হৃদ মাঝারে | Bangla Premer Golpo | Bengali Love Story | Premer Golpo pdf

Bongconnection Original Published
8 Min Read

হৃদ মাঝারে | Bangla Premer Golpo | Bengali Love Story | Premer Golpo pdf
Loading...



-মাফিন তুই এলিনা কেন দাদার বিয়েতে? জানিস কতো অপেক্ষা করেছি তোর জন্য? বৌদিটাকে কী মিষ্টি দেখতে হয়েছে !

ফোনের ওপারের উত্তেজনা এপারের মানুষটার চোখে নীরবে অশ্রু এনেছে । কথার মাঝে হারিয়ে যাওয়া মাফিন বুঝতেও পারেনি কখন সে লাইনটা কেটে দিয়েছে। ময়ূরীর সাথে হোস্টেলে আলাপ মাফিনের। মফস্বল থেকে শহরে পড়তে গিয়ে খানিকটা ঘাবড়ে ছিল মাফিন। ওখানকার পরিবেশ, মানুষজন, জীবনধারা সবগুলোই আলাদা। হঠাৎ করে খাপ খাওয়াতে বেগ পেতে হয়েছিল তাকে। ময়ূরী ছিল তার রুমমেট। সে এসেছে উত্তরবঙ্গ থেকে। প্রথমদিনেই আপন করে নিয়েছিল মেয়েটা । সুন্দরী, স্মার্ট ময়ূরীকে বেশ কাছের মনে হয়েছিল মাফিনেরও।

তিন বছরের হোস্টেল জীবনে মাঝে মাঝেই মাফিনকে ‘বৌদি’ বলে ডাকতো ময়ূরী । দাদাটাকে চাক্ষুস না দেখলেও তার কথা শুনেই কেমন একটা অদ্ভুত ফিলিং আসতো মাফিনের। একদিন সকালে ময়ূরী স্নানে গিয়েছে, কলেজে যাওয়ার ব‍্যস্ততা। এমন সময় ময়ূরীর মুঠোফোনটা বেজে চলে বারংবার। নাহ নাহ করেও ফোনটা হাতে তুলে নেয় মাফিন। দাদা কলিং… স্ক্রিন জুড়ে যে নাম্বারটা দেখে সে, তাতেই তার হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে যায়। হাতে ধরে থাকতে থাকতেই ফোনটা কেটে যায়। কিছুক্ষণ পরে আবার ফোনটা বেজে ওঠে। আবার দাদা কলিং…
বাথরুম থেকে ঝাঁঝিয়ে ওঠে ময়ূরী,

-বলি মহারাণী কি ঘুমিয়ে পড়েছেন? এতোবার ফোনটা বাজছে ধরতে পারছিসনা..আর কবে মানুষ হবি?

কথা শুনে ফোনটা রিসিভ করে মাফিন। ফোনের ওপর প্রান্তের কথার উত্তরে শুধু বলে,
-ময়ূরী স্নানে গিয়েছে । একটু পরে কল করুন।

আর কিছু না শুনেই কেটে দিয়েছিল লাইনটা। এইজন্য ময়ূরীর কাছে অনেক গালাগালি শুনতে হয়েছে তাকে। আরও বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে ময়ূরীর দাদার সাথে ,তবে সেটাও ঐ একই রকম। তবে মাফিন মনে মনে সত্যিই ঐ অপরিচিত লোকটার প্রেমে পড়েছিল। কলেজের পাঠ চুকিয়ে ইউনিভার্সিটি তে আলাদা হয়ে যায় দুই বান্ধবী। কিন্তু যোগাযোগ ছিন্ন হয়নি এখনও। মাফিনের বাড়িতে বিয়ের কথা উঠেছে ইতিমধ্যে বার কয়েক। স্বাবলম্বী হয়ে বিয়ের কথা ভাববে মাফিন। কিন্তু সে এটাও জানে সামান্য মুদিখানা চালিয়ে তার বাবা যা পড়িয়েছে তাকে সেটাই যথেষ্ট। বাবার পক্ষে আর সম্ভব নয় জেনেও মন মানেনা মাফিনের।



