শ্বশুরবাড়ির গপ্পো – হাসির গল্প – Valobashar Golpo

Bongconnection Original Published
8 Min Read

শ্বশুরবাড়ির গপ্পো - হাসির গল্প - Valobashar Golpo
Loading...







শ্বশুরবাড়ির লোক আমাকে যে এভাবে টুপি পরিয়ে দেবে আমি ভাবতেও পারিনি।আমার বিয়ে বেশিদিন হয়নি,কিন্তু এর মধ্যেই আমি গন্ডোগোলের আগাপাশতলা আঁচ করতে পেরেছি।আমার বউ এর নাম ইন্দিরা।আমার বউ এমনিতে সুন্দরী, গলার কণ্ঠস্বর ও মিষ্টি কিন্তু ওর একটা অদ্ভুত রোগ আছে,যেটা আমাকে বিয়ের আগে শ্বশুরবাড়ী থেকে কেউ জানায়নি, আমি বিয়ের কিছুদিন পর নিজে থেকেই জানতে পেরেছি।রোগের নাম ও অদ্ভুত, পিকিউলিয়ার কন্ডাক্টর সিন্ড্রোম। মানে,আমার বউ থেকে থেকে বাসের কন্ডাক্টরের মতো আচরণ করে ওঠে।অবচেতন মনেই। সেটাও আমি বুঝতে পেরেছি।

প্রথম যেদিন টের পেলাম,সেদিন আমাদের ফুলসজ্জা। আমাদের যেহেতু দেখাশোনা করে বিয়ে হয়েছিল,তাই আমি ঠিক করেছিলাম ওকে সহজ হবার জন্য সময় দেবো।স্বাভাবিক ব্যাপার। একটা নতুন পরিবারের সদস্য হয়েছে সে,তার কাছে প্রায় সবকিছুই নতুন।সে ডিভোর্সি ও নয়,আমাদের দুজনেরই এটা প্রথম বিয়ে,তাই বিয়ে নিয়ে তার অভিজ্ঞতাও নেই বিশেষ।দু একটা বিয়ে করলে হয়ত ধাতস্থ হতো।আমি তাই ঠিক করেই নিয়েছিলাম,ফুলসজ্জার রাতে দু একটা কথা বলেই ঘুমিয়ে পড়বো।সারাদিনের খাটাখাটনিতে দুজনেই ক্লান্ত থাকবো। সেটাই বরং ভালো হবে। আমি সেইমতো সবার ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার পর দরজায় ছিটকিনি তুলে দিয়ে বিছানায় বউ এর পাশে এসে বসলাম।দেখলাম ও চুপ করে বসে আছে।আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।দু একটা কথা না বললেও নয়।অভদ্রতা হয়।কোনো কথা খুঁজে না পেয়ে শেষমেশ বললাম,”তুমি নিশ্চয় ক্লান্ত হয়ে আছো।”
ইন্দিরা মাথা নাড়ল।আমিই আবার বললাম,”তাহলে শুয়েই পড়ো নাকি!”  ইন্দিরা বোধহয় বুঝল ওর ও দু একটা কথা বলা উচিৎ।ও ইতস্ততভাবে বলল,”না না কথা বলুন না।”
আমি এক মিনিট ভেবে বললাম,”তুমি সহজ হতে পারো আমার সাথে।আমাকে আপনি করে বলতে হবেনা।আমাকে তোমার বন্ধু ভাবতে পারো নিঃসন্দেহে।আমার সাথে ইয়ার্কি মারতে পারো।মানে ফ্র‍্যাঙ্ক হতে পারো।”

ইন্দিরা লাজুক মুখেই আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে উঠল,”কই আপনার টা দেখি।”
এই আমি যে আমি এতক্ষণ ফ্র‍্যাঙ্ক হবার ব্যাপারে এত কথা বললাম,সেই আমিও লজ্জা পেয়ে গেলাম।কোনোরকমে বললাম,”মানে আজকেই! মানে এত তাড়াতাড়ি না করলেও হবে ।”
ইন্দিরা লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়ল। আমি জেগে রইলাম
.
.
.
.
অনেকক্ষণ
.
.
.
.

অপেক্ষায়
.
.
.

