Bengali Story – ঘোষবাড়িতে রথের দিন – Bangla Golpo

Bongconnection Original Published
6 Min Read



Bengali Story - ঘোষবাড়িতে রথের দিন - Bangla Golpo
Loading...

উত্তর কলকাতার ঘোষবাড়ির বড়বৌ সীমা।
প্রতিদিন সকালবেলা সীমার উপর দিয়ে যেন ঝড় বয়ে যায়। বাড়িতে আছেন রিটায়ার্ড শ্বশুরমশাই, শাশুড়িমা, কলেজে পড়া ননদ, স্বামী এবং সীমার দুই যমজ মেয়ে। সীমার সবসময়ের কাজের সঙ্গী মিনুর মা।
সীমার শাশুড়িমা খুবই ঠাকুরভক্ত। সকালবেলা স্নান করেই ঠাকুরঘরে ঢোকেন, পুজো করেন প্রায় একঘন্টা ধরে। বাড়িতে এমন কোনো পুজো নেই, যা শাশুড়িমা করেন না। কিন্তু পুজো সেরেই তিনি যান সীমাকে কাজে সাহায্য করতে। অার যেসব পুজোতে তিনি ঠাকুরকে ভোগ নিবেদন করেন, সেদিন সীমাই নিজেহাতে সব ভোগ রান্না করে দেয়।

রথের আগের দিন সন্ধেবেলা শাশুড়িমা সীমাকে ডেকে বললেন, “বৌমা কালকে রথ, মনে আছে তো? তোমার বাবা আর আমি বাজার করতে যাচ্ছি, কালকে খিচুড়ি, তরকারি, আর পাঁচরকমের ভাজা হবে, এবারে আর মিষ্টি কিছু করতে হবে না, আমি কিনে নিয়ে আসবো।”

—-“কিন্তু মা আপনার ছেলে তো নিরামিষ খেতেই চায় না…”

—-“না বৌমা, এবার আমি সবাইকে বলে দেবো, দুপুরে ভোগই খেতে হবে। আমি তো কয়েকবছর দেখছি, দুদিক সামলাতে তোমার খুব কষ্ট হয়।”

—-(হেসে) “ঠিক আছে মা বলে দেখুন…”

হঠাৎ তখন তৃষা আর তৃণা… সীমার দুই মেয়ে, ঠাম্মা আর মায়ের কথা শুনতে পেয়ে, বই পড়তে পড়তেই উঠে আসে…

—-“ঠাম্মা, ঠাম্মা, আমাদের রথ, ঠাকুর আর সাজানোর সব নিয়ে আসবে তো??”

দাদু হেসে বলে, “তোমাদের ঠাম্মির জিনিসগুলো আসবে, আর তোমাদের জিনিস আসবে না, এরকম কি হয় দিদিভাইরা? “

সীমা বলে, ” হ্যাঁ হ্যাঁ সব আনবে দাদু ঠাম্মা, কত আবদার শুধু দেখো, পড়া ছেড়ে উঠে এলো ওমনি, যা এখন পড়তে যা…”

তৃণা আর তৃষা, খুশী হয়ে, লাফাতে লাফাতে আবার পড়তে চলে যায়……




———————————————————
রথের দিন… সীমা ভোরবেলা স্নান করে, রান্নাঘরে ঢোকে…তখনও মিনুর মা আসেনি। সীমা চা করে সকলকে দেয়, তারপর জলখাবার বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
সেইসময় মিনুর মা ঢোকে, বলে, “একটু দেরী হয়ে গেলো গো বৌদি…মেয়েদুটো যা রথের জন্য বায়না করছিল, আমাকে ছাড়তেই চাইছিল না। কোনোমতে দুটোকে বুঝিয়ে, পড়তে পাঠিয়ে এই ছুটতে ছুটতে এলাম।”

সীমা বলে, “তাড়াতাড়ি আনাজগুলো কাটো, আমি জলখাবারটা বানিয়ে নিই। সবাইকে জলখাবার দিয়ে আমাকে ঠাকুর ঘরে ঢুকতে হবে, ভোগ রান্না করতে হবে।”

“হ্যাঁ হ্যাঁ বৌদি, দেখ না এক্ষুনি হয়ে যাবে…”

“আচ্ছা, তাহলে তুমি আনাজটা কাটো, আমি মাকে চা দিয়ে আসছি। পুজো না হলে, মা তো আর কিছুই খাবেন না…”

শাশুড়িমাকে চা দিয়ে এসে সীমা আবার রান্নাঘরে এসে কাজে হাত লাগায়।
কিছুক্ষণ পর সীমা সবাইকে টেবিলে ডাকে, জলখাবার দেওয়া হয়েছে বলে। তারপর ঘরে গিয়ে, তৃষা-তৃণাকে রেডি করে স্কুলে যাওয়ার জন্য।
বলে, “তাড়াতাড়ি খেতে চল এবার, এক্ষুনি বাস এসে যাবে।”

খেতে খেতেই তৃষা-তৃণা বলে, “মা কখন রথ সাজানো হবে?”

