে স্বপ্নাদেশে তখন বিভোর.
নাক ডাকার সাথে সাথে ছন্দবদ্ধ  ভাবে প্রকান্ড ভুরি’টাও ওঠা নামা করছে তার .
লিকলিকে চেহারার দু-পেয়ে জন্তু’টি পাইপ বেয়ে ততক্ষনে সেকেন্ড ফ্লোরে উঠে,খোলা ব্যালকনিতে পা টিপেটিপে বিচরণ করছে নিচু হয়ে..
মুখ ঢেকে তার মাঙ্কি টুপিতে..
একটু উঠে খুব সন্তর্পনে আধো’আধো ঠেলে,খুঁজে নিচ্ছিলো সে, ভেতর থেকে কোনো ভাবে বন্ধ না হওয়া দরজা জানালাগুলি  ..
————————————————————-
এমন সময় ভেসে এলো,সামনের আধখোলা জানালা দিয়ে কান্নার শব্দ…
কৌতূহল’বশতঃ এগিয়ে গেলো চোর’টি..
ডিম্ লাইটের আলোয় পর্দার ফাঁক দিয়ে ড্যাব’ড্যাব করে দৃষ্টিপাত করছিলো অভ্যন্তরীণ দৃশ্যপট.
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে চাপা কণ্ঠে ফোনে কথা বলছিলো একটি বিবাহিতা তরুণী..
–“সত্তর হাজার ! ,যেখান থেকে পারো ওর একাউন্টে ট্রান্সফার করো বাবা,নাতো তোমার মেয়ে’কে হয়তো আর পাবেনা.. “
ফোনের অন্য্ প্রান্ত থেকে বেশ কিছু কথা ভেসে এলো….
তার উত্তরে এপার থেকে শোনা গেলো পরবর্তী বার্তাগুলি  .
–” তাঃ সম্ভব না বাবা ! কোথায় যাবো? একটা কানাকড়ি’ও যে আমার কাছে নেই.
আর…  !”
(চোখের জল ফেলতে ফেলতে কথা জড়িয়ে যাচ্ছিলো মেয়েটির.)
–“ও দরজা বাইরে থেকে বন্ধ  করে রাখে সারাদিন.. কাল দুপুরে ফিরবে ও,. তারপর জানিনা কি হবে.”
–“আহমার বাঁচতে ইচ্ছে করেনা বাবা ! “
বাঁধ ভেঙে যমুনার জল গড়িয়ে পড়ছিলো টানা টানা চোখ দিয়ে..
চেনা কণ্ঠস্বরে কেঁপে উঠলো অনাহুত মানুষটির  শরীর.
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে চুপটি করে অন্য প্রান্তে জানালার, দুটি দুর্বল গরাদ কেটে, প্রবেশ করলো ভেতরে.
ঘরের এক কোনে বসে মুখ গুজে  মেয়েটি তেমন ভাবেই ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে.
ঠিক তখন’ই সামনে এসে দাঁড়ালো চোর’টি.
————————————————————-
আচমকা তাকে দেখে আতঙ্কে শিউরে উঠলো তরুণী ..
চোর’টি ঝড়ের  গতিতে এগিয়ে এসে মুখ চেপে ধরলো তার  .
চোখ দুটো যেন উত্তেজনায় ফেটে বেরিয়ে আসছিলো মেয়েটির.
হঠাৎ করে ধেয়ে আসা অজানা আতঙ্কে কাঁপছিলো তার শরীর মন.
–“আমাকে ভয় পাবেন না,ম্যাডাম !.
আমি আপনার কোনো ক্ষতি করবোনা..ঠান্ডা মাথায় যা বলছি শুনুন একবার !.”
যেন কিছুটা হলেও ধড়ে প্রাণ ফিরলো মেয়েটির.
বেশ কিছুক্ষণের বাকবিতণ্ডার পর শেষমেশ মানুষটি  সফল হয়েছিল মেয়েটিকে বোঝাতে.
শুধুমাত্র বিশ্বাসের উপর ভর করে ,অপরিচিত মানুষটির পেছন দিক থেকে, তার  কাঁধ জড়িয়ে নিজেকে অদৃষ্টের কোলে ঠেলে দিয়েছিলো মেয়েটি.
ভীষণ যত্নের সাথে সন্তর্পনে,কখনো কার্নিশ তো কখনও পাইপ’এ হাত ও পা রেখে ,মেয়েটিকে বয়ে নিয়ে মাটিতে পা ফেলেছিলো সেই পরিত্রাতা.
রাস্তা ঘাট, অলি গলি প্রায় সব’ই ছিল চোর’টির  নখদর্পনে..
ছুটতে ছুটতে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তারা রাস্তার অন্য্ গলিতে পৌছালো..
নরক যন্ত্রনা থেকে নিস্তার পাওয়ার অদম্য আবেগে, প্রায় সব চিন্তা শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলো মেয়েটি . .
‘কিন্তু এবার কোন পথে যাবে সে? কোথায় গিয়ে উঠবে ?’ ‘কেনো’ই বা শুধু শুধু অপরিচিত মানুষটি তাকে সাহায্য করছে এভাবে?’ তাও আবার একজন অসামাজিক জীব. . .
নুতন করে আতঙ্কে কেঁপে উঠলো মেয়েটির দেহ দেহ-মন…





