Bengali Story – বিসর্জনেই হয় বোধন – Bangla Golpo – Motivational Story

Bongconnection Original Published
5 Min Read
Bengali Story - বিসর্জনেই হয় বোধন - Bangla Golpo - Motivational Story
Loading...



….”ইসস, বাড়ির বৌ এমন বেহায়া হয় বাপেরজন্মে দেখিনি। ড্যাংড্যাং করে গাড়ি করে কোথায় যায়? আবার কত রাত করে বাড়ি ফেরে। একদিন জিজ্ঞেস করাতে বললো নাচের প্রোগ্রাম করে। মরণ! বাড়ির বৌ ধিঙিনাচ করছে। লজ্জা ঘেন্না সব বিসর্জন দিয়েছে গো”
কথা গুলো বলে থামলেন বোস গিন্নী। রোজ সন্ধ্যের আড্ডায় চলে সবার পোস্টমর্টেম। আজকের আলোচ্য “সোহিনী রায়”। নতুন আবাসিক। বোস গিন্নীদের একটা লেডিজ ক্লাব আছে। অবশ্য ক্লাব না বলে আড্ডার আসর বলাই ভালো। সন্ধ্যে নামলেই সবাই জড়ো হন। বেশিরভাগ সবাই একটু বেশি বয়সের। কাজ কর্ম শেষ করে গল্প করতে আসেন। তাদের মিলিত প্রচেষ্টায় সকলের বাড়ির হাড়ির খবর আড্ডার মুখরোচক বস্তু হয়ে ওঠে।

….”আহা বেচারা শাশুড়িটাকে সারাদিন ওই বাচ্চা সামলাতে হয় আর বরটাও হয়েছে তেমন। সারাদিন বাড়িতেই থাকে। কী যেন বলছিল, ওয়ার্ক ফ্রম হোম না কী করে। আমি একদিন গেছিলাম, ভাবলাম আলাপ করবো, সেদিন বললো। বৌ’মা নাকি নাচ শেখায় আর স্টেজে উঠে নাচ করে। ম্যা গো ম্যা। পরতো আমার ছেলের পাল্লায়, এই মেয়েকে সিধে করে দিতো একেবারে। আমার বাবুকে তো চেনোনা, বৌ’কে একদম হাতের মুঠোয় রাখতে জানে”। লাহিড়ী গিন্নী বেশ উত্তেজিত হয়েই কথা গুলো বললেন। নিজের বাড়িতে তিনি যে কতটা অনুশাসন রেখেছেন তার উদাহরণ ওনার বক্তব্যে স্পষ্ট। বাকিরাও ওনার সাথে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন। বাড়ির বৌ’দের বাড়িতেই মানায়, এই বক্তব্যেই ওনারা সমবেত ভাবে সায় দেন।

প্রায় দুই’মাস হলো এসেছে ওরা। স্বামী স্ত্রী আর শাশুড়ি থাকেন। সাথে একটা পাঁচ বছরের বাচ্চা আছে। কাছেই একটা স্কুলে পড়ে। রোজ সোহিনী’র শাশুড়িকে বাচ্চাটিকে নিয়ে স্কুলের গাড়িতে তুলতে দেখা যায়। অবশ্য ওদের সাথে বাকিদের তেমন ভাব হয়নি। কিন্তু নতুন আবাসিক নিয়ে কৌতুহল বরাবরই বেশি থাকে লেডিজ ক্লাবের সদস্যদের।

সময় পেরিয়ে যায়। সবাই নিজের জীবনে ব্যস্ত। আবাসনের নতুন আরও আবাসিক আসে। সোহিনীকে ছেড়ে ওরা তাদের আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে।

———————————–
প্রায় একবছর পরে….

