Bengali Story – শক্তিরূপেণ – Bangla Golpo – Women’s Day Special Story

Bongconnection Original Published
5 Min Read



Bengali Story - শক্তিরূপেণ - Bangla Golpo - Women's Day Special Story
Loading...

তৃণার মেয়ে যখন জন্মালো, শাশুড়ী মায়ের মুখ একটু ভার হয়েছিল বটে কিন্তু যতই হোক টুলটুল তো বাড়ির প্রথম বাচ্চা ছিল, তাই সে অনায়াসেই সকলের চোখের মনি হয়ে উঠল, এমনকি তার ঠাম্মারও!

কিন্তু তৃণার সাথে তার শাশুড়ী মায়ের মতবিরোধ আরো বাড়তে লাগলো, বিশেষত, তুলতুল কে কেন্দ্র করে!

যেমন প্রথম ঝামেলাটা বাধলো নামকরণ  নিয়ে! তৃণার স্বপ্ন ছিল মেয়ে হলে তার নাম রাখবে ‘তেজস্বীনী’ কিন্তু শাশুড়ীমার সে নাম মোটেও পছন্দ নয়, তিনি মনে করেন মেয়েদের তেজ নয় বরং স্নিগ্ধ, কোমল হওয়া উচিত! যাই হোক উনার কথা মেনে নামকরণ হলো ‘স্নিগ্ধা’! অবশ্য, নামে কি এসে যায়!

টুলটুল যত বড় হতে থাকে ঝামেলা ততো বাড়ে!
একদিন তো তিনি রেগে-মেগে তৃণাকে মুখের ওপর বলেই দিল যে সে নাকি টুলটুলকে ঠিক মতন মানুষ করতে পারছে না, বরং তাকে নষ্ট করছে!!!
ঝামেলার সূত্রপাত হয় টুলটুলের গল্প শোনা নিয়ে! টুলটুল রোজ তার ঠাম্মার কাছেই গল্প শোনে কিন্তু সেদিন সে হঠাত্ আবদার করে যে মায়ের কাছে গল্প শুনবে!
রোজ তার ঠাম্মা তাকে যে গল্প শোনায়, তাতে এক খুব সুন্দরী রাজকুমারী তো থাকে বটে কিন্ত তাকে সবসময় কষ্ট দিতে কোনো দুষ্টু রাক্ষস বা বাজে ডাইনী বুড়ি ধরে নিয়ে যায় আর সে নিরুপায় আর দুর্বল ভাবে ঘুমিয়ে খালি অপেক্ষা করে কোনো রাজপুত্রের, যে কিনা আসবে আর সোনার-রুপোর কাঠি ছুঁইয়ে, দুষ্টুদের মেরে তবেই রাজকুমারীকে উদ্ধার করবে!
কিন্তু আজ মা তাকে এক নতুন গল্প বলেছে, যেখানে রাজকুমারী নিজেই বীরাঙ্গনা, সাহসী! সে নিজেই অস্ত্র চালানো আর যুদ্ধ করার প্রশিক্ষণ পেয়েছে! সে নিজেই দুষ্টুদের বধ করতে পারে এবং তাকে কোনো রাজকুমারের জন্য ঘুমিয়ে অপেক্ষা করতে হয় না তার নিজের উদ্ধারের জন্য, তার সুরক্ষা সে নিজেই করতে পারে! হ্যাঁ, সে গল্পেও এক রাজকুমার ছিল বটে কিন্ত সে রাজকুমারীর দৃঢ় চরিত্র দেখেই তাকে পছন্দ করে, শুধু রূপ দেখে নয়! টুলটুলের মায়ের বলা গল্পের রাজকুমারীকেই বেশী পছন্দ হয়েছে, তাই সে তার ঠাম্মাকে জানিয়েছে যে এবার থেকে সে ওই রাজকুমারীর গল্পই শুনবে!
ঠাম্মা তাই বেশ ক্ষুণ্ন হয়েছেন, তিনি বলছেন যে মা নিজের মেয়ের মধ্যে ছোট বয়স থেকেই হিংসার সূত্র ঘটাচ্ছেন এবং মার-দাঙ্গা এসবে উত্সাহিত করে তাকে নষ্ট করছেন!

টুলটুল যখন আর একটু বড় হলো, তখন তার ঠাম্মার ইচ্ছায় তাকে গানের ক্লাসে ভর্তি করা হল! তার ঠাম্মার কথায় মেয়েদের গান জানা উচিত, কারন, বড় হলে, বিয়ের সম্বন্ধ দেখতে আসলে, মেয়ে তাদের গান শোনাতে পারবে, পাত্রপক্ষ খুশী হবে!তৃণার গান বেশ ভালো লাগে আর মেয়ের গলাও খুব মিষ্টি, তাই সেও খুশী হয়!
কিন্তু তৃণা যখন মেয়েকে কেরাটে ক্লাসে ভর্তি করায়, তখন তার শাশুড়ীমা প্রচন্ড রেগে যান এবং প্রায় তৃণাকে গৃহছাড়া করতে উদ্দোগ নেন! ঝামেলাটা টুলটুলই মেটায়, সে জানিয়ে দেয় যে সে গান আর কেরাটে দুটোই শিখবে!

আজ টুলটুলকে নিয়ে সারা পাড়ায়, সারা রাজ্যে আলোড়ন পড়ে গেছে! সকাল থেকে বাড়িতে লোকজন, আত্বীয়-স্বজনের ফোন, মিডিয়ার আনাগোনা লেগেই রয়েছে!


স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী টুলটুলের সাথে দেখা করবেন বলেছেন!
আগের দিনের ঘটনা, রাতে টুলটুল বাড়ি ফেরার সময় দেখে যে দুটো বখাটে ছেলে তিনটে মেয়েকে উত্যক্ত করছে, তাদের হাত ধরে টেনে অশোভন আচরণ করছে আর তাদের জোর করে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে!
টুলটুল তাদের কয়েকটা কেরাটের প্যাচ দেখিয়েছে মাত্র, তাতেই তারা ধরাশায়ী! তারপর টুলটুলের ব্যাগে থাকা pepper-spray দিয়ে সে অনায়াসে তাদের কাবু করে ফেলে আর নিজেই তাদেরকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়! Pepper-spray টা তাকে তার মা এনে দিয়েছিল সবসময় ব্যাগে রাখার জন্য।
সবাই আজ টুলটুলকে celebrity বানিয়ে দিয়েছে, কিন্তু টুলটুল নির্বিকার! সে বুঝতেই পারছে না যে এমন কি আহামরি কাজ সে করেছে! সে খালি সবাই কে এটাই বোঝানোর চেষ্টা করছে যে ওরা মাত্র দুই জন লোক ছিল আর সেখানে তিন-তিনটে মেয়ে ওদের কাছে অসহায় বোধ করছে! আজ যদি ওদের তিনজনেরই আত্মরক্ষা করার প্রশিক্ষণ থাকত আর কিছু আত্মবিশ্বাস আর উপস্থিত বুদ্ধি থাকত তাহলে তো তারা নিজেরাই এর মোকাবিলা করতে পারতো!

যাই হোক, আজ কিন্ত ঠাম্মা ভীষণ খুশী… তিনি আমার নাতনি… আমার নাতনি করে খুব বড়াই করছেন! আর তৃণা…, সে খালি হাসি মুখে নীরবে চোখের জল মুছছেন, এক গর্বিত মায়ের আনন্দশ্রু যা নীরবে তার তেজস্বীনীর ওপর আশীর্বাদ হয়ে ঝরে পরছে!

Share This Article