————————————————————-
সব প্রশ্নের নিবারণ ঘটলো ধীর পদক্ষেপে.
মাঙ্কি টুপি সড়িয়ে এবার পুরোপুরি নিজেকে প্রকাশ্যে আনছে চোর’টি .
স্ট্রিট লাইটের আলো ছাওয়ায় ,কৌতূহলী মনোভাপন্যা মেয়েটি হাঁ হয়ে তাকিয়ে ছিল রহস্যে ঘেরা মানুষটির দিকে.
একমুখ দাড়ি’তে অল্প আলোয় শুরু’তে ঠিক চিনতে পারেনি পারমিতা,জয় কে.
তবে কণ্ঠস্বরে হয়তো কিছুটা স্তম্ভিত হয়েছিল তার অবচেতন মন..
নোনতা ঘামে,সিক্ত পারমিতার শরীর..
কুর্তির পেছনে কাটা অংশ’টায় নরম পিঠে উঁকি দিচ্ছিলো, কালশিটের বেশ ক’একটা দাগ..
ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো পারমিতা..
সে স্তম্ভিত আজ.
—“এ”কি অবস্থা করেছো নিজের জয়’দা ?”
বেশ কিছুক্ষণ তার চোখে চোখ রেখে, জয় হাসি মুখে বললো ……
–“অন্য কেউ জিজ্ঞেস করলে যা ইচ্ছে তাই বলতাম,কিন্তু আজ মিথ্যে বলবোনা.”
–“তুমি ঠিক’ই বলতে মিতা..আমি কোনোদিনও  সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবোনা, কারণ সেই যোগ্যতা আমার নেই..আর দ্যাখো !,সেই পরিস্থিতি আর কোনোদিন তৈরিও হলোনা ,
মিষ্টি সেই মেয়েটি যাওয়ার পর থেকে, যেন আরও তলিয়ে যেতে লাগলাম,অজান্তেই.”
(দীর্ঘশ্বাস ফেলে জয় আবার বলে চললো )
–“বাড়ির অবস্থ্যা শুরু থেকেই ভালো ছিলোনা,,সব’ই তো জানতে.. তবে যতটা পেরেছি ,সংগ্রাম করেছি..”…তবে …পারলামনা আর …”
বেশ কিছক্ষনের নিস্ত্বব্ধতা গ্রাস করছিলো দুজনকে ……..
কিছুটা পথ দ্রুত পায়ে অতিক্রম করার পর,প্রধান রাস্তার মোড়ের শেষে , একটা সরু চোরাগলিতে প্রবেশ করলো দুজনে,.
রবির প্রথম আলোর নির্মল কণা একটু একটু চুঁয়ে পড়ছে আঁধারের আগ্রাসন কে কাটিয়ে.  .
–“কি ? ভয় করছে? “
(ঘাড় ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে জয়) . .
মৌন রইলো পারমিতা..
কিভাবে সময়টা অজান্তেই যেন পেড়িয়ে যাচ্ছিলো,,
বুকের জমাট বাঁধা অভিমান,অপরাধ বোধের আস্তরণ, সব ফুটে উঠছিলো চোখের চাহনিতে,শরীরী ভাষায়.  সেই আগের মতো পারমিতার  হাত চলে গেলো ,জয়ের হাতে..
শক্ত করে ধরলো জয় ,পারমিতার হাত..
পারমিতা যেন হারিয়ে যাচ্ছিলো অভিনব এক নবদিগন্তে..
————————————————————-
পারমিতা কে ইশারায় চুপচাপ  দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে জয় এগিয়ে গেলো…
আর..
সামনের আবর্জনার স্তুপ সরিয়ে একটা ঝরঝরে সাইকেল টেনে বের করলো সে..
ভোরের প্রথম নির্মল আলোতে দেখা গেলো…
কঠিন রাস্তার বুক চিড়ে এগিয়ে চলেছে,জর্জরিত দুটি মানুষ….
পারমিতার খোলা চুলের ঝাপটায় সেই আগের’ই মতো হয়তো আহত হচ্ছিলো জয়..
আর পারমিতা ? সে আজ কাটা ঘুড়ির মতো উড়ে চলেছে অচিন অনন্তে.
চোখ বন্ধ করলো পারমিতা..
তার চোখ আজ তার’ই মতো নির্লিপ্ত হতে চায় যে,মুক্ত হতে চায় সে.
বেশ কিছুক্ষণ ওভাবেই সাইকেলে যাত্রা করার পর,,মানুষজনের কথাবার্তা ও যান-বাহনের স্বল্প কোলাহলে সম্বিৎ ফিরলো পারমিতার ..
যেন কয়েক শীত-বসন্ত পর অবাক হয়ে পারমিতা দেখছিলো একটা স্বতন্ত্র দীপ্তিমান সকাল..
কত মিষ্টি ,কত অনুভূতিশীল একটা জীবন,….
মনে হচ্ছে যেন স্বপ্ন দেখছে সে.
একটি জমজমাট বাস-ডিপোতে যাত্রাবিরতি ঘটলো.
————————————————————-







গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে,একজোড়া ঠোঁট আজ ক্রিয়াশীল..দুজোড়া চোখ একে অন্যকে বড় আস্থার সাথে যেন আলিঙ্গন করছিলো.
কয়েক মুহূর্তের জন্য চোখের বাইরে গেলো জয়.
পারমিতার মনে হঠাৎ, টোকা দিলো কষ্টার্জিত এক পশলা প্রশ্ন :
-“জয় কি তাকে মন থেকে ক্ষমা করতে পেরেছে? “,
কেমন যেন, লালিত্যের মোহে অবুঝ হয়ে পড়েছিল সেদিন পারমিতা.
আজ হয়তো পথ’টা অন্য্ রকম হতে পারতো, ভেসে যেতোনা এভাবে দুটো জীবন  ..
আজ খুব মনে পড়ছে সেই দিনটার কথা…বুক ভরা প্রত্যয় নিয়ে অপেক্ষা করেছিল জয়. .
তারপর এক অবেলায়, তাকে পারমিতার মুখে অপ্রত্যাশিত ভাবে শুনতে হয়েছিল :
–“আমি জন্তুর মতো জীবন কাটাতে পারবোনা জয়দা,নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করো. “
স্মৃতিচারণে বিঘ্ন ঘটলো কিঞ্চিৎ…..
(একটা প্যাকেট ধড়িয়ে দিলো জয় পারমিতার হাতে ..)
—“কি আছে এতে জয়’দা ?”
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে সে .
একমুখ হাসিতে উত্তর এলো :
“এতটা পথ যাবে, মুখে দিও কিছু ,আমি জানি তোমার খিদে পেয়েছে..
..এসো..  !”
পারমিতার হাত ধরে তাকে বাসে তুলে দিলো জয় .
পারমিতা নির্বাক..
তাকে বাসের একটি সিটে বসিয়ে দেওয়ার পর, আরও একটি খাম তার হাতে ধড়িয়ে দিলো জয়. হাজারটা প্রশ্ন জটলা করছিলো পারমিতার মস্তিষ্কে..
–“তোমার বাসের টিকিট..উদয়রামপুর ..
তোমার বাড়ি,তোমার নিজের বাড়ি… ফিরে যাও সেখানে গর্বে “.
–“এতে কিছু টাকা আছে, আশা করছি অসুবিধা হবেনা..”
জয়ের চোখের দিকে চোখ মেলানোর আর এক বিন্দু’ও সামর্থ্য নেই পারমিতার .
সেই অধিকার সে যে,বছর পাঁচেক আগেই হারিয়ে ফেলেছে.
বাস থেকে নেমে পড়লো ধীর পায়ে জয়.
মরমে মরছে যেন আজ মেয়েটি ..
অপরাধ বোধের চাদর সরিয়ে,একবার অন্তিম আশা নিয়ে.. হাত বাড়িয়ে দিলো জানালা দিয়ে  পারমিতা  .
নিচে দাঁড়িয়ে আছে জয়, কি একটা ভাবতে ভাবতে এগিয়ে এলো সে .
————————————————————-


বাসের জানালার পাশে এসে,পারমিতার উদ্দেশ্যে তৎপরতার সাথে ফিসফিসিয়ে জয় বললো :-
—“এভাবে নূতন করে পিছিয়ে এসোনা আর,.. একবার ভুল ঠিকানায় গিয়ে ভুল করেছো মিতা.
বাস থেকে নেমে আর ভুল কোরোনা.”…
————————————————————-
এগিয়ে যাচ্ছে জয়,ঝড়ঝরে সাইকেলটা ঠেলতে ঠেলতে,ঝড়ঝরে জীবন’টা বুকের খাঁচায় বেঁধে..
বিরক্তিকর একটা হর্নের শব্দে, সামনে তাকালো পারমিতা ..
পান’মসলা চিবোতে চিবোতে ড্রাইভার’টি জমিয়ে বসে পড়েছে সিটে.
পারমিতার চোখে বিন্দু বিন্দু বারী কণা.
শেষ বেলাতেও তাকে ভালোবাসতে কোনো কার্পণ্য করেনি হেরে যাওয়া মানুষটি,
থুড়ি থুড়ি ….জন্তু’টি.
————————————————————-
ধৈর্য সহকারে পড়লেন, প্রেমের গল্প: “এতটা ভালোবাসি
ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না ….

আরো পড়ুন , প্রেমের গল্প
            অপেক্ষার শেষ প্রহরে 

Share This Article