পূজো সংখ্যা – ব্যভিচারী – বাংলা সিরিজ উপন্যাস – Bengali Story

Bongconnection Original Published
8 Min Read



পূজো সংখ্যা - ব্যভিচারী - বাংলা সিরিজ উপন্যাস - Bengali Story
Loading...

           
            এই লেখাটি স্পনসর করেছে ..

download%2B%25281%2529   
PicsArt 09 08 04.24.48

“তোমার বউ তোমাকে সন্দেহ করে না?”,শেলি নীলাঞ্জনের বুকে আঙুল দিয়ে আঁচড় কাটতে কাটতে প্রশ্ন করল।

“সন্দেহ!”,নীলাঞ্জন হাসল।তাকে সন্দেহ করবে তার বউ! নীলাঞ্জন এতদিনে একটা কথা বুঝে নিয়েছে যে মানুষ যতবেশি বিশ্বাস করে তাকে ফাঁকি দেওয়ার তত বেশি সুযোগ। আর যে মানুষ সাজিয়ে অবলীলায় মিথ্যে বলতে পারে,তাকে ধরা অতটাও সহজ নয়।মিথ্যে কথা সবাই বলতে পারেনা,সেটাও একটা আর্ট।বেশিরভাগ মানুষই বোকা বোকা মিথ্যে বলে ধরা পড়ে যায়।

শুধু তার বউ রিচা ই নয়, এই মুহূর্তে যে মেয়েটি তার বুকে হামাগুড়ি খাচ্ছে সেও জানে না নীলাঞ্জনের আরও একজন প্রেয়সী আছে,আরও একজন শয্যাসহচরী আছে।ব্যাপার টা খুব সহজ।আর সেই হিসেবে নীলাঞ্জনের যুক্তিও।একজন নারীকে নিয়ে তার পক্ষে সন্তুষ্ট থাকা সম্ভব নয়।নারী অনেকটা সুন্দর সাইড ডিশের মতো।যতই ভালো হোক না কেন একই খাবার রোজ খেলে সেই খাবারের স্বাদ কমে যায়।তাই জন্য পাল্টে পাল্টে খাবার খেতে হয়।নীলাঞ্জনের কাছে জীবনটাও সেরকম।কেবল যদি সে স্ত্রী কে নিয়ে সুখী থাকতে চাইতো,তাহলে পারতো না।অশান্তি লেগেই থাকতো।সেও সুখী হতো না।আর বেঁচে থাকার একমাত্র উদ্দেশ্য সুখে থাকা নয় কি!




নীলাঞ্জন শেলির মাথায় বিলি কেটে বলল,”সন্দেহ কেন করবে! তার প্রতি আমি তো অযত্ন নিইনা। যেমন তোমার প্রতিও নিইনা।তোমরা দুজনেই আমার লাইফের একটা ইম্পর্ট্যান্ট পার্ট।হুম এটা ঠিক ও যদি জানতে পারে,খুব কষ্ট পাবে।হয়ত আমাকে ছেড়ে চলেও যাবে।হয়ত ওকে বোঝাতে খুব কষ্ট হবে।আর যেহেতু ও আমার স্ত্রী আমাকে ওর কাছেই ফিরে যেতে হবে।তোমার কাছে আর আসতে পারবোনা।সেটা কি ভালো হবে!”

“তুমি তো ওকে ছেড়ে আমার কাছেও আসতে পারো।পারমান্যান্টলি।”,শেলি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে নীলাঞ্জনের দিকে তাকালো।

নীলাঞ্জন চোখের ধূর্ততা আড়াল করে হেসে বলল,”ধুর পাগলী।তাই হয়।তুমিও যেমন আমার কাছে  ইম্পর্ট্যান্ট রিচাও তো ইম্পর্ট্যান্ট। আজ যদি ও বলে তোমাকে ছেড়ে দিতে আর আমি তোমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়! সেটা কি উচিৎ হবে!”

শেলি নীলাঞ্জন কে জড়িয়ে ধরে অভিমানের সুরে বলল,”আমাকে ছেড়ে কোথাও কোনোদিন যেও না প্লীজ।”

