ভালোবাসা – Valobashar Romantic Golpo – Love Story Bangla Valobashar Golpo

Bongconnection Original Published
5 Min Read

ভালোবাসা - Valobashar Romantic Golpo - Love Story Bangla Valobashar Golpo
Loading...






প্রকাশ চুপচাপ ঘরে বসে ছিলেন। অল্প জবুথবু ভাব । আজ শীতটাও যেন বেশি লাগছে । নন্দিনী বলত , পৌষ সংক্রান্তিতে নাকি ঠান্ডা বাড়ে । হবেও বা । বয়েসের সাথে সাথে শীতও বেশি কষ্ট দেয় । দরজা ঠেলে মেয়ে এসে নিয়মমাফিক উঁকি দিয়ে গেছে ।
” বাবা , কেমন আছ ? সুগার ঠিক আছে তো ? রোজ ঠিকঠাক ওষুধ খাচ্ছ ? এখন কিন্তু নিজের খেয়াল নিজেকেই রাখতে হবে । অন্তত ওষুধবিষুধগুলোও যদি নিজে দায়িত্ব নিয়ে খাও , কাঁকন তবে অল্প রেহাই পায় । ”
প্রকাশবাবু প্রবল বিরক্তিতে শুধু হুঁ হাঁ করে দায় সেরেছেন । মেয়ে ওড়না বড্ড জ্ঞান দেয় । সেই তুলনায় ছেলের বউ কাঁকন অনেক ভাল । তবে এমনি ভাল হলে কী হবে , খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে ভীষণ কড়া। সুগার আছে বলে মেপে খাওয়া দেয় । মিষ্টি তো পুরোপুরি বন্ধ। অথচ প্রকাশ মিষ্টিঅন্ত প্রাণ । দুপুরে রাতে শেষ পাতে মিষ্টি না খেলে মনে হয় অর্ধেক পেট ভরে নি । যতদিন নন্দিনী ছিল , অল্পস্বল্প জুটত। নন্দিনী গত হওয়ার পর সে গুড়ে বালি । ও মারা যাওয়ার পর থেকে সুগারের লম্ফঝম্পও বেশি বেড়ে গেছে । সেটা নন্দিনী মরার দুঃখে নাকি মিষ্টি বন্ধ হওয়ার জন্য , সেটাই ঠিক বুঝতে পারেন না । আজ পৌষ পার্বণ । কাঁকন খুব কাজের আর সংসারী মেয়ে । শাশুড়ির সব ধারা বজায় রেখেছে । ব্রত , পার্বণ কিচ্ছুটি  বাদ দেয় নি। আজও জমিয়ে পিঠে পায়েস করেছে। রাতে ননদ নন্দাই ওড়না আর অরণ্যর পিঠে খাওয়ার নেমন্তন্ন । গতকাল সকালে খাবার টেবিলেই সেটা জানিয়ে প্রকাশের অনুমতিও নিয়েছে । শুধু এতো আয়োজনে প্রকাশের কোন নেমন্তন্ন নেই । সকালবেলা লিকার চা সাথে দুটো বিস্কুট । একটু পর  দুটো আটার রুটি আর সবজি , সাথে চিনি ছাড়া ছানা । সাড়ে এগারোটায় পেয়ারা আর আপেল । আজ কমলালেবুও দিয়েছে কয়েক কোয়া । দুপুরে শাকভাজা , পেঁপে সেদ্ধ , ডাল,  ভাত , স্কোয়াসের তরকারি , পাতলা মাছের ঝোল । ব্যস । বিকেলে চা বিস্কুট । সন্ধেবেলা মুড়ি ছোলাভাজা । রাতে রুটি , সবজি আর মুরগির স্টু। দুপুরে শেষ পাতে অল্প টমেটোর চাটনি চেয়েছিলেন একদিন। ঠিক আধ চামচ দিয়ে কোমল গলায় বলল ,
” বাবা , সুগারের জন্য এসব বিষ । মা যাওয়ার পর তোমাকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব কিন্তু আমার। তাই আর কখনও চেয়ে আমায় বিব্রত করো না।”




প্রকাশের আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না। বাঙাল বাড়ির  ছেলে । খাওয়া গেলে জীবনের আর রইল কী ! ! নিজে খেতে ও খাওয়াতে ভালবাসতেন। সারা জীবন মোচ্ছমূলা করে খেয়েছেন। শেষ বয়েসে এ কী দুর্গতি ! ছেলেরও এক রা ।
” বাবা , তোমায় সাবধানে থাকতে হবে। সুগার যেন কন্ট্রোলে থাকে। জান তো , সুগারকে নিঃশব্দ ঘাতক বলে । ছ্যাঁচড়া রোগ , একবার ধরলে আর রেহাই নেই । কুরে কুরে ভেতরের সব অর্গান নষ্ট করে দেয় । আমার মেয়েটা বড় হওয়া পর্যন্ত তো বাঁচতেই হবে , বল ? ততদিন আর কী করবে , মেনে বেছেই খাওয়াদাওয়া করো ।

রেহাই নেই , রেহাই নেই এদের অত্যাচার থেকে। ফুটফুটে নাতনি মেঘমা না থাকলে কবেই হিমালয়ে চলে যেতেন ! মেঘমার কথা মনে পড়তে মনটা হালকা হল । নাতনিটা হয়েছে বড় দাদুভক্ত। সারাক্ষণ দাদুন , দাদুন ডাকে বাড়ি মাথায় করছে। আজ তারও পাত্তা নেই কেন ? ওঃ, নিশ্চয়ই পিমা মানে ওড়নার সাথে গল্পে মত্ত। পাকা বুড়ি একটা। স্নেহের রসে মন ভরে ওঠে।
বৃদ্ধদের অবসরের সঙ্গী টিভিটা চালিয়ে দেন। চ্যানেল ঘুরিয়ে যেতে থাকেন। ডাইনিংস্পেস থেকে নতুন গুড় , চিতই পিঠের গন্ধে মন আনচান করে ওঠে। নিজেকে নিজেই শাসন করেন ।
” এতো লোভ কেন ? জান না সুগারে এসব খাওয়া বারণ ! ”
টিভির খবরে মন বসাতে যান। নাঃ ,হয় না । কাঁকন  পাটিসাপটা বড় ভাল করে । ভেতরে মোটা ক্ষীরের পুর দেয়। গেলবার চিনি ছাড়া বানিয়ে দিয়েছিল দুটো। খেয়ে এতো মন খারাপ হয়েছিল যে এ বছর বানাতে বারণ করে দিয়েছেন। এখন মনে হচ্ছে মানা না করলেই হতো। তাও তো কিছু জুটত। ফাঁকা চোখে টিভির পর্দায় তাকিয়ে থাকেন।
হঠাৎ দরজা ঠেলে মেঘমা ঢোকে । এক গাল হেসে প্রকাশ উচ্ছ্বসিত হন ।




” কী গো , মেঘু মা , কোথায় ছিলে ?”
মেঘমা ঠোঁটে আঙুল রেখে চুপ করতে বলে। হালকা পায়ে এগিয়ে এসে ছোট্ট মুঠো খুলে দোমড়ানো একটা পাটিসাপটা বের করে দাদুনের মুখে গুঁজে দেয় । ফিসফিস করে বলে ,
” এটা চিনি দেওয়া । চুপ করে খেয়ে নাও। আমি পালাই। কাউকে বলো না কিন্তু।”

Share This Article