আলুপোস্ত টু শুটকিমাছ | Romantic Premer Golpo | Golpo Bangla | Bengali Comedy Love Story

Bongconnection Original Published
10 Min Read


আলুপোস্ত টু শুটকিমাছ | Romantic Premer Golpo | Golpo Bangla | Bengali Comedy Love Story
Loading...




(১)
– হ্যালো, জয়া বলছো?
– বলছি। আপনি কে?
– আমি অমিতাভ। মানে আমার মা আর তোমার মা বন্ধু হন। আমার মা’ই তোমার ফোন নাম্বার দিয়েছে আলাপ করার জন্যে।
– প্রথম কথা আপনি আমাকে চেনেন না। তাই দুম করে আমাকে ‘তুমি’ বলবেন না। এই শর্তে যদি রাজি থাকেন তবে এখনই ফোন রাখবো না।
– আচ্ছা ঠিক আছে। তোমাকে, সরি আপনাকে আপনি করেই বলবো না হয়।
– হ্যাঁ, তো করুন আলাপ। বলুন কি জানতে চান।
– না, মানে এই ভাবে বললে কি বলি বলুন তো!! আপনি আশা করি জানেন আমি কি কারণে ফোন করছি।
– জানি। আপনি বিয়ে করার জন্যে পাত্রী দেখছেন। তাই বুঝতে চাইছেন আমি আপনার যোগ্য নাকি। তা বার করুন আপনার প্রশ্নবিচিত্রা।
– প্রশ্নবিচিত্রা? সেটা আবার কি?
– মানে বিয়ের পাত্রীকে লোকেরা যা সব জিগ্যেস করে। ‘নাচ জানো’? ‘গান জানো’? ‘রাঁধতে জানো?’ ‘হাইট কত’? এইসব।
– না। এইরকম তো কোনও প্রশ্ন আমার রেডি নেই।
– সে কি? তা হলে আগে প্রশ্নবিচিত্রা রেডি করুন। তারপর আমাকে কল করবেন। রাখছি।

(২)
– হ্যালো, জয়া?
– বলছি বলুন।
– মানে, বলছিলাম, প্রশ্নবিচিত্রা রেডি করেছি।
– বাহ। গুড। বলে ফেলুন।
– জিজ্ঞেস করছিলাম আপনাদের বাড়িতে আলুপোস্ত হয়?
– এ আবার কি ধরণের প্রশ্ন! হ্যাঁ হয়। কেন?
– আর বিউলির ডাল?
– তাও হয়? কেন বলুন তো?
– আপনার আরশোলা কালার এর কোনও সালোয়ার বা শাড়ী আছে?
– আরশোলা কালার? সেটা আবার কি!!!
– মানে মেরুন কালার।
– হ্যাঁ আছে। কিন্তু এই সব আবোল তাবোল প্রশ্নের কী মানে?
– না। মানে জানতে পারলাম আপনারা ঘটি, অরিজিনালি পশ্চিমবাংলার লোক। তাই আলুপোস্ত আর বিউলির ডাল। আর মোহনবাগান ক্লাবের সাপোর্টার হলে মেরুন শাড়ী। তাই জানতে চাইছিলাম আর কি!!
– উফফ! কি সব প্রশ্ন!! তা আপনারা তো বাঙাল। বাড়িতে শুঁটকি মাছ ছাড়া আর কিছু হয়?
– হ্যাঁ। আমরা বাঙাল। মানছি আমরা উদ্বাস্তু। পিঠে কাঁটা তারের দাগ। আর শুঁটকি মাছ হেব্বি প্রিয়। কিন্তু আমার প্রশ্নবিচিত্রা শেষ হয় নি যে।
– আরও আছে!!
– মানে, জিগ্যেস করছিলাম যে আপনারা কি পুরো সপ্তাহের আলুপোস্ত আর বিউলির ডাল একবারেই রেঁধে রাখেন?
– অসহ্য! আপনার সাথে কথা বলার মানেই হয় না!!


