Romantic Bangla Premer Golpo – তোরার বিয়ে – Valobashar Golpo – Bengali Story

Bongconnection Original Published
8 Min Read
PicsArt 06 29 09.32.18
Loading...



বিয়ের সাজ কমপ্লিট তোড়ার,এখনও বিয়ের আসরে ডাক পড়েনি। প্রচুর টাকা খরচা করে রাজস্থানের জয়পুরে ডেস্টিনেশন ওয়েডিং-এর ব্যবস্থা করেছেন রৌণকের বাবা।তোড়ার  বাবা-মা দুই বোন সবার জন্য প্যালেশে আলাদা আলাদা suite -এর বন্দোবস্ত করেছেন। কিন্তু দূঃখ একটাই তোড়ার দাদা এলোনা। আসলে তোড়া মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে,তোড়ার দাদা চেয়েছিল বিয়েটা সাবেকী ভাবেই ওদের বাড়ি থেকে হোক,মানে ঐ ওদের যেমন সামর্থ আর কি ! কিন্তু রৌনকের বাড়ির লোকেরা কিছুতেই মানতে চাইল না,ওরা বড়লোক ইন্ডাস্ট্রির মালিক,তারওপর আবার একমাত্র ছেলের বিয়ে। কোনোভাবেই আপোষ করবেনা ওরা। বাবা-মাও রাজি হয়ে গিয়েছিল এককথায়,তার পেছনে অবশ্য কারন আছে। প্রথমত,মেয়ের জন্য এত ভালো বড়লোক পাত্র,বড়লোক শশুড়বাড়ি হাতছাড়া করতে চাননি আর দ্বিতীয়ত,দাদার সাধারন বিয়ের প্রস্তাব শুনে প্রায় ওনারা বিয়ে নাকোচ করে বসছিলেন এমনকি যে রৌণক তোড়ার ছবি প্রদর্শনিতে একটা মাত্র ছবি দেখে তোড়াকে ভালোবেসে ফেলেছিল সেও মুখ নিচু করে চলে যাচ্ছিল। এদিকে তোড়ার বয়স ইতিমধ্যেই তিরিশ হয়ে গেছে,তার ওপর মাঙ্গলিক এই বিয়ে ভেস্তে গেলে পরের দুই বোনের বিয়ে দেওয়া কঠিন হবে। তাই অগত্যা। এইসব কথা ভেবে নাকি রৌণকের ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে তোড়াও সেদিন দাদার বিরোধীতা করে বসেছিল,তাই তোড়ার ওপর অভিমান করেই ওর দাদা এলো না। ব্যাগ থেকে বার করে ছোটবেলার অ্যালবাম দেখছিল তোড়া। সেখানে ওদের চার ভাই-বোনের ছবির দিকে চোখ পড়ল। স্মৃতিতে ভরা নদীতে যেন ঢিল পড়ল একটা। ওরা বাড়িতে খুব ঝগড়া মারামারি  করত কিন্তু বাইরের কেউ যদি ওদের কাউকে কিছু বলতো একসাথে দল বেঁধে তেড়ে যেত ওরা, সে দাদা হোক বা বোন। তোড়া তো দাদার জন্য দাদার বন্ধুদের সাথেও ঝগড়া করে এসেছিল। কিন্তু এখন ওরা যেন কত দূরে দূরে চলে গেছে,শৈশবের গণ্ডী পেরোনোর পর থেকেই যে যার জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দাদার কথা বারবার মনে পড়ছে, তোড়ার। ছোট বেলায় দাদা ওকে নেপালী বলে রাগাতো,তোড়া সবসময় খাবার পাতের ডিমটা শেষে খাবে বলে রাখতো,আর দাদা আগে ভাগেই নিজের টা খেয়ে নিত আর ঠিক তোড়ার পাতের ডিমটাও তুলে খেয়ে নিত। এ নিয়ে অনেক মারামারি কামড়া-কামড়ি হত কিন্তু গলির মোড় থেকে ফুচকাওয়ালাকে অগ্রিম পয়সা দিয়ে বাড়ির জানলার সামনে লুকিয়ে পাঠিয়ে দিত