পাশে থাকার অঙ্গীকার – Bangla Golpo – Bengali Love Story

Bongconnection Original Published
4 Min Read



   

পাশে থাকার অঙ্গীকার - Bangla Golpo - Bengali Love Story
Loading...





কস্তুরী জোরে ডেকে উঠল , – সন্দীপ ! সন্দীপ !
পুজো প্যান্ডেলে সন্দীপ , কস্তুরী আর ছোট্ট বাবুন ভীড়ের ঠেলায় একে অন্যের থেকে ছিটকে গেল ! বাবুন সন্দীপের কোলেই ছিল । কিন্তু এখন আর কাছাকাছি কোথাও দেখতে পাচ্ছেনা । ভীড়ের চাপে ঠেলা হতে হতে প্যান্ডেলের বাইরে এসে একটা ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে সন্দীপের মোবাইলে ফোন লাগালো কস্তুরী ! সুইচড অফ !! রিডায়াল করল কস্তুরী । কয়েকবার ফোন করেও একই ফল ! এবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘামতে লাগলো কস্তুরী !
এজন্যই সে কিছুতেই রাজি হয়নি আসতে! সন্দীপই তাকে অভয় দিয়ে বলেছিল, তুমি পারবে দেখ, নিজের প্রতি বিশ্বাসটা হারিয়ে ফেলোনা, এখন তো আমাদের ভালো থাকার সময়, বাবুনকে বড় করার সময়, আর এখন তুমি একটা অ্যাক্সিডেন্টের জন্য নিজেকে গুটিয়ে নেবে, তাছাড়া আমি তো আছি, আমার ওপর ভরসা নেই তোমার! 
আজ চোখের সামনে সন্দীপকে দেখতে না পেয়ে চোখে জল এলো তার, ভালো করে চারিপাশে চোখ বুলিয়ে নিল, বড্ড অসহায় লাগছিল নিজেকে। 
কস্তুরী এমনটা আগে ছিলো না, উকিল হিসেবে যথেষ্ট খ্যাতি ছিল তার, ওর কথার সামনে সিনিয়র দুঁদে উকিলদেরও ঘাম ছুটে যেতো। 
কিন্তু একটা জটিল কেস জেতার পর বাবা মায়ের সাথে গিয়ে ছিল তারাপিঠে, মায়ের পূজো দিতে। 
সন্দীপের অফিস থাকার জন্য সে যায়নি, ছোট্ট বাবুনকে শাশুড়ি মায়ের কাছে রেখে গেছিলো কষ্ট হবে ভেবে। ভাগ্যিস তারা যায়নি, গেলে যে কি হতো ভাবলেই শিউরে ওঠে কস্তুরী। 
ফেরার সময় তাদের গাড়িটা পেছন থেকে ধাক্কা মারে একটা লরি, কিছু বোঝার আগেই সে ছিঁটকে পড়ে চার ফুট দূরে একটা নয়নজলিতে, আর ঘাতক লরিটা পিষে দিয়ে যায় তার বাবা মাকে। 
কোনমতে সেখান থেকে ঘেঁষটে উঠে এসে এই দৃশ্য দেখে বিকট একটা শব্দ করে থেমে যায়, গলা থেকে আর কোন শব্দ বের হয়নি তার।তারপর অজ্ঞান হয়ে যায়। 
এই ঘটনার পর থেকে সে দেখে বোঝে কিন্তু কোনো কথা বলেনা, ভয় পেয়ে গেলে গলা দিয়ে গোঁ গোঁ শব্দ করতে থাকে, কেমন যেন এদিক ওদিক কি যেন খোঁজে, তারপর অজ্ঞান হয়ে যায়। অনেক চিকিৎসা করিয়েছে সন্দীপ, তবে কোনো লাভ হয়নি, ডাক্তার বলেছেন একটা সাংঘাতিক ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন আপনার স্ত্রী, তাকে সুস্থ করতে চাইলে এইরকম কিছু একটা করতে হবে, যেন তিনি দিশেহারা হয়ে আ্যক্টিভ হয়ে ছুটে আসেন বা কথা বলে সমস্যা থেকে বেরতে চেষ্টা করেন। 



আপনার কথাটা ঠিক বুঝতে পারলাম না ডাক্তার বাবু উদাস হয়ে বললো সন্দীপ। 
ডাক্তার বাবু বললেন প্রিয়জনের মৃত্যুটা খুব কাছ থেকে দেখেছেন তো, তাই তিনি এই ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসতে ঠিক এমনি কিছু ইচ্ছে কৃত ভাবে ঘটাতে হবে, যাতে তিনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে আশঙ্কা কাটিয়ে উঠতে পারেন। 
এরপর থেকে সন্দীপ নানান ভাবে চেষ্টা করে চলেছে, একবার তো বাবুন সবে একপা দুপা করে হাটতে গিয়ে পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছে, সন্দীপ আড়াল থেকে লক্ষ্য করেও ছুটে যায়নি, তবে কস্তুরী ঐ রকম বিভৎস চিৎকার করে এগোতে চেষ্টা করেও পারেনি, শেষে অজ্ঞান হয়ে যায়। তারপর আর ছেলের ওপর দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার চেষ্টা করেনি ছোট বলে। 
আজ ভিড়ের মধ্যে এই সুযোগ টা কাজে লাগায় সে। আড়াল থেকে লক্ষ্য করে কস্তুরী ভিড়ের মধ্যে দিশেহারা হয়ে বিভৎস চিৎকার করে প্রথমে, তারপর তার নাম ধরে চিৎকার করে ডাকতে থাকে, তারপর ধীরে ধীরে এগোতে থাকে অনুসন্ধান কেন্দ্রের দিকে, তাকে উদভ্রান্তের মতো দেখতে লাগলেও সামনে আসে না সন্দীপ। 
পরে কমিটি থেকে যখন তার নাম ধরে ডাকা হয়, সে এগিয়ে আসে, তাকে দেখা মাত্র আবেগে কেঁদে ফেলে কস্তুরী, থেমে থেমে বলে কোথায় হারিয়ে গেছিলে আমায় ফেলে, যদি আমি হারিয়ে যেতাম তাহলে… 
তাকে বুকে চেপে ধরে সন্দীপ বলে হারাতে দিলে তো, কথা দিয়েছিলাম তো পাশে থাকবো চিরদিন! 
আরো ফুলে ফুলে কাঁদতে থাকে কস্তুরী।

Share This Article