😞
শেষে হতাশ হয়ে ভোর চারটের সময় ঘুমোতে গেছিলাম।তখন কি আর জানতাম ইন্দিরা আমার কাছে টিকিট চাইছিল.. অন্যকিছু না..  যাকগে। আমার তাড়া ছিলনা বাপু।

তখনও কিছু আন্দাজ করতে পারিনি।ইন্দিরা আমার সাথে তেমন কথা বলতোনা।ইশারায় ইঙ্গিতে কথা বলতো।মাঝেমাঝে মনে হতো আমার বউ হয়ত বোবা।তাতে অবশ্য আমার খুব একটা অসুবিধা হচ্ছিলনা।

মুখ খোলেনা খোলেনা,কিন্তু যেদিন মুখ খুলল সেদিন গোটা বাড়িতে হইচই পড়ে গেলো।প্রথমেই বলে রাখি আমাদের জয়েন্ট ফ্যামিলি।এই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির যুগে যখন সবাই আলাদা আলাদা কক্ষপথে নিজস্ব পেয়ার তৈরি করে ইলেকট্রনের মতো ঘুরপাক খাচ্ছে আমার বাবা আর জ্যাঠা সিদ্ধান্ত নেয় তারা একসাথে থাকবে আমাদের পৈতৃক ভিটেয়।আমিও তাই আমার জেঠতুতো দাদার সাথেই বড়ো হয়েছি।আমাদের মধ্যে বেশ মিলমিশ।ভালোবাসা।যাইহোক কথা থেকে সরে যাচ্ছি। আমাদের এই পুরোনো বাড়িতে একটাই সমস্যা আর সেটা হল বাথরুম। গোটা বাড়িতে মাত্র দুটো বাথরুম।একটা বাড়ির বাইরের দিকে।সেটায় খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ যাইনা।বাড়ির মধ্যে যে বাথরুম টা আছে সেটাই সবাই ব্যবহার করি।ইন্দিরা সেদিন স্নান করতে ঢুকছিল,হঠাৎ আমার জ্যাঠা পেটে হাত দিয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলে, “বৌমা তুমি একটু বাইরেরটায় যেতে পারবে। আমার ভীষণ এমারজেন্সি এসেছে।” আমার জ্যাঠা সরল মানুষ। সরল মনেই কথাটা বলেছিল।সে আর কি করে জানবে আমার বউ প্রত্যুত্তরে আচ্ছা না বলে বলবে,”চলুন চলুন ভিতরে চলুন।আরও একজনের জায়গা হবে।”
কথাটা শুনেই তো আমার জ্যাঠার ফেটে গিয়েছিল….
.
.
.
.
চোখ
.


.

বিস্ময়ে
.
.
এই ঘটনাটা আমাদের বাড়িতে আমাশার মতো ছড়িয়ে পড়ল।জেঠু এরপর আর কোনোদিনই ইন্দিরার মুখোমুখি হওয়ার সাহস দেখায় নি। বেশ কয়েকদিন ট্রমাতেও ছিলেন।ইন্দিরাও দরজায় খিল তুলে বসেছিল।সবাই আড়ালে কথা বলতে শুরু করেছিল।ব্যাপারটা আমার খারাপ লাগল ।ইন্দিরার সাথে আমার কমদিনের পরিচয় হলেও সে আমার বউ।আর তাছাড়া ইন্দিরা এরকম ভাবে বললোই বা কেন! সেটা জানাও প্রয়োজন। আমি ঘরের দরজা বন্ধ করে সরাসরি ওকে প্রশ্ন করলাম,”আচ্ছা তুমি সত্যিই জেঠুকে ওই কথাটা বলেছো?”
ইন্দিরা নিরুত্তর।
আমি আবার প্রশ্ন করলাম,”কেন বলেছো?”। এবার একটু কড়া ভাবে। বুঝলাম ও ঘামতে শুরু করেছে। তবুও কোনো উত্তর দিলনা।আমি থাকতে না পেরে গলাটা আর একটু তুলে দিলাম,”বলবে কি কিছু?”
দেখলাম ইন্দিরা চোখে জল চলে এসেছে।ও ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”আমি ইচ্ছে করে বলিনি।এটা আমার একটা রোগ।”
“রোগ?”,আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম,”তোমার বাথরুমে যেতে গেলে সঙ্গে কাউকে লাগে? আমাকে বলতে।জেঠুকে কেন বলতে গেলে?”