মাস্টার্সের পর এখন সে কম্পিটিটিভ এক্সামের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঠিক এই সময়ই ময়ূরীর দাদার বিয়েটা হয়ে গেল। এতোদিনের সবটাই ছলনা ছিল তবে! বড়লোকের খামখেয়ালী ! তার মতো মিডিলক্লাস পরিবারের মেয়েকে কেনই বা মেনে নেবে তারা। মাফিন দের নিয়ে মজা করা যায়, বাস্তব ভাবা যায়না বোধহয় !
রাত্রি জেগে নিজেকে প্রস্তুত করে মাফিন। মাস ছয়েক ময়ূরীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করেছে সে।

ব‍্যাঙ্কের জবটা পেয়ে যায় অবশেষে মাফিন। বিয়ের বাজারে এক লাফে অনেকটা উপরে উঠে পড়ে হঠাৎ। অফিস যাওয়ার সময় সবাই একসাথে খেতে বসে তারা এখন। মাফিনের ফেরার সময় ম‍্যাচ করেনা সবসময়। তাই এই সকাল বেলাটা একসাথে খেতে বসে তারা।

-আজ একটু তাড়াতাড়ি আসতে পারবি মা?

খেতে খেতেই বাবার মুখের দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করে মাফিন।

-পাত্রপক্ষ আসবে বিকেলের দিকে। এমন ধরলো এরা আমি আর না করতে পারলাম না। ছেলে কলেজের প্রফেসর। একমাত্র ছেলে। দেখতে শুনতেও মন্দ নয়।

মাফিন মায়ের মুখের দিকে তাকাতেই বাহানা করে রান্না ঘরে পালালো মা।

-বাবা আমি যদি তোমাদের কাছেই থাকি খুব সমস্যা হবে? অনেক তো দেখলে পাত্র এবার একটু ক্ষান্ত হও।

-এইবারের মতো রাজি হ মা। আর কখনও বলবোনা তোকে। এরা এমনভাবে ধরেছে আর না করতে পারলাম না রে….

-ঠিক আছে। তবে কোনো পণ দিয়ে বিয়ে করবোনা মাথায় রেখো…

◆◆◆◆◆◆◆◆◆

পাত্রপক্ষ আসার আগেই চলে আসে মাফিন। মনটা তার কিছুতেই ভালো লাগছেনা। ময়ূরীর দাদা তার সবটা জুড়ে… কিন্তু সে তো বিয়ে করে নিয়েছে.. যাকে সে দেখেওনি তার জন্য কেন জীবনটাকে নষ্ট করবে সে? নিজের সাথেই নিজে লড়াই করে বেশ খানিকটা। তারপর আসে তার ডাক। অতি সামান্য সাজসজ্জা তেই এসে বসে পত্রপক্ষের সামনে। কথাবার্তা শেষে একাকীত্বে কথা বলতে পাঠায় পাত্রপাত্রীকে অভিভাবকরা। ঝোলা বারান্দায় পাশাপাশি দাঁড়িয়েও কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারেনা মাফিন।

– আমি স্বাগত চৌধুরী। আপনি বুঝি ফুল খুব ভালোবাসেন? আমিও ভীষণ ভালোবাসি। গল্প পড়তে ভালোবাসেন? আমি কিন্তু এ ব‍্যপারে অলস প্রকৃতির। তবে গল্প শুনতে মন্দ লাগেনা। আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে। কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন…

কান্নাটাকে বারংবার ভেতরে পাঠানোর চেষ্টা করে মাফিন।

-আমাকে অপছন্দ? আপনার অমতে বিয়ে হচ্ছে?

-না তেমন কিছু নয় সব ঠিক আছে।

-তাহলে বিয়ের দিন ঠিক করতে বলবো?