(৩)
– হ্যালো, রাগ কমেছে?
– হুম!
– তা হলে আবার প্রশ্নবিচিত্রা শুরু করতে পারি কি?
– আবার!!
– হ্যাঁ। মানে, আপনিই তো বলেছেন প্রশ্নবিচিত্রা রেডি রাখতে। তা বিচিত্র প্রশ্নের অভাব আছে নাকি?
– বলুন, শুনি!!
– আচ্ছা রেগে গেলে কি আপনার নাকের ডগা আর কান লাল হয়ে যায়? ঠিক কোন shade এর লাল হয়? নাক না কান, কোনটা বেশি লাল হয়?
– ইসস!!
– একটা ছবি পাঠান না প্লিজ। লাল হয়ে যাওয়া নাক-কানের!!
– এই ধরণের ফাজলামিটাকি আপনার জন্মগত প্রতিভা না পরে প্র্যাকটিস করেছেন?
– বেশিরভাগটাই জন্মগত। আমি, মা, বাবা, দিদিভাই একসাথে হলে সবাই এর তার পেছনে লাগি। জামাইবাবু ও পেয়েছি সেইরকম। ভাগ্নেটাও চরম ফাজিল হয়ে উঠছে দিন কে দিন। আমাদের বাড়িতে সারাক্ষণই হৈ হল্লা হয়।
– বুঝলাম। আপনাদের এত সুখী ফ্যামিলি। তা আপনি এখনও বিয়ে করেন নি কেন?
– আসলে আমার মতে পৃথিবীতে তিন ধরণের মেয়ে আছে। এক, ভালো। দুই, খুব ভালো। আর তিন, আমার জন্যে সবচেয়ে ভালো। এই তৃতীয় জনকেই খুঁজছি।
– উফফ! বাজে বকায় আপনি কি PhD করেছেন? আশা করি আপনি জানেন যে আমার আগে একটা বিয়ে হয়েছিল। তা সত্ত্বেও আপনি আমার ব্যাপারে এত ইন্টারেস্টেড কেন?
– আসলে ছোটবেলা থেকেই আমার সাধ আমার বউ খুব রাগী হবে। একটা টিচার টিচার attitude থাকবে। সবসময় আমাকে কিছু শেখাবে। আর আপনার সাথে পুরো মিলে যায় ব্যাপারটা।
– উফফ! আবার ছ্যাবলামো। সত্যি করে বলুন!!!
– আহা! ধমকাচ্ছেন কেন!!! আচ্ছা বলছি। এর পেছনে একটা সায়েন্টিফিক সূত্র আছে।
– বলে ফেলুন!
– হিমালয়ের গভীর গুহায় থাকা এক মৌনীবাবা টুক করে তার মৌনব্রত ভঙ্গ করে আমার মাকে আদেশ দিয়েছিলেন যে আমাদের ফ্যামিলির বাকি মেম্বারদের সাথে মিল আছে এমন কাউকে আমার বউ হিসেবে ঘরে আনতে।
– তা আমার সাথে আপনার ফ্যামিলির মিল কোথায়?
– আমার দিদির নাম জয়িতা, জামাইবাবু জয়দীপ, আমার ডাকনাম জয়। আর আপনি হলেন জয়া। আশা করি এবার বুঝতে পেরেছেন ব্যাপারটা। পুরো জয়-জয়কার ফ্যামিলি!!
– উফফ! আপনি একটা পাগল!! আপনার সাথে কথা বললেই মাথা ব্যথা শুরু হয়!!

(৪)
– হ্যালো, মাথা ব্যথা কমেছে?
– আপাতত কমেছে। কিন্তু বাজে বকে আবার আমাকে রাগিয়ে দেবেন না।
– যাহ বাবা! আমি কি আপনাকে শুধুই রাগাই? একটু আগে কাকিমা ফোন করে তো আবার উল্টো কথা বলছিলেন।
– কী বলেছে মা?
– বলছিলেন যে সেদিন আমার সাথে কথা বলে ফোন রাখার পর আপনি নাকি ডিনার টেবিলে নিজের মনেই মুচকি মুচকি হাসছিলেন! আর কালকে আমি ফোন না করায় আপনি নাকি শুকনো মুখে সবার সাথে খিটমিট করেছেন? তাই ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে কাকিমা আমাকে ইমার্জেন্সি বেসিসে কল করেছিলেন। বলছি হিমালয়ে কি বরফ গলা শুরু হয়েছে? গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কি কোনও এফেক্ট পড়েছে?
– শাট আপ!!
– একটা প্রশ্ন করতে পারি কি?
– আবার আপনার ফাজিল বিচিত্র প্রশ্ন!!
– ফাজিল না। এক্কেবারে সিরিয়াস। আসলে কাকিমার নম্বরটা আমার কাছে ছিল না। তাই কাকিমা যখন ফোন করলেন, তখন truecaller এ নাম ভেসে উঠলো ‘মিষ্টি বৌদি’। এই ধরনের নাম!! আমি একটু ঘাবড়ে গেছিলাম। আসলে ওয়েব সিরিজ এর দৌলতে এইসব নাম দেখলে কেমন কেমন দুষ্টু ব্যাপার মনে হয়।
– ছিঃ!! বড়দের নিয়ে ইয়ার্কি মারতে লজ্জা করে না আপনার? আমার মা কে আমার কাকু, কাকিমারা ‘মিষ্টি বৌদি’ বলে ডাকে।
– ও আচ্ছা। এইবার জলবৎ তরলং হলো ব্যাপারটা। কিন্তু আরেকটা প্রশ্ন করতে পারি কি?
– করুন।
– মানে কাকিমা ঠিক কতটা মিষ্টি? পাটালি গুড় না দানাদার? আপনার বাড়িতে কি পিঁপড়ের খুব এট্যাক হয়?
– আপনি মদ-গাঁজা খান নাকি বলুন তো?
– না মদ খাই না। তবে বাবার প্রসাদ মাঝে সাঝে চড়াই।
– হ্যাঁ, যাদবপুরের ছেলে তো! এর বাইরে আর কী বা পারবেন?
– ভুল ধারণা। সব থেকে বেশি আমরা যেটা খাই তা হল ল্যাদ *।
– এটা আবার কি খাবার?
– আপনি ল্যাদ জানেন না!! আপনি আঁতেল না এস্কিমো??
– ফোন রাখছি। খবরদার যদি এইসব অশ্লীল শব্দ আমার কাছে করেছেন!!!
– যা বাবা, ল্যাদ আবার কবে থেকে অশ্লীল হল!!
– শাট আপ!!