….”খবরে দেখেছো। আমাদের আবাসনের নতুন মেয়েটা একটা নাচের রিয়েলিটি শোয়ে ফার্স্ট  হয়েছে। কত মিডিয়ার লোক এসেছে। নাহ বৌ’টা একদম লক্ষীমন্ত। ওকে একটা সম্বর্ধনা দিতে হবে আমাদের তরফ থেকে। আরে আমি তো টিভিতে নাচের প্রোগ্রামটা দেখতাম, বাব্বা, ভাবতেই পারিনি আমাদের চেনাজানা কেউ ফার্স্ট হয়ে যাবে।” নিয়ম ভেঙে আজ সকালেই জড়ো হয়েছেন লেডিজ ক্লাবের সদস্যরা। আজকেও ওদের আলোচনার বিষয় “সোহিনী”। তবে এই সোহিনী আর আগের সোহিনীর মধ্যে তফাৎটা সাফল্যের।

“উত্তরণ” আবাসনে আজকে নিউজ চ্যানেলের ভিড়। কয়েকজন সাংবাদিক এসেছে ফ্ল্যাট ৪-ডি’তে ইন্টারভিউ নিতে। সোহিনী আজ ক্যামেরার সামনে। পাশে ওর স্বামী সমুদ্র আর শাশুড়ি, সাথে ওদের একমাত্র ছেলে রায়ান। কিন্তু আজকের প্রধান অতিথি সোহিনী। অবশ্য শুধু মিডিয়াই নয়, আবাসনের বাকিরাও এসেছে। কেউ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ ঘরেই মিডিয়ার সামনে ইন্টারভিউ দিচ্ছে। সকলেই বেশ খুশি ও গর্বিত ভাবে মেনে নিয়েছে সোহিনী ওদের পরিচিত। ওর সাফল্যে ওরা গর্বিত।

….”কেমন লাগছে ম্যাডাম, এবার তো আপনি রাষ্ট্রীয় স্তরে স্বীকৃতি পেলেন। এই প্ল্যাটফর্ম আপনাকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটার কৃতিত্ব আপনি কাকে দেবেন?” সাংবাদিকরা তাদের পেশাদারী প্রশ্ন নিয়ে ইন্টারভিউ শুরু করলেন।

মুচকি হাসে সোহিনী। পাশেই বসে ওর গোটা পরিবার।

….”জানেন নাচটা আমার বরাবরের একটা নেশা, কিন্তু এটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারবো, ভাবিনি। বিয়ের পর নাচের প্র‍্যাক্টিস করতাম কিন্তু রায়ান, আমার ছেলে হওয়ার পরে সব ছেড়ে দিয়েছিলাম জানেন। কিন্তু এই যে দেখছেন, আমার শাশুড়ি মা, উনিই আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ইন্সপিরেশন। নিজে হাতে আবার ঘুঙুর এগিয়ে দিয়েছিলেন। রায়ানের সব দায়িত্ব নিজে হাতে তুলে নিয়েছিলেন। আমার বর রায়ানের দেখাশোনার জন্য বাড়িতেই অফিসের কাজ শুরু করেন। ওয়ার্ক ফ্রম হোমের জন্য ওর অনসাইট মিস হয়ে যায়, তবু আমার পাশে থেকেছে। অনেক রাত করে বাড়ি ফিরেছি, অনেকের তীর্যক মন্তব্য কানে এসেছে, সব নীলকণ্ঠের মতো ধারণ করেছেন আমার এই মা। আমার নিজের মা’কে ছোটবেলায় হারাই, তাই হয়তো এই মা’কে পেয়েছি আরও নিজের করে। তাই আমার আজকের এই সাফল্য শুধু আমার পরিবারের জন্য। শুধু আমার মায়ের জন্য। “হয়তো তোমারই জন্য” একটা বড়ো স্বপ্ন দেখার সাহস পেয়েছি মা।


পড়ুন বাংলা প্রেমের গল্প “ প্রেমের নস্টালজিয়া”

মেয়েদের শুধু রান্নাঘরেই মানায়? কিম্বা বাড়ির বৌ মানেই ড্রইংরুমের সাজানো ট্রফি কিন্তু নয়। তাদের ইচ্ছেগুলো ততটাই স্বাধীন যতটা বাকিদেরও। একটা ঘরকে নিজে হাতে বাড়ি বানায় তারা। সংসার সাজায় নিজের অস্তিত্বটুকু দিয়ে। বদলে একটু প্রাণ খোলা আকাশ আর ভালোবাসা চায়।
তাদের পাশে থাকলে, তাদের হাতটা শক্ত করে ধরলে, বিসর্জন থেকে বোধনের এই উল্টো স্রোতে সফল হতে বোধহয় মেয়েরাই পারে।


Share This Article