ঠিক। ওদের বাইরের খাবার খাওয়া বারন ছিল কিন্তু ওরা তিন বোন ফুচকার জন্য পা খুশি তাই করতে রাজি, তাই এই লুকিয়ে লুকিয়ে খাবার বন্দোবস্ত। এইসব কথা ভাবতে ভাবতে,চোখে জল চলে এসে গিয়েছিল তোড়ার। হঠাৎ বিয়ের আসরে যাবার ডাক পড়ল। চোখ মুছে লজ্জা লজ্জা মুখ করে এগিয়ে গেল বিয়ের আসরে,সেখানে গিয়ে দেখে দুটো বিয়ের মন্ডপ,একটু অবাক হল তোড়া, তখন ওর মা এসে জানালো যে যেহেতু তোড়া মাঙ্গলীক তাই  রৌণকের পরিবারের পুরোহিত আর জ্যোতিষী বিধান দিয়েছেন যে রৌণকের সাথে বিয়ে হবার আগে বট্ গাছের সাথে বিয়ে দিতে হবে। তবে দোষ কাটবে। সেই মুহুর্তে তোড়ার নিজেকে খুব অপমানিত বোধ হচ্ছিল,নিচে চেয়ারে বসে থাকা দর্শক বাবার দিকে তাকালো একবার আর রৌণকের দিকে ছল-ছল চোখে তাকালো একবার তোড়া,দুজনেই অবিচল ভাবে বসে আছে। যেন এমন কি আর ব্যাপার ! বাকিদের দিকে তাকিয়ে দেখল এক ঝটকা মনে হল যেন সবাই ওকে নিয়েই আলোচনা করছে,হাসাহাসি করছে,করুণা করছে,কতভালো শশুড়-বাড়ি এরপরেও এই মেয়েকে বউ করবে এইসব বলছে যেন। তখন তোড়ার চোখ পড়ল শেষের চেয়ারটার দিকে  দাদা বসে আছে। তোড়া ভাবলো দাদা এসেছে তাও একবার দেখা করলো না!
এবার মাথা নিচু করে তোড়া গিয়ে বসল গাছের সামনে। পুরোহিত মন্ত্র পড়ছে,টবের মধ্যে তিন হাত সমান বটগাছ,ওটাকে প্রদক্ষীন করে বিবাহ সম্পন্ন  হল। বিবাহ মানে ঐ বৃক্ষ wedds তোড়া। এবারে পুরোহিত তোড়া কে অন্য মন্ডপের বিকে এগোতে বললেন ওখানে রৌণক অপেক্ষা করছে,মালা হাতে। তার আগে জ্যোতিষী গাছটা কেটে ফেলার নির্দেশ দিলেন। সেই সময় তণুজ মানে তোড়ার দাদা  হঠাৎ প্রতিবাদ করে বসল। বলল
—“খবরদার কেউ আমার ভগ্নীপতির গায়ে হাত দিয়েছো তো!”
সবাই অবাক,এই ছেলেটার কি মাথা খারাপ নাকি?তোড়াও অবাক হয়ে দেখছে,দাদার কি হল!তণুজ বলেই চলেছে
—“ভগ্নীপতি নয় ,এই তো এই মাত্র সবার চোখের সামনে আমার বোনের সাথে সব রীতি মেনে বিয়ে হল।”
তখন তোড়ার বাবা এগিয়ে এসে বললেন




—“আরে সে তো মঙ্গলের দোষ কাটাতে ঐ তোড়ার কুষ্ঠিতে একটু সমস্যা ছিল তাই। ”
—“হ্যাঁ তো সেটাই বলছি,একবার তো বিয়ে হল আবার কেন?আমাদের বংশে কারোর দুবার বিয়ে হয়েছে নাকি? আর তাছাড়া এই গাছ কেটে ফেললে মাঙ্গলীক দোষ কাটবে কিন্তু আরেকদিকে তো ও বিধবা হবে,বিধবার সাথে বিয়ে দিতে রাজি আছেন তো আপনারা?”
এই কথাটা শুনে রৌণকের বাবা মা আর জ্যোতিষীর মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেল।তখন তোড়া শুধু দাদার দিকে তাকিয়ে  আছে,তখন তোড়ার বাবা তণুজকে বললেন
—“কি করছিস তণু?এই বিয়েটা ভেস্তে গেলে তোর আরও দুটো বোনের বিয়ে দেওয়াও মুশকিল হবে,সেটা ভেবেছিস!”
