Bengali Story – তুমি মায়ের মতোই ভালো – Bangla Golpo

Bongconnection Original Published
4 Min Read
Bengali Story - তুমি মায়ের মতোই ভালো - Bangla Golpo
Loading...

         অহনা বোস, পেশায় বাংলা মাধ্যমের একটি হাইস্কুলের ভূগোলের শিক্ষিকা। যাদবপুরের এই বাগানঘেরা বাড়িতে আটমাসের শিশুকন্যা তুয়াকে নিয়ে একাই থাকে। ইঞ্জিনিয়ার স্বামী চাকরিসুত্রে ব্যাঙ্গালোরে। পনেরো দিন অন্তর আসেন, উইকেন্ড কাটে একসাথে। অহনার স্কুল প্রায় বারো কি.মি পথ। বাড়ির গাড়িতে নিজেই ড্রাইভিং ক’রে যাতায়াত করে ও। পাশের পাড়ার শাবিনা ঘরের যাবতীয় কাজ সামলে দেয় আর সাথে সারাদিনের জন্য তুয়াকে  আদরে, যত্নে আগলে রাখে।
               সেদিন সোমবারের সকাল। রান্নায় ব্যস্ত অহনা। তুয়া খেলছে। শাবিনার আসার সময় হলো। কলিংবেলের শব্দে ছুটে গিয়ে দরজা খুলতেই অহনা দেখলো শাবিনার শাড়ির আঁচল ধ’রে একটা শ্যামলা ম্লান মুখ উঁকি দিচ্ছে। অভাবের স্পষ্ট ছাপ চেহারায়, পোশাকে বছর আটেকের মেয়েটার..সংকোচে কিছুতেই শাবিনার আড়ালটুকু ছেড়ে বেরিয়ে আসছে না।
-কি গো শাবিনা! তোমার মেয়ে নাকি? কি মিষ্টি! কি নাম?
-হ্যাঁ গো বৌদি, আমার মেয়ে! জানোই তো বাপটা মাতাল। খরচ তো দেয়ই না, আবার আজকাল মেয়েটাকে একা ঘরে ফেলে বেরিয়ে যায়। সারাদিন একা থাকে মেয়েটা। কোন ভরসায় রেখে আসি বলো তো? তোমার যদি আপত্তি না থাকে ওকে সাথে আনতে চাই গো। তোমার ছোটোখাটো কাজ করে দেবে, তুয়ার সাথে খেলবে। জ্বালা নেই গো বৌদি আমার হতভাগী মেয়েটার।
-আরে সে না হয় ঠিক আছে, কিন্তু ওর তো স্কুল থাকে, নেই আজ?
-ফোর কেলাসের রেজাল্ট বেরোলো বৌদি। ভালো ফল করেছে আমার পারভীন। কিন্তু আর পড়াতে পারবনি। হাই ইস্কুল কতো দুর বলো দিকিনি! আমার একার দ্বারা আর হবে নি গো! ও পারভীন! পেন্নাম কর বৌদিকে!
আদরে হাত ধরে আড়ষ্ট পারভীনকে ঘরে নিয়ে এল অহনা। শাবিনা লেগে পড়লো কাজে। রান্নাটা অহনা নিজেই করে। দুজনের তো রান্না, সাথে স্কুলের জন্য হালকা কিছু টিফিন। বাকি সব শাবিনার দায়িত্ব। সাথে তুয়ার দেখাশোনারও।
তাড়াহুড়ো করে স্কুলে বেরিয়ে গেল অহনা। স্কুলে ক্লাস, গল্প, খাতা দেখা সবকিছুর মাঝেই কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে আজ অহনা। বারবার মনে হচ্ছে কি যেন এক অসম্পূর্ণ কাজ ওকে সেরে ফেলতে হবে শিগগির।
টিফিনের সময় বাড়িতে ফোন করে জানলো তুয়াকে মুহূর্তের জন্যেও চোখের আড়াল করছে না পারভীন। খুব ভাব হয়েছে দুটিতে। বিকেলে বাড়ি ফিরতে দেরি হবে জানালো অহনা। আজ রাতের খাবার এখানেই যেন ওরা সেরে যায়, আটাটা মেখে রাখতে বললো শাবিনাকে।
বাজার ঘুরে বাড়ি ফিরতে প্রায় সাতটা বাজলো। পারভীন এখন অনেকটাই সপ্রতিভ। চোখে মুখে দীপ্তি। ভালো লাগলো অহনার। একে একে বিগ শপার থেকে বের করতে লাগলো ওর নরম মনের ইচ্ছেগুলোকে.. ক্লাস ফাইভের কিছু বই, খাতা, পেন্সিল বক্স, নীল-রঙা একটা জলের বোতল ও সব শেষে একটা লাল-সাদা টিউনিক।
শাবিনা, কাল থেকে পারভীন আমার সাথে আমার স্কুলে যাবে। আমি কথা বলে নিয়েছি, ভর্তিতে কোনও সমস্যা হবে না। মেয়েটাকে তো আর ঘরে বসিয়ে রাখতে পারি না! ও অনেক বড় হবে দেখো, তোমার দুঃখ ঘুচবে। কাল থেকে কিন্তু দু’দুটো টিফিন বক্স সাজিয়ে দিতে হবে তোমায়। পারভীনের আর আমার।

এতক্ষণ খেয়াল করে নি অহনা, তুয়াকে পরম স্নেহে কোলে আঁকড়ে ধরে মুখে আঁচল চেপে অঝোরে কেঁদে চলেছে শাবিনা। আর পারভীন কিছু বুঝতে না পেরেই আরও একটু বেশী গা ঘেঁষে বসলো অহনার। ঠিক যেন মায়ের গায়ের চেনা চেনা গন্ধটা পাচ্ছে ও। সব সংকোচ পেরিয়ে মুখ লুকোলো অহনার বুকের উষ্ণতায়…

Share This Article