“বেশ তো”,নীলাঞ্জন ঠোঁট চেপে হাসল।মনে মনে নিজেকে বলল,মেয়েরা কি বোকা না! দুটো মিষ্টি কথা শুনলে,একটু যুক্তি সাজিয়ে বুঝিয়ে দিলেই বুঝে যায়। কিন্তু খেলাটা ঠিক জমছেনা,মানে নীলাঞ্জন চ্যাটার্জী এদের থেকে অনেক এগিয়ে। এই বোকা মেয়েগুলোর থেকে। এক তার শান্ত,মিষ্টি বউ রিচা, তারপর এই কলেজের মৌমাছি শেলি (ভালো নাম অবশ্য শেফালি। শেলি নামটা তারই দেওয়া।) আর শেষমেশ সুজান। সুজান যদিও কলগার্ল। বাকি দুজনের মতো না,তার প্রতি ফরমায়েশও আলাদা। তবু নীলাঞ্জনের প্রতি তার একটা সফট কর্নার আছে। প্রত্যেকেই সুন্দরী। প্রত্যেকেই আগুন।নীলাঞ্জনের বুকে সবাই শান্ত হয়ে যায়। সে তো দিন দিন প্লেয়ার হয়ে যাচ্ছে। নিজের মুখে নিজের প্রশংসা করা সে পছন্দ করে না তাও,মানে সিরিয়াসলি তার কলিগ রা যারা যারা অ্যাফেয়ার্স এর সাথে যুক্ত তারা একজনের পরে আর একজনকে সামলাতে গিয়েই হিমশিম খেয়ে যায়।তাদের প্রত্যেকের বাড়িতেই বউরা তাদের সন্দেহ করে। করবে নাই বা কেন! বোকার মতো কাজ সবার। বউকে অবহেলা করে অন্য একজনের কাছে ছুটে যায়। বউ তো সন্দেহ করবেই তার উপরে, জলশাতে পেটে মদ পড়লেই সবাই বুক উঁচিয়ে তাদের অ্যাফেয়ার্স এর গল্প বলে। অ্যাফেয়ার্স এর প্রথম শর্ত কাউকে না জানানো,কাউকে না।এ জগতে যারা বিশ্বাস করে তারাই ঠকে। নীলাঞ্জন কে দেখুক সে তিন বছর ধরে তিনজন কে নিয়ে চলছে,রিচা আজ অবধি সন্দেহ করেনি।করতে পারবেও না। কারণ নীলাঞ্জন চ্যাটার্জী একজন জিনিয়াস। নিজের মনে নিজেই হেসে উঠল নীলাঞ্জন।


নীলাঞ্জন শুয়ে শুয়েই ফোনটা হাতে তুলে নিল।ইন্টারনেট কানেকশন টা অন করতেই টুং টুং শব্দে নোটিফিকেশন আর মেসেজ আছড়ে পড়ল।ক্যাচে ক্লিয়ার করে হোয়াটস-অ্যাপ টা খুলতেই ভুরু কুঁচকে গেল নীলাঞ্জনের।একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।চ্যাট বক্স টা খুলতে নীলাঞ্জনের বুক কেঁপে উঠল।অটো ডাউনলোড হয়ে সেই আননোন নাম্বার থেকে যে ছবি গুলো এখন তার ফোনের স্ক্রিনে ভাসছে।তার চারটে তার। শেলি আর সুজানের সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি।শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল নীলাঞ্জনের। কারণ সব থেকে উপরের দুটো ছবির একটাতেও সে নেই।দুজন স্ত্রী পুরুষের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি রয়েছে।পুরুষ টিকে সে চেনেনা কিন্তু যে মেয়েটি সেই পুরুষটির শারীরিক আবর্তে জড়িয়ে আছে সে আর কেউ নয়,  তার শান্ত – স্নিগ্ধ স্ত্রী রিচা।
               Promotional Partner

IMG 20190908 143343

                   