তখন তোড়ার দুই বোন এগিয়ে এসে তোড়ার পাশে দাঁড়িয়ে বলল
—“বেশ না হয়,আমরা তিনটেতে আইবুড়োই থাকবো,কিন্তু আত্মসম্মানের সাথে কোনো আপোষ নয়! এখন দিভাই পুরোটাই তোর ওপর। তুই ভেবে দ্যাখ কোন বর টাকে চাস?”
তখন রৌণক এসে তোড়াকে বলল
—“তোড়া তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি,এটা তো একটা রিচ্যুয়াল,কি আর এমন বলো? এত বড় একটা দোষ জেনেও ,তুমি মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির জেনেও আমি তোমায় বিয়ে করছি,সেটাই কি যথেষ্ট নয়?”
তখন তোড়া  উত্তরে বলল
—“উত্তরটা তুমি নিজেই দিলে রৌণক,সত্যিকারের ভালোবাসার কাছে এটা কিছুই এমন নয়,কিন্তু দয়া দেখানোটা যে ভালোবাসা নয়। তাই এটা আমার কাছে অপমান। আজ আমি বুঝলাম তুমি আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছো শুধু মাত্র আমাকে দয়া দেখানোর জন্য আর সারা জীবন আমাকে কত   করুণা করেছো সেসব নিয়ে যাতে বলতে পারো তার জন্য।”
রৌণক তখন বলল
—“তোমার ভাই বোনেরা খুব ম্যাণিপুলেটিভ,নিজেদের স্বার্থে হিংসেয় তোমার বিয়েটা হতে দিতে চাইছে না।”
তখন তোড়া তেড়ে এসে বলল
—“এই বাপের পয়সায় বসে খাস্,কোনো যোগ্যতা নেই তোকে হিংসে করবে আমার ভাই-বোন?আর একটা কথাও যদি আমার ভাই বোনেদের নিয়ে বলেছিস?তোকে আর তোদের ঐ জ্যোতিষীকে মেরে এই জয়পুরেই পূঁতে দিয়ে যাবো,মনে থাকে যেন।”
এবার তোড়ার দুই বোন জোরে সিটি মেরে বলল
—“আরে হেব্বি দিলি দিভাই।”
এবার তণুজ বলল
—“তাড়াতাড়ি চল একঘন্টায় ফেরার টিকিট বুক করা আছে সবার।লেট হলে ফ্লাইট মিস্”
তোড়া অবাক হয়ে বলল
—“টিকিট বুক আছে মানে?”
তণুজ যা বলল তাতে  বোঝাগেল যে এই গাছের সাথে বিয়ের কথা তোড়ার বোনেরা আগের দিন রাতেই জানতে পারে লুকিয়ে  লুকিয়ে  ,তখন দাদাকে সবটা জানায় আর প্ল্যান করে সবটা। আর সব ভাইবোন মিলে লড়াইয়ে  নামলে যে তোড়াও বাদ পড়বে না সে ব্যাপারে তণুজ নিশ্চিত ছিল। এবার চার ভাইবোনের বাড়ি ফেরার পালা। কিন্তু তোড়া বলল
—“দাঁড়া দাঁড়া,আমার বরটাকে ফেলে যাওয়াটা কি ঠিক হচ্ছে,আমাকে তো ও নিঃস্বার্থ ভাবেই ভালোবাসে। ”
সবাই অবাক কি বলছে?এত কিছুর পরেও…….
 তোড়া ছুট্টে গিয়ে টব সমেত গাছটাকে নিয়ে এল। ওরা চারজনে তখন একসাথে হেসে উঠল। আর তণুজ যেতে যেতে বেসুরো গলায় গান ধরল
—“ফুলো কা তারো কা…….”
 তখন ওরা তিনবোনে কানে আঙুল দিয়ে বলল
—“ব্যস আর গাধার ডাক জুড়িস না,বরং ঐ যে পকেটে স্মার্ট ফোন ওতেই গানটা লাগা। ”
অগত্যা কিশোর কুমারের গলায় শোনা গেল
“যব সে মেরে আঁখো সে হো গয়ি তু দূর
তব সে সারে জীবনকে স্বপ্নে হে চূড়—
আঁখো মে নিন্দ না
মনমে চ্যান আয়ে
এক হাজারো মে…….”

Share This Article