ইন্দিরা কেঁদে উঠল,”আসতে। আসতে।লেডিস আছে।”
আমি চমকে উঠলাম।ঘরের বাইরে থাকা আমার মা আরও চমকে উঠল।মায়ের হাত থেকে গরম চায়ের কাপ পড়ে গিয়ে ভেঙে টুকরোটুকরো হয়ে গেলো। আমাদের কথা এগোলোনা আর। কিন্তু আমার মনে সন্দেহ দানা বেঁধে গেল,কিছু একটা ঘোটালা আছে।আমাকে জানতে হবে।ঠিক করলাম একেবারে কোম্পানিতে গিয়েই খোঁজ নেবো,ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্ট টা কি,কারন আমি তো “হ্যান্ডেল উইথ কেয়ার” করেছি।
তাই সেই মুহূর্তে আর কিছু বললাম না।ইন্দিরাকে শান্ত করলাম।ওর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,”আচ্ছা তোমাকে আর কিছু বলতে হবেনা।আমি বুঝতে পেরেছি।আমি জেঠুমণিকে বুঝিয়ে বলে দেবো।”

দুদিন পরে শ্বশুরবাড়িতে গেলাম।আমাকে দেখে শ্বশুরমশাই এর কপালে ভাঁজ দেখা দিল।আমি সরাসরি তাকে প্রশ্ন করলাম,”আপনার মেয়ের রোগ টা কি বলুন তো।”
শ্বশুর মশাই এড়িয়ে যেতে চাইলেন,”কি রোগ থাকবে? কিছু তো নেই। তুমি বসো।আমি ইন্দিরার মাকে চা করে আনতে বলি।”
আমি শ্বশুরমশাই এর হাত ধরে ওনাকে বসিয়ে দিলাম,”পরিষ্কার করে বলুন তো।ব্যাপার টা কি।আপনার মেয়ে নিজে আমাকে বলেছে ওর রোগ আছে। কি রোগ সেটা বলেনি। বাড়িতে এমনি তেই অনেক ক্যাচাল হয়ে গেছে।আপনি আর কথা ঘোরাবেন না প্লীজ।”
শ্বশুরমশাই বুঝলেন। পালাবার আর পথ নেই। উনি আমতাআমতা করে আমাকে সবটা বললেন।শুনে তো আমার মাথায় হাত।এরকম আবার হয় নাকি? এ তো প্রথম শুনছি। কেউ থেকে থেকে বাস কন্ডাক্টরের মতো হয়ে যায়! আমি ঘটনাগুলো মনে করার চেষ্টা করলাম।দুয়ে দুয়ে চার হচ্ছে ঠিকই কিন্তু তাও,এ আবার কি অদ্ভুত রোগ রে বাবা।




আমি হাজার টা চিন্তা করতে করতে যখন বাড়ি ফিরি তখন দেখি বাড়ি পুরো শুনশান। জ্যাঠারা কেউ বাড়িতে নেই।বাবাও নেই। কেবল এক কোণে আমার মা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। আমি ব্যাগ নামিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলাম,”মা কি হয়েছে গো? কাউকে দেখছিনা।”
মা কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,”সবাই অর্পিতাকে নিয়ে নার্সিংহোমে গিয়েছে।”
“বৌদি নার্সিংহোমে।”,আমি চমক উঠলাম,”কি হয়েছে? “
মা ফোঁস করে উঠল,”কি আবার হবে। তোমার ওই গুণধর বউ এর জন্য এবার আমাদের বাড়িতে আগুন লাগবে।”
আমি ঢোক গিললাম,”কেন ইন্দিরা আবার কি করল?”
মা যেন আরও ক্ষেপে গেল,”কি করেছে? অর্পিতা ছাদে রেলিঙে ভর দিয়ে কাপড় মেলছিল।তোমার বউ হঠাৎ করে আমার সামনেই ওকে ডেকে বলল,’বাঁয়ে বাঁয়ে’। বেচারি অর্পিতা বাঁদিকে কাত হতেই ধড়াম করে ছাদ থেকে পড়ে গেল।কে জানে কত গুলো হাড় ভেঙেছে!”

আমি আঁতকে উঠলাম।মাকে কি করে বলবো,তোমার বৌমা জাত কন্ডাক্টর। চুপচাপ কেটে পড়েছি ওখান থেকে।

আপাতত ভাড়াবাড়িতে আছি। বাবা ঘাড়ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।একটা ফ্ল্যাট খুঁজছি।এখানেও বেশিদিন থাকা যাবেনা।দুদিন আগেই আমার বউ বাড়িওয়ালী কে জিজ্ঞেস করেছে, “কোথায় নামবেন দিদি?”



Share This Article