-হুম বলুন বলেই কান্নাটাকে লুকাতে দৌড়ে ঘরে চলে যায় মাফিন।

ইতিমধ‍্যেই বিয়ের দিন ঠিক হয়ে যায়। ময়ূরী বেশ কয়েকবার কল করেছে রিসিভ করেনি মাফিন। ফেসবুকেও হানা দিয়েছে সে। রাগে ,অভিমানে ফেসবুকও খোলেনা মাফিন। বিয়েটাকে বাতিল করে দেওয়ার কথাও ভেবেছে বেশ কয়েকবার কিন্তু বাবা-মায়ের হাসি মুখ দেখে পারেনি আর।

বিয়ের দিনটা যতই এগিয়ে আসছে ততই বাঁচার ইচ্ছেটা চলে যাচ্ছে তার। স্বাগত তার সাথে কথা বলতে চেয়েও পাইনি । মেসেজের রিপ্লাই ও করেনা মাফিন।

-মা তুই কী এই বিয়েতে রাজি না?
বই থেকে মুখ তুলে অবাক হয় মাফিন। বাবা যে কখন তার পাশে বসেছে সে বুঝতেও পারেনি।

-তোকে জোর করবোনা। তোর খুশিতেই আমার খুশি। তুই না চাইলে এ বিয়ে হবেনা। অনেক কষ্টে বড়ো করেছি তোকে। এইদিন দেখবো বলে নিশ্চয়ই নয়। আমি ওদের বলে দিচ্ছি। আয় খেয়ে নে..এই ক’দিনে কেমন শুকিয়ে গিয়েছিস দেখেছিস? আয় ..তোর মা খাবার বাড়ছে…

হাতে টান লাগতেই পেছনে ফেরে বাবা।

-আমি বিয়েতে রাজি বাবা।

-স্বাগত তোর সাথে কথা বলতে চায়। কাল একবার দেখা কর তোরা কোথাও..

পরের দিন বিকেলে একটা কফিশপে স্বাগতর সাথে দেখা করতে আসে মাফিন। দুটো কফি অর্ডার করে মুখোমুখি বসে দু’জনে।

-হানিমুনে কোথায় যাবে ভাবছো? পাহাড় নাকি সমুদ্র? জঙ্গল হলেও সমস্যা নেই। তবে সাপে আমার ভীষণ ভয়!

নীলে তোমাকে আরও সুন্দর লাগে জানো? তুমি বৃষ্টি ভিজতে ভালোবাসো? শুকনো মাটির উপর বৃষ্টি পড়লে যে সুগন্ধটা বেরোয় মাতাল করে সেটা তোমাকে? বা জানালার বাইরে রিনরিনে বৃষ্টির শব্দে হারিয়ে যেতে ভালো লাগে?

-হুম খুব ভালো লাগে।

-কোথায় যাবে বলো তাহলে…জঙ্গল?
অবাক হয় মাফিন। জঙ্গলের কথা লোকটা জানলো কীকরে?

-ময়ূরীর প্রতি খুব রাগ? অবশ্য সে না থাকলে তোমাকে পাওয়া হতোনা..

মানে?

আমি ময়ূরীর দাদা। আর আমি আশ্চর্য হচ্ছি যাকে তুমি এতো ভালোবাসো তাকে চিনতেও পারছোনা?

-আপনার বিয়ে..


-থাক আর তোতলাতে হবেনা। আমার জেঠুর ছেলের বিয়ে হয়েছে.. আমি তো কয়েকবছর থেকেই বুকিং.. রাজকন্যা স্বাবলম্বী না হলে বিয়ে করবেনা পণ…

-সেদিন বলোনি কেন?

-বললে কী আর এইদিনটা পেতাম? বলেই চকাস করে মাফিনের হাতে একটা চুমু এঁকে দেয়। পকেট থেকে লাল গোলাপটা বের করে মাফিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

-থাকবে আমার বন্ধু হয়ে সারাজীবন পাশে ? না থাকলেও সমস্যা নেই আর একটা দেখে নেবো..

দুমদুম করে দুটো কিল বসিয়ে দেয় মাফিন।

-ফের যদি এরকম কষ্ট দিয়েছো তো কান মুলে দেবো একেবারে…

নাদেখা মুহূর্তেরা থমকে দাঁড়ায় খানিক। প্রাপ্তবয়স্ক দুটি হৃদয়কে এক হতে দেখে ছড়িয়ে দেয় প্রেমের রামধনু চারিদিকে… অনেক দিনের অপ্রাপ্তির ভাড়ার পরিপূর্ণতা পেলো চার হাত একত্র হয়ে…

Share This Article