(৫)
– হ্যালো, কি করছেন?
– মন খারাপ। বাড়িতে ঝগড়া করেছি।
– কেনো?
– একটা চাকরি পেয়েছি। পাটনায় পোস্টিং। কিন্তু মা, বাবা, দাদা কেউ ছাড়তে রাজি নয়।
– হুম।
– কি করি বলুন তো? চাকরি টা ছাড়া উচিত হবে না।
– আপনি কি বাড়ির লোককে ম্যানেজ করতে চান?
– হ্যাঁ।
– কিছু উপায় বলতে পারি। কিন্তু তার জন্যে আজকে আমার সাথে দেখা করতে আসতে হবে।
– আজকেই!!
– হ্যাঁ। কারণ কাল সকালে আমি মুম্বাই চলে যাচ্ছি। সেখান থেকে ঢাকা। কবে দেখা করার সুযোগ হবে জানি না।
– কোথায়, কখন দেখা করবেন? আর আমার বাড়ি বা আপনার বাড়িতে বলবেন না প্লিজ।
– বিকেল পাঁচটা। প্রিন্সেপ ঘাট। ঠিক আছে, বাড়িতে বলবো না।

(৬)
– হ্যালো, কেমন আছেন? মুম্বাই কেমন লাগছে?
– হ্যাঁ, আমি ভালোই আছি। মুম্বাই এর কাজ শেষ। কালকে ঢাকা যাচ্ছি। আপনি বলুন।
– আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্যে ফোন করেছিলাম। সেদিন আপনার বুদ্ধিগুলো খুব কাজে লেগেছে। বাড়িতে সবাই রাজি হয়েছে পাটনার চাকরিটার জন্যে।
– আরে, ধন্যবাদ তো আমার জানানো উচিত আপনাকে। এই প্রথম আপনি আমাকে কল করছেন। এতদিন তো শুধু আমিই আপনাকে কল করতাম। বরফ মনে হয় সত্যি গলেছে। প্রেমে টেমে পড়েছেন নাকি?
– দেখুন, আপনি আমার আগের বিয়ের ব্যাপারটা জানেন। প্রেম আমার দ্বারা আর সম্ভব নয়।
– আরে ধুর! কবে কোথায় একটা T20 ম্যাচ হেরেছেন! তার জন্যে এখনও মুখ ব্যাজার করে বসে আছেন? লাইফ হলো টেস্ট ম্যাচ। 2nd innings এ চান্স অব্যশই পাবেন। সেখানে VVS Laxman এর মতন 2nd ইনিংসে একটা ২৮১ মেরে রেকর্ড করে ম্যাচ জিতিয়ে ফিরুন।
– না। সত্যি আমি নতুন কোনও রিলেশনশিপ এ জড়াতে ভয় পাচ্ছি!!
– “একটু হাসি, একটু কান্না।
অনেকখানি দুষ্টু ভয়।
তোমার জন্যেই আমার এই,
জীবননাটক অভিনয়।”
– বাবা, অনেক কাব্য হয়েছে। তা চান্স দেবেন নাকি আপনার টিমে একবার। 2nd ইনিংস খেলতে চাই।
– না, এতটাই সহজ না ম্যাডাম। ট্রায়াল দিয়ে টিমে ঢুকতে হবে।
– আবার ট্রায়াল!! সেটা কী?
– প্রশ্নবিচিত্রা। এখনও শেষ হয় নি যে।
– ওহঃ বাবা!
– মানে, জিজ্ঞেস করছিলাম যে!! আপনি কি শুঁটকি মাছ রাঁধতে পারেন??
– উফফ!! তুমি না…..

* ল্যাদ = ইংরিজি শব্দ ‘Lethargy’ এর শর্ট ফর্ম। বাংলায় যাকে বলে ‘আলসেমি’ । যাদবপুর ইউনিভার্সিটি ও পশ্চিম বাংলার অন্যান্য ছাত্রমহলে এই শব্দটি খুব জনপ্রিয়।

Share This Article