Valobashar Golpo – নতুন বউ – Bangla Golpo

Bongconnection Original Published
4 Min Read

Valobashar Golpo - নতুন বউ - Bangla Golpo
Loading...




বিয়ে বৌভাত সব মিটে গেছে। মেয়ের বাড়ি ভাঙা হাট , ছেলের বাড়ি এখনও জমজমাট। কয়েকজন আত্মীয় চলে গেলেও বেশির ভাগই আছে। গল্পগুজব আড্ডায় দিন কাটছে। বৌভাতের দুদিন পর । সকালে ফুল্লরা চান করে বেরিয়ে ড্রেসিং-টেবিলের আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে দেখছিল। হুঁ , চেহারায় নতুন রকম জেল্লা এসেছে। বাড়ি ভর্তি আত্মীয়স্বজন , তাই সকালে উঠে নাইটি ছেড়ে একদম চান করে পরিপাটি হয়ে নিচে নামে ফুল্লরা। ওর সকালে ওঠা অভ্যাস, এখানে এসে তাই কোন অসুবিধে হয় নি। বরং এঁরা মনে হয় একটু অবাক।কেউ ভাবে নি আধুনিক মেয়ে সাত সকালে উঠে চান করে তারপর ঘর থেকে বেরোবে। সবাই যেমন অবাক তেমনই খুশি। আয়নার ভেতর দিয়ে বিছানার দিকে তাকাল। অভি গভীর  ঘুমে তলিয়ে আছে। ফুল্লরার মুখে হাসি ফুটে উঠল। ঘুমবে না ? সারারাত জাগলে এমনই হবে। গোপন সুখে ফুল্লরার মুখে সিঁদুরে আভা ছড়িয়ে পড়ে। চুল আঁচড়ে সিঁদুর পরে নোয়ায় ছোঁয়ানোর সময় হাত ভর্তি চুড়ি বালা দেখে নিজেকে অচেনা লাগছিল। নাঃ, এত জবরজং গয়নার দোকানের বিজ্ঞাপনের মতো সেজে থাকা যাবে না। আস্তে আস্তে দুহাতের দশ গাছা চুড়ি আর কঙ্কন দুটো খুলে ফেলল। গয়নাগুলো আলমারিতে তুলে রাখল। আরেকবার নিজেকে দেখল। শাঁখা , পলা আর মোটা বালা …হ্যাঁ , এবার ঠিক লাগছে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে চার্জ শেষ। তাড়াতাড়ি ওটা চার্জে বসাল। বাব্বা ! মোবাইল ছাড়া দিন ভাবাই যায় না।




        শাড়ি পরে তৈরি হয়ে অভিকে নাড়া দিয়ে জাগানোর বৃথা চেষ্টা করে। ওর ঠোঁটে হালকা চুমুর রেখা এঁকে ফুল্লরা ঘর থেকে বেরোয়। বেরোতেই কৃষ্ণনগরের পিসির  সাথে মুখোমুখি। ফুল্লরা একগাল হাসল। উনিও হাসলেন । চোখে বেশ তারিফও ছিল । কিন্তু আপাদমস্তক দেখে ওঁর হাসি ধীরে ধীরে মুছে গেল। কেমন হন্তদন্ত ভাব করে চলে গেলেন। ফুল্লরা অবাক! কী হল রে বাবা ! ঠিক বুঝে উঠতে পারল না।
   একতলায় কিচেনে ঢোকার আগে দেখল ডাইনিং-টেবিলে ননদ বসে আছে। ছন্দাদি । অভির একমাত্র দিদি। থাকে দিল্লিতে। বিশাল গার্মেন্টসের ব্যবসা আছে। কলকাতায় প্রচুর সাপ্লাই দেয়। ফলে দিল্লি কলকাতা যাতায়াত লেগেই থাকে। আংকেল মানে শ্বশুরমশাই দেরিতে ওঠেন। (নিজের মনেই জিভ কাটে ফুল্লরা। আংকেল বলা যাবে না আর । )শাশুড়ি পুজোর ঘরে। আসলে তিন বছরের প্রেম পর্বে এ বাড়িতে ও বেশ অনেকবারই এসেছে। বাড়ির মূল লোকেদের সবাইকে চেনে। নিজে চা খেতে ভালবাসে বলে সকালের প্রথম চা’টা নিজেই বানায়। গুড মর্নিং । কী গো , চা খাবে না ? ছন্দা খবরের কাগজ থেকে মুখ তুলল। গুড় মর্নিং। হ্যাঁ , খাব তো। তোর অপেক্ষাতেই বসে আছি। তোর হাতের চা না সত্যিই দারুণ। দিল্লি গিয়ে এটা বহুত মিস করি। মা’ র পুজোও প্রায় হয়ে এল। ঝটপট তিন কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আয়। চায়ের আসরে গল্প জমে ভাল। ছন্দা হাসল। ফুল্লরা একটু হেসে কিচেনে ঢোকার জন্য ঘুরতে ছন্দা প্রায় চেঁচিয়ে উঠল , এ বাবা , তোর হাত দুটো কেমন ন্যাড়া দেখাচ্ছে! ফুল্লরা ততক্ষণে রান্নাঘরে চায়ের জল বসাচ্ছে।
  খানিক পরে ধোঁয়া ওঠো তিন কাপ চা , সাথে বিস্কুট ট্রেতে সাজিয়ে নিয়ে ডাইনিং-টেবিলে এল। ততক্ষণে শাশুড়ি মা’ও এসে গেছেন। ওঁর সামনে চা আর বিস্কুট রাখছে ,  হঠাৎ মামণি মানে অভির মা অবাক হয়ে বলে উঠলেন , সে কী ! হাত খালি কেন রে তোর ?
ফুল্লরা এতক্ষণে বুঝল ব্যাপারটা। এই জন্যই কৃষ্ণনগরের পিসির মুখ থেকে হাসি উধাও হয়ে গিয়েছিল। ছন্দাদিও কী যেন একটা বলছিল। ফুল্লরা গভীর আত্মপ্রত্যয়ের সাথে বলল , আসলে মামণি ,আমার মোবাইলটা চার্জে বসিয়ে এসেছি। একফোঁটা চার্জ ছিল না তো তাই। মামণি মানে রত্না চায়ের কাপে প্রথম চুমুক দিয়েছিল , উত্তর শুনে বিষম খেল !

Share This Article