“রিচা!”,নীলাঞ্জন পাগলের মতো চেঁচিয়ে উঠলো। তার চোখে আগুন।যে আগুনে এই মুহূর্তে সবকিছু পুড়িয়ে ছাই হয়ে যেতে পারে। তার মাথা ঘুরতে শুরু করল,রিচা!  কিন্তু কি করে! রিচাকে সে বিশ্বাস করে। রিচা তার।কেবল তার।বিয়ে করে আনা বউ।যে আজ পর্যন্ত একটা কোনো কাজ করেনি নীলাঞ্জনকে না বলে,যে নীলাঞ্জন কে অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করে নীলাঞ্জনের কাছে সব সঁপে দিয়েছে।এটা রিচা হতেই পারেনা।নীলাঞ্জন বার কয়েক দেখল। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। উহু যে বউ এর সাথে এতগুলো বছর সে ঘর করেছে।এক বিছানাতে শুয়েছে।তাকে চিনতে ভুল হবার কথা নয়। এ রিচা ই। কিন্তু ছেলেটা কে! আর যে মেসেজ করেছে সেই বা কে! তার কাছে এতগুলো ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি এলো কি করে!  একের প্রশ্নে নীলাঞ্জন জর্জরিত হয়ে পড়েছে,কিন্তু সব প্রশ্নকে ছাপিয়ে যে প্রশ্নটা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,সেটা হলো রিচা কেন এরকম করল! কতদিন থেকে এরকম চলছে! সে তো কিছু বুঝতেও পারেনি। রিচা এভাবে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। তার স্ত্রী।অন্য পুরুষের বন্ধনে।আগুন জ্বলে উঠল নীলাঞ্জনের মাথায়। এরকম চরিত্রহীন মেয়ের সাথে সে আর একমুহূর্ত ও থাকবেনা। হাতের কাছে এখন কিছু পেলে সে কি করতো জানেনা।হয়ত রিচাকে মেরেই ফেলতো।রিচাকে বাঁচিয়ে রাখতে কষ্ট হচ্ছে।নীলাঞ্জন তাকে বিশ্বাস করেছিল।নীলাঞ্জন ভালোবাসায় কোনো খামতি রাখেনি।তাহলে এরকম কেন করল রিচা! রিচাকে তো সে খুব ভালোবাসতো।রিচা অসম্ভব সুন্দরী। “রিচা! “,আবার চিৎকার করে উঠল নীলাঞ্জন। শেলি উঠে বসেছে ততক্ষণে।পাশের মানুষটার হঠাৎ এই পরিবর্তনে সে বিস্মিত।পাগলের মতো দিশেহারা হয়ে যাওয়া ঘেরাকলে ফেঁসে যাওয়া ইঁদুরের মতো ছটফট করছে নীলাঞ্জন। শেলি জিজ্ঞাসা করল,”কি হলো তোমার! সব ঠিক আছে তো!” নীলাঞ্জনে হিংস্র চোখে শেলির দিকে তাকালো।তার মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে সবাই দায়ী তার এই অবস্থারর জন্য।কাউকে বিশ্বাস করা যায়না।এই পাশের মেয়েটাকেও না। হয়ত এও জড়িয়ে আছে।হয়ত সব ঘটনার পিছনে এ আছে।মনে মনে নীলাঞ্জন কে দেখে এখন হাসছে। হয়ত ভেবেছে,এসব দেখে রিচাকে ছেড়ে সে সোজা তার কাছে ছুটে আসবে।এরকম ভেবে থাকলে খুব ভুল ভেবেছে।এরা টাইমপাস নীলাঞ্জনের কাছে।আজ ভালো লাগছে আজ আছে, কাল ভালো না লাগলে ছুঁড়ে ফেলে দেবে শহরের ডাস্টবিনে।হ্যাঁ ডাস্টবিন, ওখানেই এদের স্থান।এরা কখনওই রিচার জায়গা নেবেনা। রিচা ওর নিজের বউ।রিচার উপর অধিকার আছে ওর।রিচার সবকিছু ওর। রিচা কেবল ওর এবং একমাত্র ওর ই। নীলাঞ্জন হ্যাঁচকা মেরে শেলির হাত টা সরিয়ে,বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ঝটপট জামা প্যান্ট গলিয়ে হাতে ব্যাগটা তুলে নিয়ে দরজার দিকে এগোলো নিঃশব্দে। শেলি ভীষণ রকম আশ্চর্য। এরকম নীলাঞ্জন কে সে কখনো দেখেনি। কেমন যেন হিংস্র হায়নার মতো। কি এমন হল! ফোন টা হাতে নিতেই..এরকম হয়ে গেল।সে কি কিছু করেছে।সে তো কোনো খারাপ কথা বলেনি।সে তো রিচাকে ছেড়ে আসার কথাও বলেনি।কিছুই বলেনি।শুধু জিজ্ঞেস করেছে, রিচাকে ছেড়ে আসলে কেমন হয়! তাতে এরকম রিয়্যাক্ট করার তো মানে হয় না।আর তাছাড়া ও তো হেসে হেসেই উত্তর দিল। নীলাঞ্জন যখন দরজা ঠেলে বেরিয়ে যাচ্ছিল,তখন শেষবারের মতো শেলি আর একবার জিজ্ঞেস করল,”তোমার কি হয়েছে বলবে!”। নীলাঞ্জন ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো চাহুনি হেনে উত্তর দিল,”তোমার জেনে কাজ নেই। আর শোনো আমি এখন আসতে পারবোনা। কবে আসবো ঠিক নেই। আমাকে একজনের হিসেব মেটাতে হবে।” দাঁতে দাঁতে চেপে জবাব টা দিয়ে হাঁটা লাগালো নীলাঞ্জন। বারান্দা পেরিয়ে সোজার সিঁড়ির দিকে। সেদিকে চেয়ে একবার শিউরে উঠল শেলি।”ভয়ংকর”, নিজের অজান্তেই শেলির মুখ থেকে বেরিয়ে এলো।


ব্যভিচারী – দ্বিতীয় পর্ব

Share This Article