ননদ রুনা বলে, “আমি কলেজ থেকে আসি, তারপর বৌদিভাই আর আমি মিলে, তোদের রথ সাজিয়ে দেবো।”

কিছুক্ষণ পর, সবাই যে যার কাজে বেরিয়ে গেলে সীমা আবার স্নান করে, ঠাকুর ঘরে ভোগ রান্না করতে ঢোকে।
ভোগ রান্না করে সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে, সীমা বলে, “মা আপনার জন্য একটু শরবত করে আনি?”

—-“হ্যাঁ আনো আর  তুমিও তো কিছু খাওনি, তোমার জন্যও একগ্লাস শরবত নিয়ে এসো।”

রান্নাঘরে যেতে গিয়ে সীমা শুনতে পায়, দরজার বাইরে মিনুর মায়ের গলা, কাকে যেন বকছে…

এগিয়ে যেতে সীমা দেখে, মিনুর মা, ওর দুটো মেয়েকে বকছে।

—-“কিছু হয়েছে মিনুর মা, মেয়েগুলোকে বকছো কেন গো আজকেরদিনে? কি করলো আবার ওরা?”

—-“তোমাকে বলছিলুম না বৌদি, রথ কেনার জন্য বায়না করছে, দেখো না আবার এখানেও চলে এসেছে… এই যা তোরা এখন এখান থেকে….” বলে দুটো মেয়ের পিঠেই ধাক্কা দেয় সে।

আওয়াজ শুনতে পেয়ে, সেই সময় শাশুড়িমা বেরিয়ে আসেন, তিনি দেখতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বলেন—-” কি হয়েছে গো? ওরম করছো কেন? আজকে পুজোর দিন, বাচ্চাদের দূরদূর করতে নেই।”

—-“দেখো না মা, রথের জন্য বায়নার শেষ নেই ওদের।”

শুনে শাশুড়িমা বলেন, “বাচ্চারা বায়না করবে না তো, আর কারা করবে বলো তো?”
তারপর বাচ্চাগুলোর দিকে তাকিয়ে বলেন, “এই এদিকে শোন। তোরা চান করে, পরিষ্কার জামা পড়ে, এখানে আয়। পুজো হবে ভোগ খাবি। আর বিকেলে দিদিরা রথ নিয়ে বেরোবে, তোরাও সাথে যাবি, রথ টানবি।”

শুনে বাচ্চাগুলো ভীষণই খুশী হয়। এতো বায়নার পরে ওরা যে এরকমভাবে রথ টানতে পারবে আশাও করেনি হয়তো, একরকম প্রায় লাফাতে লাফাতে ছুটতে ছুটতে বাড়ির দিকে চলে যায়……….

————————————————————–


বিকেলবেলা তৃষা-তৃণা স্কুল থেকে ফেরে। একটু পরেই রুণাও ফেরে। সীমা বলে, “সবাই হাতমুখ ধুয়ে এসো, আমি খেতে দেবো।”

—-“মা রথ সাজাবে না? কখন সাজাবে?”

—-হ্যাঁ কিছুটা করেছি, এবার পিসিমণি আর তোরা মিলে কমপ্লিট করবি। আর শোন, বিকেলবেলা তোদের আরো দুটো বন্ধু আসবে, তাদের নিয়ে রথ টানতে যাবে।”

—-“কে মা কে?”

—-” আসলেই দেখতে পাবি…”

একটু পরেই রথ সাজানো শেষ হলে.. রুণা, তৃষা, তৃণা রেডি হয়ে নীচে এসে দেখে, তৃষা-তৃণার সমবয়সী দুটো মেয়ে বসে আছে।

সীমা বলে, ” এই যে তোমাদের দুই বন্ধু। যাও সবাই মিলে, খুব দেরী করবে না।”

ওদের দেখে তৃণা বলে, “তোরা ভালো জামা পড়িসনি কেনো? আমরা তো বাইরে যাবো রথ টানতে।”

—-“ওরম করে বলতে নেই দিদিভাই।”

সেইসময় সীমা, শাশুড়িমার কাছে এসে নীচু স্বরে  কিছু বলে, শাশুড়িমা মাথা নাড়ে।

সীমা ঘরে গিয়ে, নিজের বাচ্চাদের দুটো জামা এনে, ওদের পড়িয়ে দেয়। মায়ের দেখাদেখি তৃষা-তৃণাও নিজেদের চুড়ি এনে ওদেরকে দেয়।

শাশুড়িমা সব বাচ্চাদের ডেকে হাতে পঁচিশ টাকা করে দেন, বলেন, ” উল্টোপাল্টা কিছু খাবে না, ভালো জিনিস কিনে খাবে।”

রুণা এগিয়ে এসে বলে, “আর আমার টাকা??”

তখন তিনিও রুণার হাতে একশ টাকা দিয়ে বলেন, “তোরা যা খাবি, বৌদিভাইয়ের জন্যও আনবি। আর একদম বেশী রাত্তির করবি না, তাড়াতাড়ি সাবধানে ঘুরে চলে আসবি।”

সবাই হাসতে হাসতে আনন্দ করতে করতে বেরিয়ে যায় রথ নিয়ে….

Share This Article